۶ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱۶ شوال ۱۴۴۵ | Apr 25, 2024
হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা সাইয়েদ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী
হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা সাইয়েদ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী

হাওজা / শিয়া ইশনা আশারীয়া সম্প্রদায় বর্তমান কোরআনকে কোন রকম পরিবর্তনহীন ঐশী গ্রন্থ হিসাবে বিশ্বাস করেন। কোরআন এমন একটি গ্রন্থ সেখানে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই।

লেখকঃ হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা সাইয়েদ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী

শিয়া ইশনা আশারীয়া সম্প্রদায় বর্তমান কোরআনকে কোন রকম পরিবর্তনহীন ঐশী গ্রন্থ হিসাবে বিশ্বাস করেন। কোরআন এমন একটি গ্রন্থ সেখানে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই।

“যা লিকাল কিতাবু লারাইবা ফীহ” অর্থাৎ এ সেই কেতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই (সূরা বাক্বারাহঃ ২) যে ব্যক্তি কোরআনে কোনরূপ বাড়ানো কিম্বা কমানোর অপবাদ শিয়ারেদ প্রতি আরোপ করেন তিনি মিথ্যাবাদী। সকল উসূলী শিয়াদের বিশ্বাস এটাই। যে মুর্হূতে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য ঠিক সেই মুহূর্তে শীয়াদের প্রতি কোরআনে পরিবর্তন আনার মিথ্যা অপবাদ সম্পৃক্ত করে বই পুস্তুক রচনা করা; বক্তৃতা দেওয়া এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কতখানি শুভবুদ্ধির পরিচায়ক এবং যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা উচিত। যে সকল ব্যক্তিরা কোরআন পরিবর্তনের অপবাদ শিয়াদের উপর অর্পন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তিনি জেনে হোক আর না জেনেই হোক প্রকারান্তরে ইহুদী নাসারারই সহযোগীতা করছেন এবং মুসলমানদের দুর্বল করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। অনেক দৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করার পর এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তৃতা বিবৃতির বিরুদ্ধে কলম হাতে তুলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি; সুতরাং আমাদের এই বিশ্বাসের স্বপক্ষে অর্থাৎ পবিত্র কোরআনে কোনরূপ পরিবর্তন হযনি হুজ্জাতুল ইসলাম এবং শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদীন-এ-কেরামগণের প্রামাণিক দলীল পেশ করছি এবং এটাই কেয়ামত পর্যন্ত শিয়াদের অপরিবর্তনীয় সঠিক আক্বীদা ও আমল।

(১) আক্বীদা সম্পর্কিত গ্রন্থ “রেসালা-এ-এতেক্বাদাত” এর (ইরান হতে প্রকাশি) ২৮ পৃষ্ঠার তিন নং লাইনে হযরত আল্লামা শেখ সদুক (রহঃ) (মৃত্যু ৩৮১ হিজরী) পবিত্র কোরআন সম্পর্কে শিয়া আক্বীদা এভাবে উলেখ করেছেন-“অর্থাৎ আমরা শিয়াদের বিশ্বাস হলো এই যে, কোরআন মজিদ যাকে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তার সর্বশ্রেষ্ঠ পযগম্বার হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর উপর অবতীর্ণ করেন যা প্রচলিত কোরআন হিসাবে বর্তমানে জনগণের কাছে বিদ্যামন এর কোন বর্ধিতরূপ ছিলনা এবং এর সূরার সংখ্যা ১১৪টি। সুতরাং যে ব্যক্তি শিয়াদের প্রতি এই অপবাদ দেয় যে, শিয়ারা বলে যে কোরআন বর্তমান আকৃতির তুলনায় বেশী ছিল তারা মিথ্যাবাদী, অপবাদকারী এবং তাদের বক্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

(২) ইরান থেকে প্রকাশিত “তাফসিরে মাজমায়ূল বায়ান” গ্রন্থের (১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫, ৮ম লাইন) আল্লামা তাবরাসী উলেখ করেন-কোরআনের আকৃতি বৃদ্ধির ঘটনা তো ইজমার ভিত্তিতেই বাতিল এবং ভুল। তবে ঘাটতি বা হ্রাস হওয়ার বিষয় স্মপর্কে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন শিয়া এবং “হাশওয়ায়া” ফেরকা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যে, কোরআনের ভিতরে পরিবর্তন এবং ক্ষতি সাধিত হয়েছে (অত্র চিন্তাটি দূর্বল বা যয়ীফ্ হাদীসের ভিত্তিতেই সৃষ্টি হয়েছে)। কিন্তু আমাদের শিয়া মাযহাবের (জাফরী মাযহাব) সঠিক আক্বীদা উক্ত আক্বীদার সম্পূর্ণ পরিপন্থি অর্থাৎ কোরআনে ঘাটতিও যেমন নেই বৃদ্ধিরও প্রশ্ন উঠে না। আলামুল হুদা সাইয়্যেদ মুরতাজা (মৃত্যু হিঃ ১০৪৪) এই আক্বীদার সত্যতা স্বীকার করে উলেখ করেছেন যে, কোরআন সংগ্রহের কাজ রাসুল (সা.) এর যুগেই সম্পন্ন হয়েছিল বর্তমান অবয়বের কোরআনের ন্যায়। এ বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হলো যে, পয়গম্বর (সা.) এর যুগে কোরআন শিক্ষা নিয়মিত হতো এবং পাঠন পাঠনের ব্যবস্থাও ছিল এবং সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করা হতো। সাহাবা কেরামদের একটি জামায়াত বা দলকে কোরআন কেবল হিফজ করার জন্যই নিয়োজিত করা হয়েছিল এবং এ ব্যবস্থায় ফলাফল হুজুর পাক (সা.) এর নিকট পেশ করা হতো। কোরআনের হাফেজগণ পয়গম্বর (সা.)কে সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করে শুনিয়েছিলেন। ঘটনাটি এ কথারই প্রমাণ বহন করে যে, পয়গম্বর (সা.) এর যুগেই কোরআন সংকলন ও সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। যে ব্যক্তিই এর বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন তার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে যারাই কোরআনের পরিবর্তনে বিশ্বাস রাখেন তারা আসহাব-এ-হাদীসের অন্তর্ভূক্ত (আখবারী মাযহাব) এবং দূর্বল হাদীসগুলিকে সহীহ ভেবে নিয়েছেন। যদিও দূর্বল হাদীসের ভিত্তিতেই কোন সঠিক বিশ্বাসকে পরিবর্তন করা যায় না।

(৩) উসুলের আইন সম্পর্কিত গ্রন্থ ‘ক্বাওয়ানীন আল উসুল’ যা ইরান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এ গ্রন্থের ১ম খন্ড, ষষ্ঠ অধ্যায় ৩১৫ নং পৃষ্ঠার ১০ম লাইনে উলিখিত হয়েছে যে, “অর্থাৎ পবিত্র কোরআনে পরিবতৃন এবং ক্ষতিসাধন হয়েছে কিনা এ বিষয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশ আসহাব-এ-হাদীসের নিকট কোরআনের তাহরীফ, বৃদ্ধি এবং হ্রাস সংঘটিত হয়েছে এবং এর বহিঃপ্রকাশ আল্লামা কুলায়নী, আল্লামা আলী বিন ইব্রাহিম কুম্মী এবং ইহতিজাজুল আ-ইম্মা গ্রন্থের লেখক শেখ আহমেদ বিন আবি তালিব তাবরিসীর দ্বারাও একই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু আলামুল হুদা সৈয়দ মুরতাজা, র্আলামা শেখ সদুক মোহাম্মাদ বিন বাবীয়া কুম্মী, মুহাক্কীক তাবরসী মোহাম্মাদ বিন আলফাজাল এবং সকর শিয়া গোষ্ঠী (জামহুরীন) কোরআনের তাহরীফে বিশ্বাসী নয়।

(৪) ‘মানহাজম সাদেকক্বীন’ নামক তাফসীর গ্রন্থের (১ম খন্ড, পৃঃ ৫, লাইনঃ ১৭) ভূমিকায় আল্লামা মোলা ফাতহুলা কাশানী তাবে সারাহ লেখেন-কোরআন বৃদ্ধি ও হ্রাস থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। উম্মতের আলেমদের ইজমা হলো এই যে, কোরআন বৃদ্ধির কোন ঘটনা ঘটেনি কিন্তু ক্ষতি সাধনের ব্যাপারে হাশওয়ীয়া স¤প্রদায়ের বক্তব্য হলো কোরআনে পরিবর্তন ও ক্ষতি সাধন হয়েছে। কিন্তু আমাদের সঠিক মাযহাব মতে কোরআনে না কোন রকম বৃদ্ধি ঘটেছে না হ্রাস। কোরআন নবী পাক (সা.) এর মোজেজা এবং মানবজাতির জন্য পরিপূর্ণ জীবন বিধান।

