۱۹ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۹ شوال ۱۴۴۵ | May 8, 2024
ইমাম কাযিম (আ:) -এর শাহাদাত
ইমাম কাযিম (আ:) -এর শাহাদাত

হাওজা / মশহুর অভিমত অনুসারে 25 রজব মহানবী ( সাঃ ) - এর আহলুল বাইতের ( আঃ ) সপ্তম মাসূম ইমাম হযরত মূসা ইবনে জাফার ( আঃ ) – এর শাহাদাত দিবস।

সংগ্রহ ও অনুবাদ : মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

মশহুর অভিমত অনুসারে 25 রজব মহানবী ( সাঃ ) - এর আহলুল বাইতের ( আঃ ) সপ্তম মাসূম ইমাম হযরত মূসা ইবনে জাফার ( আঃ ) – এর শাহাদাত দিবস। 183 হিজরী সালের 25 রজব বাগদাদে ইমাম মূসা ইবনে জাফারকে ( আঃ ) আব্বাসীয় খলিফা হারূনুর রশীদের নির্দেশে বিষ প্রয়োগ করে কুখ্যাত কারাগার প্রধান সিন্দী বিন শাহিকের কারাগারে শহীদ করা হয় . তিনি 128 অথবা 129 হিজরীতে পবিত্র মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী আবওয়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন . 5ম আব্বাসীয় খলিফা হারূনুর রশীদ তাঁকে 179 হিজরীতে মদীনা থেকে ইরাকের বসরায় নিয়ে এনে ঈসা ইবনে জাফার ইবনে মনসূরের কাছে বন্দী করে রাখে . এরপর তাঁকে বসরা থেকে বাগদাদে আনা হয় এবং 183 হিজরী সালের 25 রজব অর্থাত শাহাদাত বরণ পর্যন্ত সিন্দী ইবনে শাহিকের জেল খানায় তাঁকে বন্দী করে রাখা হয় . শাহাদাত কালে তাঁর বয়স হয়েছিল 54 বা 55 বছর . তাঁকে বাগদাদে কুরাইশদের গোরস্তানে দাফন করা হয় যা কাযিমাইন নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে . তাঁর মাযার যিয়ারতের ফযীলত সম্পর্কে তাঁর পুত্র মহানবীর ( সাঃ ) আহলুল বাইতের ( আঃ ) অষ্টম মাসূম ইমাম আলী ইবনে মূসা আর রিযা ( আঃ ) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছেঃ

ইমাম রিযা ( আঃ ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বাগদাদে আমার পিতার কবর যিয়ারত করবে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে রাসূলুল্লাহর ( সাঃ ) কবর এবং আমীরুল মুমিনীন আলীর ( আঃ ) কবর যিয়ারত করেছে .

مَن زَارَ قَبرَ أَبِي بِبَغدَادَ کَانَ کَمَن زَارَ رَسُولَ اللهِ صَلَّی اللهُ عَلَيهِ وَ آلِهِ وَ قَبرَ أَمِيرِ المُؤمِنِينَ عَلَيهِ السَّلَامُ

প্রখ্যাত শাফিঈ আলেম কামালুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে তালহা শাফিঈ ইমাম মূসা ইবনে জাফার আল-কাযিম (আঃ) সম্পর্কে বলেছেনঃ

সম্মানিত এ মহান ইমাম যিনি অনেক ইবাদত বন্দেগী করে রাতগুলো অতিবাহিত করতেন এবং মহান আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী আন্জাম দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক কৃচ্ছতা ও সাধনা এবং বিরামহীনভাবে সর্বদা মহন স্রষ্টার আনুগত্য করতেন তিনি ছিলেন প্রভুত প্রকাশ্য কারামতের অধিকারী . তিনি রাতগুলো ফজর নামাজের ওয়াক্ত হওয়া পর্যন্ত সিজদা ও কিয়ামে ( নামাজ পড়ে ) অতিবাহিত করতেন . দিনগুলো তিনি রোযা রেখে দান-সদকা দিয়ে শেষ করতেন . যারা তাঁর প্রতি অন্যায় আচরণ করত তাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিতেন বলেই তাঁকে কাযিম ( ক্রোধ সম্বরণকারী ) উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল .

এই স্বর্গীয় ব্যক্তিত্ব ( ইমাম কাযিম -আঃ- ) অনুগ্রহ , দয়া ও পরোপকার সাধনের মাধ্যমে পাপীদেরকে শাস্তি দিতেন . যে ব্যক্তি তাঁর প্রতি অন্যায় করেছে তাকে তিনি মোকাবেলা করতেন তার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করার মাধ্যমে . তিনি অনেক অনেক ইবাদত বন্দেগী করতেন বিধায় তাঁকে আব্দ-ই সালেহ ( সালেহ অর্থাত সতকর্মশীল বান্দা বলা হত . ইরাকে তাঁকে বাবুল হাওয়ায়েজ ইলাল্লাহ ( মহান আল্লাহর দরবারে হাজতসমুহ পূরনের ফটক বা দরজা ) হিসেবে তাঁর নামকরণ করা হত . মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনাকারীরা ইমাম মূসা কাযিম ( আঃ)কে ওয়াসীলা করে তাদের হাজতসমূহ (অভাব ও প্রয়োজন ) পূরণের প্রার্থনা করতেন . তাঁর কারামতসমুহ ও সুউচ্চ আধ্যাত্মিক মাকাম সবাইকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে . সকলেই স্বীকার করে যে , মহান আল্লাহর কাছে ইমাম কাযিম ( আঃ ) এতটা উচ্চ স্বচ্ছ ও আন্তরিক মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী যা কখনও নষ্ট ও লুপ্ত হবে না ( অর্থাত তা স্থায়ী ) .

এই মহান ইমামের শাহাদাত দিবসে আমরা তাঁর সুমহান ব্যক্তিত্বের কতিপয় দিক ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব যাতে আমরা যেন আমাদের জীবনে এ সব গুণ ও বৈশিষ্ট্য বাস্তবায়ন করতে পারি .

ইমাম মূসা কাযিমের ( আঃ ) ইবাদত বন্দেগীঃ

ইমাম মূসা কাযিম ( আঃ ) ছিলেন তাঁর যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিদ ( ইবাদতকারী ) , শরিয়তের বিধি বিধানের ব্যাপারে সবচেয়ে জ্ঞানী ফকীহ (( আর এ কারণেই মদীনাবাসীরা তাঁকে যাইনুল মুজতাহিদীন ( মুজতাহিদদের সৌন্দর্য ও শোভা ) উপাধিতে ভূষিত করেছিল )) , সবচেয়ে দানশীল এবং সবচেয়ে উদার , মহানুভব হৃদয় ও দৃষ্টির অধিকারী ( কারীমুন নাফস کریم النفس).

বর্ণিত হয়েছেঃ ইমাম কাযিম ( আঃ ) ফজরের ওয়াক্ত হওয়া পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন . এরপর তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাযান্তের দুআসমূহ পাঠ করতেন . এরপর তিনি সিজদা করতেন এবং যোহরের ওয়াক্ত পর্যন্ত তিনি সিজদারত থাকতেন . তিনি মহান আল্লাহর কাছে নিম্নোক্ত দুআটি অনেক অনেক প্রার্থনা করতেন এবং বলতেনঃ

اَللهُمَّ إِنِّي أَسأَلُکَ الرَّاحَةَ عِندَ المَوتِ

وَالعُفوَ عِندَ الحِسَابِ

হে আল্লাহ , মৃত্যুর সময় আপনার কাছে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম ( সহজ ও শান্তিময় মৃত্যু ) কামনা করছি এবং কিয়ামত দিবসে কাজ কর্মের হিসাব এবং বিচারের সময় আপনার ক্ষমা প্রত্যাশা করছি।

ইমাম কাযিম ( আঃ ) – এর আরেকটি দুআ হচ্ছেঃ

আপনার এ বান্দার পাপের বোঝা অনেক বড় হয়ে গেছে . তাই আপনার পক্ষ থেকে ক্ষমা হোক সুন্দর ও উত্তম .

عَظُمَ الذَّنبُ مِن عَبدِکَ ، فَليَحسُن العَفوُ مِن عِندِکَ

ইমাম কাযিম ( আঃ ) মহান আল্লাহর ভয়ে এতটা কাঁদতেন যে তাঁর দাঁড়ি মুবারক অশ্রুজলে ভিজে যেত .

ইমাম কাযিম ( আঃ ) – এর কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডঃ

ইমাম কাযিম ( আঃ ) সকলের চেয়ে বেশি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতেন . রাতের বেলা তিনি মদীনা নগরীর গরীব দুখীদের অভাব ও প্রয়োজন মেটাতেন . দিরহাম , দিনার , আটা ও খেঁজুর দিয়ে পূর্ণ ঝুড়ি তিনি ঐ সব গরীব দুখীদের কাছে এমনভাবে পৌঁছে দিতেন যে তারা জানতে পেত না যে কে তাদেরকে সাহায্য করছে ...

ইমাম কাযিম ( আঃ ) ছিলেন অত্যন্ত মহানুভব ব্যক্তি এবং সত কর্মপদ্ধতি অবলম্বনকারী . তিনি 1000 দাস – দাসী ক্রয় করে তাদেরকে দাসত্ব বন্ধন থেকে মুক্ত করে দিয়ে ছিলেন .

ইমাম কাযিম ( আঃ ) – এর কিছু অমিয় বাণীঃ

ইমাম কাযিম ( আঃ ) বলেনঃ যে ব্যক্তি জনগণ থেকে নিজের ক্রোধ সম্বরণ করবে মহান আল্লাহ তাকে কিয়ামত দিবসের আযাব ( শাস্তি ) প্রদান করা থেকে বিরত থাকবেন .

