۱۴ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۴ شوال ۱۴۴۵ | May 3, 2024
ইসলামী ইতিহাসে মুবাহিলা!
ইসলামী ইতিহাসে মুবাহিলা!

হাওজা / মোবাহিলা হচ্ছে ‘পরস্পরের প্রতি অভিশাপ দেয়ার অনুষ্ঠান’।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, নিশ্চয়ই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যেমন – স্কুলে, মাদ্রাসায় বক্তৃতা কিংবা বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে দেখি। বিতর্কের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রকৃত সত্যকে আবিষ্কার করা যায়। আর তাই ইসলামে বির্তক বা বাহাসের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা নাহলের ১২৫ নম্বর আয়াতে রাসূল (সা.)কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “ হে নবী! আল্লাহর পথে মানুষদেরকে ডাকুন হিকমত ও ভাল উপদেশের সাহায্যে। আর লোকদের সাথে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়।”

আল্লাহর এ নির্দেশের আলোকে রাসূল (সা.) মানুষকে ভাল উপদেশের মাধ্যমে ইসলামের দিকে ডাকতেন। কিন্তু এমন অনেকেই ছিলেন যারা কেবল উপদেশে বিশ্বাসী ছিল না। গোড়ামী, একগুঁয়েমি ও ভুল চিন্তাধারার অধিকারী এসব ব্যক্তির সাথে রাসূলেখোদা মুনাযিরাহ বা বিতর্কে লিপ্ত হতেন।

মুনাযিরাহ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, “ তোমরা যারা ঈমান এনেছো, শত্রুদের মুকাবিলায় তোমাদের প্রস্তুতিকে ধরে রাখ৷”

এই আয়াতে বলা হয়েছে, মুসলমানরা অবশ্যই সকল পন্থায় শত্রুদের মুকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে৷ ইমাম জাফর সাদিক (রাঃ) বিরোধীদের সাথে মুনাযিরাহ্ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেছেন : “বিরোধীদের সাথে আলোচনা কর এবং হিদায়েতের পথকে তা তাদের সামনে উপস্থাপন কর। সেই সাথে তাদের গোমরাহীর পথকেও তাদের সামনে তুলে ধর৷”

মুনাযিরাহ বা বিতর্কের গুরুত্ব সম্পর্কে জানলাম। এবার নিশ্চয়ই আমরা জেনে নেব, রাসূল করিম (সাঃ) কাদের সাথে বিতর্ক করেছেন। আল্লাহর রাসূল- ইহুদী, খ্রিস্টান, মুর্তিপুজক, নাস্তিকসহ পাঁচ শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী শক্তির সঙ্গে মুনাযিরাহ বা বিতর্ক করেছেন। প্রত্যেকটি বিতর্কে তারা রাসূলের অকাট্য যুক্তি, অগাধ জ্ঞান ও প্রমাণের কাছে হেরে যায়।

তবে, আমরা একটা সত্য ঘটনা জানবো – একবার নাজরানের এক খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল বিতর্কে হেরে গিয়ে রাসূলকে মোবাহিলা করার প্রস্তাব দেয়।

পাঠক বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন, মোবাহিলা আবার কি?

মোবাহিলা হচ্ছে ‘পরস্পরের প্রতি অভিশাপ দেয়ার অনুষ্ঠান’। রাসূলের যুগে পরস্পর বিরোধী দু’টি পক্ষ একটি স্থানে একত্রিত হয়ে একে অপরের প্রতি ততক্ষণ পর্যন্ত অভিশাপ দিত যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাদের এক পক্ষকে ধ্বংস না করতেন।

তো পাঠক বন্ধুরা, ২৪ শে জিলহাজ্ব হচ্ছে ঐতিহাসিক মোবাহিলার দিন। ১০ই হিজরীর ঐ দিনে নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধিদের সাথে রাসূল করিম (সাঃ) মোবাহিলা সংঘটিত হয়েছিল।

বর্তমান সৌদি আরবের পূর্বনাম ছিল হেজাজ। এই হেজাজ এবং ইয়েমেনের সীমান্তে অবস্থিত একটি পার্বত্য অঞ্চলের নাম নাজরান। ইসলামের প্রাথমিক যুগে হেজাজের মধ্যে নাজরানই ছিল একমাত্র খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এলাকা। যে অঞ্চলের লোকজন বিভিন্ন কারণে মূর্তি পূজা ছেড়ে দিয়ে হযরত ঈসা মাসীহ (আঃ) এর ধর্মকে গ্রহণ করেছিলেন। নাজরানের ৭৩টি ছোট শহরে প্রায় ৪০ হাজার খ্রিস্টান বাস করতো।

দশম হিজরীতে মহানবী (সাঃ) ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ইয়েমেনের নাজরান এলাকায় একদল মুসলমানকে পাঠিয়েছিলেন। ঐ দাওয়াত পাওয়ার পর নাজরানের খ্রিস্টান পোপ এ ব্যাপারে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সেখানকার জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের নিয়ে মিটিংয়ে বসেন। মিটিংয়ের পর তিনি রাসূল করিম (সাঃ)এর সাথে আলোচনার জন্য মদীনায় একটি প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

১৪ সদস্যের ওই খ্রিস্টান প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন পোপ আবু হারিসা নিজে। তারা মদীনায় গিয়ে রাসুল করিম (সাঃ)এর সাথে হযরত ঈসা (আঃ)’র ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করতে থাকে। কিন্তু তারা যুক্তি ও সত্য মেনে নিতে অস্বীকার করে। নাজরানের প্রতিনিধিরা দেখল, তারা যতই জিজ্ঞাসা করছে রাসূল (সাঃ) ততই সুন্দরভাবে যুক্তি ও দলিল দিয়ে কথা বলছেন তখন তারা নিশ্চিত পরাজয় জেনে মুনাযিরাহ বা বিতর্ক বন্ধ করে দিল।

মুনাযিরাহ বন্ধ করে তারা বলল : এ সব যুক্তিতর্ক আমাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না৷ আমরা মোবাহিলা করতে চাই৷ এ সময় রাসূলকরিম (সাঃ) ওপর সূরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াত নাজিল হলো। মহান আল্লাহ বলেন, “যখন ঈসা সম্পর্কিত জ্ঞানগর্ভ আলোচনার পরেও তারা আপনার সাথে ঝগড়া করছে তখন আপনি বলুন, এসো! আমি আমার মহিলাদেরকে নিয়ে আসব, তোমরাও তোমাদের মহিলাদেরকে নিয়ে আসবে,আমি আমার সন্তানদেরকে নিয়ে আসব তোমরাও তোমাদের সন্তানদেরকে নিয়ে আসবে,আমি আমার নফসকে নিয়ে আসব তোমরাও তোমাদের নফসকে নিয়ে আসবে,তারপর মোবাহিলা করব এবং আল্লাহর লানতকে মিথ্যাবাদিদের উপর বর্ষণ করব।”

পবিত্র কুরআনের এ আয়াত নাজিল হবার পর রাসূল (সাঃ) খ্রিস্টানদের বললেন, “তোমরা তোমাদের পুত্র, নারী ও ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে নিয়ে এসো। আর আমরাও একই কাজ করে জনসমাবেশে এসে মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণের জন্য প্রার্থনা করব।” রাসূলে করিম (সাঃ) এ আহবানের পর খ্রিস্টানদের পোপ তার দলের অন্যান্য সদস্যদের বলল, “মোবাহিলার প্রস্তাব মেনে নাও। কিন্তু যদি দেখ, মুহাম্মদ তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে মোবাহিলার জন্য উপস্থিত হয়, তাহলে তোমরা তা করা থেকে বিরত থাকবে এবং কোনভাবে আপোস করবে।”

এ সিদ্ধান্তের পর মুসলিম-খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন অধির আগ্রহে মোবাহিলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে যিলহজ্জ মাসের ২৪ তারিখ মহানবী (সাঃ) তার পরিবারের মাত্র চার জন সদস্যকে নিয়ে নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হলেন। এই চার জন হলেন, রাসূল কন্যা ফাতেমা (রাঃ), জামাতা হয়রত আলী (রাঃ) এবং তাঁদের দুই পুত্র হাসান ও হোসাইন (রাঃ)। মহানবী (সাঃ) তাদের বললেন, ‘যখনই আমি দোয়া করব তোমরা আমিন বলবে।’

রাসূলের সঙ্গে এই চারজনকে দেখে খ্রিস্টানরা ভয় পেয়ে গেল। তাদের আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) সত্যের পথে আছেন। তিনি যদি সঠিক পথে না থাকতেন তাহলে কখনই নিজের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্বদেরকে নিয়ে মোবাহিলার জন্য উপস্থিত হয়ে ঐশি আযাবের মুখোমুখি হতেন না।

পোপ বলল, “আমি এমন কিছু চেহারাকে দেখতে পাচ্ছি যে, যদি তাঁরা দোয়া করেন, তাহলে পাহাড় টলে যাবে এবং যদি আমাদের ওপর অভিশাপ দেন, তাহলে আমরা একজনও জীবিত থাকব না। সুতরাং তোমরা এক্ষুণি মোবাহিলা বন্ধ কর।”

পোপের পীড়াপীড়ি নাজরানের প্রতিনিধিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করল। এক ধরনের অস্থিরতা তাদেরকে ঘিরে ধরল। দ্রুত তারা একজনকে প্রতিনিধিকে পাঠাল রাসূল (সাঃ)-এর কাছে। ওই প্রতিনিধি রাসূলে করিম (সাঃ) সাথে দেখা করে মোবাহিলা বন্ধ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাল এবং শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দিল।

খ্রিস্টানদের প্রস্তাব পেয়ে মহানবী (সাঃ) তাদের উপর দয়া করলেন এবং হযরত আলীকে নির্দেশ দিলেন চুক্তির শর্ত লিখতে। মহানবীর নির্দেশ অনুযায়ী হযরত আলী চুক্তির শর্ত লিখলেন। শর্ত অনুযায়ী কর হিসেবে প্রতি বছর দুই হাজার হুল্লাহ অর্থাৎ ৮০ হাজার দিরহাম কর দিতে রাজি হলো খ্রিস্টানরা। আর যদি কোনো যুদ্ধ হয় তাহলে ৩০টি যেরা, ৩০টি বর্ষা এবং ৩০টি ঘোড়া ধার হিসেবে মুসলমানদেরকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। চুক্তির শর্ত মেনে নিয়ে নাজরানের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে চলে গেল। আর এভাবেই খ্রিস্টানদের ওপর মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হলো।

আমরা এ্ই আলোচনা দেখলাম, ইসলাম কখনো সত্য পদক্ষেপে পিচ পা হয় না। ইসলামে মিথ্যার কোন আশ্রয় নাই। মিথ্যাই পাপের জন্ম দেয়। আমাদের প্রথমে মিথ্যাকে বর্জন করতে হবে এবং সত্যকে গ্রহন করতে হবে। কোরআনই হলো একমাত্র সত্যোর ধারক ও বাহক। তাই উপরোল্লিখিত আলোচনায় দেখলাম আলোচনা করা বা বাহাজ তৎকালিক সময়ে ছিল, এবং সেটা ছিল ভিন্ন ধর্মের লোকদের সাথে এবং ভিন্ন মতের লোকদের সাথে, তাই আমরা মুসলমানরা আমাদের জীবন এবং আকিদা সম্পর্কে একটু সর্তক হই। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলাম বোঝার ও ধারন করার তৈফিক দান করুন।

লেখক ও গবেষক: হুজ্জাতুল ইসলাম জনাব আলী নওয়াজ খান

تبصرہ ارسال

You are replying to: .