(৫) ‘কিতাবুল বায়ান’-এ আল্লামা শেখুত তায়েফা মোহাম্মদ বিন হাসানে তুসী উলেখ করেন, “অর্থঅৎ কোরআনে বৃদ্ধি ও ক্ষতি সম্পর্কে উচ্চারণ করা কোন ভাবেই উচিত না। কেননা কোরআনে বৃদ্ধির বিপক্ষে দৃঢ় ইজমা রয়েছে এখন থাকলো ঘাটতি বা হ্রাস হওয়া এ ব্যাপারে জাফরী মাযহাবের সুদৃঢ় আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে এর বিপরীত।

(৬) তাফসিরে লাওয়ামে উত তানজীল (১৩২৬ হিজরীতে লাহোর হতে প্রকাশিত) গ্রন্থের ৪র্থ খন্ডের ২৩ পৃষ্ঠার ২য় লাইনে কোরআন সম্পর্কে আক্বীদা এভাবে প্রকাশ করেছে-নবী পাক (সা.) এর পর পবিত্র কোরআন ও ইতরাত (নবী পাক (সা.) এর সন্তান-সন্ততি) উম্মতে মোহম্মদীর (সা.) জন্য পথ প্রদর্শক। সে কারণে কোরআনে যদি শাব্দিক কিম্বা অর্থের পরিবর্তনের সুযোগ থাকতো তাহলে কোরআন ইসলাম ধর্মের দিক নির্দেশক কিভাবে হতো?

(৭) আল মিযান ফি তাফসিরীল কোরআন গ্রন্থের (ইরান থেকে প্রকাশিত) ১২নং খন্ডের ১০৪ পৃষ্ঠায় ১ম লাইনে আল্লামা সাইয়্যেদ মোহাম্মদ হোসাইন তাবাতাবাঈ সূরা হিজবেরর ৯নং আয়াত “ইন্না নাহনু নাজ্জালনাজ জিকর ওয়া ইন্না লাহু লাহাফেজুন” এর ব্যাখ্যায় উলেখ করেন যে, এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, কোরআন সকল প্রকার তাহরীফ ও পরিবর্তন থেকে সুরক্ষিত।

(৮) কোরআন মাজিদের তরজমায় র্আলামা সাঈয়্যেদ জ্বীশান হায়দার জাওয়াদী ( লক্ষণ ভরত হতে প্রকাশিত) সূরা হিজরের ৯নং আয়াতের টীকায় উলেখ করেন, এই আয়াতটি আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে কোরআনের শ্রেষ্ঠত্বের সুস্পষ্ট ঘোষণা এতে বলা হয়েছে যে, আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং এতে কোন ব্যক্তি বা বান্দার এক হরফ বা এক আয়াত পরিমাণ অংশগ্রহণ নেই। এবং মিথ্যার সংমিশ্রণ অথবা এর ধ্বংসের কোন সম্ভাবনা নেই। এটা সুস্পষ্ট ঘোষণা যে, পবিত্র কোরআনে কোন ধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয় আর না-ই এতে কোন আয়াত কম হতে পারে অথবা বৃদ্ধি।

(৯) ‘মুতালা’য়ে কোরআন (ভারত থেকে প্রকাশিত) গ্রন্থের ৬১ পৃষ্ঠা হতে ১০৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আল্লামা সৈয়্যেদ জ্বীশান হায়দার জাওয়াদী তাহরীফে কোরআন বিষয়ে ঋণাত্মক যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করেছেন যাদ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পবিত্র কোরআনে কোনরকম পরিবর্তন সাধিত হয়নি।

উপরে উলেখিত বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামদের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতিগুলো একথা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট যে, শিয়ারা কোরআনের তাহরীফে বিশ্বাস করেন না। বর্তমান কোরআনের উপরে তারা পরিপূর্ণ ঈমান রাখেন।

এখন কথা হলো কোন কোন আলিম দূর্বল হাদীসের ভিত্তিতে কোরাআনের পরিবর্তনের কথা উলেখ করেছেন সেটা ছিল যয়ীফ বা দূর্বল হাদীসের কারণে। এ ধরনের অনেক হাদীস স্বয়ং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের গ্রন্থসমূহে পাওয়া যায়। আহলে সুন্নাতের গ্রন্থসমূহ থেকে কিছু দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো।

