হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, কারবালার ঘটনায় ইসলামী ও মানবিক মূল্যবোধের অভিভাবকগণ,যেখানে যুবকেরা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন,সেখানে প্রবীণ ব্যক্তিত্বরা আত্মত্যাগে পিছিয়ে ছিলেন না। এমনকি কনিষ্ঠ শিশুরাও শাহাদাত বরণ করেছিলেন,এমনকি ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর স্তন্যপায়ী সন্তানের শাহাদাতও দিগন্ত বিশ্বে সূর্য ও চাঁদের মত জ্বলজ্বল করছে। শুধু পুরুষরাই নয় বরং নারীরাও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যদি কারবালার ইতিহাসে ওই সিংহ-হৃদয় মহিলাদের যিকর্ না করা হয়,তবে ইতিহাস কেবল অসম্পূর্ণই নয় বরং অদ্ভুততারও শিকার হবে।
নিম্নে কারবালার কয়েকজন মহীয়সী নারীর কথা উল্লেখ করা হল।
হযরত যয়নাব (সাঃআঃ)
নবীজীর দৌহিত্রী, ইমাম আলীর অলঙ্কার, দ্বিতীয় যাহরা, ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর বোনের নাম মহান আল্লাহ তাআলা স্বয়ং 'লাওহ্ মাহফূয' (ইসলামী বিশ্বাস মতে এটি সেই পুস্তক বা পত্র যাতে বিশ্বজগতের সমস্ত ঘটনা অনাদি কাল হতে লিপিবদ্ধ আছে) - এ
"যাইন আব" অর্থাৎ যয়নাব রাখেন।
হযরত যয়নাব (সাঃআঃ) আশুরার সময় পর্যন্ত কারবালার স্থপতি ও রচয়িতা ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর উপদেষ্টা ছিলেন। পরবর্তী লক্ষ্য ছিল কারবালার রক্ষক এবং কারবালার বাণীর প্রচারক।
হযরত উম্মে কুলসুম (সাঃআঃ)
যেমনভাবে হযরত আব্বাস (আঃ) কেবল ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর ভাই ছিলেন না, বরং একজন বিশ্বস্ত অনুসারীও ছিলেন। তেমনি হযরত নবী করিম (সাঃ)-এর সর্বকনিষ্ঠ দৌহিত্রী, আমিরুল মু’মিনীন (আঃ)-এর শেষ অতিথি সেবিকা হযরত উম্মে কুলসুম (সাঃআঃ) কারববলার নির্মাণ, সংরক্ষণ এবং কারবালা প্রচারের প্রতিটি ফ্রন্টে সর্বদা হযরত যয়নাব (সাঃআঃ)-এর সঙ্গী ছিলেন। তিনি কুফায় একটি খুতবা প্রদান করেন এবং মদীনায় প্রত্যাবর্তনের সময় এমন একটি নওহা পাঠ করেন, যা এখনও প্রতিটি হৃদয়কে বিষণ্ণ করে তোলে এবং প্রতিটি চোখ অশ্রু বর্ষণ করে।
হযরত সাকিনা (সাঃআঃ)
শাস্তিময় আত্মা (ইমাম হোসায়েন আঃ) 'র প্রশান্তি, সমগ্র আন্বিয়াদের উত্তরাধিকারীর হৃদয়ের চিত্তসুখ হজরত সাকিনা (সাঃআঃ) বাল্যকালেই আত্মত্যাগ ও আত্ম বলিদানের ওই স্পষ্ট ছাপ স্থাপন করেন, যেখানে বিশ্বের প্রবীণ নারীগণ বরং পুরুষরাও প্রবেশযোগ্য নয়। ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, এতিমী এবং নিপীড়নের সত্ত্বেও ঐ বাল্যকালেই তিনি হোসায়নী লক্ষ্যবস্তু রক্ষা করেছিলেন।
হযরত রবাব (সাঃআঃ)
ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর জীবন সঙ্গীণী হযরত রবাব (সাঃআঃ) কারবালার মরু প্রান্তে যেখানে নিজের সোহাগ উৎসর্গ করেছিলেন। সেখানে ইতিপূর্বে তিনি তাঁর স্তন্যপায়ী শিশুর এমন আত্ম বলিদান পেশ করেন যা ইহকাল পর্যন্ত ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর দুর্দশা ও দুঃখ, বেদনা এবং সত্যতা ও হকের দলীল হয়ে থাকবে। তিনি ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর শোকে শোকাহত হয়ে নওহা পাঠ করেন। আর তিনি যখন মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন তখন তিনি এক বছর পর্যন্ত কারবালার আযাদারীদের শোকে কখনও ছায়ায় বসেন নি এমনকি ওই অবস্থায় তিনি এই নিষ্ঠুর দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেন।
হযরত উম্মে ইসহাক্ব (সাঃআঃ)
ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর স্ত্রী উম্মে ইসহাক্ব কারবালায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি গর্ভবতী ছিলেন। মজলুম এ কারবালা তাঁর নিপীড়িত ভাই হযরত মহসিন বিন আলী ও ফতেমা (সাঃআঃ)-এর নামে নামকরণ করে জন্মের আগে নিজের হৃদয়ের টুকরোর নাম মহসিন রেখেছিলেন। সিরিয়া যাওয়ার পথে আলেপ্পোর কাছে ইয়াজিদ বাহিনীর লোমহর্ষক অত্যাচারের কারণে হযরত মহসিন তাঁর মজলুম চাচার মতো মায়ের গর্ভেই শহীদ হন এবং সেখানেই সমাহিত হন। আলেপ্পোর কাছে, তাঁর পবিত্র মাজারটি "মাশহাদ আল-সিকত" এবং "মাশহাদ আল-মহসিন" যিয়ারাত প্রেমিদের যিয়ারাত স্থান নামে পরিচিত।
হযরত উম্মে সুলাইমান (সাঃআঃ)
তাঁর নাম ছিল কাবশা, তিনি ছিলেন ক্রীতদাসী। ইমাম হোসায়েন (আঃ) এক হাজার দিরহামের মাধ্যমে তাঁকে ক্রয় করেন। তিনি উম্মে ইসহাক্বের (ইমাম হোসায়েন আঃ এর স্ত্রী) বাড়িতে সেবা করতেন। তিনি পরে আবু রাজিনকে বিয়ে করেন এবং তাঁর থেকে সুলাইমানের জন্ম হয়। জানাব সুলাইমান ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর চিঠি নিয়ে বসরায় যান। ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের সৈন্যরা তাঁকে গ্রেফতার করে শহীদ করে। হযরত উম্মে সুলাইমান শিক্ষিতা ও জ্ঞানবর্তী আলেমা ছিলেন। তিনি তাঁর মাওলা ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর সাথে মদিনা থেকে কারবালায় যান। হোসায়নী শাহাদাতের পর তাঁকে আহলে হেরামদের সাথে বন্দী করে সিরিয়া ও কুফায় নিয়ে যাওয়া হয়।
হযরত ফুকহিয়া (সাঃআঃ)
তিনি ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উরাইকাতের স্ত্রী এবং ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর স্ত্রী হযরত রবাব (সাঃআঃ)-এর সেবিকা। ইমাম হোসায়েন (আঃ) যখন মদিনা থেকে যাত্রা শুরু করেন, তখন হযরত ফুকহিয়াও নিজের ছেলে হযরত ক্বারিব (আঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর সাথে কারবালায় আসেন। হযরত ক্বারিব (আঃ) কারবালায় শহীদ হন এবং তিনি অন্যান্য বন্দীদের সাথে বন্দী হয়ে কুফা ও সিরিয়ায় যান।
হযরত হুসনিয়া (সাঃআঃ)
তিনি ছিলেন ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর ক্রীতদাসী, যাঁকে ইমাম (আঃ) মুক্তি দান করেন। "সাহিম" নামের একজনের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁকে একটি পুত্র সন্তান দান করেন যার নাম ছিল মঞ্জাহ। হযরত হুসনিয়া (সাঃআঃ) ছিলেন ইমাম যয়নুল আবেদীন (আঃ)-এর সেবিকা। তিনি নিজের ছেলে হযরত মঞ্জাহ'কে নিয়ে ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর সাথে কারবালায় যান। হযরত মঞ্জাহ কারবালায় শহীদ হন এবং তাঁকে বন্দী করা হয়।
হযরত উম্মে ওয়াহাব (সাঃআঃ)
কারবালার সাহসী ও মুজাহিদা মহিলা, উম্মে ওয়াহাব, তিনি ছিলেন কারবালার শহীদ আব্দুল্লাহ বিন উমায়েরের স্ত্রী। তিনি স্বামীর সাথে কুফা ত্যাগ করেন এবং কারবালার পথে হোসায়নী কাফেলায় যোগদান করেন ও কারবালায় পৌঁছান। আশুরার দিন, যখন তাঁর স্বামী আব্দুল্লাহ বিন উমাইর (আঃ) জিহাদের জন্য ময়দানে কারবালায় যান, তখন তিনিও খাইমার একটি কাঠ নিয়ে বের হন, কিন্তু ইমাম হোসায়েন (আঃ) তাঁকে বলেন যে, নারীদের জন্য জিহাদ ওয়াজিব নয়। কিন্তু যখন তাঁর স্বামী শহীদ হন, তখন তিনি তাঁর জানাযায় এসে বলেন, "তোমায় জান্নাত মোবারক হোক ও ধন্য তুমি। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আমাকে যেন তোমার সাথে অন্তর্ভুক্ত করেন।" অভিশপ্ত শিমর্ তার দাস রুস্তমকে তাঁকে শহীদ করার নির্দেশ দেয়। রুস্তম তাঁর মাথায় আঘাত করে যার ফলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
অন্যা এক রেওয়ায়েতে অনুরূপ একটি ঘটনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমাইর (আঃ)-এর ব্যপারে কিছু মতপার্থক্যে সাথে উল্লেখ হয়েছে। আর কারবালায় যে মহিলা শহীদ হয়েছেন তিনি হযরত ওয়াহাবের স্ত্রী ছিলেন। যেমন আল্লামা মজলিসী (রহঃ) বিহারুল আনওয়ার নামক গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন : "ওয়াহাব বিন আব্দুল্লাহ কালবি কারবালার শহীদদের একজন। তাঁর মা ও স্ত্রী কারবালায় ছিলেন এবং শহীদ হয়েছেন।"
শেখ আব্বাস কুম্মী (রহঃ) আল্লামা মজলিসী (রহঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন : আমি একটি রেওয়ায়েতে দেখেছি যে, ইবনে ওয়াহব একজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং তিনি ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর হাতে তাঁর মায়ের সাথে মুসলমান ধর্মে ধর্মাবলম্বীত হন। তিনি তাঁর সংগ্রাম ও সাহসিকতার ফলে ওমর বিন সা'দের চব্বিশ পদাতিক বাহিনী এবং বারো জোন অশ্বারোহীকে হত্যা করেন। অবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করে উমর বিন সা'দের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। উমর ইবনে সা'দ বলে : তুমি খুব সাহসী ও পরাক্রমশালী। এরপর সে আদেশ দেয় যে, শিরশ্ছেদ করে এর শির ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর কাছে নিক্ষেপ করা হোক। তাঁর মা তাঁর শির তুলে তাঁকে চুম্বন দেন এবং ইবনে সা'দের সেনাবাহিনীর দিকে ছুঁড়ে দেন যা একজন সৈন্যকে আঘাত করে এবং সে সেখানেই মারা যায়। এরপর তিনি খাইমার একটি কাঠ নিয়ে আক্রমণ করেন এবং দুই ইয়াজীদ বাহিনীকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন। ইমাম হোসায়েন (আঃ) তাঁকে বলেন : হে উম্মে ওয়াহাব! ফিরে এসো। নারীর উপর জিহাদ ওয়াজিব নয়। উম্মে ওয়াহাব ফিরে এসে বলেন : হে আল্লাহ! আমাকে নিরাশ করবেন না। ইমাম হোসায়েন (আঃ) বলেন : আল্লাহ তোমাকে যেন নিরাশ না করেন।
সৈয়েদ ইবনে তাউস (রহঃ) উক্ত প্রসঙ্গে লিখেছেন : হযরত ওয়াহাব ইবনে জিন্নাহ কালবী তাঁর স্ত্রী ও মাকে নিয়ে কারবালায় এসেছিলেন। কিছু রেওয়ায়েতে দুটি "ওয়াহাব" এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
যাইহোক, হযরত ওয়াহাবের স্ত্রী ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর সেনাবাহিনীতে শহীদ হওয়া প্রথম মহিলা ছিলেন এবং ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ না করা পর্যন্ত ওয়াহাবের মা তাঁর থেকে সন্তুষ্ট হননি।
হযরত উম্মে খালাফ (সাঃআঃ)
হযরত উম্মে খালাফ ছিলেন প্রথম শতাব্দীর বিখ্যাত শিয়া মহিলা। তিনি ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর একজন বিশ্বস্ত সহচর, মুসলিম ইবনে আওসাজা (আঃ)-কে বিয়ে করেন। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁকে একটি পুত্র দান করেন যাঁর নাম ছিল খালাফ। তিনি তাঁর স্বামী ও ছেলের সাথে কুফা ত্যাগ করেন এবং কারবালার পথে হোসায়নী কাফেলায় যোগদান করেন এবং কারবালায় পৌঁছান। হযরত মুসলিম ইবনে আওসাজা (আঃ)-এর শাহাদাতের পর তিনি তাঁর ছেলে খালাফ'কে যুদ্ধে পাঠান। ইমাম হোসায়েন (আঃ) যখন হযরত খালাফ'কে বলেন : ফিরে যাও! তোমার মায়ের জন্য তোমার বাবার দুঃখই যথেষ্ট। তখন তিনি তাঁর পুত্রকে বলেন, "নবীর পুত্রের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ কর।" সুতরাং হযরত খালাফ রণক্ষেত্রে গিয়ে সাহসের সাথে নিজের বীরত্বের পরিচয় দিলেন। অবশেষে শত্রুপক্ষ তাঁর শরীর থেকে মাথা আলাদা করে এবং উক্ত মাথা লস্কর-এ-হোসায়নীর দিকে নিক্ষেপ করে। হযরত উম্মে খালাফ তাঁর ছেলের মাথা তুলে চুম্বন দিলেন এবং এমনভাবে নওহা পড়লেন, যা শুনে প্রতিটি হৃদয় শোকাহত ও বিষণ্ণ এবং প্রতিটি চোখ অশ্রু বর্ষণ করে।
হযরত উম্মে আমর (সাঃআঃ)
তাঁর নাম ছিল বাহরিয়া বিনতে মাসউদ আল-খাজরাজি। তিনি ছিলেন কারবালার শহীদ হযরত জুনাদা ইবনে কা'ব আনসারীর স্ত্রী। তাঁর নাম জুনাদা ইবনে হারস্ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে যিঁনি খাজরাজ গোত্রের ছিলেন। হযরত জুনাদা ইবনে কা'ব মক্কা থেকেই ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর কাফেলায় যোগদান করেন এবং আশুরার দিনে প্রথম আক্রমণেই শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর পুত্র হযরত আমর বিন জুনাদাও কারবালায় শহীদ হন। হযরত আমর ইবনে জুনাদা আনসারী ছিলেন কারবালার তরুণ শহীদদের একজন এবং যখন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন, ইমাম হুসাইন (আঃ) তখন বলেন : এই যুবকের বাবা শহীদ হয়েছেন তাই এঁর মা এঁর রণে পাঠাতে রাজি নাও হতে পারেন। হযরত আমর উত্তর দিলেন : আমার মা'ই আমাকে জিহাদ করার আদেশ দিয়েছেন এবং তিনিই আমাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছেন। হযরত আমর বিন জুনাদা যখন শহীদ হন তখন তার বয়স ৯ বা ১১ বছরের বেশি ছিল না। তাঁর শাহাদাতের পর ইয়াজিদী লস্কর তাঁর মাথা তাঁর মায়ের দিকে নিক্ষেপ করে। মা মাথা তুলে বলেন : তুমি কত সুন্দর জিহাদ করেছ, আমার ছেলে, হে আমার হৃদয়ের আনন্দ! হে আমার চোখের আলো! তারপর শত্রুর দিকে তাঁর মাথা ছুড়ে দিলেন যার ফলে একজন ইয়াজিদী সৈনিক জাহান্নাম নিক্ষেপ হয়। এরপর হযরত উম্মে আমর খাইমার একটি কাঠ তুলে রণক্ষেত্রে দিকে যান কিন্তু ইমাম হোসায়েন (আঃ) তাঁকে খাইমাতে ফিরে আসার নির্দেশ দেন এবং তিনি আবার খাইমাতে ফিরে আসেন।
হযরত রুবীহা (সাঃআঃ)
তিনি ছিলেন জনাব হানী বিন উরওয়াহ এঁর স্ত্রী। হযরত মুসলিম ইবনে আক্বীল এবং হানী ইবনে উরওয়াহ (আঃ)-এর শাহাদাতের পর তিনি এবং তাঁর ছেলে ইয়াহইয়া কুফায় আত্মগোপন করেন। যখন তাঁরা জানতে পারেন যে, ইমাম হোসায়েন (আঃ) দ্বিতীয় মহররম এ কারবালায় পৌঁছে গিয়েছেন, তখন তাঁরা মা ও ছেলে গোপনে কুফা ত্যাগ করে কারবালায় লস্কর-এ-হোসায়নীতে যোগদান করেন। হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) আশুরার দিনে শহীদ হন এবং তাঁকে বন্দী করা হয়। যদিও হযরত রুবিহা'র পিতা উমর ইবনে হাজ্জাজ কারবালায় উমর ইবনে সা'দের সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক ছিল এবং উমর সা'দ তাকে ফুরাত নদের দায়িত্ব দিয়েছিল যাতে হোসায়নী খাইমাতে পানি না পৌঁছতে পারে। কিন্তু তিনি তাঁর স্বামী জনাব হানীর পথ অবলম্বন করেন।
আল্লাহর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক কারবালার ওই সিংহ হৃদয়ের নারীদের উপর, যাঁরা তাঁদের জীবন, সম্পদ এবং সন্তানদের আল্লাহর পথে উৎসর্গ করেছেন। বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক তাঁদের স্থিতিশীলতাকে নাড়া দিতে পারেনি। উল্লেখিত মহিলারা শুধু কারবালার প্রচার করেননি বরং কারবালা নির্মাণেও মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের ভূমিকা যুগ যুগান্তর পর্যন্ত শুধু নারীদের জন্য নয়, বরং পুরুষদের জন্যও সৌন্দর্য্যের রোল মডেল হয়ে থাকবে।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁদের মারেফত এবং অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।
অনুবাদ: মাওলানা মাসুম আলী গাজী (নাজাফ ইরাক)