হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন সিরিয়ায় আইএসআইএস-এর উত্থান ঘটল এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেল, সিরিয়ান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের কাছে সহায়তার আবেদন জানিয়েছিল এবং ইরানও তাতে সাড়া দিয়ে আসাদ সরকারকে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত থেকে নিরাপদ করেছিল।
কিন্তু সেই ইরান কেন বাশার আল আসাদ সরকারকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করল না? গত সপ্তাহে সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া দ্রুত পরিবর্তন এবং এই ঘটনাগুলিতে ইরানের হস্তক্ষেপের অভাবকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে।
তাকফিরি বিদ্রোহী গোষ্ঠী একটি “জেনেটিক পরিবর্তন” বা কৌশলগত পরিবর্তনের নীতি গ্রহণ করেছিল; তারা সহিংসতা ও উগ্রতা ত্যাগ করে কূটনৈতিক চেহারা গ্রহণ করেছিল। ফলে সিরিয়ার জনগণও আর আগের মতো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সিরিয়ান সেনাবাহিনীকে সমর্থন করছিল না।
ভিন্ন মতাদর্শ, অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ ও অর্থনৈতিক দুর্বলতাসহ বিভিন্ন কারণে সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসীদের মোকাবিলার আগ্রহ কমে গিয়েছিল।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছিল খোদ বাশার আসাদেরই। ইরানের বিপ্লবের নেতার সঙ্গে তার সর্বশেষ বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছিল। এই বছরের ৩০ মে, বিপ্লবের নেতা বাশারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।
এই সতর্কবার্তাটি অত্যাসন্ন পরিস্থিতির গভীরতা উপলব্ধির ওপর ভিত্তি করে ছিল। লেবাননের যুদ্ধ শুরুর আগেই ইরান বারবার আসাদকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর শক্তিবৃদ্ধি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল এবং এমনকি আনুষ্ঠানিক নানা প্রস্তাবও দিয়েছিল, কিন্তু এসব সতর্কবার্তা ও প্রস্তাব আসাদের পক্ষ থেকে উপেক্ষা করা হয়।
এই প্রবণতা আসাদের পতনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকে। আসাদের সঙ্গে আলোচনায় ইরানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ইরানের তাকে সমর্থন করার দৃঢ় সংকল্পের ইঙ্গিত দেয়। তবে একটি কৌশলগত ভুল বাশারের পতনের কারণ হয়েছিল: তিনি আরব এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করেছিলেন।
কয়েক দিন আগে (২ ডিসেম্বর) রয়টার্স একাধিক ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছিল যে ইউএই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ না বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করে আসছে। আমেরিকা আসাদ সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় যে ইরানের সাথে তার সম্পর্ক স্থগিত ও প্রতিরোধ ফ্রন্টকে সহায়তা প্রদান বন্ধ করলে অবরোধ পূণরায় নবায়ন করা হবে না!
বাশার আল আসাদ সরকার ঐ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিল এবং প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করতে অনাগ্রহ দেখায়। ঠিক এই কারণে হিজবুল্লাহ ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সন্ধি চুক্তিতে অনেকটা বাধ্য হয়।
ইরান যখন বুঝতে পারে যে আসাদ মাঠ পর্যায়ে সমর্থন গ্রহণে অনিচ্ছুক, তখন হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আসাদকে বোঝানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। কিন্তু আসাদ তার শত্রুদের ফাঁপা প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা যখন উপলব্ধি করেন, তখন সময় অনেকটাই ফুরিয়ে গেছে।