(১) তাফসীরে দুররে মানসুর গ্রন্থে (মিশর ও লেবানন হতে মুদ্রিত প্রথম খন্ড, পৃঃ ৩০২, লাইন ১৯) ইমাম জালালউদ্দীন সূয়ুতী লিখেন যে-মালিক আবু ওবায়দা আবদ বিন হামিদ আবু ইয়ালী থেকে, তিনি ইবনে জারীর থেকে ইবনে জারীর ইবনুল আমবারী তার মাসাহিফে এবং বাইহাক্বী তার সানানে ওমরু বিন রাফে থেকে তিনি (রাফে) বলেন, পয়গম্বর (সা.) এর স্ত্রী হযরত হাফসার জন্য আমি কোরআন নকল করছিলাম এমন সময় হযরত হাফসা বললেন-যখন কোরআনে এই আয়াত “হাফেজু আল সালাতি ওয়াসসালাতিল ওস্তা” (সূরা বাক্বারাঃ ২৩৮) পর্যন্ত পৌছাবে তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করবে। ওমরু বলে যে, আমি যখন ঐ আয়াত পর্যন্ত পৌছালম তখন হযরত হাফসাকে জিজ্ঞাসা করলাম উম্মুল মুসলিমিন হযরত হাফসা তখন ঐ আয়াতটি আমার সামনে এভাবে পাঠ করলেন, “হাফেজু আলাস সালাতি ওয়াস সালাতিল ওস্তা ওয়া সালাতিল আসর ওয়া কু-মু লিলাহি ক্বানিতিন” অতঃপর বললেন-আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে আমি আল্লাহ্‌র রাসুল (সা.)কে এ আয়াতটি এভবে পাঠ করতে শুনেছি।

(২) তাফসীরে দুররে মানসুর গ্রন্থের উপরেলিখিত পৃষ্ঠায় ২৫নং লাইনে দ্বিতীয় রেওয়াত আবি ইউনুস থেকে নকল হয়েছে যিনি উম্মুল মুসলিমিন হযরত আয়শার মুসহাফের (কোরআন শরীফ) লেখক ছিলেন, সঠিক রূপে তাঁর রেওয়াতটিও একইভাবে উলেখিত হয়েছে যে, হযরত আয়শা তার নিকট এসে আয়াতটি এভাবে উলেখ করেন, “হাফেজু আলাসসালাতি ওয়াস সালঅতিল ওস্ত ওয়াস সালাতিল আসর কু-মু লিলাহি ক্বানিতিন” এবং বলেন আমি রাসুলাল্লাহ (সা.)কে এই আয়াত এভাবে তেলাওয়াত করতে শুনেছি।

(৩) তাফসিরুল বায়জাওয়ী “আল মুসাম্মা-এ-আনওয়ারুনতানজিল ওয়া আসরারুল তাওয়ীল” গ্রন্থের প্রথম খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠায় ২৩তম লাইনে হযরত আয়শা এই রেওয়াত বর্ণনা করেন যে রাসুল (সা.) সালাতিল ওস্তা ও সালাতিল আসর পড়তেন। উম্মুল মুসলিমিন হাফস ও হযরত আয়শার এই দুই রেওয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে আয়াতে তাহরীফ করা হয়েছে এবং “সালাতিল আসর বাক্যটি ঐ আয়াত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কোরআনে আয়াতটি এ ভাবে আছে, “হাফেজু আলাস সালাতি ওয়াস সালাতিল ওস্তা ওয়া কু-মু লিল্লাহ ক্বানিতিন।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৩৮)

যদি পয়গম্বর (সা.) এর ক্বেরাত এবং হযরত হাফসা ও হযরত আয়শা কোরআনে “সালাতিল আসর” এই বাক্যটি বিদ্যমান ছিল।

(৪) তাফসীরে দুররে মানসুরে মিশর লেবানন হতে মুদ্রিত, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৮০ লাইন ১৮) ইবনুল ফারিস আন যায়দ বিন আসলাম হতে রেওয়াত বর্ণিত হয়েছে যে, “হযরত ওমর বিন খাত্তাব জনগণের উদ্দেশ্যে খুৎবায় বলেন, তোমরা রজম সম্পর্কে সন্দেহ করো না কেননা সত্য হল যে, আল্লাহ্‌র রাসুল (সা.) রজম করেছিলেন, আবু বকরও করেছিলেন এবং আমি ইচ্ছা করলাম রজমের আয়াতকে কোরআনে সন্নিবেশিত করতে।

