۱۶ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۶ شوال ۱۴۴۵ | May 5, 2024
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )

হাওজা / হযরত ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন ( আঃ ) ৩৮ হিজরীর ৫ শাবান মতান্তরে ৩৬ হিজরীর ১৫ জুমাদাল উলা জন্ম গ্রহণ করেন ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৭- এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির আরো অবণতি হয় আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান ইবনে হাকামের শাসনামলে । কারণ , ৬৪ হিজরীতে ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়ার মৃত্যু হলে তার ছেলে মুয়াবিয়া ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফিয়ান অনিচ্ছা সত্ত্বেও খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয় । সে নিজেকে , তার পিতা ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়াকে , তার পিতামহ মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ানকে বরং বনী উমাইয়াকে ইসলামী খিলাফতের উপযুক্ত ও যোগ্য মনে করত না ।

৪০ দিন বা মাস দুই খলীফা থাকার পর সে মৃত্যু বরণ করলে অবশেষে মারওয়ান ইবনুল হাকাম খলীফা হয় । কয়েক মাস খলীফা থাকার পর ইয়াযীদের স্ত্রীর হাতে তাঁর মৃত্যু হলে তার ছেলে আব্দুলমালেক খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয় । ইয়াযীদের মৃত্যুর পর থেকে আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান ইবনে হাকামের রাজত্বকালের প্রথম কয়েক বছর পর্যন্ত বনী উমাইয়ার খিলাফতের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ।

 কিন্তু খলীফা আব্দুল মালেক হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ সাকাফীকে সেনাবাহিনী সহ হিজাযে পাঠিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে দমন ও হত্যা করে । নিহত হওয়ার আগে হিজায ও ইরাকের উপর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়েছিল । এক পর্যায় পবিত্র মক্কা থেকে পালিয়ে এসে মুখতার সাকাফী ইরাকের কূফা যুবাইরীয় শাসন থেকে মুক্ত করে ইমাম হুসাইন ( আ. ) এবং শহীদানে কারবালার হত্যাকারীদের সবাইকে হত্যা করেন ।

 মদীনায় যুবাইরীয়দের আধিপত্য থাকা এবং জনতার এক অংশ আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের মতো উমাইয়া পন্থী হওযার কারণে ইমাম যাইনুল আবিদীন ( আঃ ) মুখতারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে পারেন নি । কারণ আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ও তার অনুসারী যুবাইরীয়রা বনী হাশিম ও আহলুল বাইত বিদ্বেষী হওয়ার পাশাপাশি মুখতারেরও প্রচণ্ড বিদ্বেষী ছিল । আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর নিজ ভ্রাতা মুসআব ইবনে যুবাইরকে সেনাবাহিনী সহ কূফায় পাঠিয়ে মুখতারকে হত্যা করে কূফা দখল করে নেয় ।

 পরে খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান মুসআবকে পরাজিত ও বধ করে কূফা অধিকার করে । আব্দুল মালেকের নির্দেশে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ সাকাফী হিজায ও মক্কা আক্রমণ এবং পবিত্র কাবা ও মসজিদুল হারামে অগ্নিসংযোগ এবং বহু মানুষকে হারামের অভ্যন্তরে হত্যা করে । যুদ্ধে সে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে পরাজিত ও হত্যা করে যুবাইরীয় শাসন ও খিলাফতের অবসান ঘটায় ফলে গোটা মুসলিম বিশ্ব খলীফা আব্দুল মালেকের একক কর্তৃত্বে চলে আসে । প্রভাবশালী সাহাবা ও দ্বিতীয় খলীফার পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের মতো মদীনাবাসীদের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অংশ বনী উমাইয়া পন্থী ছিল ।

 আর আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের মতো ব্যক্তিরা ইমাম হুসাইনকে হত্যার পর মদীনা বাসীরা ইয়াযীদের প্রতি বাইআত ভঙ্গ করে বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করলে ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়াকে সমর্থন করেছিলেন এবং বাইআত ভঙ্গকারীদেরকে বিশ্বাসঘাতক ( গাদের ) বলেছিলেন । এদের কারণেই বনী উমাইয়ার কুশাসন , অন্যায় ও অত্যাচার স্থায়ী হয়েছিল । সহীহ আল-বুখারীর নিম্নোক্ত হাদীস প্রণিধানযোগ্যঃ

নাফে ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ মদীনাবাসীগণ ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়ার প্রতি বাইয়াত ভঙ্গ করলে ইবনে উমর ( রাঃ ) তার বিশেষ বন্ধুবর্গ ও সন্তানদেরকে একত্রিত করে বললেন , আমি রসূলুল্লাহ ( স. ) কে বলতে শুনেছি , কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাস ঘাতকের জন্য একটি করে পতাকা স্থাপন করা হবে । আর আমরা এ লোকটির ( ইয়াযীদ ) হাতে আল্লাহ ও তার রসূলের নামে বাইআত নিয়েছি ।

একটি মানুষের হাতে আল্লাহ ও তার রসূলের নামে বাইআত করার পর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া চরম বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করি । আমি  জানি না , তোমাদের মধ্যে কেউ তার প্রতি বাইআত ভঙ্গ করেছে কিংবা অন্য কারো প্রতি বাইআত নিয়েছে । যদি কেউ এরূপ করে থাকে , তাহলে মনে করতে হবে , তার সহিত আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে ( সহীহ বুখারী , খঃ ৬ , কিতাবুল ফিতান , হাদীস নং ৬৬১২ , পৃঃ ৩৩১ , আধুনিক প্রকাশনী , ঢাকা , বাংলাদেশ ) । এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে ইমাম হুসাইনকে ( আঃ ) কারবালায় নির্মমভাবে হত্যা ও শহীদ করার মতো জঘন্য অপরাধ এবং মদ্যপান , নিষিদ্ধ গান বাজনায় আসক্তিসহ বিভিন্ন ধরণের পাপাচার ও অন্যায় অপকর্মকারী ইয়াযীদের বাইআত ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে গণ্য করে ইবনে উমর নিজেকে উমাইয়া পন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ।

 হাররায় হত্যাযজ্ঞ , তিন দিন ধরে মদীনায় ইয়াযীদী সেনাবাহিনীর জন্য সবকিছু হালাল ও বৈধ করে দেওয়া মদীনা লুন্ঠন , গণহত্যা , নারী ধর্ষণের কারণে মদীনায় ১০০০ কুমারী মেয়ের অবৈধ সন্তান প্রসব , মদীনাবাসীদেরকে ভীত সন্ত্রস্তকারীর উপর মহান আল্লাহর লানত সংক্রান্ত মহানবীর হাদীস থেকে ইয়াযীদের অযোগ্যতা , পথভ্রষ্টতা , বিচ্যুতি ও ধর্মদ্রোহিতা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও ইয়ায়ীদের বিরুদ্ধাচারণ ও বাইআত ভঙ্গ করাকেই ( খাল্ ) ইবনে উমর নাজায়েয , বিশ্বাসঘাতকতা ও ধর্মদ্রোহিতা বলে আখ্যায়িত করে বাইআত ভঙ্গকারীদের থেকে নিজেকে পৃথক বলে ঘোষণা করেছেন । এতসব অপকর্ম ও অপরাধ করেও ইয়াযীদ ও তার মতো বিচ্যুত শাসকরা খলীফা থেকেই যাবে ইবনে উমরদের দৃষ্টিতে । তাহলে ইবনে উমর ও তার মতো ব্যক্তিরা যারা  বনী উমাইয়ার লম্পট খলীফাদের খিলাফতের সমর্থক তারা কি কামনা করবেন যে পরকালে তাদের হাশর নশর হোক ইয়াযীদ ও ইয়াযীদের মতো শাসকদের সাথে ?! আর অত্যাচারী যালেম লম্পট পাপাচারী শাসক ও শোষকদের ব্যাপারে এ ধরণের দৃষ্টিভঙ্গী ও নীতি অবস্থান গ্রহণ করলে ধর্ম , শরিয়ত , নীতি-নৈতিকতা , ন্যায়পরায়ণতা ও মূল্যবোধের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না এবং পৃথিবীতে ধর্ম – অধর্ম , পাপ-পূণ্য ন্যায় – অন্যায় সুবিচার – অবিচার ইত্যাদি সব কিছুই একাকার হয়ে যাবে । আকল-ই সলীম ( সুস্থ বিবেকবোধ ও যুক্তি-বুদ্ধি ) তা কি মেনে নেয় ?

     রক্তপিপাসু সাফফাক খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে মক্কায় পরাজিত ও বধ , লক্ষাধিক মানুষকে হ্ত্যা এবং সকল বিদ্রোহ কঠরভাবে দমন করে গোটা মুসলিম বিশ্ব পদানত করলে আবদুল্লাহ ইবনে উমর খলীফা আবদুল মালেক ইবনে মারওায়নের কাছে পত্র প্রেরণ করে তার প্রতি নিজের বাইআত ও আনুগত্য প্রকাশ করেন । সহীহ বুখারীর নিম্নোক্ত হাদীস এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণিধানযোগ্যঃ

      আবদুল্লাহ ইবনে দীনার ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ যখন জনগণ খলীফা আব্দুল মালেকের নিকট বাইআত গ্রহণ করলো , তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন আব্দুল মালেকের নিকট পত্র লিখলেন , আমি আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন আব্দুল মালেকের আদেশ আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের হাদীস মোতাবেক যথাশক্তি শ্রবণ ও আনুগত্য করার স্বীকৃতি দিচ্ছি । আমার পুত্রগণও অনুরূপ স্বীকৃতি দিয়েছে ( সহীহ বুখারী , খঃ ৬ , কিতাবুল ফিতান , হাদীস নং ৬৬৯৯ , পৃঃ ৩৭৫ , আধুনিক প্রকাশনী , ঢাকা ,বাংলাদেশ ) । এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে খলীফা হওয়ার জন্য কোনো মহৎ সৎ গুণের প্রয়োজন নেই । যে কোনো ব্যক্তি যদি ষড়যন্ত্র , চক্রান্ত , প্রতারণা , বিদ্রোহ , হত্যা , মারামারি , কাটাকাটি ও খুন-খারাবী , যুদ্ধ ও জোর-জবরদস্তি করে সকল প্রতিপক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল ও দমন করে অর্থাৎ ছলে – বলে – কৌশলে ক্ষমতা দখল করে খলীফা হয়ে যায় এবং সবাইকে তার আনুগত্য ও বাইআত করতে বাধ্য করে তাহলে আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের দৃষ্টিতে তাকেই ( ক্ষমতা দখলকারী ব্যক্তি ) খলীফা বলে মেনে নিতে হবে । আর মুয়াবিয়া , ইয়াযীদ , আব্দুল মালেক , বনী উমাইয়ার খলীফাগণ বরং আব্বাসীয় খলীফাগণ ঠিক এ পদ্ধতিতেই খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েছিল । তাই বনী উমাইয়া খিলাফতের সমর্থক আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের মতো ব্যক্তিদের কাছে ন্যায় – নীতি , বুদ্ধিমত্তা , আদল ( ন্যায়পরায়ণতা ) - ইনসাফ , নৈতিকতা , সততা , উত্ত্ম চারিত্রিক গুণাবলী , জ্ঞান , যোগ্যতা ও দক্ষতা ইত্যাদি খিলাফত , সলতানাত , ইমারতের পদে নিয়োগ ও অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বশর্ত বলে গণ্য ও বিবেচিত হয় নি । আসলে উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফত গোত্রতন্ত্র ও বংশানুক্রমিক ( বংশতান্ত্রিক ) রাজতন্ত্র ব্যতীত আর কিছুই ছিল না এবং এই তন্ত্র বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে অটোম্যান খিলাফত ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল । এ ধরণের শাসন ব্যবস্থা ইসলাম ধর্ম সমর্থিত বা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা  বলে অভিহিত করা যায় না ।…চলবে…

লেখা: মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান

تبصرہ ارسال

You are replying to: .