মজিদুল ইসলাম শাহ
হাওজা নিউজ রিপোর্ট অনুযায়ী,
اَللّـهُمَّ لا تَخْذُلْني فيهِ لِتَعَرُّضِ مَعْصِيَتِكَ، وَلاتَضْرِبْني بِسِياطِ نَقِمَتِكَ، وَزَحْزِحْني فيهِ مِنْ مُوجِباتِ سَخَطِكَ، بِمَنِّكَ وَاَياديكَ يا مُنْتَهى رَغْبَةِ الرّاغِبينَ.
হে আল্লাহ! তোমার নির্দেশ অমান্য করার কারণে এ দিনে আমায় লাঞ্চিত ও অপদস্থ করোনা। তোমার ক্রোধের চাবুক দিয়ে আমাকে শাস্তি দিওনা। সৃষ্টির প্রতি তোমার অসীম অনুগ্রহ আর নিয়ামতের শপথ করে বলছি তোমার ক্রোধ সৃষ্টিকারী কাজ থেকে আমাকে দূরে রাখো। হে সর্বশ্রেষ্ঠ আবেদন কবুল কারী।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট
আল্লাহর অবাধ্যতা অপমানজনক,যেমন তাঁর আনুগত্য সম্মানজনক।
হযরত আলী (আ:) বলেছেন: إِلَهِي كَفَى لِي عِزّاً أَنْ أَكُونَ لَكَ عَبْداً وَ كَفَى بِي فَخْراً أَنْ تَكُونَ لِي رَبّاً
হে আল্লাহ আমার সম্মানের পক্ষে যথেষ্ট যে আমি তোমার দাস,এবং আমার গর্বের পক্ষে যথেষ্ট যে তুমি আমার পালনকর্তা। (আল-খেসাল খ. ২ পৃ. ৪২০)
পাপ মানুষের মানবতাকে ধ্বংস করে দেয়,তার অস্তিত্বের মান নষ্ট করে দেয়,তার শুদ্ধ প্রকৃতিকে দূষণ করে দেয়, স্রষ্টা ও সৃষ্টির সামনে পাপীকে লজ্জিত করা হয়,মানুষকে বিবেকের চাবুক সহ্য করতে হয়,দুনিয়ার অপমান এবং আখেরাতের অপমান নিয়তিতে পরিণত হয়,মানুষকে শয়তানের দাস এবং আত্মার বশীভূত বানিয়ে দেয়। পাপের অপমানের জন্য কি এটাই যথেষ্ট নয়? কারও বিবেক যদি মরে না যায় এবং কারও স্বভাব দূষিত না হয় তাহলে সেই ব্যক্তি গুনাহ থেকে লজ্জিত বোধ করে, নিজেকে আল্লাহর সামনে লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করে এবং এর চেয়ে মারাত্মক ও বেদনাদায়ক শাস্তি আর কী হতে পারে ?!
ঐশিক প্রতিশোধ: এটি সত্য ... হে অআল্লাহ! পাপের কবলে পড়ে যাওয়া,লাঞ্ছনা ও অপমান নিয়ে আসে,এবং গুনাহগার হওয়া,এই জিনিস গুলো তোমার প্রতিশোধের নিশানা বানিয়ে দেয়। তবে... তুমি পরম করুণাময়,নেহেরবান তুমি আল্লাহ,তুমি স্রষ্টা,তুমি স্বয়ংসম্পূর্ণ,হে প্রভু, আমাদের শাস্তি দিতে কারর দরকার লাগে না,তবে,আমাদেরকে তোমার দয়ার প্রয়োজন আছে, আমাদের পাপের জন্য আমাদের লাঞ্ছিত করবেন না এবং তোমার প্রতিশোধের চাবুক দিয়ে আমাদের তিরস্কার করবেন না।
দুআর বিশেষ বাক্য গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ
১- اللَّهُمَّ لاَ تَخْذُلْنِي فِيهِ لِتَعَرُّضِ مَعْصِيَتِكَ:
হে আল্লাহ বেআদবীর কারণে সেদিন আমাকে অপমান করবেন না।
গুনাহ এবং তাকওয়ার মধ্যে পার্থক্য
গুনাহ মানুষকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে কিন্তু তাকওয়া মানুষকে প্রিয় করে তোলে,আপনি যতই শিক্ষিত হোন না কেন,আপনার দীর্ঘতর ডিগ্রি রয়েছে;ধন-সম্পদ প্রচুর পরিমাণে আছে, কিন্তু যদি গুনাহকারী হন তাহলে লাঞ্ছিত হবে;আপনি যদি ইবাদত ই বান্দেগী করেন তাহলে আল্লাহ আপনার ভালবাসা মানুষের হৃদয়ে রাখবেন।
তাকওয়া ভালোবাসা ও প্রেম নিয়ে আসে: إِنَّ الَّذینَ آمَنُوا وَ عَمِلُوا الصَّالِحاتِ سَیَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمنُ وُدًّا
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে। শীঘ্রই পরম করুণাময় তাদের জন্য (মানুষের হৃদয়ে) ভালবাসা ঘোষণা করবেন। (সুরা মারিয়াম ৯৬)
২– وَ لاَ تَضْرِبْنِي بِسِيَاطِ نَقِمَتِكَ
আর তোমার আযাবের চাবুক থেকে আমার প্রতি সদ্ব্যবহার করবেন না। এই বন্যা,এই সুনামি, এই ভূমিকম্প এখানে ওখানে আসতে থাকে,এগুলো এল প্রকার আল্লাহর আযাবের চাবুক;এই ভূমিকম্প এবং বন্যা আল্লাহর বাহিনী আছে,কেন বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ,প্রকৃতির ক্ষোভ ?! কারও বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না,এই মামলার বিচার করা যায় না কারণ এটি আমাদের সচেতনতা এবং তাঁর প্রতি মনোযোগের জন্য আল্লাহর চাবুক।
৩– وَ زَحْزِحْنِي فِيهِ مِنْ مُوجِبَاتِ سَخَطِكَ
এই দিনে,তোমাকে রাগান্বিত করে এমন সমস্ত বিষয় থেকে আমাকে দূরে রাখুন। রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে কিছু গুনাহ এমন রয়েছে যা আল্লাহর ক্রোধকে উদ্বুদ্ধ করে। এবং তারপরে আল্লাহ নিজের সম্মান ও গৌরবের শপথ করেন যে তোমাকে কখনও ক্ষমা করা হবে না!! যদিও আল্লাহ করুণাময়। (কাফি খ.১ পৃ.৪৭)
৪– بِمَنِّكَ وَ أَيَادِيكَ তোমার অনুগ্রহের অধিকার এবং সেই নেয়ামতের মাধ্যমে আমাকে যে নেয়ামত দিয়েছেন,হে আল্লাহ যিনি সমস্ত মুমিনের চূড়ান্ত গন্তব্য।
৫–يَا مُنْتَهَى رَغْبَةِ الرَّاغِبِينَ হে আল্লাহ যিনি সমস্ত মুমিনের চূড়ান্ত গন্তব্য।
ফলাফল
দুআর বার্তা: ১- গুনাহ হল অপমান ও লাঞ্ছনার কারণ।
২- অআল্লাহর ক্রোধ এবং তাঁর প্রতিশোধ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা;
৩- আল্লাহর তাঁর বান্দাদের জন্য আগ্রহী হওয়া ।
নির্বাচিত বার্তা: প্রতিটি গুনাঝ নিজেই নিজেই অআল্লাহর ক্রোধ এবং তাঁর শাস্তির কারণ
ইমাম কাজিম (আ:) থেকে বর্ণিত: প্রতিদিন রাত্রে আল্লাহর একটি ফেরেশ্তা আওয়াজ দেয়,হে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাক যদি পশু এবং দুধ খাওয়া শিশু ও আর যদি তোমাদের প্রবীণদের চিন্তা না হত তাহলে তোমাদের উপর আল্লাহর যন্ত্রণাদায়ক আজাব অবতীর্ণ হত,যাতে পিসে ধুলো হয়ে যেতে। (কাফি খ. ২ পৃ. ২৭৬)