۲۴ آذر ۱۴۰۳ |۱۲ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 14, 2024
কীভাবে আমরা আমাদের সম্পদকে আরও বরকতময় ও সমৃদ্ধ করতে পারি?
কীভাবে আমরা আমাদের সম্পদকে আরও বরকতময় ও সমৃদ্ধ করতে পারি?

হাওজা / দোয়ায়ে ‘মাকারিমুল আখলাকে’ ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করেছেন যেন সম্পদে বরকত দান করেন, যা দুনিয়াতে সম্পদের বিকাশ সব বৃদ্ধির পাশাপাশি আখেরাত ও চিরন্তন জীবনের জন্য ফলপ্রসূ হয়।। হাদীস শরীফে সম্পদের বরকত কে ভেড়ার সাথে সাদৃশ্য করে বলা হয়েছে যা মূলত কল্যাণ ও মঙ্গলের পথে সম্পদের বৃদ্ধি এবং অভাবী ও দুস্থ মানুষদের প্রতি সাহায্য করার প্রতি ইঙ্গিত করে। আর এটি আধ্যাত্মিকভাবে ব্যাপক প্রভাবশালী হিসেবে গণ্য হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সির বারাত অনুসারে, মরহুম আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী নাসেরী, যিনি আখলাক বিষয়ে একজন বিশিষ্ট উস্তাদ, তিনি তার আখলাকের দারসে “সম্পদে বরকত” বিষয়ক যে নসীহত করেছেন তা নিচে বর্ণনা করা হলো-

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) দোয়ায়ে মাখারিমুল আখলাকে মহান আল্লাহ তায়ালা কাছে বলেছেন, «وَ وَفِّرْ مَلَکَتِی بِالْبَرَکَةِ فِیهِ» অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার যা কিছু সম্পদ সম্পত্তি আছে তাতে বরকত বৃদ্ধি করে দাও। এই বরকত বৃদ্ধির ধরন এভাবে হবে যে, সম্পদের বরকত ব্যক্তির জন্য অবশিষ্ট রয়ে যাবে এবং তার সম্পদ বৃদ্ধি ও বিকাশের কারণ হবে। আর এই বরকতের কারণে সম্পদের মালিক অধিক পরিমাণে কল্যাণমূলক কর্মকান্ড সম্পাদন করতে পারবে এবং আল্লাহর রাস্তায় এই সম্পদ ব্যয় করতে পারবে।

বরকতের বিভিন্ন প্রকার অর্থ ও সংজ্ঞা

‘বরকত’ শব্দটির বিভিন্ন অর্থ রয়েছে তার মধ্যে একটি অর্থ হল- সম্পদের বৃদ্ধি ও বিস্তার ঘটা। বিভিন্ন হাদীসে যেসব অর্থ বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে একটি হল- সম্পদকে ভেড়ার সাথে সাদৃশ্য করা হয়েছে। রাসুলে আকরাম (সা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে ভেড়াকে বরকত অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে হযরত আলী (আ.)ও এ ধরনের একটি হাদীসে বরকতকে ভেড়ার সাথে তুলনা করেছেন।

একদিন পয়গম্বর (সা.) তাঁর চাচার গৃহে গেলেন। এরপর তাঁর চাচা যখন খাবার পরিবেশন করলেন তখন পয়গম্বর (সা.) বললেন, আপনার গৃহে কি বরকত নেই? তখন তাঁর চাচা বললেন, বরকত বলতে তুমি কি বুঝাচ্ছো? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি বরকত বলতে ভেড়াকে বোঝাচ্ছি।

প্রকৃতপক্ষে ভেড়ার মধ্যে এমন বরকত রয়েছে, যা অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায় না। মহান আল্লাহ তায়ালা ভেড়ার বংশধারার মধ্যে বিস্ময়কর বরকত দান করেছেন। আর সেটা হল এভাবে যে, প্রতিদিন অসংখ্য ভেড়া যবেহ করা হয়; কিন্তু এর সংখ্যা কখনোই কমেনা। অথচ ভেড়ার তুলনায় কুকুরের সংখ্যা অনেক কম যদিও কুকুর একসাথে অনেক গুলি বাচ্চা প্রসব করে থাকে।

