۱۳ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۳ شوال ۱۴۴۵ | May 2, 2024
রোজার ফিতরা
রোজার ফিতরা

হাওজা / ফিতরা আদায়ে ধর্মীয় দাযয়িত্ব পালনের সাথে সাথে মানবিকতার একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে উপলদ্ধিটা ব্যপক ও বিস্তৃত হওয়া দরকার।

লেখা: শহীদুজ্জামান (বাংলাদেশ)

পর্ব ১- ফিতরা আদায়ে ধর্মীয় দাযয়িত্ব পালনের সাথে সাথে মানবিকতার একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে উপলদ্ধিটা ব্যপক ও বিস্তৃত হওয়া দরকার। আর তাই এ বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামতের আশা করছি।

এক রমজান মাসের শেষে ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে আমরা সাদকাতুল ফিতরা আদায় করে থাকি। বাংলাদেশের মুসলমানেরা কেন অমুসলমানগনও এ বিষয়ের সাথে পরিচিত। কারন এ বিষয়ে নিয়ে নানা রূপ আয়োজন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আলেমদের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে চলতি বছরে ফেতার মূল্য কত হবে। ধনীরা এবং রাজনীতিবিদগণ বা উদ্দেশ্যবাদীগন তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে ফেতরা এবং যাকাত প্রদানের জন্যে ক্যাম্প খুলে থাকেন। আর এরমক আয়োজনের কারণে মাঝে মাঝে নানারূপ অঘটনও ঘটে থাকে। আসুন আমরা

সাদকাতুল ফিতরের মূল কিছু উৎস সম্পর্কে জেনে নেই। আধুনিক প্রকাশনী, ২৫, শিরিশ দাস লেন, ঢাকা-১ থেকে ১৯৮৬ সনের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত বঙ্গানুবাদকৃত সহীহ আল বুখারী এর ২য় খন্ডের ৬১ থেকে ৬৩ পৃষ্টায় ক্রমিক নং ১৪০৬ থেকে ১৪১৫ পর্যন্ত মোট ১০টি হাদিস সাদকাতুল ফিতরের উপর বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো আমরা এখানে হুবহু তুলে ধরলাম।

অনুচ্ছেদঃ সদকায়ে ফিতর ফরয হওয়ার বর্ণনা। আবুল আলীয়া, আতা ও ইবনে সীরীন-এর মতে সদকায় ফিতর ফরয। হাদিস নং-১৪০৬. ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলিম দাস ও স্বাধীন ব্যক্তি; নর ও নারী এবং বালক ও বৃদ্ধের ওপর সদকায়ে ফিতর (রোযার ফিতরা) এক সা’(১) খেজুর কিংবা এক সা’ যব নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তিনি এটাও আদেশ করেছেন যে, লোকদের (ঈদের) নামাযে যাবার পূর্বেই যেন তা আদায় করা হয়।

টিকা (১) এ দেশীয় ওজনে এক সা’ সমান তিন সের এগার ছটাক।

অনুচ্ছেদঃ সদকায়ে ফিতর মুসলিম দাস ও স্বাধীণ সবার ওপর ওয়াজিব। হাদিস নং-১৪০৭. ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলিম নর-নারীর স্বাধীন ও গোলাম প্রত্যেকের ওপর সদকায়ে ফিতর এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব নির্ধারিত করে দিয়েছেন।

অনুচ্ছেদঃ সদকায়ে ফিতর বাবদ এক সা’ যব প্রদান করা। হাদিস নং-১৪০৮. আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সদকায়ে ফিতর বাবদ এক আ’ যব খাওয়ায়ে দিতাম।

অনুচ্ছেদঃ সদকায়ে ফিতর বাবদ এক সা’ খাবার প্রদান করা। হাদিস নং-১৪০৯. আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (রাসূলুল্লার যমানায়) সদকায়ে ফিতর বাবত (মাথা পিছু) এক সা’ পরিমান খাবার অথবা এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ পনির কিংবা কিশমিশ-মোনাক্কা প্রদান করতাম।

অনুচ্ছেদঃ সদকায়ে ফিতর বাবদ এক সা’ খেজুর প্রদান করা। হাদিস নং-১৪১০. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) সদকায়ে ফিতর বাবত এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব প্রদান প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ বলেন, (পরবর্তীকালে) লোকেরা (আমীর মুয়াবিয়া মুয়াবিয়া ও তার সঙ্গীরা) তার স্থলে দুই ‘মুদ’(২) গম নির্ধারিত করেছেন।

টিকা (২) দুই ‘মুদ’ হলোঃ এক সা’র দু’ ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ এক সের সাড়ে তের ছটাক।

অনুচ্ছেদঃ এক সা’ কিশমিশ-মোনাক্কা প্রদান করা। হাদিস নং-১৪১১. আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর যমানায় আমরা ফিতরা বাবত (মাথা পিছু) এক সা’ খাবার অথবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব কিংবা এক সা’ কিশমিশ-মোনাক্কা প্রদান করতাম। মুয়াবিয়া (রা.)-এর যমানায় যখন গম আমদানী হল তখন তিনি বললেন, আমার মতে এর (গমের) এক ‘মুদ’ (অন্য জিনিসের) দুই মুদের সমান।

অনুচ্ছেদঃ ঈদের নামাযে যাবার আগেই ফিতরা আদায় করা। হাদিস নং-১৪১২. ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) লোকদের (ঈদের) নামাযে গমনের পূর্বেই সদকায়ে ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিস নং-১৪১৩. আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর যমানায় ঈদুল ফিতরের দিন আমরা ফিতরা বাবত (মাথা পিছু) এক সা’ পরিমান খাবার প্রদান করতাম। আবু সাঈদ (খুদরী) বলেন, তখন আমাদের খাবার ছিল যব, শিমিশ-মোনাক্কা, পনির ও খুরমা।

অনুচ্ছেদঃ ক্রীতদাস ও স্বাধীন উভয়ের ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। যুহরী বলেনঃ ব্যবসার ক্রীতদাসের ক্ষেত্রে যাকাত ও ফিতরা দু’টোই আদায় করতে হবে। হাদিস নং-১৪১৪. ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) নর ও নারী এবং স্বাধীন ও ক্রীতদাসের ওপর সদকায়ে ফিতর অথবা বলেছেন রোযার ফিতরা (রাবীর সন্দেহ) এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব নির্ধারিত করে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে লোকেরা আধা সা’ গমকে এর (এক সা’ খেজুরের) সমান ধরে নিয়েছেন। ইবনে উমর (সব সময়) খেজুর প্রদান করতেন। একবার মদীনাবাসীর ওপর খেজুরের আকাল দেখা দিলে তখন তিনি যব প্রদান করেন। এবং ইবনে ইমর ছোট বড় সবার ফিতরা প্রদান করতেন। (রাবী নাফে বলেন,) আমার ছেলে মেয়েদের ফিতরাও তিনি দিয়ে দিতেন। ইবনে ইমর ওদেরকেই ফিতরা প্রদান করতেন যারা তা গ্রহণ করত এবং সাহাবারা ঈদুল ফিতরের এক কিংবা দু’দিন পূর্বেই (আদায়কারীর নিকট ফিতরা দিয়ে দিতেন।

অনুচ্ছেদঃ বড় ও ছোট সবার উপর সিদকায়ে ফিতর ওয়াজিব । আবু উমর বলেনঃ উমর, আলী, ইবনে উমর, জাবির, আয়েশা, তাইস, আতা ও ইবনে সীরীন-এর মতে এতিমের মাল থেকেও যাকাত (সদকায়ে ফিতরা) আদায় করতে হবে। যুহুরী বলেনঃ পাগলের সম্পদেরও যাকাত দিতে হবে। হাদিস নং-১৪১৫. ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ছোট, বড়, স্বাধীন ও ক্রীতদাসের ওপর সদকায়ে ফিতর এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর নিরর্ধারিত করে দিয়েছেন।

সদকায়ে ফিতর বা রোযার ফিতরা সম্পর্কে এ দশটি হাদিস থেকে আমারা জানতে পারি যে-

(এক) ১। সদকায়ে ফিতর কে আদায় করবে- ক্রীতদাস, স্বাধীন, নর, নারী, বালক, বৃদ্ধ, ছোট বা বড় প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর সদকায়ে ফিতর আদায় করা বাধ্যতামূলক। ২। কী কী উপাদানের মাধ্যমে সদকায়ে ফিতর আদায় করা যাবে- খেজুর, যব, খাবার, পনির, কিশমিশ-মোনাক্কা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা। প্রথম চার খলিফার সময়ে এগুলো দিয়ে সদকায়ে ফিতরা আদায় করা হত। পরবর্তী কালে মুয়াবিয়ার সময়ে গম প্রদান শুরু হয় হয়। অবশ্য হাদিসে ‘খাবার’ শব্দ থাকায় সুবিধা হল আমরা যা খাবার (যার যার প্রধান খাবার) হিসাবে খেয়ে থাকি তা দ্বারা আমরা ফিতরা আদায় করতে পারি। ৩। সদকায়ে ফিতরার পরিমান হবে কত- যে উপাদানেই দেওয়া হোক না কেন তার পরিমান হবে এক সা’ (এ দেশীয় ওজনে এক সা’ সমান তিন সের এগার ছটাক)। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময় থেকে চতুর্থ খলিফা পর্যন্ত এ পরিমানই দেওয়া হতো। কিন্তু মুয়াবিয়ার সময়ে এর পরিমান অর্ধেক হয়ে যায় অর্থাৎ আধা সা’ (এক সের সাড়ে তের ছটাক) হয়ে যায়।

(দুই) রোযার ফিতরা সম্পর্কে আমাদের দেশে যা দেখতে পাই তা হ’ল- রমজান মাসের শেষের দিকে এসে আমাদের আলেম সম্প্রদায় এভাবে একটা ঘোষণা দেন যে, এবারের ফিতরা হ’ল ‘এত’ (আধা সা’ গম বা চালের দাম হিসাবে ধরুন ৪৫) টাকা। আর সে মোতাবেক দেশবাসী ঐ পরিমান টাকা প্রদান করে ফিতরা আদায় করে। আর এ ক্ষেত্রে তারা রসূলুল্লাহর (সা.) এর শরীয়তে পরিবর্তন এনে মুয়াবিয়ার শরীয়ত প্রবর্তন করে নিজেদের ক্ষতিসাধন করছে। আমাদের দেশের প্রচলিত এ প্রথা সম্পর্কে আমার কিছু জিজ্ঞাসার উদ্ভব হয়েছে।…চলবে…

تبصرہ ارسال

You are replying to: .