۱۶ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۶ شوال ۱۴۴۵ | May 5, 2024
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )

হাওজা / হযরত ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন ( আঃ ) ৩৮ হিজরীর ৫ শাবান মতান্তরে ৩৬ হিজরীর ১৫ জুমাদাল উলা জন্ম গ্রহণ করেন ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৪-  আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ইয়াযীদকে সূরা পানে অতি অভ্যস্ত মাতাল ( সাকরান খিম্মীর ) বলে অভিহিত করতেন ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ৭৯ ) । যখন মুসরিফের ( মুসলিম ইবনে উকবা ) নেতৃত্বে ইয়াযীদী সেনাবাহিনী মদীনার অদূরে হাররাহ নামক স্থানে পৌঁছে গেল তখন মদীনাবাসীরা আব্দুল্লাহ ইবনে মুতী আল-আদভী এবং আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা আল-ঘাসীল আল-আনসারীর নেতৃত্বে মুসরিফ ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হল ।

হাররার এ যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত বিরাট এক ঘটনা যে ঘটনায় বনী হাশিম , কুরাইশ , আনসার এবং আরো অন্যান্য শ্রেণীর জনগণের এক বিরাট অংশ নিহত হয়েছিল । আবূ তালিবের বংশধরদের থেকে দুজনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে জাফার ইবনে আবী তালিব এবং জাফার ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব , আবূ তালিবের বংশধরগণ ব্যতীত বনী হাশিমের মধ্য থেকে ফযল ইবনুল আব্বাস ইবনে রবীআহ ইবনিল হারিস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব , হামযা ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে নওফাল ইবনুল হারিস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব , আব্বাস ইবনে উতবা ইবনে আবী লাহাব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব , বাদবাকী কুরাইশ থেকে ৯০ এর অধিক , আর তাদের মতো আনসারদের মধ্য থেকে অনুরূপ সংখ্যক এবং বাদবাকী জনতা থেকে ৪০০০ ব্যক্তি নিহত ও শহীদ হয় যাদেরকে গণনা করা গেছে তবে যাদের কথা জানা যায় নি তারা ব্যতীত ( অর্থাৎ যে সব নিহতের সংখ্যা জানা যায় নি ও গণনা করা হয় নি তারা ব্যতীত ) । এরপর মদীনাবাসীগণকে ইয়াযীদের প্রতি বাইআত করতে বাধ্য করা হয় এ শর্তে যে তারা সবাই ইয়াযীদের (ক্রীত)দাস । যারা এভাবে বাইআত করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করত মুসরিফ ( সেনাপতি মুসলিম ইবনে উকবা ) তরবারি দিয়ে তাদের গর্দান উড়িয়ে দেয়ার আদেশ দিত । তবে সে আলী ইবনুল হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব আস-সাজ্জাদকে ( আ. ) এবং আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে ছেড়ে দেয় ( অর্থাৎ তাদের দুজনের থেকে এ ধরণের বাইআত আদায় করে নি ) । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ৭৯ )

     হাররার ঘটনা ঘটার আগে মদীনার শাসনকর্তা উসমান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবী সুফিয়ান কাছ থেকে তরুণ যুবক খলীফা ইয়াযীদকে দেখা এবং তার দয়া-দাক্ষিণ্য ও বদান্যতা লাভ করে ধন্য হওয়ার জন্য মুনযির ইবনে যুবাইর ইবনে আওয়াম , আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আমর মাখযূমী , আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা ঘাসীলুল মালাইকা এবং আরও কতিপয় গণ্যমান্য ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত মদীনাবাসীদের একটি প্রতিনিধি দলকে দামেশকে প্রেরণ করে । তারা ইয়াযীদের দরবারে গমণ করলে ইয়াযীদ তাদেরকে খুব যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও আপ্যায়ন করে এবং তাদেরকে প্রচুর ইনআম , উপঢৌকন ও নগদ অর্থ প্রদান করে । কিন্তু ইয়াযীদ তাদের সামনে প্রকাশ্যে মদ্যপান করে , গায়ক – গায়িকাদের গান – বাজনার আসর বসায় , অনৈতিক অশালীন কার্যকলাপ ও অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয় এবং কুকুর নিয়ে খেলা ধুলায় মেতে উঠে । ইয়াযীদ ভেবেছিল যে এত আদর আপ্যায়ন এবং প্রচুর ইনআম ও নগদ অর্থ পেয়ে এ প্রতিনিধি দল ইয়াযীদের ইসলাম ও নীতিনৈতিকতা বিরোধী এ সব অশালীন ও অসামাজিক কার্যকলাপের কথা না বলে শুধু তার প্রশংসা করবে এবং তার বদান্যতার কথাই প্রচার করবে । কিন্তু এ প্রতিনিধি দল মদীনা প্রত্যাবর্তন করে মদীনাবাসীদের কাছে ঘোষণা করেঃ আমরা এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যাবর্তন করেছি যার কোনো ধর্ম নাই , যে শরাব ( মদ ) পান করে , বাদ্য যন্ত্র ( তার ও তাম্বূরা ) বাজায় , কুকুর নয়ে খেলা করে , তার আসর ও মাহফিলে সুকণ্ঠ গায়ক – গায়িকারা মনমাতানো গান গায় এবং একদল চোর – বদমায়েশের সাথে রাত কাটায় । এখন আমরা তোমাদেরকে সাক্ষ্যী রেখে ঘোষণা করছি যে আমরা তাকে ( ইয়াযীদ ) খিলাফতের পদ থেকে অপসারণ করলাম ।

    আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা বললেনঃ আমি এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যাবর্তন করেছি যে কোনো ব্যক্তিও যদি আমাকে সাহায্য ও সহযোগিতা নাও করে তবুও আমি আমার এই কয়েক জন ছেলে নিয়েই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করব । সে ( ইয়াযীদ ) আমাকে উপহার উপঢৌকন দিয়েছে এবং আমাকে সম্মান করেছে । কিন্তু আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যয় করার জন্যই কেবল তার উপঢৌকন গ্রহণ করেছি ।( দ্রঃ আয়াতুল্লাহ জাফার সুবহানী প্রণীত সীরেয়ে পীশভয়ন , পৃঃ ২৫৪ – ২৫৬ )

   কতিপয় ঐতিহাসিকের মতে মদীনাবাসীদের বিদ্রোহ ও হাররার যুদ্ধে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের ভূমিকা ও উস্কানী ছিল । আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ছিলেন ক্ষমতালিপ্সু ও পদলোভী যদিও তিনি নিজেকে বাহ্যতঃ সালেহ ( পূণ্যবান ও যোগ্য ) বলে জাহির করতেন । আর বনী হাশিম বিশেষ করে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবী তালিবের পরিবারের সাথে তার ( আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ) ভালো সম্পর্ক ছিল না । হযরত আলীর বিরুদ্ধে হযরত আয়েশা , তালহা ও যুবাইরের উষ্ট্রের যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্জ্বলন ও ইন্ধন জোগানোর ক্ষেত্রে তার ( আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ) অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । আর পবিত্র মক্কায় তিনি ( আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ) যখন নিজেকে খলীফা ঘোষণা করে হিজায শাসন করতে থাকেন তখন তিনি খুতবার শুরুতে মহানবীর ( সা. ) উপর দরূদ পাঠ বন্ধ করে দিয়েছিলেন । তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেনঃ মহানবীর ( সা. ) এমন কিছু মন্দ নিকটাত্মীয় স্বজন ( তাঁর আহলুল বাইত এবং বনী হাশিম ) আছে তাঁর ( সা. ) নাম উচ্চারণ করার সময় যারা নিজেদের গর্দান ( ঘার ) উঁচু করে ( গর্ব বোধ করে ) !! ( দ্রঃ তারীখুল ইয়াকূবী , খঃ ৩ , পৃঃ ৮ )। পবিত্র মক্কা নগরীতে বনী হাশিমের যারা ছিলেন তাদেরকে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ইচ্ছা করে ধরে শেবে অর্থাৎ মক্কার আবুতালিবের উপত্যকায় অন্তরীন করে রাখেন এবং তাদের জন্য এক বিরাট পরিমাণ জ্বালানী কাঠ ও লাকড়ী সংগ্রহ করেন । যদি ওতে একটা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ পড়ত তাহলে আর কেউ মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেত না । আর বনী হাশিমের বন্দীদের মধ্যে হযরত আলীর ( আ. ) পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে হানাফীয়াও ছিলেন । অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর কর্তৃক বন্দী হাশিমীয়দেরকে উদ্ধার করার জন্য মুখতার ইবনে আবী উবাইদ সাকাফী কূফা থেকে মক্কায় আবূ আব্দিল্লাহ আল-জাদালীর নেতৃত্বে ৪০০০ অশ্বারোহী প্রেরণ করেন এবং তাদের মধ্য থেকে ৮০০ জন অশ্বারোহী আবু আব্দিল্লাহ আল-জাদালীর সাথে দ্রুত গতিতে মক্কার শেবে ( উপত্যকা ) এসে বন্দীদেরকে সেখান থেকে বের করে আনে ।( দ্রঃ আল্লামা মাসঊদী প্রণীত মুরূযুয যাহাব , খঃ ৩ , পৃঃ ৮৫ ও ৮৬ )। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে কথোপকথনের এক পর্যায়ে বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি ৪০ বছর ধরে হে এই গৃহের অধিবাসীগণ ( বনী হাশিম ) ! তোমাদের প্রতি আমার ঘৃণা ও বিদ্বেষ গোপণ রেখে আসছি । তাদের মধ্যে দীর্ঘ বিষম দুর্দৈব (দীর্ঘ মন্দ অবস্থা) বিরাজ করতে থাকে । এরপর ইবনে আব্বাস প্রাণের ভয়ে মক্কা থেকে বের হয়ে আসেন এবং তায়েফে আগমন করে সেখানে থেকে যান । অতঃপর তিনি সেখানেই পরলোক গমন করেন ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ৮৯ )।…চলবে…

লেখা: মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান

تبصرہ ارسال

You are replying to: .