সম্পদের দুনিয়াবী ও আধ্যাত্মিক বিকাশ ও বৃদ্ধি

ইমাম সাজ্জাদ আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহর কাছে সম্পদ বৃদ্ধির জন্য যে দোয়া করেছেন, তাতে তিনি দুই ধরনের বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, যে বিকাশ ও বৃদ্ধি এই দুনিয়াতে অনুভব করা যায়, যা মূলত সম্পদ বৃদ্ধি হওয়া অর্থে বোঝায়। দ্বিতীয়তঃ সম্পদের আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি, যা মূলত আখেরাতে ফলপ্রসূ হয়। খুব সম্ভবত, ইমাম (আ.) সম্পদ বৃদ্ধির জন্য যে দোয়া করেছেন তা মূলত দ্বিতীয় প্রকার বরকত তথা আধ্যাত্মিক বরকতের প্রতি নির্দেশ করে। অর্থাৎ, সম্পদের বৃদ্ধি যেন আখেরাতের জন্য অবশিষ্ট থাকে এবং সেখানে এর ফল লাভ করা যায়, যা মূলত দুনিয়াবী বরকতের থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

বরকতের আরো একটি অর্থ হলো- আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ। সূরা আরাফের ৯৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন,

«وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَیٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَیْهِمْ بَرَکَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ»

অর্থাৎ, যদি শহরের অধিবাসীরা ঈমান আনয়ন করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে মহান আল্লাহ আসমান থেকে এবং যমিনের তলদেশ থেকে বরকত নাযিল করবেন।

উপরোক্ত এই আয়াত থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, মানুষ যখন পাপ করে তখন তার জীবনে বরকত কমে যায়; অর্থাৎ, সে কোনো কিছুতে বরকত লাভ করে না।

এ সম্পর্কে হযরত আলী (আ.) বলেছেন,

«إذا ظَهَرَتِ الجِنایاتُ ارتَفَعَتِ البَرَکاتُ»

অর্থাৎ যখন গুনাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখন মানুষের জীবন থেকে বরকত কমে যায়। আর এই অবস্থায় গুনাহ থেকে ফিরে এসে সত্যিকারের তওবা করা খুবই জরুরী হয়ে পড়ে।

আমরা সকলেই গুনাহগার এবং আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে আমাদের পাপের জন্য তওবা করা এবং তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করা।

মহান পয়গম্বর (সা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

«أَکْرِمِ الضَّیْفَ وَ لَوْ کَانَ کَافِر»

অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের গৃহে আগত মেহমানদেরকে সম্মান প্রদর্শন করো যদিও সে কাফের হয়!”

সদকার প্রকারভেদ ও তার প্রভাবসমূহ

নবী করিম (সা.) একটি হাদীসে বলেছেন, দান-সদকা ৫ ধরনের। আর এই পাঁচ প্রকার দান সদকা নিম্নোক্ত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত-

১. যে ধরনের সদকা ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়, এই সদকা হলো- আমরা প্রত্যহ সকালবেলায় সদকা হিসেবে যে অর্থ সরিয়ে রাখি সেটা। এবং আমরা জানি না এই অর্থ কার কাছে পৌঁছাবে।

২. যে সদকা ৭০ গুণ বৃদ্ধি পায়: এই ধরনের সদকা সেই সব ব্যক্তিদেরকে প্রদান করা হয়, যারা অচল ও অক্ষম মানুষ এবং আয়- রোজগার করতে পারে না।

৩. যে ছদকা সাতশ গুণ বৃদ্ধি পাবে, এই ধরনের সদকা আত্মীয়-স্বজন, সম্মানিত প্রতিবেশী এবং অভাবী ও দুঃস্থ মানুষদেরকে প্রদান করা হয়ে থাকে।

৪. যে ছতকা সাত মিলিয়ন গুণ বৃদ্ধি পায়, এধরনের সদকা আল্লাহর বিধি-বিধান প্রচার ও প্রসারের জন্য, মাদ্রাসা তৈরির জন্য, এবং হাসপাতাল ও মসজিদ তৈরির জন্য প্রদান করা হয়ে থাকে, যা মূলত সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়।

৫. যে সদকার সওয়াব সবথেকে বেশি, এই সদকা পিতা-মাতার জন্য এবং সম্পদের উপর অন্যান্য যারা দাবিদার আছে তাদেরকে প্রদান করা হয়।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .