۱۶ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۶ شوال ۱۴۴۵ | May 5, 2024
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )

হাওজা / হযরত ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন ( আঃ ) ৩৮ হিজরীর ৫ শাবান মতান্তরে ৩৬ হিজরীর ১৫ জুমাদাল উলা জন্ম গ্রহণ করেন ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৬- মদীনার হাররার ঘটনা ও এতদ সদৃশ ঘটনাবলী অর্থাৎ যালিম স্বৈরাচারী বনী উমাইয়া খিলাফত ও প্রশাসন যন্ত্র কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া তীব্র কঠিন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম যাইনুল আবিদীনের সামনে দুটো পথ খোলা ছিল ।

যথাঃ ১. মুষ্টিমেয় নিষ্ঠাবান অনুসারীদের নিয়ে ইমাম যাইনুল আবিদীন কর্তৃক খিলাফতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ , কিয়াম ও বিপ্লব করা যার পরিণতি হবে আহলুল বাইতের ধ্বংস ও প্রকৃত খাঁটি মুহাম্মাদী ইসলামের বিলুপ্তি এবং শয়তানী ইবলীসী কুফরী তাগুতী শক্তির চূড়ান্ত বিজয় এবং ২. চরম প্রতিকূল শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বিদ্রোহ না করে আহলুল বাইতকে ( আ. ) , তাঁদের নিষ্ঠাবান অনুসারীদেরকে , পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ খাঁটি মুহাম্মাদী তৌহীদী ইসলামের সঠিক সংরক্ষণ ও হিফাযত , সমাজে খাঁটি ইসলামী শিক্ষা , নীতি-নৈতিকতা ( আখলাক ) , স্বভাব-চরিত্র ও আদর্শের প্রচার ও প্রসার এবং আহলুল বাইতের একনিষ্ঠ খাঁটি অনুসারীদেরকে প্রশিক্ষিত করে গোড়ে তোলা ( তালীম ও তারবিয়ত ) আর সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা ( করা ) ।

 যেহেতু ইমাম যাইনুল আবিদীনের হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিষ্ঠাবান জনশক্তি ছিল না এবং ঐ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ইমাম যাইনুল আবিদীন (আ.) এবং আহলুল বাইত ( আ. ) যালিম উমাভী খিলাফত ও প্রশাসন যন্ত্রের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিলেন এমনকি শত্রুপক্ষ ইমামের গৃহের অভ্যন্তরীন সংবাদ সম্পর্কেও জ্ঞাত ছিল , প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিযুক্ত গুপ্তচররা ইমাম যাইনুল আবিদীন এবং তাঁর ঘনিষ্ট বিশ্বস্ত অনুসারীদের সার্বিক পদক্ষেপ ও গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও মনিটর করত এবং এ কারণে ইমামের পক্ষে সর্বসাধারণ জনতার সাথে অবাধ যোগাযোগ একরকম অসম্ভব ব্যাপার ছিল নতুবা তা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল সেহেতু এ ধরণের তীব্র কঠিন ও ভয়ঙ্কর শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বিপ্লব ও কিয়াম ছিল আত্মহত্যার ( তাহলুকা ) শামিল ।

 তাই তাঁর সশস্ত্র বিপ্লব ও কিয়াম তাকলীফ ( ধর্মীয় দায়িত্ব ) ছিল না । বর্ং তাঁকে কঠোর তাকিয়া নীতি অবলম্বন করতে হত । আর এ কারণে তিনি দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন । তাই তিনি উপযুক্ত বিশ্বস্ত অনুসারী কর্মী , লোক ও ক্যাডার অর্থাৎ খাঁটি ইসলাম ধর্মের প্রচারক ও আলিম তৈরীর কাজে আত্মনিয়োগ করেন । আর মদীনাবাসীদের কিয়াম ও বিদ্রোহ ছিল মূলতঃ ইমাম যাইনুল আবিদীনের ( আ। ) সাথে পরামর্শ না করে এবং তার সম্মতি ও দিকনির্দেশনা না নিয়ে বরং আহলুল বাইতের প্রতি বিরূপ ধারণা ও বিদ্বেষ পোষণকারী ক্ষমতালিপ্সু আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ও যুবাইরীয়দের ইন্ধনে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সঠিক খাঁটি ইসলামী শিক্ষা , নীতি ও আদর্শের ভিত্তির উপর তা প্রতিষ্ঠিত ছিল না ।

 আর এটাও স্পষ্ট ( মালূম ) ছিল না যে কর্তৃত্বশীল হলে যুবাইরীয়রা ( আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সমর্থক ও অনুসারীরা ) আহলুল বাইতের সাথে কেমন আচরণ করবে ? বরং তারা ( যুবাইরীয়রা ) ইমাম যাইনুল আবিদীন ( আ. ) , আহলুল বাইত এবং বনী হাশিমকে বনী উমাইয়ার সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ক্ষমতা দখলের সোপান হিসাবে ব্যবহার করত বিধায় তিনি ( ইমাম যাইনুল আবিদীন – আ. - ) মদীনাবাসীদের এ বিদ্রোহ ও হাররার ঘটনার সাথে কোনোভাবেই নিজেকে জড়ান নি বরং তিনি হাররার লোমহর্ষক ঘটনায় বহু আশ্রয়হীন অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত নারী , পুরুষ ও শিশুকে তাঁর নিজ গৃহে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং দুর্যোগ চলাকালীন দিনগুলোয় তাদেরকে আপ্যায়ন করেছিলেন । এ সব আশ্রয়গ্রহণকারী অসহায় নারী ও শিশুদের মধ্যে এমনকি বনী উমাইয়া ও মারওয়ান ইবনে হাকামের পরিবারের নারী ও শিশুরাও ছিল যাদেরকে বিদ্রোহীরা হত্যা অথবা ক্ষতিসাধন করতে চেয়েছিল ।

 আর এ কারণে মুসলিম ইবনে উকবা বিদ্রোহ দমন করার পর ইমাম যাইনুল আবিদীনের কোনো ক্ষতিসাধন করে নি । তবে ইয়াযীদ মুসলিম ইবনে উকবাকে নির্দেশ দিয়েছিল যে যদি সে মদীনায় বিদ্রোহের সাথে ইমাম যাইনুল আবিদীনের ( আ. )ন্যুনতম সংশ্লিষ্টতা ও যোগসাজোস খুঁজে পায় তাহলে সে যেন ইমাম যাইনুল আবিদীনের শিরোশ্ছেদ করে । ঠিক এ ধরণের অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বৈরী প্রতিকূল শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ছিলেন ইমাম যাইনুল আবিদীন ও আহলুল বাইত ( আ. ) । আর এ ধরণের পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষের সাথে না জড়ানোই ছিল সবচেয়ে সঠিক ও যথার্থ ইসলাম সম্মত পদক্ষেপ । আর ঠিক এ কাজটাই ইমাম যাইনুল আবিদীন (আ.) করেছিলেন উদ্ভূত ঐ পরিস্থিতিতে । কারণ বিবাদমান সকল পক্ষ্যই ছিল আদল ( ন্যায়পরায়নতা ) , ইনসাফ ও শরয়ী নিয়ম নীতি থেকে বহু যোজন দূরে ।                                             

     হাররার এ হত্যাযজ্ঞের পর আরো তীব্র ও কঠোর শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি হিজায ও ইরাকের কূফা অঞ্চলে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে । এরফলে অত্র অঞ্চলে আহলুল বাইতের অনুসারীরা যারা ছিলেন বনী উমাইয়া বিরোধী তারা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে । তাদের মধ্যকার সমম্বয় ও সাংগাঠনিক রূপও সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে । ইমাম যাইনুল আবিদীন ( আ. ) এ প্রতিকূল পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করেই বলেছেনঃ সমগ্র মক্কা ও মদীনায় ২০ জন ব্যক্তিও নেই যারা আমাদেরকে ( আহলুল বাইত ) ভালোবাসে । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , ২য় সংস্করণ , খঃ ৪৫ , পৃঃ ১৪৩ )

   প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মাসঊদী বলেছেনঃ ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন ( আ. ) এক ক্রান্তিলগ্নে গোপণে এবং কঠিন তাকিয়া নীতি অবলম্বন করে ইমামতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । ( দ্রঃ মাসঊদী প্রণীত ইসবাতুল ওয়াসিয়াহ , ৪র্থ সংস্করণ , হাইদারীয়া মুদ্রণালয় , নাজাফ , ১৩৭৩ হি. , পৃঃ ১৬৮ )

   ইমাম সাদিক ( আ. ) এ তিক্ত দুঃখজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেনঃ ইমাম হুসাইনের ( আ। ) শাহাদতের পর কেবল তিন ব্যক্তিঃ আবূ খালিদ কাবুলী , ইয়াহইয়া ইবনে উম্মিত তাভীল এবং জুবাইর ইবনে মুতইম ব্যতীত সকল জনগণ ( মহানবীর ( সা.) আহলুল বাইতের আশপাশ থেকে ) সড়ে গিয়েছিল এবং বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল এরপর অল্প কিছু লোক তাদের ( আহলুল বাইতের অনুসারীগণ ) সাথে এসে যোগ দেয় এবং ( ধীরে ধীরে ) তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে ।...... ( দ্রঃ শেখ মুফীদ প্রণীত আল-ইখতিসাস , পৃঃ ৬৪ )

   ফযল ইবনে শাযান বলেনঃ আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আ. ) ইমামতের সূচনা লগ্নে কেবল পাঁচ ব্যক্তি ব্যতীত তাঁর আর কোনো অনুসারীই ছিল না । এই পাঁচ ব্যক্তি হলেনঃ সাঈদ ইবনে জুবাইর , সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব , মুহাম্মাদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুতইম , ইয়াহইয়া ইবনে উম্মিত তাভীল এবং আবূ খালিদ কাবুলী । ( দ্রঃ শেখ তূসী , ইখতিয়ার মারিফাতির রিজাল , পৃঃ ১১৫ )...চলবে...

লেখা: মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান

تبصرہ ارسال

You are replying to: .