۱۳ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۳ شوال ۱۴۴۵ | May 2, 2024
রোজার ফিতরা
রোজার ফিতরা

হাওজা / ফিতরা আদায়ে ধর্মীয় দাযয়িত্ব পালনের সাথে সাথে মানবিকতার একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে উপলদ্ধিটা ব্যপক ও বিস্তৃত হওয়া দরকার।

লেখা: শহীদুজ্জামান (বাংলাদেশ)

পর্ব ২- জিজ্ঞাসা-১। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময় থেকে চতুর্থ খলিফা পর্যন্ত চলে আসা উপাদানের পরিমান হঠাৎ করে মুয়াবিয়ার সময়ে কেন এক সা’ থেকে আধা সা -এ পরিনত হ’ল? এ বিষয়ে আমি অনেক আলেম এর সাথে আলোচনা করেছি। তারা আমাকে কোন যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর দিতে পারেন নি। তাদের কাছ থেকে যেসব উত্তর পেয়েছি তার কয়েটি নিম্নরূপ- উত্তর-১.১। মনে হয় অন্যান্য প্রদেয় উপকরণের চেয়ে গমের দাম বেশী ছিল। এ উত্তর আমি গ্রহণ করতে পারি নি। কারণ হিসাবে আমি তাদের পাল্টা প্রশ্ন করেছি যে, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ের উল্লেখিত পণ্যসমূহের দাম কি এক রকম ছিল? যেমন যবের দাম, পনিরের দাম, খেজুরের দাম, কিশমিশ-মোনাক্কার দাম বা সকল খাবারের দাম কি একই ছিল? বুদ্ধি কি বলে? আর উত্তরটি ‘মনে হয়’ দিয়ে শুরু করা হয় নি কি? উত্তরদাতারা আমার এ সকল পাল্টা প্রশ্নের আর কোন জবাব দিতে পারেন না। উত্তর-১.২। নর-নারী মানে স্বামী-স্ত্রী। তাহলে দু জনের জন্যে এক সা’ হলে এক জনের জন্যে তো আধা সা’-ই হয়। এ উত্তর আমি গ্রহণ করতে পারি নি। এবং আর ব্যাখ্যা দেওয়ার কোন প্রয়োজন অনুভব করছি না। উত্তর-১.৩। খেজুরের আটি আছে কিন্তু গমের কোন আটি নেই। তাই গমের ক্ষেত্রে এক সা’ না দিয়ে আধা সা’ দিলে হয়ে যাবে। এ উত্তরটিও আমি নিতে পারলাম না। কারণ রসূলুল্লাহ (সা.)-এর যমানায় খেজুরও দেওয়া হ’ত আবার পনির বা যব দেওয়া হ’ত। তখন খেজুরের আটির জন্যে কি পনিরের পরিমান কম দেওয়া হ’ত? তখন যা-ই দেওয়া হোক না কেন তার পরিমান ছিল এক সা’। উত্তর-১.৪। এক সা’ এর পরিবর্তে আধা সা’ করায় তা আদায় করা জনগনের জন্যে সহজ হয়েছে। এক সা’ পরিমান নির্ধারিত থাকলে অনেকের পক্ষে ফিতরা আদায় করা সহজ হ’ত না। এ উত্তরটি আরও মারত্মক। অধিক মানুষ পালন করতে পারবে এ যুক্তিতে শরীয়তকে অর্ধেক করা কি মারাত্মক জঘণ্য কাজ। আসুন মানুষ পালন করবে এ যুক্তিতে আমরা নামাজকে, যাকাতকে বা রমজানের রোযাকে অর্ধেক করে দি? তওবা, আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।

জিজ্ঞাসা-২। হাদিসে উল্লেখিত বিভিন্ন উপকরনের কোন একটা দিয়ে সাদকায়ে ফিতরা আদায় করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশের আলেমগণ কি ভাবে একটা রেট উল্লেখ করে থাকেন? কেন শুধু গমের বা চালের মূল্যে সাদকায়ে ফিতরা আদায় করা হবে? বাংলাদেশে কি খেজুর পাওয়া যায় না বা বাংলাদেশের মানুষ কি খেজুর খায়না? সকল ব্র্যান্ডের চাল, খেজুর বা গমের মূল্য কি একই? এর উত্তর অবশ্যই সকলের জানা। তা হলে আলেমগণ কেন একটা রেট বলে দেন? এর কোন সদুত্তর আলেমগন আমাকে দিতে পারেন নি। তাদের কেউ কেউ বলতে চান হাদিসে খাবারের কথা উল্লেখ আছে। আর বাংলাদেশের জনগনের প্রধান খাবার হ’ল ভাত। তাই তারা চালের মূল্য দিতে বলেন। এ উত্তর একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বাংলাদেশের সকল ব্র্যান্ডের চালের মূল্য এক নয়। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস সব মুসলমান যেহেতু এক ব্র্যান্ডের একই জিনিস খায় না তাই সাদকাতুল ফিতরের রেট এক হবে না।

মুয়াবিয়া কর্তৃক সাদকায়ে ফিতরার রেট কমানোর প্রেক্ষাপট ছিল এরূপঃ ১। হযরত আলী (রা.) খেলাফত গ্রহণ করে ১০টি প্রদেশের দূর্নীতিপরায়ন গভর্ণদের পদচুত্য করেন। মুয়াবিয়া সিরিয়া প্রদেশের গভর্ণরের পদ হারায়। ২। মুয়াবিয়া হযরত আলী (রা.)-এর প্রতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। হযরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে সিফফিন নামক স্থানে যুদ্ধ করে। কথিত আছে এ যুদ্ধে ৫৬০০০ (ছাপ্পান্ন হাজার) সাহাবী মারা যায়। ৩। মুয়াবিয়া অর্থের লোভ দেখিয়ে, পদের লোভ দেখিয়ে, অত্যাচারের ভয় দেখিয়ে সাধারণ জনগনকে নিজ দলে আকৃষ্ট করত। ৪। মুয়াবিয়া জানত দরিদ্রদের চেয়ে ধনীরা দৃশতঃ সমাজে বেশী প্রভাব রাখে। ৫। সাদকায়ে ফিতরার রেট কমিয়ে ধনীদের হাত করা মুয়াবিয়ার একটা অপকৌশল ছিল মাত্র।

জিজ্ঞাসা-৩। কেন বাংলাদেশের আলেমগণ সাদকায় ফিতরের একটা রেট নির্ধারণ করে এমন ঘোষণা প্রচার করেন? আলেমদের কাছ থেকে এর কোন সদুত্তর পাই নি।

এসব আলেমদের অন্য কোন ঘোষণা এত নিরঙ্কুশভাবে পালিত হয় না। আলেমদের একটা বড় অংশ (জনগনের বড় অংশ নয়) ধর্মীয় রাজনীতি (ধরুন বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী) করে কিন্তু তারা কখনই সংসদীয় নির্বাচনে আসন প্রাপ্তিতে শতকরা সাত ভাগ অতিক্রম করতে পারে নি। আলেমদের এক এক অংশ উলামা লীগ, উলামা দল বা উলামা পার্টি বা অন্য কোন রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা করে থাকে। ঐ আলেমদের কথা সাধারন মানুষের মনে দাগকাটা দূরে থাকুক তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক অঙ্গনেই কোন প্রভাব রাখে না। তা হলে তারা এ ক্ষেত্রে ঘোষণা দেয় কোন উৎসাহে? এ ক্ষেত্রে বার বার আমার একটা কথা মনে হয়। তা হ’ল মুয়াবিয়ার সময়ে আলেম পরিচয়ের কিছু লোক অর্থের বা ক্ষমতার লোভে অথবা রাজনৈতিক নিপীড়নের ভয়ে রাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বা পক্ষে কাজ করেছে। আর আজকেও আলেম পরিচয়ের লোকেরাও ঐ একই কাজ করছে। তারা কোন না কোন বিশেষ গোষ্ঠীর সেবা দাসে পরিণত হয়েছে অর্থাৎ তারা স্বাধীন নয়। বাংলাদেশের তিন লক্ষাধিক মসজিদের ইমামগণ ‘মসজিদ কমিটি’ নামক বস্তুর অধীনে কাজ করে ইমামতি রক্ষার তাগিদে তার সদস্যদের মর্জিমাফিক আওয়াজ তুলে থাকে। আমাদের দেশের সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কমিটিতে কারা থাকে? হয় তারা অফিসার (যেমন জেলা প্রশাসক, এসপি, রেজিষ্টার বা কোন ডিডি জেলা যেমন পরিষদের মসজিদের জন্যে; ইউএনও, ওসি, এ্যাকাউন্টস অফিসার বা সাব-রেজিষ্টার উপজেলা মসজিদের জন্যে), মহল্লার মসজিদের জন্যে কোন দাতা ঠিকাদার, কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠির সভাপতি/সম্পাদক এমন এমন সব ব্যক্তি। বাংলাদেশের এমপিও ভুক্ত মাদ্রাসাসমূহের অধ্যক্ষ বা সুপরিদের কথা আর কি বলব। তারাও স্বাধীন নয়। চাকুরী রক্ষার্থে সরকার যন্ত্রের অধীনে কাজ করে তারা। সরকার পরিবর্তনের পর পরই আমরা তা টের পাই। কওমী মাদ্রাসার আলেমদের কথা বলার নয়! বর্তমানে তারা দারিদ্রের ভীষণ কষাঘাতে জর্জরিত। যারা বলে ‘আমরা স্বাধীণভাবে ইসলামী রাজনীতি’ করি তারা অন্তত আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সত্য কথা বলে না। আমরা ইস্পষ্টই দেখতে পাই ‘স্বাধীন ইসলামী রাজনীতি’র নামে তারা সৌদি আরবের বা আমেরিকার সেবা দাসত্ব করে থাকে। আর কেউ কেউ এর বাইরে কাজ করে বলে মনে করলেও অজজ্ঞাতসরে তারা মুয়াবিয়ার মত লোকের দাসত্ব করে থাকে।

মুয়াবিয়া আজ নেই এবং তার শরীয়তের কারণে অসহায় বঞ্চিতেরা আরও বঞ্চিত হচ্ছে এবং সহায় সম্পদশালীরা আরও লাভবান হচ্ছে এবং বিবেকের কাছে কোন কৈফিয়ত দেয়া যাচ্ছে না তারপরও তারা মুয়াবিয়ার মত লোকদের শরীয়তের প্রচলন করে যাচ্ছে। আমরা নাকি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে আজও বৃটিশদের আইন বদলাতে পারছি না। সে রূপ নিজেদেরকে খাঁটি উম্মতে মুহাম্মাদী (সা.) দাবী করছি অথচ মুয়াবিয়ার শরীয়তকে পরিত্যাগ করতে পারছি না। তা হলে তারা এমন ঘোষণা দিতে যায় কেন? এর উত্তর এটাই যে ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল সাজা’ অথবা তোষণ নীতি অবলম্বন করে সরকার বা কমিটি নামক বস্তু বা উপর ওয়ালাদের প্রিয় ভাজন হতে চাওয়া।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .