۱۱ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۱ شوال ۱۴۴۵ | Apr 30, 2024
ডক্টর, শিক্ষক বা প্রশিক্ষক
ডক্টর, শিক্ষক বা প্রশিক্ষক

হাওজা / ইংরেজি ‘ডক্টর’ শব্দটি মূলত ল্যাটিন ভাষার। এর অর্থ হলো ‘শিক্ষক’ বা ‘প্রশিক্ষক।

লেখা: মহিউদ্দিন মোহাম্মদ

পর্ব ২- ঊনিশ শতকের দিকে আমেরিকায় আরেক ধরণের ডক্টরেট ডিগ্রির প্রচলন ঘটে। এগুলোকে বলা হয় পেশাগত বা প্রোফেশোনাল বা ভোকেশোনাল ডক্টরেট ডিগ্রি। এদের একটি হলো ‘Doctor of Medicine’, যার ল্যাটিন নাম ‘Medicinae Doctor’, সংক্ষেপে লেখা হয় M.D., এবং আরেকটি হলো ‘Juris Doctor’ বা J.D.। এমডি হলো চিকিৎসা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, যা আমেরিকানরা ধার করেছে মূলত স্কটল্যান্ড থেকে, এবং জেডি হলো আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি। এ ডিগ্রিগুলো আমাদের এমবিবিএস ও এলএলবির সমান, কিন্তু দুটোই ডক্টরেট ডিগ্রি।

এই অনেক ঘরানার ডক্টরেট ডিগ্রির একটি হলো গবেষণামুখী ডক্টরেট বা রিসার্চ-ডক্টরেট, এবং পিএইচডি বলতে গড়-মানুষেরা এখন এটিকেই বুঝে থাকে। গড়-মানুষদের ধারণা, এটিই একমাত্র পিএইচডি ডিগ্রি, এবং এ ডিগ্রি যার আছে তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন। সাংবাদিক ও প্রোপাগান্ডিস্ট ডক্টরেটদের অনেক অবদানের একটি হলো এটি। প্রবন্ধটির শিরোনামে আমি যে-ছাগলদের কথা বলেছি, সে-ছাগলেরা পিএইচডির ধারণা তাদের থেকেই রপ্ত করেছে, এবং এ ডিগ্রি অর্জনে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে সর্বশক্তি নিয়ে।

কে পিএইচডি পাবে ও কে পিএইচডি দেবে, এ নিয়ে পৃথিবীতে খুব বেশি আলোচনা হয় নি। এ প্রসঙ্গে আমি একটু ভিটগেনস্টাইনের কথা বলতে চাই। ভিটগেনস্টাইনের সুপারভিশনে ক্যামব্রিজে একটি ছাত্র পিএইচডি করছিলো। তার থিসিসের বিষয়বস্তু ছিলো— ‘লিগ অব নেশনস বা প্রাক্তন জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিলো’।

ছাত্রটি একদিন ভিটগেনস্টাইনকে জানালো— এ বিষয়ে আসলে আমার মৌলিকভাবে কিছু বলার নেই। আমি যা থিসিসে লিখবো, তা ইতোমধ্যে অনেকেই বলে গেছেন। পিএইচডির খাতিরে হয়তো একটি মোটা থিসিস লেখা হবে, কিন্তু এটি কোনো জ্ঞান উৎপাদন করবে না। শুধু লেখার জন্যই এটি লেখা হবে।

ভিটগেনস্টাইন বললেন, থিসিস লেখার দরকার নেই, তোমার যে এ উপলব্ধিটুকু হয়েছে, শুধু এ জন্যই তোমার একটি পিএইচডি পাওয়া দরকার। আমি তোমাকে পিএইচডি ডিগ্রি দেবো।

পৃথিবীর অধিকাংশ পিএইচডিই এখন কেবল ডিগ্রি নেয়ার উদ্দেশ্যে করা। জ্ঞানের কোনো শাখায় এসব ডিগ্রির তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবদান নেই। এগুলোর প্রায় সবই অন্যের কাজের পুনরুক্তি ও অনাবশ্যক এক্সটেনশন। এরকম পিএইচডি এক লাখ উৎপাদিত হলেও সভ্যতার কোনো উপকার হয় না।

এখানে আমি আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। ভিটগেনস্টাইন বিএ পড়ার সময় যে-থিসিসটি লিখেছিলেন, সে-থিসিসটি বই আকারে বেরিয়েছিলো। সে-বইটিকেই ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর পিএইচডি থিসিস হিশেবে বিবেচনা করেছিলো, এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের সুপারিশে তাঁকে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়েছিলো। বাংলাদেশে ছাত্ররা এখন যে সাজিয়ে গুছিয়ে থিসিস লিখে ও প্রিন্ট করে, তা পল ডিরাক দেখলে নিজের থিসিসটিকে তিনি খালে ফেলে দিতেন।…চলবে…

تبصرہ ارسال

You are replying to: .