হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, লেবাননে হিজবুল্লাহর ঐতিহাসিক বিজয় এবং ইসরায়েলের সাথে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই ধৈর্যশীল সংগ্রাম অত্যাচারী ইহুদিবাদী রাষ্ট্রকে পরাজয়ের গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এই যুদ্ধ, যা প্রতিটি ফ্রন্টে ইসরায়েলের ব্যর্থতার প্রতিফলন করে ইতিহাসে এমন একটি পাঠ রেখে গেছে যা কখনই বিস্মৃত হবে না।
নিজ ভূমি, নিজ জনগণকে রক্ষা করে হিজবুল্লাহ প্রমাণ করেছে যে প্রতিরোধকে কখনই দমন করা যায় না, পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন।
যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বারবার বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, যার ফলে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এসব পরিস্থিতি তার প্রমাণ যে, ইসরায়েলের যুদ্ধযন্ত্র শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়নি, তার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
হিজবুল্লাহর অধ্যবসায় এবং ধৈর্যের প্রমাণ পাওয়া যায় যে এটি তার অনেক প্রধান নেতা এবং অপারেটিভদের আত্মত্যাগ করেছে, কিন্তু তার অবস্থান এবং সাংগঠনিক কাঠামো বজায় রেখেছে। শহীদদের এই আত্মত্যাগ শুধু লেবাননের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য গর্বের উৎস।
শেখ নাঈম কাসিম এবং অন্যান্য নেতাদের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ কেবল তার শক্তি প্রমাণ করেনি বরং ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করেছে। এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের জন্য স্পষ্ট পরাজয়। ইসরায়েলের আরও শক্তি বা কৌশল থাকলে তারা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারত কিন্তু তা করেনি বা করার সামর্থ তাদের নেই।
ইসলামী বিপ্লবী নেতা সাইয়্যেদ আলী খামেনি শুরুতেই ঘোষণা করেছিলেন যে এই পরাজয় ইসরায়েলের জন্য অপরিবর্তনীয় হবে এবং আজ এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছে। এটি একটি পরাজয় যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত রাজনীতিতে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
প্রতিরোধ জোটের শহীদরা হোক, হিজবুল্লাহর নেতা হোক, ফিলিস্তিনের মুজাহিদীন হোক বা ইরানের রক্ষীবাহিনী, সবার আত্মত্যাগ এই সাক্ষ্য দেয় যে এই আন্দোলন এমন একটি আদর্শের জন্য লড়াই করছে, যা কেবল শক্তিশালী নয়, সত্যের উপর ভিত্তি করে।
প্রতিরোধের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ, সরদার নীলফ্রোশান, সাইয়্যেদ হাশিম সফিউদ্দিন, ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ার, মুহাম্মদ আফিফ এবং অন্যান্য শহীদদের রক্ত এই আন্দোলনকে নতুন জীবন দিয়েছে। এই শহীদদের উল্লেখ শুধু একটি ঐতিহ্য নয়, একটি ইতিহাস, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় প্রতিরোধের শিকড় কত গভীর ও শক্তিশালী।
হিজবুল্লাহর সাফল্য শুধু ইসরায়েলকে পিছু হটতে বাধ্য করেনি, বরং বিশ্বকে একটি বার্তা দিয়েছে যে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন হয়েছে। ফিলিস্তিন, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া এবং বাহরাইনের প্রতিরোধ গোষ্ঠী প্রমাণ করেছে যে তাদের সংগ্রাম কেবল একটি আঞ্চলিক সমস্যা নয় বরং বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জিহাদ।
ইসরায়েলের পরাজয় মানে শুধু যুদ্ধের সমাপ্তি নয় বরং এর সমর্থকদের, বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা। এই প্রতিরোধ সংগঠনগুলো শুধু জীবিতই নয় বরং তাদের লক্ষ্য অর্জনে আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ঐক্যবদ্ধ।
