হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ ২৪শে জিলহজ্ব। আজকের দিনটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ করে আহলে বায়েত প্রেমীদের জন্য অত্যান্ত খুশি ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত।মশহুর অভিমত অনুসারে মুবাহালার দিবস যা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়–আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোর অন্তর্ভুক্ত।
১০ম হিজরী সনের এই দিনে নাজরানের খ্রিষ্ঠানদের সাথে মুহাম্মদ (সঃ)-এর মোবাহেলা সংঘটিত হয়েছিল। এর মাধ্যমে আহলে বাইত (আ.)-এর মাহাত্ত্ব ও তাৎপর্য সমগ্র বিশ্ববাসীর সম্মুখে প্রমাণিত হয়।মুবাহালাহ শব্দটি আরবি ‘বাহল’ তথা ‘অভিশাপ দেয়া’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ হচ্ছে একে অপরকে অভিশাপ দেয়া। মোবাহেলা এমন ভাবে অনুষ্ঠিত হয় যে, একদল ব্যক্তি ধর্মগত কোন বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার পর এক স্থানে সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়ায় রত হয়। অতঃপর তাঁর নিকট মিথ্যাবাদীদেরকে প্রতিপন্ন ও তাদেরকে শাস্তি দানের দাবী জানায়।
পবিত্র ঈদে মোবাহেলা উপলক্ষে সকল মুসলিম মোমেন মোমেনা ভাই বোনদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা!
ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে একটি পার্বত্য অঞ্চলের নাম নাজরান। নাজরানের ৭৩টি ছোট শহরে প্রায় ৪০ হাজার খ্রিস্টান বাস করতো। দশম হিজরীতে মহানবী (সা.) ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ইয়েমেনের নাজরান এলাকায় একদল মুসলমানকে পাঠিয়েছিলেন। ঐ দাওয়াত পাওয়ার পর নাজরানের খৃষ্টান পাদ্রি এ ব্যাপারে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সেখানের জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের একত্রিত করে। মিটিংয়ের পর তিনি রাসূল (সা.)এর সাথে আলোচনার জন্য মদীনায় একটি প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৪ সদস্যের ঐ খৃষ্টান প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন পাদ্রি আবু হারিসা নিজে । তারা মদীনায় গিয়ে রাসুল (সা.)’র সাথে হযরত ঈসা (আঃ)’র ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করতে থাকে। কিন্তু তারা যুক্তি ও সত্য মেনে নিতে অস্বীকার করে। নাজরানের প্রতিনিধিরা দেখলো, তারা যতই জিজ্ঞাসা করছে রাসুল (সা.) ততই সুন্দরভাবে যুক্তি ও দলিল দিয়ে কথা বলছেন তখন তারা নিশ্চিত পরাজয় জেনে মুনাযিরাহ বা বিতর্ক বন্ধ করে দিল।তারা বললো যে, আমরা মোবাহেলা করতে চাই।এ সময় রাসুল (সা.) ওপর সূরা আল ইমরান (آل عمران), ৬১ নং আয়াত নাজিল হলো।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
আয়াতে মুবাহালাঃ
فَمَنْ حَآجَّکَ فِیهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءکَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءکُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءکُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَکُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةَ اللّهِ عَلَى الْکَاذِبِینَ
“ফামান হাজ্জাকা ফীহি মিম বা‘দি মা-জাআকা মিনাল ‘ইলমি ফাকুল তা‘আ-লাও নাদ‘উ আবনাআনা-ওয়া আব নাআকুম ওয়া নিছাআনা-ওয়া নিছাআকুম ওয়া আনফুছা-নাওয়া আনফুছাকুম ছু ম্মা নাবতাহিল ফানাজ‘আল লা‘নাতাল্লা-হি আলাল কা-যিবীন।”
অর্থাৎ,“অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী”।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৬১
পবিত্র কোরআনের এ আয়াত নাজিল হবার পর রাসূল (সা.) খ্রিস্টানদের বললেন, “তোমরা তোমাদের পুত্র, নারী ও ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে নিয়ে আসো। আর আমরাও একই কাজ করে জনসমাবেশে এসে মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণের জন্য প্রার্থনা করবো।”রাসূলেখোদার এ আহবানের পর খ্রিস্টানদের পাদ্রি তার দলের অন্যান্য সদস্যদের বললো, মোবাহেলার প্রস্তাব মেনে নাও। কিন্তু যদি দেখ, মুহাম্মদ তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে মোবাহেলার জন্য উপস্থিত হয়, তাহলে তোমরা তা করা থেকে বিরত থাকবে এবং কোনভাবে আপোস করবে।
এ সিদ্ধান্তের পর মুসলিম-খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন অধির আগ্রহে মোবাহেলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে যিলহজ্জ মাসের ২৪ তারিখে নাজরানের প্রতিনিধি দলটি মোবাহেলার জন্য নির্ধারিত স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হল। নাজরানের প্রতিনিধিরা যথাস্থানে পূর্বে পৌঁছেছিল। তারা দূর হতে দেখতে পেল যে, মহানবী (স.) ইমাম হুসাইন (আ.) কে কোলে নিয়ে ও হাসান (আ.) এর হাত ধরে অগ্রসর হচ্ছেন এবং তাঁর সাথে হযরত আলী ও হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) ও রয়েছেন। তখন মহানবী (স.) তাঁদেরকে এ কথাই বলছিলেন যে, যখনই আমি দোয়া করব তোমরা আমিন বলবে।
আয়াতে তাতহীরঃ
إنما يريد الله ليذهب عنكم الرجس أهل البيت ويطهركم تطهيرا
অর্থাৎ,“হে আহলে বাইতের সদস্যগণ! আল্লাহ কেবল চান,তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র রাখতে।”
সুরা আহজাব,আয়াত নং ৩৩।
উল্লেখ্য যে,নাজরানের খ্রিস্টান পাদ্রিদের সঙ্গে সংলাপে ও মুবাহিলার ঘটনায় বনবী (সাঃ)‘র বিজয়ের ঐতিহাসিক আগের রাতে নবী (সাঃ)‘র আহলে বাইত বা তাঁর পরিবারের বিশেষ সদস্যদের নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়ে নাজিল হয়েছিল সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াত। মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে (মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, পৃ-১৩০) এবং তিরমিযী স্বীয় সুনানে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন যেঃ
“হে আহলে বাইতের সদস্যগণ! আল্লাহ কেবল চান,তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র রাখতে।”- এই আয়াতটি মহানবী (সঃ) এর উপর উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা‘র ঘরে অবতীর্ণ হয়। মহানবী (সাঃ), ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন কে নিজের ঢিলেঢালা লম্বা জামা তথা আলখাল্লার মধ্যে নিলেন এমতাবস্থায় আলী তাঁর পেছনে অবস্থান করছিলেন। এরপর তাঁদের সবাইকে একটি চাদর দিয়ে ঢেকে এরূপ দোয়া করলেনঃ “আল্লাহুম্মা হা’উলাই আহলি অর্থাত,হে আমার আল্লাহ এরাই আমার আহলে বাইত।”
উম্মে সালমা বললেনঃ “হে আল্লাহর নবী! আমিও কি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত (আমিও কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত)? তিনি বললেনঃ তুমি নিজের স্থানেই থাকো। তুমি সত্য ও কল্যাণের পথেই রয়েছ।” এভাবে নবী (সাঃ) তাঁর কোনো স্ত্রীকে ওই বিশেষ চাদরের নীচে আসার অনুমতি দেননি।
রাসূলের সাথে এ চারজনকে দেখে খ্রিস্টানদের দলনেতা তখন তার সঙ্গীদের বললোঃ আমি এমন কিছু জ্যোতির্ময় বা পুণ্যবান ব্যক্তিদের চেহারাকে দেখতে পাচ্ছি যে, খোদায়ী অভিশাপের জন্য হাত উঠালে পাহাড়গুলো তাদের স্থান থেকে সরে আসবে, তাই মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেয়াই ভাল, নইলে কিয়ামত পর্যন্ত খ্রিস্টানদের নাম-নিশানাও থাকবে না। সুতরাং তোমরা মোবাহেলা বন্ধ কর। পাদ্রির পীড়াপীড়ি নাজরানের প্রতিনিধিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করলো। এক ধরনের অস্থিরতা তাদেরকে ঘিরে ধরলো। দ্রুত তারা একজনকে প্রতিনিধিকে পাঠালো রাসুল (সা.)-এর কাছে। ঐ প্রতিনিধি রাসুলের সাথে দেখা করে মোবাহেলা বন্ধ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানালো এবং শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দিল।খ্রিস্টানদের প্রস্তাব পেয়ে মহানবী (সা.) তাদের উপর অনুগ্রহ করলেন এবং আলী (আ.)কে নির্দেশ দিলেন চুক্তির শর্ত লিখতে। চুক্তির শর্ত নির্ধারিত হওয়ার পর খ্রিস্টানরা তা মেনে নিয়ে নাজরানের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে রওনা হল।
তখন মহানবী (সাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! এরা যদি মুবাহিলা করত তাহলে আল্লাহ তাদের বানরে বা শুকরে রূপান্তরিত করতেন এবং ময়দান আগুনে পরিণত হত। আর নাজরানের একটি প্রাণীও এমনকি পাখি পর্যন্ত রক্ষা পেত না।”
সূত্রঃ-তাফসিরে জালালালাইন, ১ম খণ্ড, পৃ.৬০, বায়দ্বাভী, ১ম খণ্ড, পৃ.১১৮, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ২য় খণ্ড, পৃ.৩৯, মিশর মুদ্রণ।
এভাবে খ্রিস্টানদের ওপর মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হল এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের উচ্চতর মর্যাদা প্রকাশিত হওয়ার জন্য ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এই ঘটনা।ঐতিহাসিকভাবে এই দিনটি ঈদে মোবাহেলা দিবস বলে খ্যাত।তাই উক্ত দিনটি হচ্ছে মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ, ঐতিহাসিক এবং ঈদের দিন।
মুবাহেলার আয়াতে তাঁদেরকে উল্লেখ করার ফলে তাঁরা আল্লাহর সাহায্য প্রাথনার উসিলায় পরিনত হয়েছেন;ইহা(এই আয়াতে তাঁদের উল্লেখ)তাঁদের সুউচ্চ ও পবিত্র মানসিক ও নৈ্তিক গুনাবলীর একটি সুস্পষ্ট নিদেশক।আর এই ঘটনা তথা মুবাহেলার ময়দানে এই সকল পুতঃপবিত্র ব্যাক্তিবগকে আনয়নের জন্য আল্লাহ কতৃক তাঁর রাসুল(সাঃ)কে প্রদত্ত নিদেশনা তাঁদের(আহলে বায়েতের)পুতঃপবিত্র থাকার আরও একটি সুস্পষ্ট প্রমান হয়ে দাড়ায়।আর শত্রদের উপর আল্লাহর লা’নত প্রাথনা করার জন্য রাসুলের(সাঃ) এই চ্যালেঞ্জ আল্লাহর কাছে তাঁরা কত সুউচ্চ মযাদার অধিকারী তা প্রকাশ করে দেয়।
শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের মুফাসসির ও মুহাদ্দিসরা এ বিষয়টিকে স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছেন যে, মোবাহেলার আয়াতটি মহানবী (স) এর আহলে বাইত (আ.) এর ফজিলতে নাযিল হয়েছে। আয়াতের সকল শব্দ ও অংশ ব্যক্ত করে , মহানবী (সাঃ) এর সঙ্গীগণ – হযরত আলী (আঃ) , হযরত ফাতিমা (সাঃআঃ) , হযরত হাসান (আঃ) ও হযরত হুসাইন (আঃ) শ্রেষ্ঠত্বের কোন্ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত ছিলেন ।আর মহানবী (স.) শুধুমাত্র তার দুই সন্তান হাসান ও হুসাইন (আ.), তাঁর কন্যা ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) ও তাঁর জামাতা হযরত আলী (আ.) কে সাথে নিয়ে মোবাহেলার ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সুতরাং আয়াতে উল্লেখিত (أبنائنا) শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র হাসান এবং হুসাইন (আঃ)-কে বোঝানো হয়েছে, (نسائنا) শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র ফাতেমা (সা. আ.)-কে বোঝানো হয়েছে এবং (أنفسنا) শব্দ দ্বারা শুধুমাত্র হযরত আলী (আ.) কে বোঝানো হয়েছে। আর এ আয়াতে হযরত আলী (আ.) কে মহানবী (স.) এর জীবন ও নাফস হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে।যখন এক ব্যক্তি আধ্যাত্মিকতা ও শ্রেষ্ঠত্বের এমন পর্যায়ে উন্নীত হন যে , মহান আল্লাহ্ তাঁকে মহানবী (সাঃ) এর আত্মা বলে অভিহিত করেন , তখন এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ফযীলত ও মর্যাদা আর কী হতে পারে❓
সূত্রঃ মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৮৫; তাফসীরে কুমী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৪; কেফাইয়াতুল মোওহাদীন্, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৭২ ও ২৯১; মাজমাউল বয়ান, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৫২; জাযবায়ে বেলায়াত, পৃঃ ১৪৪; রাওয়ানে জাবেদ, ১ম খন্ড, পৃঃ ৪২৬; আসবাবুন নুযুন, পৃঃ ৬৭; ফাজায়েলে আমিরুল মোমেনীন আলী, পৃঃ ৬৯; শাওয়াহেতুত তানযিল, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৩।
যেহেতু দ্বন্দ্ব ছিল সত্য এবং মিথ্যা এ দুটো সরাসরি বিপরীতমুখী স্রোত ধারার মধ্যে,সেহেতু ইসলামের সমগ্র অবকাঠামো যাদের উপর দাড়িয়েছিল এরুপ সরবোত্তম ব্যাক্তিবরগের মাধ্যমে ধরম বিশ্বাসের উপস্থাপনই ছিল সেই সময়ের পরিস্থিতির দাবী।মুবাহেলায় মহানবী(সাঃ)এর সঙ্গী হওয়ার মত আহলে বায়েত ছাড়া এমন যোগ্যতার অধিকারী আর কেউ ছিল না যাদের উপর ইসলামের ভাগ্য নিরভর করা সম্ভব ছিল।তাঁরা ছিলেন আহলে বায়েত হেদায়াত ও সৎকরমের আলোকবরতিকা।সবশক্তিমান আল্লাহ নিজে আল-কুরানে তাঁদেরকে পবিত্রতার আধার হিসেবে মযাদা প্রদান করেছেন।ইহা তাঁদেরকে পুনরায় সকল দৃষ্টিকোন হতেই পরিনত করেছিল সবশ্রেষ্ট আকষনীয় ব্যাক্তিত্বে।তাঁরা ছিলেন ইসলামের মহাসত্যের হুজ্জাত(অকাট্য প্রমান)।প্রকৃ্তপক্ষে,মহাজ্ঞানী আল্লাহ মুসলমানদেরকে অঙ্গুলি নিদেশ করেছেন যে,খোদায়ী মিশনের ধারাবাহিকতা খাতামুন নাবিয়ীনের পর থেমে যাবে না,বরং তাঁর মাসুম(নিষ্পাপ) বংশধরদের মাধ্যমে উহা অব্যাহত থাকবে।তাঁদের কোনও প্রাথনা নামঞ্জুর থাকবে না এবং তাঁদের কোনও কথা বিভ্রান্ত হবে না।তাঁদের কথায় পরবত পযন্ত ঞ্ছানান্তর হতে পারে,মুবাহেলায় খৃষ্টানরা যা অনুধাবন করতে পেরেছিল।
এসব নিষ্কলুষ(মাসুম)ব্যাক্তিবগের ব্যাপারে শত শত বছরের মুনাফেকীর ফসল হিসেবে উম্মাহর কিছু অংশের মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা সুদীরঘকাল ধরে প্রতিষ্টিত থেকে যায়।অসংখ্য সাধারন মানুষ এর দ্বারা বিভ্রান্ত হয়।তবে,এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য শুধুমাত্র এই আয়াতটিই যথেষ্ট।কুয়াশা কেটে যাওয়ার সাথে সাথে আহলে বায়েত হতে প্রাপ্ত সত্যের ছবি আরও সুস্পষ্ট রুপে প্রতিভাত হতে থাকবে;সুস্পষ্ট হতে থাকবে তাঁদের প্রদশিত শিক্ষা,চিন্তা-চেতনা,ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন,বননা-বিবরন,ফেকাহ….. ইত্যাদি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)এর পয়গাম ও আহলে বায়েত কতৃক একনিষ্টভাবে সংরক্ষিত ও পৌছে দেয়া ইসলামের পুতঃপবিত্র নিরভেজাল অমীয়সুধা।তাঁদের দ্বারা পাক কুরান ইসলামের শত্রুদের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল এবং সরবকালের জন্য স্পস্টায়ন করেছিল যে,যারা তাঁদেরকে প্রত্যাখান করে তারা মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কিছুই নয়,তারা লা’নত ও শাস্তি পাওয়ার যোগ্যঃ’….. আর মিথ্যাবাদীদের উপরে আল্লাহর লা’নত দেই’।তাঁদের(আহলে বায়েত) চিরন্তন সত্যতা ও অনমনীয় দৃঢ়তা/ ন্যায়পরায়নতা ব্যাতিরেকে আল্লাহতায়ালা তাঁদেরকে এমন উচ্চমযাদা দান করতেন না,আর কোরআন পাকেও তাঁদের সম্পকে এমন উচ্চমযাদাপুন ভাষ্য উচ্চারিত হতো না।
উল্লেখ্য যে,মোবাহেলার ময়দানে তখনকার সময় অনেক নামকরা বিখ্যাত সাহাবী ও আলেমগন রাসুলের (সা:) সংগী হতে চেয়েছিলেন।কিন্ত রাসুলের (সা:) দেয়া একটি শর্ত পূরনের অভাবে ওনারা শেষ পর্যন্ত তাদের দাবী থেকে সরে যান ।শর্তটা ছিলঃ-“তোমরা যদি মনে কর যে ,জন্ম থেকে সরিষার বীজ থেকে ক্ষুদ্রতম কোন পাপ বা বিন্দুমাত্র মিথ্যা বলনি তাহলে মোবাহেলার ময়দানে যেতে পার । কিন্ত সাবধান ! দাবী যদি মিথ্যা হয় মোবাহেলার ময়দানে ধ্বংস হয়ে যাবে।” সে সময় একমাত্র পাঁচজন মোবাহেলার ময়দানে গিয়েছিলেন।
লেখা: সৈয়দ হোসাইন উল হক