۱۵ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۵ شوال ۱۴۴۵ | May 4, 2024
News ID: 372533
20 ستمبر 2021 - 00:57
ব্রেক্সিট কেন?
ব্রেক্সিট কেন?

হাওজা / ব্রেক্সিট কেন? সম্প্রতি ব্রিটেনে পার্লামেন্ট নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ পার্টি বা টোরি দল জয়লাভ করলে ব্রেক্সিট ইস্যু এখন বলা যায় যে অচল ও ঝুলন্ত অবস্থা থেকে বের হয়ে একটা নিশ্চিত পরিণতির দিকে যেতে পারে ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্রেক্সিট কেন? সম্প্রতি ব্রিটেনে পার্লামেন্ট নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ পার্টি বা টোরি দল জয়লাভ করলে ব্রেক্সিট ইস্যু এখন বলা যায় যে অচল ও ঝুলন্ত অবস্থা থেকে বের হয়ে একটা নিশ্চিত পরিণতির দিকে যেতে পারে ।

 আবার সাম্প্রতিক এ নির্বাচন ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে দেশটির ভিতরে চরম রাজনৈতিক বিভক্তি ও প্রকট মেরুকরণের বিষয়টিও দৃষ্টিগোচরে এসেছে যা এমনকি স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডকে ব্রিটেন থেকে বেরিয়ে যাওয়া অর্থাৎ ব্রিটেনে বিচ্ছিন্নতাবাদের সুযোগ বা সাবেক ইয়োগোস্লাভিয়া বা চেকোস্লোভিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো ধরণীর বুক থেকে 'গ্রেট ব্রিটেন' নামক দেশটির চিরবিদায়েরও কারণ হতে পারে ।

 কারণ এ নির্বাচনে স্কটল্যান্ডে ব্রেক্সিট বিরোধী দল জয়ী হয়েছে যারা  ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকতে ও ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে আগ্রহী । আর উত্তর আয়ারল্যান্ডও  ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার সমর্থক । তাই এত রিস্ক ও ঝুঁকি নিয়ে ব্রিটেন কেন  ব্রেক্সিট করতে যাচ্ছে ? অর্থাৎ ব্রিটেনের জন্য ব্রেক্সিটে এমন কি ফায়দা আছে যার জন্য দেশ বিচ্ছিন্নতাবাদ কবলিত হলেও কিছু যায় আসে না ? এ ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা উচিত । ব্রিটেন ব্রেক্সিটের পক্ষে যে সব যুক্তি ও কারণ উপস্থাপন করে সেগুলো আসলে বাহ্য  লোক দেখানো কারণ হতে পারে তবে প্রকৃত কারণ নয় । আর ব্রেক্সিটের প্রকৃত আসল কারণ  ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী প্রকৃতির মাঝেই কেবল অনুসন্ধান করা বাঞ্ছনীয় ।

    ব্রিটেনের রাজ পরিবারই তাদের রাজতন্ত্র রক্ষার জন্যই ব্রেক্সিট চাচ্ছে । কারণ লেবার পার্টি ব্রিটেনের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার তেমন পক্ষপাতী নয় এবং দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত থাকার পক্ষে । আর ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকলে রাজতন্ত্র বিরোধীদের হাত শক্তিশালী হবে যারফলে ভবিষ্যতে ব্রিটেনে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে । টোরি দল বা কনজারভেটিভ পার্টি রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার পক্ষে । তাই সাম্প্রতিক নির্বাচনে রাজ পরিবার ও বাকিংহাম প্যালেসের আশীর্বাদ ও সমর্থন পুষ্ট টোরি দলের পক্ষে স্বয়ং ব্রিটিশ রাজ পরিবার ও রাজপ্রাসাদ এ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল বিধায় টোরি দল এ সাফল্য ও ফলাফল লাভ করেছে । 

 এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এ নির্বাচনের ফলাফলে গোপনে প্রভাব রাখতে পারে যা পরবর্তীতে স্পষ্ট হবে । কারণ এ দেশটিও ব্রেক্সিটের পক্ষে এবং এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান । কারণ ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করলে অগত্যা বা বাধ্য হয়ে প্রয়োজনের খাতিরেই দেশটি (ব্রিটেন) তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সার্বিক মৈত্রী জোট গঠন করবে । শুধু ব্রিটৈনই নয় দেশটির অনুগামী  অন্যান্য অ্যংলো স্যাকসোনীয় দেশ (  কানাডা , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড ( এ দেশগুলোকে  ব্রিটেনের স্যাটেলাইট স্টেটস Satellite States বলাই উত্তম )ও উক্ত ব্রিটেন - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জোটের সাথে অবশ্যই যোগ দেবে । আর এটা হয়ে গেলে ব্রিটেন প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ সমূহের সংঘ  যা কমন ওয়েল্থ নামে প্রসিদ্ধ সেটাকেও উক্ত জোটে যোগদান করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং জোটটির সম্প্রসারণের চেষ্টা করবে যার ফলে অ্যংলো স্যাক্সন প্রাধান্যের এ জোটটি আন্তর্জাতিক ভাবে প্রভুত রাজনৈতিক , সামরিক , অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষমতার অধিকারী হবে । আর জনসংখ্যার দিক থেকে এ জোটটি হবে জাতিসংঘের পর সর্ববৃহৎ জোট কারণ ভারত , পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার মতো বৃহৎ জনবহুল রাষ্ট্র এ জোটটির অন্তর্ভুক্ত থাকবে   এবং এরফলে তা বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করবে ।  ব্রিটিশ কমন ওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও মধ্য প্রাচ্যের বেশ কিছু দেশ যেমন : সৌদি আরব , জর্দান , পারস্যোপসাগরীয় আরব দেশগুলো , ইসরাইল ,  মিসর , চিলি , পানামা ইত্যাদির মতো  ল্যাটিন আমেরিকার কিছু দেশ  , তাইওয়ান , দক্ষিণ কোরিয়া , জাপান ইত্যাদিকেও এ জোটভুক্ত করার চেষ্টা করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন । এ জোটকে এভাবে সম্প্রসারিত করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর  বিশেষ করে তেল ও গ্যাস ( জ্বালানি বা এনার্জি ) সমৃদ্ধ অঞ্চল এবং সার্বিক ভাবে স্ট্র্যাটেজিক ( কৌশলগত গুরুত্বের অধিকারী) অঞ্চল গুলোর উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ , আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা  ও বিস্তৃত করবে অথবা বহাল ( বজায়) রাখতে চাইবে ।

আর যখন থেকে ব্রেক্সিট ইস্যু উপস্থাপন করা হয়েছে তখন থেকেই ব্রিটেন তার প্রাক্তন ( সাবেক) ঔপনিবেশিক শাসন ও সাম্রাজ্যকে গ্লোরিয়াস এম্পায়ার ( Glorious empire বা গৌরবময় সাম্রাজ্য) নামে অভিহিত করছে । উদ্দেশ্য :  এ ধরনের প্রচার প্রোপ্যাগাণ্ডা চালিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অতীত দুর্নাম ,কুখ্যাতি ও কালিমাগুলো মিটিয়ে স্বয়ং ব্রিটিশ তরুণ সমাজ ও বিশ্বের নবীন প্রজন্মের কাছে তা সহনীয় ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা । আর এটা করতে পারলে ব্রিটেন ( প্রাক্তন সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব পরাশক্তি ) নব্য সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব পরাশক্তির ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) সাথে এক সার্বিক জোট গঠন এবং প্রাক্তন উপনিবেশ সমূহকে ( বর্তমানে এগুলো স্বাধীন এবং ব্রিটিশ কমন ওয়েলথ ভুক্ত দেশ ) প্রভাবিত করে আবার নতুন আঙ্গিক ও অবয়বে পুরোনো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভূত ও প্রেতাত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে । আর এ সাম্রাজ্যের সর্বময় কর্তৃত্ব যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও হাতে ন্যস্ত হয় তাতে কোনো আপত্তি নেই । কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে সাংস্কৃতিক , রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে এমনকি ধর্মীয় , জাতিগত ও ভাষাগত ভাবেও হচ্ছে ব্রিটেনের ঔরস জাত সন্তান । এক কালের মাস্তান বলে খ্যাত জনক জননী ( ব্রিটেন) বৃদ্ধ হয়ে গেলেও ক্ষতি নেই । কারণ বিপুল বপু ও শক্তিশালী দেহের অধিকারী মাস্তান সন্তান (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) তো তাদের আছেই। সেই ধরবে নতুন করে গড়ে তোলা অ্যাংলো ফোনিয়ান ( Anglophonian : অ্যাংলো বা ইংরেজি ভাষাভাষী ) সাম্রাজ্যের হাল । আমার মনে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ভাবছে যে বর্তমানে বিদ্যমান ওয়ার্ল্ড অর্ডার আর বেশি দিন কাজ করবে না ও টিকবে না । তাই ওটা নিজ থেকে ধ্বসে পড়া বা উদীয়মান বিশ্ব শক্তি সমূহের হাতে বিলুপ্ত ও ধ্বংস হওয়ার আগেই নিজেরাই যদি ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ) এ ব্যবস্থার স্থলে নতুন আঙ্গিক,অবয়ব ও আকৃতিতে বিশ্ব ব্যবস্থা পেশ করতে পারে তাহলে বিশ্বে তাদের পুরোনো কর্তৃত্বটা বহাল থাকবে নতুন অবয়বে । আর সেজন্য আমরা হয়তো বা ব্রেক্সিটের সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের পর দেখতে পাব যে ব্রিটেন  তার প্রাক্তন উপনিবেশ গুলোকে ( বর্তমানে ব্রিটিশ কমন ওয়েলথ ভুক্ত দেশ সমূহ) ব্রিটিশ মার্কিন  ( অ্যাংলোস্যাক্সনীয়) জোটের দিকে টানছে এবং সেজন্য তৎপরতা চালাচ্ছে । বিশেষ করে ব্রিটিশ কমন ওয়েল্থের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতকে এ জোটে টেনে আনার জোর প্রচেষ্টা চালাবে ব্রিটেন । সেই সাথে বাংলাদেশ , পাকিস্তান , নাইজেরিয়া  ইত্যাদির মতো জনসংখ্যা বহুল দেশ গুলোকেও  ঐ জোটে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে । মধ্য প্রাচ্যকে বিশ্বে এনার্জির (জ্বালানি তেল ও শক্তি ) প্রধান যোগানদাতা উৎস্য হিসেবে করায়ত্তে রাখা ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে বঙ্গোপসাগরের প্রতিও যা ট্রাম্প নিজেই বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ নামে অভিহিত করেছেন । আর  এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্রিটেনের জড়িত থাকা মোটেও অস্বাভাবিক নয় । কারণ ঐতিহাসিক ভাবে ব্রিটেন এ অঞ্চলের উপর দুই শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শাসন ও কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিল । আর স্ট্র্যাটেজিক ভাবে বঙ্গোপসাগর গুরুত্বপূর্ণ হওয়া ছাড়াও  ( দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার  হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের আরাকান ( রাখাইন ) অঞ্চল  , চীনকে কৌশলগতভাবে পরিবেষ্টিত ও ঘিরে ফেলা  এবং পূর্ব ভারত ও অত্র অঞ্চল সংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিম চীনের উপর নজরদারির  জন্য ঘাঁটি স্থাপন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু দিনের লালিত স্বপ্ন এবং শ্রীলংকায়ও অনুরূপ ঘাঁটি গাড়লে ইয়েলো ড্রাগন অর্থাৎ চীনকে তার আবাস ভূমির ( habbitat) মধ্যেই সীমাবদ্ধ ও পরিবেষ্টিত করে রাখার উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে - এটাই হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব ) এ অঞ্চলের ব্যাপক অর্থনৈতিক - বাণিজ্যিক গুরুত্বও রয়েছে বিশেষ করে যখন বঙ্গোপসাগরে  তেল-গ্যাস খনির বিশাল সম্ভাবনা বিদ্যমান তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন কি নিষ্ক্রিয় ও নির্লিপ্ত বসে থাকতে পারে ?! আর রোহিঙ্গা সমস্যা সেই উদ্দেশ্য ও নীল নকশা বাস্তবায়নের সম্ভবতঃ পূর্ব প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ হতে পারে । মার্কিন ও ব্রিটিশদের নাকে তেলের গন্ধ গেলেই তা কব্জা করা পর্যন্ত আর স্থির থাকতে পারে না ।  এ রকম পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তেল ও গ্যাস ( জ্বালানি এনার্জি ) বিদ্যমান বা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে হানা দিয়ে তা দখল করা এবং বাণিজ্যিক ও কৌশলগত গুরুত্বের অধিকারী এলাকা ও অঞ্চল সমূহকে নিজেদের করায়ত্তে রাখা ইত্যাদি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যা বাস্তবায়িত হলে পুরো দুনিয়ার উপর তাদের কর্তৃত্ব চিরকাল বহাল থাকবে । আর সে জন্যই এ রকম একটা জোট গঠন করা খুবই জরুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের জন্য যার সূত্রপাত হবে ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ।

হয়তো কেউ বলতে পারে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের এ ধরণের গোপন প্ল্যান ও পরিকল্পনা ব্রেক্সিট ছাড়াই সম্ভব । তাই ব্রেক্সিটের জন্য যে সব কারণ  ব্রিটেন নিজেই ঘোষণা করেছে সেগুলোকেই ব্রেক্সিটের প্রকৃত কারণ বলেই গণ্য করতে হবে ।

যেমন আমরা আগেও বলেছি  আসলে ব্রেক্সিটের পক্ষে ব্রিটিশ সরকার যে সব অজুহাত দেখাচ্ছে আসলে সেগুলো হচ্ছে বাহ্য আপাত কারণ ; আর এর প্রকৃত কারণ বা কারণ সমূহকে গোপন রাখা হয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই  অনুমান ও অনুসন্ধান করা উচিত । আর অনুমানও বাস্তবতার কাছাকাছি ও যৌক্তিক হওয়া বাঞ্ছনীয় । আর তা না হলে মার্কিন ব্রিটিশ গং - এর অনিষ্ট সাধন থেকে বিশ্ব নিরাপদ থাকতে পারবে না । তাই বলতে হয় : ব্রেক্সিট না করে অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকেই যদি ব্রিটেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উক্ত জোট গঠন করে তাহলে ভবিষ্যতে বিশ্বের এনার্জির উৎস্য সমূহের উপর অ্যাংলোস্যাক্সনীয়  কর্তৃত্ব ও আধিপত্য শতকরা ১০০ ভাগ কায়েম করা সম্ভব হবে না । তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও  শরীক করতে হবে ; আর তাতে একচেটিয়া লাভ ও মুনাফা ভোগ সম্ভব হবে না । আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে  গিয়ে এ জোট গঠন করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে শরীক করার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না বরং বিশ্বব্যাপী তেল গ্যাসের খনি ও উৎস্য সমূহ  কব্জা করে  তেল গ্যাসের মুখাপেক্ষী ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ভবিষ্যতে চড়া দামে জ্বালানি তেল ও গ্যাস বিক্রি করতে পারবে এই মার্কিন ব্রিটিশ বা আংলোস্যাক্সোনীয়  জোট ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক নেতৃত্ব ব্রিটেনের হাতে নেই এবং কার্যত জার্মানি এই ইউনিয়নের নেতৃত্বে রয়েছে । আর এরফলে ব্রিটেন নিজেই অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের মাধ্যমে তার ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য পুরোপুরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর চাপানো অসম্ভব না হলেও দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে । আর

ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেমন আরও অধিক শক্তিশালী হতে পারে ঠিক তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পাশাপাশি রাশিয়া ও চীনের সাথে আরও অধিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে যারফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নিজেদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিতে পারে অথবা অর্থনৈতিক ভাবে এই ইউনিয়ন মার্কিন ব্রিটিশ অক্ষের জন্য ( মূলতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ) প্রতিদ্বন্দ্বী ও হুমকি হয়ে যেতে পারে এবং  ইউরো বিশ্ব বাণিজ্যে ও বিশেষ করে জ্বালানি তেল বা পেট্রোলিয়াম ব্যবসায়ের লেনদেনের ভিত্তি ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী ও হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে । তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন চাচ্ছে ইউরোপে নিজেদের হেজিমনি টিকিয়ে রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দুর্বল  অথবা এর অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলুপ্ত করতে । কারণ তাহলে ইউরোপীয় দেশ গুলোর উপর তখন মার্কিন কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে এবং ব্রিটেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও মদদ নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতৃত্ব দেবে । আর এ জন্য নতুন আঙ্গিকে ন্যাটোকে চাঙ্গা ও কার্যকর রাখবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন । আর হয়তো তখন ন্যাটোর বিলুপ্তি জরুরী হবে না। আর ব্রেক্সিটের  অর্থই হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৃত্যু ঘন্টা বেজে উঠা । ন্যাটোর ব্রেণ ডেথ হয়েছে বলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোণ কিছু দিন আগে যে উক্তি করেছিলেন  তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্রেণ ডেথ ও কমার দিকেও ইঙ্গিতবহ । 

  আর ইয়েলো ড্রাগন (চীন)কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতা বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয় ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য । ভারত যদিও এক সময় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের এক অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিল  কিন্তু দেশটি পরবর্তীতে পুরোপুরি জোট নিরপেক্ষ থাকতে পারে নি । ৭০এর দশকে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে এক দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করে । আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও বিলুপ্তির পরে ভারতের সাথে পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও দহরমমহরম  ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায় । আর বর্তমানে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এতটাই ঘনিষ্ঠ ও বন্ধু ভাবাপন্ন যে এই কিছু দিন আগে ইরান থেকে তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ইরান নিয়ে ভারতের সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে : " ভারতের মতো দারুণ বন্ধুর সহযোগিতা পেয়ে আমেরিকা অত্যন্ত সন্তুষ্ট ।" ভারত সম্প্রতি ইরান থেকে তেল আমদানি লক্ষণীয় হারে কমিয়ে দিয়েছে । বিশেষজ্ঞ দের মতে , ভারতে যে হারে জ্বালানি শক্তির চাহিদা বাড়ছে তাতে ইরান থেকে ব্যাপক তেল আমদানি কমিয়ে ( প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ) দেওয়া কিছুটা ব্যতিক্রম ধর্মী পদক্ষেপ । শুধু মাত্র আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্যই ভারত এ পথে হাঁটছে । ইরানের সাথে দীর্ঘ দিনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ( দ্র্ঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা , ২/৮/২০১৯) । ব্যস তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় পদক্ষেপ ও নীতিকেও সমর্থন করছে ও প্রশ্রয় দিচ্ছে এমনকি নিজের অসুবিধা সত্ত্বেও । কারণ ভারতে যে হারে জ্বালানি শক্তির চাহিদা বাড়ছে তাতে ইরান থেকে তেল আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে ভারত শুধু মাত্র আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে !!! তাহলে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এ ধরনের নির্বোধ বুদ্ধু বন্ধুকে ( ভারত) ভবিষ্যতে চীনের বিরুদ্ধে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  দাঁড় করায় বা অন্যান্য দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যবহার করে তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই ( আর ১৯৬২ সালে সীমান্ত বিরোধ ও তিব্বতের বিদ্রোহী দালাই লামা ও তার অনুসারীদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করলে ভারত চীন যুদ্ধ বাধে এবং এ যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পক্ষাবলম্বন করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এ যুদ্ধে জেতাতে পারে নি । বরং ভারত চীনের কাছে  পরাজিত হয়েছিল । (তাই ভারতের উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন কর্তৃক ব্যবহৃত না হওয়া। ) তবে ষভারতের অতীত ও বর্তমান রেকর্ড দেখে মনে হচ্ছে যে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  অথবা  মার্কিন - ব্রিটিশ জোট  ( যা গোপনে গঠিত হয়ে থাকতে ও পারে অথবা ব্রেক্সিটোত্তর কালে গঠিত হবে ) কর্তৃক ব্যবহৃত হবেই । অবশ্য সে ক্ষেত্রে কিছু সুযোগ সুবিধা ( উচ্ছিষ্ট ভোগ বললেই ভালো) পেতে পারে ভারত , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আংলো স্যাক্সোন প্রাধান্যের  উক্ত নব্য সাম্রাজ্যবাদী জোটের কাছ থেকে  । আর চানোক্য কূটনৈতিক মানসিকতা সম্পন্ন ভারতের জন্য তা হতে পারে খুবই কাঙ্খিত ও প্রত্যাশিত । আর এ রকম একটা কিছু হলে বাংলাদেশ পরিণত হতে পারে চীন - ভারত - মার্কিন  ব্রিটিশ টানাপোড়েন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভয়ানক কুরুক্ষেত্রে যার পূর্বাভাস বা পূর্ব লক্ষণ রোহিঙ্গা সমস্যা যার দায়ভার এক রকম বাংলাদেশের কাঁধে চাপানো হয়েছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ( Bay of Bengal Initiative) । আর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তেল পাওয়া না গেলেও গ্যাস তো আছেই । আর এনার্জির গন্ধ গেলেই মার্কিন - ব্রিটিশরা আর স্থির  থাকতে পারে না । আর ভবিষ্যতে হয়তো বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বিশাল তেল ও গ্যাসের খনি আবিষ্কৃত হতে পারে । কারণ ভারতের আসাম ও মিয়ানমারে তেল উৎপাদন করা হচ্ছে সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন আমল থেকেই । তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভের শিরোনামে অত্র অঞ্চলে ব্রিটেনসহ আংলো স্যাক্সোন প্রাধান্যের জোট নিয়ে হাজির হয় তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই । আর এতে করে রোহিঙ্গা নিধন ও উচ্ছেদের মতো আরো রক্তক্ষয়ী ঘটনাও যদি তাও বিস্ময়কর বলে গণ্য হবে না ।

