লেখা: মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, মুসলিম বিশ্বের সমসাময়িক ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে আরবাঈন পালন অর্থাৎ ইমাম হুসাইনের (আঃ) শাহাদাতের ৪০ তম দিবস ( আরবাঈন)পালনের অশেষ কল্যাণ ও অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে এবং তা অর্জিত হচ্ছে । ইসলামী বিপ্লবের নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ আল- উযমা ইমাম খামেনেঈর ভাষায় আরবাঈন মুসলিম উম্মাহর সাহায্য (মদদ) ও বিজয় সাফল্যের জন্য মহান আল্লাহর ঐশী ইচ্ছার বহি:প্রকাশ । তাই এই আরবাঈন হচ্ছে ইসলামের আধ্যাত্মিক (রূহানী) , দ্বীনী ( ধর্মীয়) , আদর্শিক , নৈতিক, সা়ংস্কৃতিক , সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের সর্ববৃহৎ সমাবেশ ও ইজতেমা। আরবাঈনের এ বিশ্ব সমাবেশ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য , সংহতি ও মর্যাদা সুসংহত করবে ও সমুন্নত রাখবে । হুব্বুল হুসাইন (আঃ) ইয়াজমাউনা ( ইমাম হুসাইনের (আঃ ) প্রেম , ভালোবাসা ও মুহব্বত আমাদেরকে সবাইকে একত্রিত করছে ) -- এ শিরোনামে সবাই কারবালায় আরবাঈনের এ বিশ্ব সমাবেশে একত্রিত হচ্ছে । আল- হক ( সত্যিকার অর্থে ) শহীদদের নেতা এবং বেহেশতের যুবকদের সর্দার ও সরোয়ার ইমাম হুসাইনের (আঃ) ভালোবাসাই আজ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও একত্রিত করছে ।আরবাঈন হচ্ছে খাটি তৌহীদী মুহাম্মাদী ইসলামের পুনর্জাগরণ যা নি: সন্দেহে আখিরুজ্জামানেহ হযরত ইমাম মাহদী ( আঃ )এর আবির্ভাব ও তাঁর বিশ্ব বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী । কারণ ইমাম মাহদী (আঃ:) ইমাম হুসাইনের (আঃ) রক্তের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আবির্ভূত হবেন এবং বলবেন : " আমি প্রতিশোধ গ্রহণকারী । হে বিশ্ববাসী তোমরা শুনো ও অবগত হও যে আমার প্রপিতামহ হুসাইন (আঃ:)কে কারবালায় পিপাসার্তাবস্থায় শহীদ করা হয়েছে । হে বিশ্ববাসী তোমরা শুনো ও অবগত হও যে আমার প্রপিতামহ হুসাইনকে শত্রুতা বশত (অশ্ব চালিয়ে) পিষ্ঠ করা হয়েছে ।" তাই বিশ্ববাসীর কাছে ইমাম হুসাইনের পরিচিতি তূলে ধরা একান্ত বাঞ্ছনীয় । আর যে পর্যন্ত ইমাম হুসাইন (আঃ) সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত না হবেন সে পর্যন্ত ইমাম মাহদী (আঃ) -এরও আবির্ভাব হবে না । আর প্রতি বছর আরবাঈনের পথযাত্রা ও বিশাল সমাবেশ সকল বিশ্ববাসীর কাছে ইমাম হুসাইন (আঃ) এবং তাঁর শাহাদাতের দর্শন , আদর্শ ও শিক্ষাকে সম্যক ভাবে পরিচিত করাতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ । এই আরবাঈন পালন এবং এই মহাসমাবেশ মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তারও জামিন ( ও নিশ্চয়তাবিধায়ক ) যারা আজ ইসলামের দুশমন ইসরাইল ও পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেলিয়ে দেয়া বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা ও নাশকতামূলক কার্যকলাপে ক্ষতবিক্ষত , নাস্তানাবুদ ও পর্যদুস্ত। এই আরবাঈনের মহাসমাবেশের কল্যাণে গৃহযুদ্ধ ও দায়েশের মতো বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের জন্য যে ইরাক ধ্বংস ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়েছিল সেই ইরাকে আজ শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরে এসেছে। এমনকি যে দিন গুলোয় (২০১৪ - ২০১৭) কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইসিস (দায়েশ) ইঙ্গো-মার্কিন - ইসরাইল-সৌদি তথা আরব প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের যৌথ তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় ইরাকের এক বিস্তীর্ণ ভূভাগ ও অঞ্চল দখল করে ক্ষমতা, দাপট ও প্রভাব প্রতিপত্তির তুঙ্গে ছিল সে দিনগুলোয় সে বছরগুলোয় এই আরবাঈন পালন ও এতোদপলক্ষে মহাসমাবেশ ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদ অধ্যুষিত অঞ্চলে নিরাপত্তা আনয়ন করেছিল । আরবাঈন মুসলিম উম্মাহর স্বত:স্ফূর্ত প্রাণবন্ত সাগ্রহে অংশগ্রহণ, সৌহার্দ্য , সম্প্রীতি ঐক্য ও সংহতির সুষ্ঠু ও বাস্তব বহি:প্রকাশ । এই আরবাঈন প্রমাণ করে যে ইসলাম জীবন্ত প্রাণবন্ত ধর্ম এবং মহানবীর (স:) আহলুল বাইতের ( আঃ) মতাদর্শ ও মাযহাব এক জীবন্ত প্রাণবন্ত চিরঞ্জীব মতাদর্শ ও মাযহাব । আরবাঈন উপলক্ষে আগত যিয়ারতকারীদেরকে আপামর ইরাকী জনগণ পূর্ণ নিষ্ঠা , আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে নি:স্বার্থভাবে আপ্যায়ন ও সেবা (খেদমত) করে প্রমাণ করছেন যে খাঁটি মুহাম্মাদী ইসলাম অর্থাৎ মহানবীর (সা:) আহলুল বাইতের (আঃ:) মতাদর্শ ও মাযহাব মানবতা , নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মতাদর্শ ও মাযহাব । আর তাই এই আরবাঈন খেদমত -ই খালক অর্থাৎ নি: স্বার্থ জন সেবার উত্তম সুযোগ ও অনুশীলন । মযলূম ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর শাহাদাতের ৪০তম দিবস আরবাঈন পালনের এই মহা বিশ্ব সমাবেশে আবারও ভালোভাবে প্রমাণিত হলো যালেমের তরবারির উপর মযলূমের রক্তের বিজয়।