মুসলিম উম্মাহর এই ঐতিহাসিক সুযোগকে কাজে লাগানোর এবং নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করার সময় এসেছে। প্রতিরোধ প্রমাণ করেছে ঐক্য ও ত্যাগের মাধ্যমে বড় শক্তিকেও পরাজিত করা যায়। শহীদের রক্ত আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সামনের পথ দেখিয়েছে।
স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং প্রতিরোধ আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে শহীদদের আত্মত্যাগকে আজ আমাদের স্মরণ করতে হবে। এই যুদ্ধ একটি অনুস্মারক যে প্রতিরোধের মৃত্যু হয় না এবং সত্যের কণ্ঠকে কখনও স্তব্ধ করা যায় না। যারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে তাদের জন্য হিজবুল্লাহর বিজয় আশার আলো।
প্রতিরোধের ইতিহাস রক্তের শিরোনামে লেখা আছে এবং এই শিরোনামগুলি মানবতার বেঁচে থাকার জন্য, ন্যায়ের বিজয় এবং অত্যাচারীদের পরাজয়ের জন্য দেওয়া মহান আত্মত্যাগের ইঙ্গিত দেয়। হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিক বিজয় শুধু সামরিক সাফল্যই নয়, বরং এটি আদর্শিক সংগ্রামের ফল যা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে আশার প্রদীপ জ্বালিয়েছে।
নিপীড়নের অন্ধকারকে সত্যের আলোয় প্রতিস্থাপন করতে শহীদদের আত্মত্যাগের সাক্ষ্য দেয় এই অর্জন।
হিজবুল্লাহ নেতা শেখ নাঈম কাসিম যে প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতার সাথে এই যুদ্ধ করেছিলেন তা কেবল শত্রুদের জন্যই বিস্ময়কর নয় বরং তার যোদ্ধাদের জন্যও একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
শহীদদের এই মহান ত্যাগের উল্লেখ কেবলই একটি ঐতিহ্যগত কাজ নয় বরং তাদের দৃঢ়তার সাক্ষ্য যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে অধিকারের জন্য সংগ্রাম কখনই বৃথা যায় না।
এই যুদ্ধবিরতি শুধু বিজয় নয়, এক নতুন যুগের সূচনা, যেখানে প্রতিরোধ প্রমাণ করেছে অত্যাচারীদের প্রাসাদ যতই উঁচু হোক না কেন, তারা সত্যের সামনে বালির প্রাচীর ছাড়া আর কিছু নয়।
হিজবুল্লাহর সাফল্য সারা বিশ্বের নিপীড়িত দেশগুলিকে আশা দিয়েছে যারা সাম্রাজ্যবাদ ও নিপীড়নের শিকার। ফিলিস্তিন, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক ও সিরিয়ার প্রতিরোধ সংগঠনগুলো তাদের ঐক্য ও দৃঢ়তার সাথে প্রমাণ করেছে যে, নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াই স্বাধীনতার প্রথম ধাপ। এসব সংগঠনের অঙ্গীকার স্পষ্ট করে যে প্রতিরোধ শুধু একটি অঞ্চল বা একটি জাতির যুদ্ধ নয়, এটি সমগ্র মানবতার যুদ্ধ।
শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা আমাদের ঈমানের অঙ্গ; কিন্তু তাদের মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব মুসলিম উম্মাহর।
আজ যখন প্রতিরোধ আন্দোলন তুঙ্গে, মুসলিম উম্মাহকে কেবল তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে না, বিশ্বব্যাপী তাদের আদর্শকেও প্রচার করতে হবে। এই যুদ্ধ, যা ইসরায়েলের জন্য পরাজয়ের ঘোষণা, উম্মাহর জন্য একটি বার্তা যে যারা সত্যের পথে চলে তারা কখনই ব্যর্থ হয় না।
প্রতিরোধের এই যাত্রায় শহীদদের রক্ত ধারণ করে এই সংগ্রামকে যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যাওয়া আমাদের সকল মুসলমানের কর্তব্য। এটি কেবল একটি বিজয় নয়, একটি ইতিহাস যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে প্রতিরোধ কখনও ব্যর্থ হয় না এবং অত্যাচারী সর্বদা তার শেষের মুখোমুখি হয়। এটি কেবল একটি অর্জন নয় বরং নির্যাতিতদের জন্য একটি আলোর বাতিঘর এবং আমাদের সকল মুসলমানকে এই আলোকে আমাদের জীবনের একটি অংশ করতে হবে।
এই যুদ্ধ সত্যের প্রতীক যা প্রমাণ করেছে নিপীড়ন কখনও স্থায়ী হয় না এবং প্রতিরোধের শক্তি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারে।
লেখা: মজিদুল ইসলাম শাহ