۲۰ مهر ۱۴۰۳ |۷ ربیع‌الثانی ۱۴۴۶ | Oct 11, 2024
হযরত ইমাম
হযরত ইমাম মূসা কাযিমের (আ.) শুভ জন্ম দিবস

হাওজা / ২০ যিল হজ্জ হযরত ইমাম মূসা কাযিমের (আ.) শুভ জন্ম দিবস

অনুবাদ: ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান (২০ যিল হজ্জ, ১৪৪৩ হি)

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ ২০ যিল্ হজ্জ্ (এক রেওয়ায়ত ও বর্ণনা মতে) মহানবীর (সা.) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ.) মাসূম বারো ইমামের ৭ম ইমাম হযরত মূসা ইবনে জাফার আল কাযিমের (আ.) শুভ জন্ম দিবস ।

১২৮ (মতান্তরে ১২৯) হিজরী সালের ২০ যিল হজ্জ পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদীনার মধ্যবর্তী আব্ওয়া নামক এক মঞ্জিলে (যেখানে পথিক ও মুসাফিররা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যাত্রাবিরতি করে সেই স্থান) ত্রয়োদশ উমাভী (উমাইয়া বংশীয়) খলিফা ইব্রাহীম ইবনে ওয়ালীদের শাসনামলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম হামীদাহ্ যার সম্পর্কে ইমাম কাযিমের (আ.) পিতা আহলুল বাইতের (আ.) ৬ষ্ঠ মা'সূম ইমাম হযরত জাফার সাদিক্ব (আ.) বলেছেন : হামীদাহ্ পাপ-পঙ্কিলতার আবর্জনাসমূহ থেকে মুক্ত ও পবিত্র।

حَمِیْدَةُ مُصَفَّاةٌ مِّنَ الْأَدْنَاسِ کَسَبیْکَةِ الذَّهَبِ.

বেশ কিছু হাদীস থেকে বোঝা যায় যে , হযরত ইমাম জাফার সাদিক্ব মহিলাদেরকে (আ) হযরত হামীদার কাছে শরিয়তের আহকাম ( বিধিবিধান সমূহ ) শেখার নির্দেশ দিতেন । আর এ থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে হযরত হামীদা ছিলেন বিদূষী নারী এবং শরিয়তের আহকাম ( বিধিবিধান সমূহ ) সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ জ্ঞানী ( আলিমা )।

হযরত মূসা কাযিম (আ.) ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে যমিনের ওপর দুহাত রেখে এবং আসমানের দিকে মাথা উঁচু করেন যা মহানবীও (সা) করেছিলেন । আর তাঁর ( সা ) পরে সকল মাসূম ইমামের ক্ষেত্রেও এই চিহ্ন ও নিদর্শন প্রকাশিত হয়েছে ।

হযরত ইমাম কাযিমের (আ) শুভ মীলাদের ওয়ালীমাহ ( জন্ম গ্রহণ উপলক্ষে প্রীতি ভোজ ) :

আবূ আব্দিল্লাহ আল - বার্ক্বী মিনহাল আল - ক্বাসসাব থেকে বর্ণনা করেছেন: আমি পবিত্র মক্কা থেকে মদীনায় যাচ্ছিলাম । পথিমধ্যে আবওয়া নামক এক মঞ্জিলে আমি অবগত হই যে ইমাম জাফার সাদিক্ব (আ) এক পুত্র সন্তান লাভ করেছেন। আমি ইমাম সাদিক্বের আগেই মদীনা পৌঁছে যাই । তিনি আমার এক দিন পরে মদীনায় পৌঁছান এবং তিনদিন ধরে মদীনাবাসীদের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করেন। আমিও ঐ তিনদিন উক্ত ভোজ সভায় অংশগ্রহণ করে এতটা খাবার খাই যে এরফলে আমার পেট একদম ভরে যেত এবং এতটা ভারী হয়ে যেতাম যে আমি বালিশের ওপর ভর দিয়ে বসে থাকতাম এবং পরের দিন পর্যন্ত আর কিছুই খেতাম না ।

ইমাম জাফার সাদিক্ব (আ) তাঁর সকল সন্তানের মধ্যে কেবল ইমাম মূসা কাযিম (আ)কেই সবচেয়ে বেশি ভালো বাসতেন।

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলিম কামালুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে তালহা শাফিঈ ইমাম কাযিম (আ.) সম্পর্কে বলেছেন : "সুউচ্চ মাকাম ( অবস্থান ) ও সুমহান শান ও মর্যাদার অধিকারী ইমাম ( মূসা কাযিম - আ - ) রাত সমূহ অনেক অনেক ইবাদত বন্দেগীর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতেন এবং সবসময় তিনি মহান আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করেই যেতেন। তিনি স্পষ্ট ও প্রকাশ্য কারামত সমূহের অধিকারী ছিলেন। তিনি ভোর অর্থাৎ ফজর পর্যন্ত সিজদায় ও নামাযে দণ্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি যাপন করতেন । দিনগুলো তিনি রোযা রেখে ও দান সদকা করে অতিবাহিত করতেন। আর যেহেতু তিনি অনেক ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অধিকারী ছিলেন এবং যে সব ব্যক্তি তাঁর প্রতি অন্যায় ও অভদ্র আচরণ করত তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন সেহেতু তাঁকে কাযিম ( کاظم ) রাগ হজম কারী / ক্রোধসম্বরণকারী উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। তিনি দয়া , অনুগ্রহ ও উপকার সাধনের মাধ্যমে পাপীদেরকে শাস্তি দিতেন। আর যারা তাঁর প্রতি অন্যায় ও জুলুম করেছিল তাদেরকে ক্ষমা করার মাধ্যমে তাদের মোকাবেলা করতেন”।

