হাওজা নিউজ বাংলা: ‘আসন্ন মহররম এবং আমাদের কর্তব্য’ বিষয় সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
জনাব রাশেদ নাজাফি: সালামুন আলাইকুম, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমি নিজেকে আজ সৌভাগ্যবান মনে করছি এই জন্য যে, আজ আমি ইসলামে আহলে বায়েত (আঃ)- এর গুরুত্ব ব্যক্ত করার জন্য কিছু কথা বলার আল্লাহ আমাকে তৌফিক দান করেছেন।
মহররম হিজরীর বর্ষপঞ্জিকার প্রথম মাস। এই মাসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য অনেক, বিশেষ করে ইমাম হোসাইন (আঃ), উনার পরিবারের এবং উনার সাহাবীগনের শাহাদাত।
ইসলামকে বাঁচানোর জন্য তাঁরা শুধু কারবালায় শাহাদাত বরণ করেছেন -এটাই শেষ কথা নয়, বরং কারবালার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পরবর্তীতে ইমাম হযরত যয়নুল আবেদ্বীন (আঃ), হযরত যয়নাব (সঃ আঃ) ও অন্যান্য বিবিগন যে নির্যাতন, নিপীড়ন, কষ্ট সহ্য করেছেন।
ঈয়াজিদের (লাঃ) দরবারে ইমাম আলী (আঃ) এর পরিবারবর্গ খুতবা পাঠ করেছেন এবং নিজেদের নানান গুরুত্বপূর্ণ কর্ম দ্বারা ইসলামকে জীবন্ত করেছেন।
দল মত নির্বিশেষে আমরা নবী (সাঃ) এর আহলে বায়েত (আঃ) এর অনেক সহীহ হাদিসে পড়েছি এবং জেনেছি, যেমন -
"হোসাইন আমার হতে এবং আমি হোসাইন হতে"
"হাসান (আঃ) এবং হোসাইন (আঃ) আমার সন্তান"
"হাসান (আঃ) এবং হোসাইন (আঃ) জান্নাতের যুবকদের সরদার" ইত্যাদি।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ আমরা মুসলমানরা ইমাম হোসাইন (আঃ) এর শাহাদাত বা কারবালার ঘটনা শিয়া সুন্নিতে পরিনত করেছি।
একদিকে কোরআনকে গ্রহন করার দাবী করছে, অপরদিকে আহলে বায়েত (আঃ)কে ছেড়ে দিয়েছে ৷
নবী (সাঃ) নাম উচ্চরণ করছে, কিন্তু উনার আদর্শ (আহলে বায়েত আঃ) ভুলে গিয়েছে। ইসলামের শত্রু আর জালেমরা নবী (সাঃ) এর পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে, তা-কি মুসলমানদের জন্য শোকের বিষয় নয় ?
নবী (সাঃ) এর উম্মত হিসাবে, নবী (সাঃ) পরিবারের দুঃখ, কষ্টকে নিজেদের হৃদয়ে ধারন করে, তাঁদের হয়ে ইনসাফের কথা বলা কি মুসমানদের দায় নেই ??
না-কি নবী (সাঃ) এর পরিবার শুধু নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের জন্য। কারবালার যে বর্বরোচিত, যে-কি নিদারুন অত্যাচার, হত্যাযজ্ঞ হয়েছে যা আজও পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয়। নবী (সাঃ) এর বংশের (বনী হাশিম) হত্যাকান্ডে উত্তপ্ত মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ইমাম হোসাইন (আঃ) এর ৬ মাস বয়সী দুধের শিশু আলী আসগর, ১৩ বছরের ভাতিজা কাসেম, ২০-২২ বছর বয়স্ক ইমাম হোসাইন (আঃ) পুত্র হযরত আলী আকবর (আঃ), সৌন্দর্য ও বীরত্বের জন্য খ্যাত ইমাম হোসাইন (আঃ) এর ভাই হযরত আবুল ফজল আব্বাস (আঃ) কেউ বাদ পড়ে নাই। হায় আফসোস! ইসলামের জন্য এত বড় একটা কুরবানীকে আড়াল করছি, পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করছি।
নবী (সাঃ) দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) এর পবিত্র শাহাদাতকে স্মরণ করা এবং তা কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত রাখা একটি ধর্মীয় দায়িত্ব। কেননা ইমাম হোসাইন (আঃ) ইসলাম ধর্ম রক্ষার জন্য নিজের, পরিবারের এবং উনার সঙ্গী সাথীগন জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। সুতরাং ইমাম হোসাইন (আঃ) এর এই কালজয়ী বিপ্লবকে স্মরণ করা আলোচনা অনুষ্ঠান ও শোক মিছিলের আয়োজন করা জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
হাওজা নিউজ বাংলা: মহররম আমাদের কি শিক্ষা দেয়?
জনাব রাশেদ নাজাফি: ইমাম হোসাইন (আঃ) এর ব্যক্তিত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব মানব সভ্যতার এক অনন্য বিপ্লব। এই বিপ্লবের মাধ্যমে ইমাম হোসাইন (আঃ) শিক্ষা, প্রজ্ঞা উনার গুণের সর্বোত্তম প্রকাশ এবং বীরত্ব ও ন্যায়নীতির পরিপূর্ণ সৌন্দর্য এবং অন্যদিকে, শয়তান ও পশু-শক্তির দানবিকতা আর পাশবিকতার চরম প্রকাশ। একদিকে ফুটে উঠেছে খোদাভিরু প্রেমের চরম বহিঃপ্রকাশ আর অন্য দিকে শয়তানের কুপ্রবৃত্তির দাসত্ব, অধঃপতন আর বিবেকহীনতার মানুষের নিদর্শন।
যেহেতু কারবালার ঘটনা মহররম মাসে হয়েছে তাই আমি বলব, কারবালা একটি বিশ্ববিদ্যালয় বটে, যেখানে খোদাপ্রেম, ইমামের আনুগত্য, আন্তরিকতা, মানবতা, নৈতিকতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব, সৎ-কাজের আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ, আত্মত্যাগ, মুক্তিকামীতা, দায়িত্বশীলতা, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা, সময়োচিত পদক্ষেপ বা সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহারের মত বিষয়গুলো কারবালার কালজয়ী বিপ্লবে প্রবাদতুল্য আদর্শ বা শিক্ষা হিসেবে ফুটে উঠেছে।