সুতরাং সময় থাকতে আমাদের সবার সচেতন হওয়া উচিৎ । ব্রেক্সিট হয়তো বিশ্বকে টালমাটাল করতে পারে ; আরো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংঘাত ও সংঘর্ষের সূত্রপাত করতে পারে ।

ব্রেক্সিট কেন ? - এ প্রবন্ধটি আমি গত বছর লিখেছিলাম এবং এতে উল্লেখ করেছিলাম যে , ব্রেক্সিট অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , কানাডা , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ সমূহ ( ব্রিটিশ কমন, ওয়েলথ ভুক্ত দেশ সমূহ ) নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের যৌথ নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠন করে বিশ্বের সকল জ্বালানি পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস , খনিজ সম্পদের উৎসের সমূহ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র ও রুট সমূহ  কব্জা করবে একক ও একচেটিয়া ভাবে এবং তখন এ বিপুল জ্বালানি তেল , গ্যাস , খনিজ সম্পদ ও কাঁচা মালে অন্য কাউকে যেমন : ইউরোপীয় ইউনিয়ন কে হিস্যা ও শেয়ার দিতে হবে না । বরং এ সব জ্বালানি তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ ইত্যাদি চড়া দামে ইউরোপীয় ইউনিয়ন , চীন ও অন্যান্য দেশের কাছে বিক্রি করে বহু মুনাফা অর্জন করতে পারবে এবং পৃথিবী ব্যাপী ব্যবসায় - বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে । আর ঠিক প্রায় এক বছর পরে অস্ট্রেলিয়া , ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটা নতুন ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা জোট ( যা আসলে রাজনৈতিক সামরিক অর্থনৈতিক  জোট) গঠন করেছে যে সম্পর্কে চীন তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ফ্রান্সও হয়েছে ক্ষুব্ধ । আর অদূর ভবিষ্যতে নিউজিল্যান্ড ও কানাডাও এ জোটে যোগ দেবে । আর ধীরে ধীরে এ জোটের অন্তর্ভুক্ত করা হবে কমন ওয়েলথ ভুক্ত দেশসমূহকেও !  সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ফ্রান্সের সাথে মাল্টি বিলিয়ন ( চল্লিশ বিলিয়ন ) ডলারের  সাবমেরিন ক্রয় চুক্তি বাতিল করলে ফ্রান্স ক্ষুব্ধ হয়ে ওয়াশিংটন ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) ও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতদেরকে ঠেকে পাঠিয়েছে । তাই এ ধরণের ভয়ঙ্কর সর্বনাশা একটি জোট গঠিত হয়ে তা বিশ্ব ব্যাপী এর মারাত্মক থাবা ও বিষাক্ত ছোবল মারার পায়তারা চালবে । অতএব সাবধান । হয়তো বিশ্বব্যাপী কোভিড - ১৯ মহামারীর বিস্তার ও সেই সাথে বিশ্বব্যাপী কোভিড -১৯ রোধের ভ্যাক্সিনেশন সেই রক্ত ঝড়ানো থাবার মারণাঘাত ও বিষাক্ত ছোবলের পূর্ব পদক্ষেপ হতে পারে ।

(মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .