মজিদুল ইসলাম শাহ
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পবিত্র রমজান মাসের ২৩ম দিনের দুআ বাংলা অনুবাদ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সহ
اَللّـهُمَّ اغْسِلْني فيهِ مِنَ الذُّنُوبِ، وَطَهِّرْني فيهِ مِنَ الْعُيُوبِ، وَامْتَحِنْ قَلْبي فيهِ بِتَقْوَى الْقُلُوبِ، يا مُقيلَ عَثَراتِ الْمُذْنِبينَ.
হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দাও। আমাকে সব দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র কর। তাকওয়া ও খোদাভীতির মাধ্যমে আমার অন্তরকে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর। হে অপরাধীদের ভুল-ত্রুটি মার্জনাকারী।
গুরুত্বপূর্ণ দিক
১) তওবার ঝর্ণার তীরে যা আপনাকে খাঁটি ও পবিত্র করে; ২) হৃদয় ও তাকওয়ার যত্ন।
দুআর বিশেষ বাক্য গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ
১- أَللّـهُمَّ اغْسِلْنى فيهِ مِنَ الذُّنُوبِ:
…..
২- وَ طَهِّـرْنى فيـهِ مِـنَ الْعُـيُوبِ:
…..
৩- وَ امْتَحِنْ قَلْبى فيهِ بِتَقْوَى الْقُلُوبِ:
সকাল-সন্ধ্যা আমাদের হৃদয় পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের হৃদয় পরীক্ষা করে, আমরা কি সচেতন?
আমাদের অবহেলা বা আমাদের একটি ভুল এই হৃদয়ের জীবন শেষ করে দিতে পারে।
وَ لِيَبْتَلِيَ اللَّهُ مَا فِي صُدُورِكُمْ وَ لِيُمَحِّصَ مَا فِي قُلُوبِكُمْ وَ اللَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ؛
এবং আল্লাহর তোমাদের হৃদয়ের অবস্থা পরীক্ষা করতে চান এবং তোমাদের বিবেকের সত্যতা স্পষ্ট করতে চান এবং তিনি নিজেই প্রতিটি হৃদয়ের অবস্থা জানেন।
أُولٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَى لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَ أَجْرٌ عَظِيمٌ ؛
এরাই সেসব লোক যাদের অন্তরকে আল্লাহ তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।
হৃদয়ের পরীক্ষা করার জন্য কয়েকটি জায়গা:
ক) ইবাদত: যেমন, নামায, দান, রোজা, হজ ইত্যাদি হল পরীক্ষা ও পরীক্ষার স্থান।
তাদের মধ্যে পরীক্ষা হল যে এই ইবাদত উপলক্ষে হৃদয়ে কত আন্তরিকতা অনুভূত হয়।
۔اللہ ٰ کا ارشاد ہے: وَ قَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُوراً ؛
অতঃপর আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোযোগ দিব এবং তাদের সকলকে উড়ন্ত ধূলিকণার মত করে দেব।
খ) জ্ঞান: এটি হৃদয়ের পরীক্ষার জন্য একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র, যেখানে অনেক লোক ব্যর্থ হয় যেমন: একটি দল জ্ঞান অর্জন করেছে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিন্তু পরে তাদের উদ্দেশ্য পাল্টে যায় গোপন আকাঙ্ক্ষা, খ্যাতি, অবস্থান, সমসাময়িকদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব, তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া-বিবাদ, সাফল্য পেতে শুরু করে।
গ) মতানৈক্য, বিতর্ক, বিবাদ: এটিও শয়তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারণভূমি বরং এটা চাষাবাদ, এজন্যই আল্লাহ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন কিভাবে এ বিষয়টির মোকাবিলা করতে হবে।
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَ الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَ جَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَ هُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ ؛
....
কারণ প্রায়শই তর্ক বা বিরোধের পালা আসে যখন সত্যের পক্ষে যুক্তি তৈরি করা হয় এবং তারপরে ব্যক্তিগত বিষয়ে আসে, তখন প্রকৃত অর্থে হৃদয় পরীক্ষা করা হয়।
ঘ) আকাঙ্ক্ষা: অধিকাংশ মানুষ এটাকে শুধুমাত্র অন্তরের পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করে, যেমন: সম্পদ, নারী, গাড়ি, সন্তান, ঘর ইত্যাদির আকাঙ্ক্ষা, যদিও এগুলোও পরীক্ষার একটি উৎস।
إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَ أَوْلاَدُكُمْ فِتْنَةٌ وَ اللَّهُ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ ؛
তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষা মাত্র এবং মহান প্রতিদান একমাত্র আল্লাহর কাছে।
জ) পদ: পদের জন্য কত হৃদয় বিদ্বেষে ভরে যায় এবং কত চিন্তা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, খুব কম লোকই থাকবে যারা এসব অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। হিংসা, বিদ্বেষ, আত্মসাৎ এই সব পদ ও পদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
চ) পারিবারিক ইতিহাস: এটিও হৃদরোগের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র। পারিবারিক অহংকার হল এমন রোগ যা পারিবারিক অহংকার থেকে উদ্ভূত হয় এবং এর মধ্যে বিকাশ লাভ করে।
এই হৃদরোগের অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিম্নলিখিত।
১. অজ্ঞতা ২. প্রলোভন ৩. অবাধ্যতা ৪. সন্দেহ ৫. আল্লাহর জিকির অবহেলা করা ৬. ইচ্ছা ৭. খারাপ বন্ধু ৮. হারাম যেমন সুদ, ঘুষ ইত্যাদি ৯. গীবত করা, ১০.গীবত করা ১১. যেসব জিনিস দেখতে আল্লাহ হারাম করেছেন তা দেখা ১২. পার্থিব লক্ষ্যে জড়িয়ে পড়া এবং সেগুলোকে নিজের জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করা।
৪- يـا مُقيـلَ عَثَـراتِ الْمُذْنِبـينَ:
হে অবাধ্যদের গুনাহ মাফকারী! আমাদের অবস্থার প্রতি মনোযোগ দিন এবং আমাদের প্রতি রহম করুন এবং আমাদের সকল প্রকার কুৎসিত থেকে দূরে রাখুন।
ফলাফল
দুআর বাণী: ১- গুনাহ মাফের অনুরোধ ২- ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকার অনুরোধ 3- অন্তরের তাকওয়া দ্বারা পরীক্ষা ৪- আল্লাহর তাওবা কবুল করা।
নির্বাচিত বাণী: আমাদের প্রতিটি অঙ্গ ও অঙ্গের নিজস্ব মর্যাদা ও কিছু অধিকার রয়েছে, যার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করা খুবই জরুরি।
কোরান অন্তরের তাকওয়াকে আরোপ করে: «ذَلِكَ وَ مَن يُعَظِّمْ شَعائِرَ اللَّهِ فَإِنَّها مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ؛
এটাই বাস্তবতা! আর যারা আল্লাহর ইবাদত করে, তা তাদের অন্তরের তাকওয়া থেকে।
আমরা যদি তাকওয়া অবলম্বন করতে চাই তবে সর্বপ্রথম আমাদের অন্তরকে ধার্মিক করতে হবে যাতে তার দ্বারা শরীরও ধার্মিক হয়।