مَن کَفَّ غَضَبَهُ عَنِ النَّاسِ کَفّ اللهُ عَنهُ

عَذَابَ يَومِ القِيَامَةِ

( দ্রঃ ওয়াসাইলুশ শিয়া , খঃ 11 , পৃঃ 289 )

ইমাম কাযিম ( আঃ ) তাঁর এক অনুসারীকে বললেনঃ

হে অমুক , মহান আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য বল এমনকি তাতে যদি বাহ্যতঃ তোমার ধ্বংসও ( মৃত্যু ) নিহিত থাকে . কারণ আসলে তাতে তোমার নাজাতই (মুক্তি ) নিহিত রয়েছে . হে অমুক , মহান আল্লাহকে ভয় এবং বাতিলকে ত্যাগ কর এমনকি যদি বাহ্যতঃ তাতে ( বাতিল মিথ্যায় ) তোমার মুক্তি থেকে থাকে . কিন্তু আসলে তাতে ( ঐ বাতিলে ) তোমার ধ্বংসই নিহিত রয়েছে .

أَي فُلَانُ اِتَّقِ اللهَ ، وَ قُلِ الحَقَّ وَ إِن کَانَ

فِيهِ هَلَاکُکَ ، فَإِنَّ فِيهِ نَجَاتَکَ ، أَي

فُلَانُ ، اِتَّقِ اللهَ وَ دَعِ البَاطِلَ ، وَ إِن کَانَ

فِيهِ نَجَاتُکَ فَإِنَّ فِيهِ هَلَاکَکَ

(দ্রঃ শেখ আব্বাস কোমী প্রণীত নেগহী বে যেন্দেগনীএ চাহরদাহ মাসূম ( আঃ ), পৃঃ 386 )

ইমাম কাযিম ( আঃ ) বলেনঃ

এই দুনিয়া যার পরিণতি ও সমাপ্তি হচ্ছে এই কবর তার শুরুতেই যুহদ ও তাকওয়া ( বস্তুবাদিতা পরিহার ও খোদাভীতি ) অবলম্বন করা উচিত এবং এই আখেরাত যার সূচনা হচ্ছে এই কবর তার চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে ভয় থাকা বাঞ্ছনীয় .

إِنَّ شَيئَاً هذَا آخِرُهُ لَحَقِيقٌ أَن يُزهَدَ فِي

أَوَّلِهِ ، وَ إِنَّ شَيئَاً هذَا أَوَّلُهُ ، لَحَقِيقٌ أَن

يُخَافَ آخِرُهُ .

ইমাম কাযিম ( আঃ ) বলেনঃ

যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর ( পবিত্র যাত বা সত্ত্বার ) ব্যাপারে কথা বলবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে ( কারণ মহান আল্লাহর যাত বা সত্ত্বা সংক্রান্ত জ্ঞান বান্দা তথা সমগ্র সৃষ্টি কূলের সামর্থ্য ও আয়ত্বের বাইরে ) , যে নেতা হওয়া বা নেতৃত্বের পদ হস্তগত করার চেষ্টা করবে সে ধ্বংস হবে এবং যার মধ্যে উজব ( আত্ম অহংকার ) প্রবেশ করবে সে ধ্বংস হবে .

مَنْ تَکَلَّمَ فِي اللّٰهِ هَلَکَ ، وَ مَنْ طَلَبَ

الرِّئَاسَةَ هَلَکَ ، وَ مَنْ دَخَلَهُ العُجْبُ هَلَکَ

ইমাম কাযিম আ. বলেন :

দ্বীন ( ধর্ম ) অর্থাৎ আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ এবং পার্থিব জীবনের ( দুনিয়া ) ব্যয় নির্বাহ করা ( সত্যি ) কঠিন ( কাজ )। তবে পার্থিব জীবনের খরচ পত্র ও ব্যয় ( নির্বাহ ) ( এ কারণে কঠিন যে ) এ পার্থিব জগতের যে কোনো জিনিসের দিকে হাত বাড়াবে তা নেয়ার জন্য কিন্তু তুমি দেখতে পাবে যে তোমার আগেই কোনো পাপী দুষ্কৃতকারী ঐ জিনিসটার কাছে পৌঁছে গেছে ( অর্থাৎ তোমার হস্তগত হওয়ার আগেই ঐ পাপী দুষ্কৃতকারী তা নিয়ে ফেলেছে ) ; আর আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ এ কারণে কঠিন যে এ ক্ষেত্রে তুমি কোনো সাহায্য কারীকে পাবে না যে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করতে তোমাকে সাহায্য করবে ।

اِشْتَدَّتْ مَؤُنَةُ الدُّنْيَا وَ الدِّيْنِ ، فَأَمَّا مَؤُنَةُ

الدُّنْيَا : فَإِنَّكَ لَا تَمُدُّ يَدَكَ إِلَىٰ شَيْءٍ مِنْهَا

إِلَّا وَجَدتَّ فَاجِرَاً قَدْ سَبَقَكَ إِلَيْهِ ، وَ أَمَّا

مَؤُنَةُ الْآخِرَةِ ، فَإِنَّکَ لَا تَجِدُ أَعْوَانَاً

یُعِیْنُوْنَکَ عَلَیْهِ.

( দ্র : বিহারুল আন্ওয়ার্ : ৭৮ / ৩২০ / ১১ এবং মীযানুল হিকমাহ্ , খ : ২ , পৃ : ৯২৩ )

تبصرہ ارسال

You are replying to: .