۱۱ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۱ شوال ۱۴۴۵ | Apr 30, 2024
মোহাম্মদ হোসাইন
মোহাম্মদ হোসাইন

হাওজা / মহা সতর্কীকরন বার্তা - মাহে রমজানের পবিত্র রাতগুলোতে বেদআতী তারাবীহ নামাজ থেকে সাবধান !

মোহাম্মদ হোসাইন, বাংলাদেশ

২পর্ব, এবং সর্বশেষ. তারাবীহ নামাজ সম্পর্কে বিশ্লেষনধর্মী কিছু আলোচনা ও প্রশ্ন ।

মহা সতর্কীকরন বার্তা - মাহে রমজানের পবিত্র রাতগুলোতে বেদআতী তারাবীহ নামাজ থেকে সাবধান !

১) - তারাবীহ হইল ইসলাম ধর্মে প্রথম বিদআতী নামাজ ।

সূত্র - সহীহ আল বুখারী , খন্ড-২, আধুনিক প্রকাশনী , প্রকাশকাল - আগষ্ট , ২০০৮ , কিতাবুস সাওম অধ্যায় , অনুচ্ছেদ - ৭১ , শিরোনাম - তারাবীহ নামাজের ফজিলত , পৃষ্ঠা - ২৭৭ - ২৭৯ ।

২) - প্রচলিত তারাবীহ নামাজ বনাম সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত হাদিস ।

ক) - প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মাহে রমজানের চাঁদ দেখে তারাবীহর নামাজ শুরু করা হয় এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখে তারাবীহর নামাজের সমাপ্তি টানা হয় । কিন্ত উল্লেখিত হাদিসগুলোতে শুরু এবং সমাপ্তির কোন নির্দিষ্ট দিক- নির্দেশনা নাই ।

খ) - এশার নামাজের পর এবং বেতের নামাজের পূর্বে তারাবীহর নামাজ পড়া হয় । কিন্ত উল্লেখিত হাদিসের বর্ণনায় তারাবীহর নামাজ ফজরের ওয়াক্তের সামান্য পূর্বে আদায় হয় ।

সহীহ আল বুখারীর ১৮৬৯ নং হাদিসে দেখা যায় , রাসুল (সাঃ) তারাবীহর নামাজ শুরু করেছেন মধ্যরাতের পর থেকে !

(বিঃদ্রঃ- যদিও বুখারীতে আরবীতে "তারাবীহ" কথাটি লেখা নাই) ।

গ) - ১৮৬৮ নং হাদিস অনুযায়ী জামাতবদ্ধ হয়ে তারাবীহর নামাজ পড়ার সুন্নত রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের প্রায় সাড়ে নয় বছর পর প্রচলিত হয় ।

অথচ সুন্নি সমাজে তা “সুন্নাতে রাসুল” হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে !

যেমন এ নামাজের নিয়তে তা করা হয় ।

যে নামাজের প্রচলন রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে করেন নাই সে নামাজ কিভাবে "সুন্নাতে রাসুল" হয় ?

ঘ) - জামাতবদ্ব নামাজের জন্য একামতের ব্যবহার করা হয় ।

কিন্ত উল্লেখিত হাদিসগুলোতে একামতের কোন দিক-নির্দেশনা নাই ।

ঙ) - জামাতবদ্ব নামাজের জন্য ইমাম প্রয়োজন হয় ।

কিন্ত উল্লেখিত ১৮৬৮ নং হাদিস অনুযায়ী এ নামাজের জন্যে একজন ক্বারী নিয়োগের উল্লেখ রয়েছে ।

চ) - পুরো পৃথিবীতে প্রচলিত ৪০ , ৩৮ , ৩৬ , ৩০ , ২০ , ১২ , ১০ অথবা ৮ রাকাত বিশিষ্ট তারাবীহর নামাজ "সুন্নতে রাসুল" হিসেবে প্রচলিত আছে ।

কিন্ত উল্লেখিত ১৮৭০ নং হাদিস অনুযায়ী রাসুল (সাঃ) কখনও ১১ রাকাতের বেশী "তারাবীহর" নামাজ পড়েন নাই ।

বরং এটাই বর্ণিত আছে যে , মাহে রমজান সহ সারা বছর রাসুল (সাঃ) প্রতি রাতে ১১ রাকাত নামাজ আদায় করতেন । যদিও একই হাদিসেই এই নামাজকে "তাহাজ্জুদ নামাজ" অধ্যায়েও বর্ণিত হয়েছে ।

এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় - এটা তারাবীহ নামাজ নয় , তাহাজ্জুদ নামাজ ।

ছ) - ১৮৬৭ নং হাদিস অনুযায়ী হাদিস বর্ণনাকারী এবং তারাবীহর হুকুমদাতা এ নামাজের ব্যাপারে ছিলেন উদাসীন । ওনারা জামাতের তদারকী করার উদ্দেশ্যে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতেন আর বলতেন - "এটি একটি উত্তম বিদআত ।" বাস্তবে তারা কখনই এই নামাজ পড়েছেন এমন কোন বর্ণনা কোথাও পাওয়া যায় না ।

প্রশ্ন - ইসলামের এমন কোন বিধান কি আছে যা নেতাদের (বিশেষ করে দ্বিতীয় খলীফার) জন্য নফল অথচ আম-জনতার জন্য বাধ্যতামূলক ?

জ) - এই নামাজে সমগ্র কোরআন খতম করা হয় ।

কথা হল প্রচলিত খতম তারবীর নামাজকেও যদি "সুন্নাতে রাসুল" হিসাবে চালিয়ে দেয়া হয় । তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে , রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের সময় থেকে পূর্বের মাহে রমজান মাসের সময় পর্যন্ত যে সুরা ও আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল সেই সুরা ও আয়াতগুলো তো আল্লাহর নবী (সাঃ) তাঁর ইন্তেকালের পূর্বের মাহে রমজান মাসের তারাবীহ নামাজে পড়তে পারেন নাই ।

প্রশ্ন - তাহলে তারাবীহ নামাজে পুরো কোরআন খতম করা "সুন্নতে রাসুল (সাঃ)" কিভাবে হইল ?

ঝ) - প্রচলিত ইসলামের ইতিহাসে বলা হয় যে , হযরত ওসমানের খেলাফত পর্যন্ত পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল । অর্থাৎ কিছু আয়াত পাথরের গায়ে খোদাই করা ছিল । কিছু আয়াত পশুর চামড়াতে , গাছের পাতা বা বাকলে লেখা ছিল । হযরত ওসমানের আমলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো ছিটানো আয়তগুলো একত্রে করে ত্রিশ পারা ধারাবহিকভাবে বাঁধাই কিতাব আকারে প্রকাশ করা হয় ।

প্রশ্ন - হযরত ওমরের শাসন আমলে "খতমে তারাবীহ" নামাজ তাহলে কিভাবে শুরু হইল ?

ঞ) - নামাজের রোকন অনুযায়ী প্রতি রাকাতে দুইবার সেজদা করা আবশ্যক । এর কম বেশী হলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে ।

কিন্ত খতমে তারাবীহতে সেজদার আয়াত তিলাওয়াতকালে সরাসরি অতিরিক্ত মোট ১৪টি সেজদা করা হয় । এর ফলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায় ।

ট) - এই নামাজের নিয়ত - “নাওয়াতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাতাই সালাতিত তারাবী সুন্নাতী রাসুলিল্লাহী তা’আলা…”।

যেখানে এই তারাবীহ নামাজ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কখনই পড়েন নাই সেখানে নিয়তের মধ্যে রাসুলের (সাঃ) নাম যোগ করে মিথ্যাচার করে নামাজ আদায় করলে সেই নামাজের মাধ্যমে কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব ?

উল্লেখ্য যে , সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত ১৮৬৮ নং হাদিস অনুযায়ী তারাবীহর নামাজে "জামাআত"-এর জন্মদাতা বা প্রবর্তক দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর হওয়া সত্তেও আমরা জামাআতে দাঁড়িয়ে নিয়তের সময় রাসুলের (সাঃ) নামেই নিয়ত করছি ।

ঠ) - সহীহ আল বুখারীর ১৮৬৯ নং হাদিস অনুযায়ী যেখানে স্বয়ং রাসূল (সাঃ) তথাকথিত তারাবীহ নিয়মিত না পড়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন সেখানে আমাদের উপর "জামাআত সহ খতম তারাবীহকে" বাধ্যতামূলক করে নিলাম কেন ?

ড) - সহীহ আল বুখারীর ১৮৬৯ নং হাদিস অনুযায়ী যেখানে স্বয়ং রাসূল (সাঃ) তথাকথিত তারাবীহ নামাজ মসজিদে একাকী মাত্র তিনদিন পড়েছেন , সেখানে আমরা কিভাবে রমজানের কমপক্ষে ২৭টি দিন জামাতবদ্ব হয়ে নিয়মিত আদায় করে যাচ্ছি ?

রাসুলের (সাঃ) উম্মত হিসাবে রাসুলের (সাঃ) সুন্নাত কেন ভঙ্গ করে যাচ্ছি ?

প্রিয় পাঠক , সবশেষে বিস্ময়কর একটি তথ্য জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি ।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এটাই যে , সহীহ আল বুখারীতে উল্লেখিত হাদিস ৪ টিতে আরাবী ভাষায় "তারাবীহ" নামে কোন কথা বা কথার বিন্দুমাত্র উল্লেখ নাই ।

অথচ আরবীর নীচের অংশে বাংলা অনুবাদে ব্রাকেট বন্ধনীতে সুকৌশলে “তারাবীহ” কথাটি বাংলাতে লেখা হয়েছে ।

এই বিষয়টি আপনার নিকট আরও বেশী স্পষ্ট হয়ে যাবে , যখন আপনি একই হাদিস গ্রন্থের ১ম খন্ডের "সালাতুল তাহাজ্জুদ” অধ্যায়ে ৬৮৫ , ৬৮৭ এবং ১০৫৮ নং হাদিস তিনটির প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন ।

তখন দেখবেন মূল আরবীতে বর্নিত "তাহজ্জুদ" কথাটি ব্রাকেট বন্ধনীতে “তারাবীহ” কথাতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে । একেই বোধহয় কলিযুগের মহা ভেল্কিবাজি বলা যায় !

পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি মনে করিয়ে দিয়ে আপাঃতত বিদায় ।

“ – গ্রহন কর যা রাসুল তোমাদের দেয় এবং পরিত্যাগ কর যা সে তোমাদেরকে নিষেধ করে এবং আল্লাহ সম্পর্কে সতর্ক হও । নিশ্চয়ই আল্লাহ উপযুক্ত শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর --- ।“

সুরা – হাশর / ০৭ ।

সবশেষে বিনীত অনুরোধ যে , এমন কোন ইবাদত আমল পালন করা উচিত নয় , যে আমলটির অনুমোদন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) দেন নাই ।

কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) অনুমোদনহীন ইবাদত আমলের অপর নাম হল ঈবলীশের ঈবাদত ।

আপনি যথেষ্ট বিবেকবান শিক্ষিত একজন মানুষ । বিবেক আপনার - চিন্তা করার স্বাধীনতা আপনার । লেখাটি বিবেচনা করে দেখুন।

লেখাটি এতক্ষন ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .