۱ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱۱ شوال ۱۴۴۵ | Apr 20, 2024
সাফাভী শাসনামলে ইরানের গ্রামীন জীবন
সাফাভী শাসনামলে ইরানের গ্রামীন জীবন

হাওজা / সাফাভী শাসনামলে ১৫০০ খ্রি. - ১৭২৫ খ্রি .) ইরানের গ্রামীন জীবন : খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ - অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ফরাসী পরিব্রাজক শার্দিন ( ১৬৪৩ - ১৭১৩ খ্রি. ) লিখেছেন :

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ( সাফাভী শাসনামলে ) ইরানী কৃষকরা অপেক্ষাকৃত ও তুলনামূলক স্বচ্ছল জীবন যাপন করত ।

ইউরোপের সবচেয়ে উর্বর অঞ্চলের কৃষকদের হাল - অবস্থার সাথে ইরানী কৃষকদের হাল - অবস্থা তুলনা করে শার্দিন এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ইরানী কৃষকরা অধিকতর সুখী জীবন যাপন করে ।

ইরানের সর্বত্র কৃষকেরা ( কৃষকদের পরিবারেরা ) সোনা রূপা পরিধান করে । তারা ভালো পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করে এবং ভালো জুতো পায়ে দেয় । ঘরে তাদের ভালো থালা , বাসন ও পাত্র এবং আসবাব পত্র ( সম্ভবত তার উদ্দেশ্য ফার্শ বা কার্পেট ) রয়েছে ।

তবে ঐ একই সময় সরকারের কর্মকর্তারা তাদের সাথে দুর্ব্যবহারও করে থাকে ; খালিসা ( শাহী ) ভূসম্পত্তিতে এবং উচ্চ শ্রেণীর মালিকদের ভূমি ও জমি জিরাতে কৃষকদেরকে বেগারী খাটতে বাধ্য করা হয় এবং এ ভাবে তাদের উপর অনেক ভারী (কাজের) বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় ।  (সাফাভী শাসনামল)

সুতরাং এতদসত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে যে ষড়দশ সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে  ইরানী জনসাধারণের অবস্থা ইউরোপের সবচেয়ে উর্বর ( সচ্ছল ধনী ) অঞ্চলসমূহের জনসাধারণের চেয়ে অধিক তর ভালো , সচ্ছল ও সুখকর ছিল । যদিও অনেক সময় সরকারী কর্মকর্তারা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার ও রূঢ় আচরণ করত ; অনেক সময় তাদেরকে বেগারী খাটতে ও শ্রম দিতে হত সরকারী শাহী খাস ( খালিসা ) জমিজমা ও ভূসম্পত্তিতে এবং উচ্চ শ্রেণীর মালিকদের ভূমি ও জমি জিরাতে ; তারপরও তাদের ( ইরানী কৃষক শ্রেণী ) আর্থিক অবস্থা ভালো ও সচ্ছল ছিল । আর সাধারণ মানুষের এমন অবস্থা ঐ সময়ের মুসলিম বিশ্বে ( মরক্কো থেকে ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশ পর্যন্ত ) কমবেশি ইরানের জনসাধারণের মতোই ছিল । এখান থেকে বোঝা যায় যে ইউরোপের সামন্ত তন্ত্র ( Feudalism )  ও জমিদারী প্রথা ছিল মুসলিম বিশ্বের সামন্ততন্ত্র ও জমিদারী প্রথা হতে  সম্পূর্ণ ভিন্ন । ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রে জনসাধারণ বা প্রজা কূল ছিল দাস তুল্য । না তাদের বাসস্থান ও বাড়ী ঘরের অবস্থা ভালো ছিল , না তারা ভালো খাবার খেতে ও ভালো পোশাক পরতে পারত । এ অবস্থা যে ইংল্যান্ডে ঊনবিংশ ও বিংশ শতকেও বিরাজমান ছিল তা বোঝা যায় " Tomato is poor man's apple ." - এই ইংরেজি প্রবাদ বাক্য থেকে । সমগ্র বিশ্বজুড়ে সূর্যাস্তহীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তৃত থাকা এবং উপনিবেশ সমূহের সমুদয় অর্থ ও সম্পদ হরিলুট করে ব্রিটেনে নিয়ে এনেও ব্রিটিশ জনসাধারণ ও প্রজাকুলের ভাগ্য ঘুচেনি । তারা এতটাই দরিদ্র থেকে গিয়েছিল যে তাদের আপেল কিনে খাওয়ার সামর্থ্যও ছিল না । তাই ধূর্ত্য ব্রিটিশ রাজ ও তার চতুর প্রশাসন

সরকারের বেতনভুক বিজ্ঞানীদের দিয়ে " Tomato is poor man's apple ." - এই ইংরেজি প্রবাদ বাক্য টি প্রজাদের মধ্যে চালু করে দেয় এবং বোঝায় যে আপেল খাওয়ার টাকা নেই তাতে দু:খ করো না ; টমেটো খাও টমেটোই তোমাদের জন্য আপেল ! বরং পুষ্টি মানের দিক থেকে টমেটো আপেলের চেয়েও উত্তম !! আপেলের চেয়ে টমেটোর পুষ্টিমান বেশি না কম তার চেয়েও অর্থনৈতিক বিষয়টা ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ যা প্রবাদ বাক্যটিতে বিদ্যমান ' poor man ' ( দরিদ্র মানুষ ) থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় । আর চতুর ধূর্ত্য ব্রিটিশ প্রশাসন ভারতেও বিশেষ করে অখণ্ড বঙ্গ প্রদেশেও স্কুলের পাঠ্য পুস্তকে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল এ প্রবাদ বাক্যটি যা আমরাও ছোটবেলায় পড়েছি । কিন্তু এ প্রবাদ বাক্যটি ভালো লাগত না আমার । কারণ সুস্বাদু সুঘ্রাণ যুক্ত মিষ্টি আপেল টমেটোর চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় ছিল আমার কাছে ।

ব্রিটেন ও ইরান উভয় আপেল উৎপাদনকারী দেশ সেই সুদূর অতীত কাল থেকে । কিন্তু এ প্রবাদ বাক্যটি ইরানে প্রচার পায় নি । কারণ ইরানে ধনী গরীব সবাই প্রচুর পরিমাণে আপেল খায় এবং গরীবদেরও আপেল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য ছিল বা আছে । আপেলের মৌসুমে ইরানে আপেল টমেটোর চেয়ে অনেক সস্তা হয়ে যায় । আচ্ছা ব্রিটেন যখন সূর্যাস্তহীন বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক হয়ে পুরো বিশ্ব দুর্দান্ত প্রতাপে শাসন ও শোষণ করছিল ঠিক তখন ব্রিটেনে আপেলের মৌসুমেও কি ব্রিটিশ রাজের হতদরিদ্র প্রজাকুলের আপেল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না যে যার জন্য ব্রিটিশ রাজকে মাথা খাটিয়ে এ প্রবাদ বাক্যটি বানিয়ে প্রজাদেরকে ধোঁকা দিতে হয়েছে ?!! সারা দুনিয়ার ধনদৌলত লুণ্ঠন করে ও শিল্প বিপ্লব ঘটিয়ে বিপুল অর্থ সম্পদ আয় উপার্জন করে লাভ বা ফায়দা টা কি হলো ? কাদের পেটে গেল এ বিপুল অর্থ ও সম্পদ ? দারিদ্রের কারণে ইংল্যান্ড , ওয়েলস , স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের সাদা চামড়ার সাধারণ ব্রিটিশ জনগণকে তখন আপেলের স্বাদ টমেটো খেয়ে মিটাতে হত । বলে না দুধের স্বাদ কি ঘোলে মিটে ? আসলে এ প্রবাদ বাক্য থেকে তদানীন্তন ব্রিটেনের

অর্থনৈতিক শ্রেণী বৈষম্য ও বঞ্চনার ভয়াল চিত্রই সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে।

মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

১৬ রবীউল আওওয়াল , ১৪৪৩ হি.

تبصرہ ارسال

You are replying to: .