۵ آذر ۱۴۰۳ |۲۳ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 25, 2024
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাত মুখোমুখি
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাত মুখোমুখি

হাওজা / তেল উৎপাদনের কোটা নিয়ে সৌদি আরব আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে প্রকাশ্য তিক্ত মতভেদের পর বিশ্বের বড় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের মধ্যে আলোচনা স্থগিত করে দিয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, সৌদি আরব ও আমিরাতের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন আরো তীব্র হচ্ছে! কাতারের উপর সৌদি অবরোধ আরোপ নিয়ে দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মতপ্রার্থক্য শুরু! ব্যয়বহুল ইয়েমেন যুদ্ধের মাঝপথে সৌদিকে একা ফেলে আমিরাতের চলে আসা এবং পাল্টা পদক্ষেপ হিসবে আমিরাতের অমত সত্ত্বেও কাতারকে পূণরায় সৌদির কাছে টানাকে কেন্দ্র করে দু'দেশের মতপার্থক্যকে মতবিরোধে পরিণত করে।

এরপর, দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, চিনা ভ্যাকসিন নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান এবং সর্বশেষ তেল উৎপাদনের কোটা নিয়ে মতবিরোধ দু'দেশকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে!

দুই বন্ধুপ্রতীম দেশ যেভাবে পরস্পর বিরোধিতায় জড়াচ্ছেঃ

করোনাকালীন সময়ে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে হওয়া এক চুক্তিতে আরব আমিরাতকে ঠকানোর অভিযোগ তুলে সৌদি আরবের নয়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে আরব আমিরাত! তেল উৎপাদনের কোটা নিয়ে সৌদি আরব আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে প্রকাশ্য তিক্ত মতভেদের পর বিশ্বের বড় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের মধ্যে আলোচনা স্থগিত করে দিয়েছে।

এর ফলে জ্বালানির বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এবং তেলের দাম ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট ও চাহিদা ঘাটতির সময়েও গত ১৮ মাস এই গোষ্ঠী তেলের সরবরাহ অক্ষুণ্ন রাখার কাজ পরিচালনা করেছে।

ওপেক প্লাসের নেতা সৌদি আরব এবং রাশিয়া উৎপাদনের মাত্রা কম রাখার মেয়াদ আরও আট মাস বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে নিজেদের কোটা কম থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত তা প্রত্যাখান করে এবং এর থেকেই গত সপ্তাহে তৈরি হয় সমস্যা।

সংযুক্ত আরব আমিরাত চেয়েছিল, উৎপাদনের যে মাত্রাকে মূল ভিত্তি হিসাবে এখন ধরা হচ্ছে সেটা আলোচনার মাধ্যমে পুনর্নিধারণ করা হোক। যাতে তেলের উত্তোলন আরও বাড়ানোর ব্যাপারে আমিরাতের স্বাধীনতা থাকে।

কিন্তু সৌদি আরব আর রাশিয়া এর বিপক্ষে মত দেয়। এ নিয়ে ঘনিষ্ঠ দুই মিত্র দেশ আমিরাত আর সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে পরস্পরবিরোধী মতামত ব্যক্ত করেন। তাদের এই প্রকাশ্য মতবিরোধ সবাইকে চমকে দিয়েছে।

পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন ঘটনাবলীতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গত এক দশক ধরে প্রায় একই নীতি পোষণ করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে। আরববিশ্বে স্বৈরসরকারগুলোর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌদি আরবের নীতি অনুসরণ করে চলেছে। বিশেষ করে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওই দুই দেশ একজোট হলে আমিরাত সৌদি আরবের প্রধান মিত্রে পরিণত হয়।

কিন্তু গত দুই বছরের ঘটনাবলীতে দেখা গেছে ইয়েমেনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সৌদি আরব সংযুক্ত আরব ও আমিরাতের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বিরাজ করছে। আমিরাত ইয়েমেন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর এটাকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে দু'দেশের মধ্যে প্রথম মতপার্থক্য শুরু হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স সম্প্রতি আবুধাবি ও রিয়াদের মধ্যকার তীব্র মতপার্থক্যের কথা উল্লেখ করে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ইয়েমেন থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে প্রথম সৌদি আরবের সঙ্গে আমিরাতের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কেননা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ব্যয়বহুল এই যুদ্ধে রিয়াদকে একা ফেলে রেখে আমিরাত ওই যুদ্ধ থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয়, যা সৌদি বাহিনীকে সংকটে ফেলে দেয় এবং এটা রিয়াদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি আরেকটি কারণ হচ্ছে কাতার ইস্যু। কেননা সৌদি সরকার তাদের জোটবদ্ধ আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরের সঙ্গে কোনো শলাপরামর্শ না করেই কাতারের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি করে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং অবরোধ চাপিয়ে দেয়।

আরব রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুল বারি আতাওয়ান এ ব্যাপারে এক নিবন্ধনে লিখেছেন, 'সংযুক্ত আরব আমিরাত মনে করে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরবের কাছ থেকে তারা ধোঁকা খেয়েছে। যেহেতু আমিরাত দক্ষিণ ইয়েমেন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করার কারণে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অসন্তুষ্ট ছিলেন, সে কারণেই  কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে তিনি আমিরাতের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিশোধ নিয়েছেন।'

সৌদি ও আমিরাতের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টির তৃতীয় কারণ হচ্ছে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাকে কেন্দ্র করে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আমিরাত হচ্ছে প্রথম আরব দেশ যে কিনা গত বছরের সেপ্টেম্বরে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে।

আবুধাবির এই পদক্ষেপের পর রিয়াদও তেলআবিবের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেবে বলে আমিরাত সরকার ভেবেছিল। এমনকি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পাম্পেও এবং ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু ওই সাক্ষাতে তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে তিনি কোনো কথা না বলায় আবুধাবি যারপরনাই রিয়াদ এর উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়।

দু'দেশের মধ্যে মতবিরোধের চতুর্থ কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা! ওপেক প্লাসে তেল উৎপাদনের কোটা নিয়ে এই টানাপোড়েনের পেছনে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

দুই দেশই জ্বালানি রপ্তানির ওপর তাদের নির্ভরতা কমিয়ে তাদের অর্থনীতিকে অন্য খাত নির্ভর করে তুলতে চাইছে।

মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি আরব তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোয় আমূল পরিবর্তনশীল কৌশল নিয়েছে।

এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরব বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে একটা আলটিমেটাম দিয়েছে যে, তারা যদি উপসাগরীয় এলাকায় তাদের আঞ্চলিক সদরদপ্তরগুলো ২০২৪ সালের ভেতর সৌদি আরবে স্থানান্তর না করে, তাহলে সৌদি সরকার তাদের সাথে কোনো চুক্তি করবে না।

উপসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র দুবাই এই হুমকি ভালো চোখে দেখেনি। তারা এটাকে আমিরাতের ওপর পরোক্ষ একটা হামলা বলেই বিবেচনা করেছে।

ওপেক প্লাসের প্রস্তাবে আমিরাত বাধা দেবার পর সৌদি আরব কার্যত এর প্রতিশোধ নিতে আমিরাতের সাথে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। যদিও সৌদি সরকার বলছে বিমান চলাচল স্থগিতের পেছনে কারণ করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ, অন্য কিছু নয়।

কিন্তু আসন্ন ঈদুল আযহার ছুটিতে বহু মানুষ যখন দুবাইয়ের দিকে ছোটে তখন এই বিমান চলাচল স্থগিত করার সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ শুধু করোনাভাইরাস কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সৌদি আরব আরও ঘোষণা করেছে যে তারা মুক্ত বাণিজ্য এলাকা থেকে বা অন্য যেসব উপসাগরীয় দেশের সাথে ইসরায়েলের বাণিজ্যিক শুল্ক সুবিধার চুক্তি আছে সেসব দেশে থেকে পণ্য আমদানি করবে না।

এটাও আমিরাতের জন্য বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে একটা বড় ধাক্কা, কারণ আমিরাতের বাণিজ্য ব্যবস্থা ঐ চুক্তির আওতাধীন।

আরব আমিরাত পর্যটন, আর্থিক সেবা এবং প্রযুক্তি খাতে প্রতিযোগিতার জন্য বিপুল বাজেটের বাজার গড়ে তুলছে। সৌদি আরবও সেই একই দিকে মনোনিবেশ করেছে, যা দুই দেশকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।

লন্ডনে চ্যাটাম হাউসের বিশ্লেষক নিয়েল কুইলিয়াম বলেছেন, "উপসাগরীয় এলাকায় সৌদি আরব একটা বৃহৎ দেশ এবং তারা এখন পর্যটন, আর্থিক সেবা ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে মনোনিবেশ করেছে। এটা বিভিন্ন কারণে আমিরাতের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।

সৌদি আরব যদি আগামী পনের থেকে বিশ বছরের মধ্যে গতিশীল একটা অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়, তাহলে সেটা আমিরাতের অর্থনীতির মডেলের জন্য একটা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।"

সৌদি আরব এবং আমিরাত নতুন ওপেক প্লাস চুক্তিতে শেষ পর্যন্ত একমত হতে পারবে নাকি তা দুই দেশের সম্পর্কে আরো দূরত্ব তৈরী করবে তা সময়ই বলে দিবে।

কিন্তু সৌদি বিশ্লেষক আলী শিহাবি (যিনি সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ), তিনি মনে করেন না যে দুই দেশের এই মতবিরোধ দীর্ঘমেয়াদে তাদের সম্পর্কের ক্ষতি করবে।

তিনি বলেন, ''এই দুটি দেশের মধ্যে অতীতে আরও বড় মতভেদ দেখা গেছে! প্রত্যেক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই উত্থান পতন আছে।

'কিন্তু এই দুটি দেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তিটা আসলেই অনেক জোরালো। ফলে এই জোটের স্থায়ী ক্ষতি হবে না!"

যাইহোক দিন যতই গড়াচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুতে ততই সৌদি আরব ও  সংযুক্ত  আরব আমিরাতের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। আগামীতে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

লেখা: রাসেল আহমেদ রিজভী

تبصرہ ارسال

You are replying to: .