۱۷ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۷ شوال ۱۴۴۵ | May 6, 2024
আলী রেযা ক্বোর্বনী
আলী রেযা ক্বোর্বনী

হাওজা / কবি : শামসুদ্দীন মুহাম্মদ হাফেয শীরাযী ( মৃ : ৭২০ হিজরী ) পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফেয ( আজ থেকে প্রায় ৭২৩ বছর আগে তিনি পারস্যের শীরায নগরীতে মৃত্যু বরণ করেন ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, কবি : শামসুদ্দীন মুহাম্মদ হাফেয শীরাযী ( মৃ : ৭২০ হিজরী ) পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফেয ( আজ থেকে প্রায় ৭২৩ বছর আগে তিনি পারস্যের শীরায নগরীতে মৃত্যু বরণ করেন । তাঁর মাযার উক্ত নগরীতে অবস্থিত । তাঁর এ গযলটি তার কাব্য সমগ্র দেওয়ান - ই হাফেযের ২২৫ নং গযল ।

গায়ক : আলী রেযা ক্বোর্বনী

গযল সংগীতের অনুবাদ পরে পেশ করা হবে ।

তবে এর কয়েকটি মিসরা' বা পংক্তির অনুবাদ নিচে দেয়া হল:

সক্বী হাদীসে সার্ভো গোলো ললেহ মী রাভাদ্

সাকী ! সার্ভ , গুল ( ফুল ) ও লালার ( টিউলিপ ফুল ) আলোচনা চলছে

ভীন্ বাহ্স্ ব সা-ল-সেয়ে ঘাসসলেহ্ মী রাভাদ্

তিন ধৌতকারী ( পান পেয়ালা ) সহ বিতর্কমূলক আলোচনা ( বাহাস ) চলছে

শেকার শেকান্ শাভান্দ্ হামেয়ে তুতিয়ানে হেন্দ্

ভারতের তোতারা ( কবিরা ) সবাই হবে মিষ্টিমুখ

যীন্ ক্বান্দে পর্সী কে বে বাঙ্গলেহ্ মী রাভাদ্

ফার্সীর এ মিছরিখণ্ড ( ক্বান্দ্ ) [অর্থাৎ গজল গীতি ] যা বাংলায় যাচ্ছে তা নিয়ে

হফেয্ যে শৌক্বে মাজলেসে সোলথন্ ঘিয়সে দীন্

হাফেয্ ! সুলতান গিয়াসউদ্দিনের মজলিসের ( সভা ) উদ্দীপনা নিয়ে

ঘফেল্ মাশৌ কে করে থো আয্ নলে মী রাভাদ্

উদাসীন বসে থেকো না ; কারণ ক্রন্দন দিয়েই তোমার কার্য সিদ্ধ হবে ।

মহাকবি হাফেযের এ কবিতাটি বাঙ্গালা তথা বঙ্গদেশের উদ্দেশ্যে রচিত । আর এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যকার ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ও বন্ধনের কথা । বাংলা বা বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশ তখন বিশেষ করে সুশাসক প্রজা বৎসল সাহিত্য প্রেমিক সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের শাসনামলে সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে অত্যন্ত খ্যাতি লাভ করেছিল । হাফেযকে বাংলাদেশে আসার জন্য সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার জবাব তিনি এই ক্বান্দে পর্সী ( মিষ্টি ফার্সী ) নামের এ প্রসিদ্ধ গযল গীতি কাব্য রচনা করে বাংলার রাজ দরবারে প্রেরণ করেন ।

তাই এ গযল গীতি কাব্যের অপরিসীম ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে । ৯-১০ শতাব্দী ধরে বাংলাদেশের সাথে ইরান এবং ফার্সী ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতির যে বন্ধন ও সম্পর্ক রয়েছে তা চির অটুট থাকুক । কারণ ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানদের হাতে বঙ্গদেশ বিজিত হলে ফার্সী ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে বাংলার জনগণের সম্পর্কের সূচনা হয় এবং ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত এ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল এবং এই ৫৫১ বছরের মুসলিম শাসনে বাংলা বিশ্বের দশটি সমৃদ্ধশালী ধনী দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং বাংলার ঐশ্বর্য ও সম্পদ বিশ্ব ব্যাপী যশ ও খ্যাতি লাভ করেছিল । কিন্তু ১৭৫৭ সালের পর থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী কালা শাসন ও কুশাসন এবং ইংরেজি ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভৌতিক ও ধ্বংসাত্মক প্রভাবে বাঙ্গালী জাতি ও বাংলা ( বঙ্গদেশ ) অবর্ণনীয় দু:খ , দুর্দশা , বঞ্চনা , দারিদ্র্য ও অভাবের শিকার হয় এবং ১৯০ বছরের ( ১৭৫৭ - ১৯৪৭ ) দীর্ঘ ব্রিটিশ কুশাসন , শোষণ ও প্রবঞ্চনা ও লুটপাটের কল্যাণে বাংলা পৃথিবীর দরিদ্রতম অঞ্চল ও দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয় !!

যেখানে মুসলিম শাসন ও ফার্সী ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতি বাংলা ও এ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দশ দেশের অন্তর্ভুক্ত করেছিল সেখানে মাত্র ১৯০ বছরের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন এবং ইংরেজি ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতি বাংলা ও এদেশের জনগণকে চরম দারিদ্র্য , দু:খ - দুর্দশা , দুর্ভাগ্য , দুর্ভিক্ষ, বঞ্চনা , বৈষম্য , অধ:পতন , মৃত্যু ও ক্ষুধার শিকার করেছে । কালা কুৎসিত ব্রিটিশ শাসনে বাংলার সম্পদ লুণ্ঠিত এবং এ দেশের শিল্প , কৃষি ও ব্যবসায় বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। এই হলো ৫৫১ বছরের মুসলিম শাসন এবং ফার্সী ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতির মানবিক ও মানব উন্নয়নকারী দিক এবং ১৯০ বছরের বিধর্মী খ্রিষ্টান বস্তুবাদী সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসন এবং ইংরেজি ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতির অমানবিক অমানুষিক মানব ধ্বংসকারী দিক । ইতিহাস এর প্রমাণ ও সাক্ষী।

‌‌কোনো কোনো ভাষাবিদের মতে বাংলা ভাষার বয়স প্রায় ১০০০ বছর । আবার কোনো কোনো ভাষাবিদের মতে এ ভাষার বয়স ৮০০ বছর । তাই বলা যায় যে বঙ্গদেশ ( বাঙ্গালা ) এবং এ দেশের জনগণ হয় বাংলা ভাষার অতি শৈশবে বা বাংলা ভাষার জন্ম ও উৎপত্তির আগেই ফার্সী ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছে এবং এ ভাষার সাথে পরিচিত হয়েছে। কারণ , আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে মুসলমানরা ১২০৬ সালে অত্র অঞ্চল যা বর্তমানে বাংলা বা বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশ বলে পরিচিত তা জয় করেন । আর মুসলমান শাসকরাই বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলকে একত্রিত করে

নাম দেন বাঙ্গালা যা হাফেযের এই ক্বান্দে পর্সী কবিতায় বাঙ্গলেহ্ [ইরানী ফার্সী উচ্চারণ ] বলে উল্লেখিত হয়েছে। তবে বঙ্গ বাঙ্গালার বিশেষ একটি অঞ্চল বা এলাকা ও জনপদের নাম ছিল এবং তা সমগ্র ভূখণ্ডের নাম ছিল না । বাঙ্গালার বিভিন্ন অঞ্চলের নাম ভিন্ন ভিন্ন ছিল এবং সেগুলো আলাদা স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে গণ্য হত । কিন্তু মুসলিম শাসকরা এসব অঞ্চল জয় করে এগুলোকে একত্রিত করে বাঙ্গালা ( পরবর্তীতে বাংলা বা বঙ্গ বলেও পরিচিতি লাভ করেছে ) নাম

দেন । হিন্দী ভাষায় এখনও বাংলাদেশকে বঙ্গালাদেশ বলা ও লেখা হয় । তাই বাংলা বা বাঙ্গালা বাংলাদেশ বা বঙ্গদেশ এ সব নামকরণ এ অঞ্চলের মুসলিম শাসকদের কাজ এবং এ ভাবে তারা বাংলা , বঙ্গ , বাঙ্গালার রাজনৈতিক , প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব এবং ( বাংলাদেশ / বঙ্গদেশ ) বাঙ্গালী জাতি সত্ত্বার বিকাশেও অবদান ও ভূমিকা রেখেছেন । বাংলার স্বাধীন পাল রাজবংশের দীর্ঘ শাসনামলেও বাংলা বা বাঙ্গালার ( বঙ্গদেশ ) ভূরাজনৈতিক ও জাতিসত্তা গত এমন বিকাশ ঘটে নি । আর পাল সাম্রাজ্য পরবর্তী সেন রাজবংশীয় শাসনামল তা একদম কল্পনাই করা যায় না । অতএব বাঙ্গালী জাতি ফার্সী ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রভাবিত ৫৫১ বছরের মুসলিম শাসনের ( ১২০৬-১৭৫৭ ) কাছে চিরঋণী ও কৃতজ্ঞ থাকবে । যদি মুসলিম শাসকরা অত্র অঞ্চল যা আজ বৃহত্তর বাংলা ও বঙ্গদেশ ( যার অন্তর্ভুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ ও ভারত শাসিত পশ্চিম বাংলা ) একক রাজনৈতিক প্রশাসনিক ইউনিট ( কখনো স্বাধীন বাঙ্গালা বা সালতানাত - ই বাঙ্গালা ( سلطنت بنگاله ) এবং মোঘল সাম্রাজ্যের অধীন সূবে বাংলা বা সূবে বাঙ্গালা صوبه ی بنگاله ) গঠন না করতেন তাহলে আজও বাংলা বা বাঙ্গালা ভূখণ্ড বা বাংলাদেশ তৈরি হত কিনা সন্দেহ । ঠিক আসাম যেমন তেমন আসামের মত ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার বিভিন্ন অঞ্চল ও প্রদেশে বিভক্ত থাকত বাঙ্গালা নামের এ অঞ্চল । হয়তো আসাম ত্রিপুরা প্রভৃতি অঞ্চল যদি এই ৫৫১ বছরের মুসলিম শাসনাধীন হত তাহলে এই আসাম ( যা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির খুবই কাছাকাছি তা ) বাংলা , বঙ্গ বা বাঙ্গালার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল হিসেবে হয়তো পরিচিতি লাভ করত । যেমন :

চট্টগ্রাম ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসনাধীন সূবে বাঙ্গালার অন্তর্ভুক্ত হয় । এর আগে এই অঞ্চল হয় ত্রিপুরা বা রাখাইন সাম্রাজ্য ভুক্ত ছিল অর্থাৎ তা বাঙ্গালার অন্তর্ভুক্ত ছিল না । মুঘল সাম্রাজ্য কর্তৃক চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলার অন্তর্ভুক্ত করা হলে আজ তা বাঙ্গালা পরে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে এবং বাংলা ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতি সেখানে প্রসার লাভ করেছে । এটাই হচ্ছে ঐতিহাসিক বাস্তবতা যে ক্ষেত্রে পাঁচ শতাব্দীর অধিককালের ফার্সী ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রভাবিত মুসলিম শাসনের ভাগ্য নির্ধারক যুগান্তকারী ভূমিকা ও অবদান রয়েছে ।

বাংলার ওপর ব্রিটিশ শাসন ১৯৪৭ সালে সর্বশেষ কুঠারাঘাত হেনে সমগ্র বঙ্গ বা বাঙ্গালাকে দ্বিখণ্ডিত করে এ অঞ্চল থেকে পাত্তারি গুটিয়ে চলে যায় । যেখানে ৫৫১ বছরের ( ১২০৬-১৭৫৭ ) মুসলিম শাসন সমগ্র বঙ্গদেশ বা বাঙ্গালাকে কখনো স্বাধীন সার্বভৌম সালতানাত - ই বাঙ্গালা বা কখনো সূবে বাঙ্গালা নামে একীভূত ও ঐক্যবদ্ধ ভূখণ্ড করে রেখেছিল সেখানে মাত্র ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসন বাঙ্গালা বা বঙ্গ দেশকে দু টুকরো করে দিয়ে চলে যায় ! এই হলো ৫৫১ বছরের মুসলিম শাসন ও ১৯০ বছরের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের মধ্যে এক মৌলিক ও প্রধান পার্থক্য । ফার্সী ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রভাবিত মুসলিম শাসন এ অঞ্চলের অখণ্ডত্ব , ঐক্য ও সংহতি বাস্তবায়িত ও নিশ্চিত করেছে সেখানে সেক্যুলার বস্তুবাদী খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন এ অঞ্চলকে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিরোধ ও দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে দ্বিধাবিভক্ত করে গেছে ! অথচ ৫৫১ বছরের মুসলিম শাসনামলে গুটিকতক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনো হিন্দু মুসলিম দ্বন্দ্ব বাঙ্গালায় ছিল না এবং এই দেশে এই দুই ধর্মীয় সম্প্রদায় সৌহার্দ্য - সম্প্রীতির সাথে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করেছে দীর্ঘ ৫৫১ বছর ধরে ! অথচ মুসলমানদের বিচার ব্যবস্থা এ সময় ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক ছিল যা ব্রিটিশ শাসকরা বিলুপ্ত করে সেক্যুলার ব্রিটিশ আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন করে।

মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

৮ শাওওয়াল , ১৪৪৩ হি.

تبصرہ ارسال

You are replying to: .