যেহেতু তিনি অনেক বেশি ইবাদত - বন্দেগী করতেন সেহেতু তাঁকে আব্দে সালেহ (মহান আল্লাহর নেক বান্দা) বলা হত । ইরাকে তিনি বাবুল হাওয়ায়েজ ইলাল্লাহ ( মহান আল্লাহর দরবারে হাজত ও নিয়ায সমূহ পূরণ করার মাধ্যম বা গেট ওয়ে ) বলে অভিহিত হন । যেহেতু মহান আল্লাহর কাছে তাওয়াসসুল কারীগণ তাঁকে ওয়াসিতা (মাধ্যম বা উসিলা) করে নিজেদের হাজত সমূহ পূরণ করার প্রার্থনা করে নিজেদের হাজত ও মনস্কামনা পূরণ‌করতেন এবং তাঁর কারামত সমূহ এবং তার সুউচ্চ আধ্যাত্মিক মাকাম সমূহ মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে বিস্ময়াভিভূত করে দিয়েছে সেহেতু তাঁরা বিশ্বাস করে যে তিনি মহান আল্লাহর দরবারে আধ্যাত্মিকতার এতটা উচ্চ মাকাম ও মর্যাদার অধিকারী যে যা কখনো বিলুপ্ত হওয়ার নয় । " - কামালুদ্দিন শাফিঈর বক্তব্য সমাপ্ত।

ইমাম মূসা কাযিমের (আ) কিছু অমিয় বাণী নিচে উদ্ধৃত করা হল :

১. ইমাম মূসা কাযিম (আ.) তার এক অনুসারীদের বলেছেন : হে অমুক! মহান আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য বল এমনকি তাতে তোমার ধ্বংস হলেও ; কারণ এতেই রয়েছে নিহিত তোমার ( প্রকৃত ) সাফল্য।হে অমুক! মহান আল্লাহকে ভয় কর এবং বাতিলকে ( মিথ্যা অসত্য ) ছেড়ে দাও এমনকি তাতে তোমার সাফল্য নিহিত থাকলেও; কারণ এতেই রয়েছে নিহিত তোমার ( প্রকৃত ) ধ্বংস।

২. ইমাম কাযিম (আ.) বলেন : যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে কথা বলবে সে ধ্বংস হবে ; যে ব্যক্তি নেতৃত্ব লাভের চেষ্টা করবে সে ধ্বংস হবে এবং যে ব্যক্তির মাঝে উজব (আত্ম অহংকার) প্রবেশ করবে সে ধ্বংস হবে ।

৩. ইমাম কাযিম (আ.) বলেন : জালিম শাসকের (সুলতান) অধীনে কাজ করার কাফফারা হচ্ছে দ্বীনী ভাইদের প্রতি ইহসান (তাদের উপকার সাধন)।

৪. মানুষ যত গুনাহ ও পাপ করবে যার সাথে তারা আগে পরিচিত ছিল না (অর্থাৎ যত নিত্য নতুন পাপ করবে) ততই মহান আল্লাহ তাদের জন্য এমন সব বালা মুসিবতের (বিপদাপদ) ব্যবস্থা করবেন যা তারা আগে কখনো বালা (বিপদ) হিসেবে গণ্যই করত না।

৫. ইমাম কাযিম (আ) বলেন : মহান আল্লাহর শপথ ! ( মহান আল্লাহর পক্ষ‌থেকে ) সহায়তা ও সাহায্য জীবন যাপনের খরচ ও ব্যয়ের পরিমাণে অবতীর্ণ হয় । আর বিপদের পরিমাণ মাফিক ধৈর্য্যও অবতীর্ণ ( নাযিল) হয় । যে ব্যক্তি জীবনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে ( মিতব্যয়ী হয় ) ও সন্তুষ্ট থাকে তার ক্ষেত্রে নেয়ামত সমূহ স্থায়ী হয় । আর যে ব্যক্তি অপব্যয় ও অপচয় করে , তার থেকে নেয়ামত সমূহ বিলুপ্ত হয়ে যায়। আমানতদারি ও সততা (সত্যবাদিতা) রিযিক (জীবিকা ) আনয়ন করে ; খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) ও মিথ্যাবাদিতা দারিদ্র ও নিফাক ( কপটতা ) আনয়ন করে ; আর যখন মহান আল্লাহ পিপীলিকার জন্য অমঙ্গল কামনা করেন তখন তার পাখা গজিয়ে দেন ; অত:পর তা উড়ে যায় এবং পাখীর খাদ্য ও শিকারে পরিণত হয় ।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে আহলুল বাইত (আ.) এবং ইমাম মূসা কাযিমের (আ) প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তৌফিক দিন।

দ্র: মরহূম আব্বাস কোম্মী প্রণীত নেগহী বে যেন্দেগীয়ে চাহরদাহ মাসূম )

تبصرہ ارسال

You are replying to: .