(৫) তাফসীরে দুররে মানসুর (মিশর লেবানন হতে মুদ্রিত, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৭৯, শেষ লাইন), বুখারী ও মুসলিম ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়াত করেছেন যে একদিন হযরত ওমর খুৎবা দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন, সৃষ্টিকর্তার হামদ ও সানা করার পর বললেন-হে লোক সকল আল্লাহ্‌ মোহাম্মদ (সা.)কে সত্যের সাথে প্রেরণ করেছেন এবং নিজের কেতাব তাঁর উপর অবতীর্ণ করেছেন। অতএব, যা কিছু তাঁর উপর নাযিল করা হয়েছে এরমধ্যে রজমের আয়াতটিও ছিল আমি নিজে পাঠ করেছি এবং শুনেছি। ঐ আয়াতটি ছিল এরকম- “আশ শেইখো ওয়াশ শেইখা ইযা জানায়া ফারজামুহুমা আল বাততাতা” এবং রাসুল (সা.) রজম করেছিলেন এবং তারপর আমি রজম করে। কিন্তু এখন আমি ভয় পাচ্ছি যে দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হবে এবং বলার লোক বলবে-কই আমরা তো কোরআনে রজমের আয়াত পাইনি (এই আয়াতটি কোরআনে নেই)।

(৬) তাফসীরে দূররে মানসুর (মিশর ও লেবাননে মুদ্রিত, পৃষ্ঠা ১৬৯, লাইন ২৫) গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে-সূরা আহযাবে ৭৩টি আয়াত আছে কিন্তু সুরা আহযাব, সূরা বাক্বারার সমান ছিল অথবা বড় ছিল যাতে রজমের আয়াতও ছিল।

(৭) বুখারী শরীফে (বাংলা অনুবাদ, আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬০৪, হাদী নং ৪৫৭৫) উল্লেখ আছে ইবরাহীম (নাযয়ী) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের কিছু সংখ্যক সঙ্গী সাথী আবু দারদার সাথে সাক্ষাতের জন্য (শামে) এসে পৌঁছলেন। আবু দারদাও তাদেরকে তালাশ করে পেয়ে গেলেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের সঙ্গীদের বললেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) এর কেরায়াত অনুযায়ী কে কোরআন তিলাওয়াত করে? আলকামা ইবনে কায়েস বললেন, আমরা সবাই তাঁর কেরায়াত অনুযায়ী পাঠ করি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে ভাল হাফেজ (ও উত্তম কোরআন পাঠকারী)? এবার সবাই আলকামা ইবনে কায়েসকে দেখিয়ে দিলে আবু দারদা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে সুরা “ওয়াল লাইলি ইযা ইয়াগশা” কিভাবে পড়তে শুনেছেন? আলকামা ইবনে কায়েস বললেন, (তৃতীয় আয়াত) “ওয়াযযাকারি ওয়াল উনসা” পড়তে শুনেছি। এ কথা শুনে আবু দারদা বললেন, তোমরা সাক্ষী থাকো, আমিও নবী (সা.)কে এভাবেই পড়তে শুনেছি। কিন্তু এসব (শামবাসী) লোকের চায় যে, আমি যেন আয়াতটি “ওয়ামা খালাকায যাকারা ওয়াল উনসা” পড়ি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাদের কথা শুনবো না। (কিন্তু বর্তমান কোরআনে ‘ওয়ামা খালাকায যাকারা ওয়াল উনসা’ মওজুদ আছে। অথচ উলেখিত রেওয়াত অনুযায়ী ঐ আয়াতটিতে ‘মা’ শব্দটি মওজুদ ছিল না।

অত্র বিষয়ের উপর আমার দীর্ঘ আলোচনা করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু স্থানাভাবের কারণে আলোচনাটি সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে। সারা বিশ্ব আজ যেখানে দুটি স¤প্রদায়ে বিভক্ত, এক মুসলমান এবং অপরটি মুসলমানদের বিপক্ষ শক্তি ইহুদী নাসারা চক্র। আজ তারাই সারা বিশ্বকে করায়ত্ত করার মানসে মুসলিম শক্তিকে ধ্বংস করার হীন প্রচষ্টায় লিপ্ত সেখানে আজ মুসলমানরা একে অপরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচার চালিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও ফাটল সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাচ্ছে এবং আমি এও বিশ্বাস করি যে এ ধরণের হীন কর্মে মষ্টিমের কয়েকজন আলেমরাই সম্পৃক্ত, সমগ্র আলেম সমাজ নয়।

সুতরাং, আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, শিয়ারা কোরআনের তাহরীফে বিশ্বাস করেন না। এ সংক্রান্ত অপবাদ অপপ্রচার যদি কেউ চালান তাহলে তা হবে উদ্দেশ্র প্রণোদিত, মিথ্যা ও ইসরাম বিরোধী শক্তির হাত শক্তিশালী করার অপপ্রয়াস। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .