হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আলী নাদিম রিজভী বলেছেন, বাবরি মসজিদ ভেঙে সাম্প্রদায়িক ও অসামাজিক গোষ্ঠী শুধু একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলতেই সফল হয়নি বরং ধর্মনিরপেক্ষ ভারত ও সংবিধানকেও ধাক্কা দিতে সক্ষম হয়েছে।
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে (এএমইউ) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ওই দিন সঙ্ঘটিত অপরাধটি এমন ছিল যে, সুপ্রিম কোর্ট ওই স্থানে মন্দির নির্মাণের অনুমতি দিতে গিয়ে এই তারিখের বেআইনি ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছিল, তবে ওই অপরাধের জন্য কোন একজনেরও শাস্তি হয়নি।
ঐতিহাসিক হিসেবে মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়েছে কি না তা নিয়ে আমরা চিন্তা করি না, আমরা উদ্বিগ্ন যে ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রক্ষার আইন থাকা সত্তে¡ও এটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। একটি ধর্মীয় স্থানের চেয়েও বেশি, এটি একটি যুগ এবং সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী একটি ভবন ছিল যা বর্তমানে নেই। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীও কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তার ক্ষতি করার মতো কিছুই করবেন না। কল্যাণ সিং শুধু সংবিধান লঙ্ঘন করেননি, আন্তর্জাতিক স্তরে গোটা জাতিকে বিব্রত করেছেন।
অধ্যাপক আলী নাদিম রিজভী আরো বলেন, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের দিনটি আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে। তিনি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটি কর্মশালা পরিচালনা করছিলেন এবং অধিবেশন চলছিল। হঠাৎ ভাঙনের খবর পাওয়া যায় এবং পরবর্তী দাঙ্গা শুরু হয়। রাজীব শর্মা, আমাদের বিভাগের সহকর্মী যিনি সহকারী প্রক্টরও ছিলেন, খবরটি নিয়ে এসেছিলেন এবং আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল আমাদের প্রতিনিধিদের নিরাপদে তাদের বাসস্থানে পৌঁছে দেয়া। আমার মনে আছে, প্রফেসর ইরফান হাবিব, প্রফেসর এম. আতহার আলী, প্রফেসর শিরিন মুসা, রাজীব শর্মা, প্রফেসর এসপি গুপ্তা, প্রফেসর বিএল ভাদানি প্রমুখ আমাদের ভক্তরা কোন আতঙ্ক ছাড়াই ফিরে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা নাগাদ সারা দেশ জ্বলে উঠল।
আমি এমন এক বয়সে বাবরি মসজিদ পরিদর্শন করেছি যখন আমি এর তাৎপর্য বুঝতে পারিনি। আমি অযোধ্যায় ফিরে আসি এর ধ্বংসের পর। প্রফেসর ইরফান হাবিব যখন আলীগড়ে তার সহকর্মীদের প্রতিবাদে যোগ দিতে বলেন এবং সেখানে যেতে বলেন, তাদের অধিকাংশই (কিছু বামপন্থীসহ) অদৃশ্য হয়ে যায়। আলিগড় থেকে ফৈজাবাদের ট্রেন এলে যাঁরা যাওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন তারা অনেকেই আসেননি, আমার সঙ্গে ছিলেন ডক্টর ইকবাল গনি খান, ডক্টর সৈয়দ জাবের রাজা এবং দুজন রিসার্চ স্কলার।
পরের বার আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি যখন আদালত এসআই’র মাধ্যমে খননের আদেশ দেয়। আমি সেখানে গিয়েছিলাম আদালত নিযুক্ত ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে। খনন কাজের ফলে রামভক্তদের হাতে ভেঙে ফেলা সবকিছু সরানো হয়। তারা ভিত্তির ত্রিশ থেকে চল্লিশ ফুট নীচ পর্যন্ত খনন করেছে।