۶ آذر ۱۴۰۳ |۲۴ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 26, 2024
সুন্নি মনীষীদের দৃষ্টিতেও কেন ইয়াজিদ চরম ঘৃণার পাত্র?
সুন্নি মনীষীদের দৃষ্টিতেও কেন ইয়াজিদ চরম ঘৃণার পাত্র?

হাওজা / মহাশয়তান অভিশপ্ত ইয়াজিদ ও তার দলবল সব সময়ই ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পর্কে নানা ধৃষ্টতাপূর্ণ, অশালীন ও অযৌক্তিক মন্তব্য করেছে।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী,পর্ব ১- শোকাবহ মহররম মাস এখনও চলছে। কালজয়ী কারবালা বিপ্লবের মহানায়ক ও শহীদদের সর্দার ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর ৭২ জন শহীদ সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)সহ ইসলামের মহান মনীষীদের মন্তব্য আমরা তুলে ধরেছি ।

এমনকি আমরা এ বিষয়ে অনেক অমুসলিম মনীষীর প্রশংসাসূচক বক্তব্যও তুলে ধরেছি। অন্যদিকে মহাশয়তান অভিশপ্ত ইয়াজিদ ও তার দলবল সব সময়ই ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পর্কে নানা ধৃষ্টতাপূর্ণ, অশালীন ও অযৌক্তিক মন্তব্য করেছে। মহাবেয়াদব ইয়াজিদের কাছে ‘যখন ইমামের কর্তিত শির মুবারক আনা হয় তখন ইয়াজিদ তার হাতে থাকা বেতের ছড়িটি দিয়ে ওই পবিত্র শিরে খোঁচা মারতে থাকে। (হাসান বসরির বর্ণনা, ইবনে কাসিরের বই-বিদায়া ও নিহায়া। (খণ্ড -৭, পৃষ্ঠা-১২২)

ইবনে কাসির অন্য এক সূত্রে উল্লেখ করেছেন: “ইয়াজিদের হাতে একটি বেতের ছড়ি ছিল। সে তা দিয়ে হযরত হুসাইন (আ.)’র দাঁত মুবারকের ওপর প্রহার করে দাগ বসিয়ে দেয়। এরপর (অভিশপ্ত) ইয়াজিদ বলে: এর এবং আমাদের  দৃষ্টান্ত হল যেমনটি হুসাইন ইবনুল হারাম মুররি বলেছে: আমাদের কাছে শক্তিমান বহুজনের মস্তক চৌচির করে ফেলা হয় এমতাবস্থায় যে তারা ‘বড় নাফরমান’ ও ‘চরম জালিম’।

[অর্থাৎ ইয়াজিদের দৃষ্টিতে হযরত হুসাইন (আ.) ছিলেন নাকি বড় নাফরমান ও জালিম (নাউজুবিল্লাহ)। তাই তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদের পিপাসার্ত অবস্থায় হত্যার পাশাপাশি  তাঁদের লাশের ওপর ঘোড়া দাবড়িয়ে সেসবকে ছিন্ন-ভিন্ন করাসহ তাঁদের সঙ্গে যেসব বর্বর-পৈশাচিক আচরণ করা হয়েছে সেসবই ছিল তার দৃষ্টিতে যৌক্তিক!!! (নাউজুবিল্লাহ)]

অন্য বর্ণনা অনুযায়ী ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (আ.)’র কর্তিত শিরের দু’টি চোখে ও তাঁর নাসিকায় বেত্রাঘাত করেছিল। আর এ দৃশ্য দেখে রাসূল (সা.)’র সাহাবি আবু বারজা (রা.) তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইয়াজিদকে বলেন: তুমি কি তোমার ছড়ি দিয়ে হুসাইনের দাঁতের সারিতে আঘাত করে দাগ বসিয়ে দিলে? সাবধান! তোমার ছড়িটি তাঁর দাঁতের সারিতে দাগ বসিয়েছে এমন স্থানে যেখানে মুখ রেখে চুষতে দেখেছি আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে। সাবধান রোজ হাশরে তথা বিচার দিবসে তোমার শাফায়াতকারী (বিদ্রূপাত্মক অর্থে) বা সঙ্গী হবে (অভিশপ্ত) ইবনে জিয়াদ। আর হুসাইনের শাফায়াতকারী হবেন খোদ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। এ কথা বলে তিনি ইয়াজিদের দরবার থেকে বের হয়ে যান। (তাবারি এবং বিদায়া ও নিহায়া। খণ্ড যথাক্রমে ৭ ও ৫ এবং পৃ-১৯২;২৬৮ ও ৫১৬। )

ইয়াজিদ মদিনায় নিযুক্ত উমাইয়া শাসক ওয়ালিদ ইবনে উতবাকে নির্দেশ দিয়েছিল-“ হুসাইনকে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমরকে, আবদুর রহমান ইবনে আবুবকরকে ও আবদুল্লাহ ইবনে যোবাইরকে শক্তভাবে বায়আত করার জন্য পাকড়াও কর। যে-ই বায়আত তথা আমার আনুগত্য প্রকাশ করতে অস্বীকার করবে তার মাথা কেটে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও” (মাকতালই খাওয়ারিজমি, ১ম খণ্ড, ১৭৮-১৮০পৃ.)

অভিশপ্ত ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (আ.)কে শহীদ করার ঘটনার পর বলেছিল: আমার পূর্বপুরুষরা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তারা দেখতেন যে, কিভাবে আমি মুহাম্মাদের পরিবার ও (তাঁদের গোত্র) বনি হাশিমের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।  

অভিশপ্ত ইয়াজিদ এক কবিতা আবৃত্তি করে বলেছিল: আমি আহমদের (রাসূল-সা.) কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি বদর যুদ্ধের বদলা হিসেবে যা সে (তিনি) করেছিল ওই যুদ্ধে আমাদের পূর্ব পুরুষদের বিরুদ্ধে।

লম্পট ও মদ্যপ ইয়াজিদ আরো বলেছিল: মদ যদি দ্বীনে মুহাম্মাদিতে হারাম হয়ে থাকে তবে ঈসা ইবনে মারিয়মের ধর্ম তথা খ্রিস্টান ধর্মের আলোকে হালাল হিসেবে খাও!!! (তাফসিরে ইবনে মাজহারি, খ-৫, পৃ-২১১-১২) 

ইয়াজিদের এতসব কুফরি কাজ ও বর্বরতা সত্ত্বেও আজকাল ও অতীতেও নানা যুগে একদল জ্ঞান-পাপী ও অজ্ঞ (এদের অনেকই  ইয়াজিদ ও মুয়াবিয়া বা তার সঙ্গীদের বংশধর) এবং একদল সুবিধাবাদী এটা দাবি করেন যে ইয়াজিদ নাকি হুসাইন (আ.)-কে হত্যার নির্দেশ দেয়নি। বরং ইমাম ও তাঁর সঙ্গীরা শহীদ হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এবং ইবনে জিয়াদ ইমাম ও নবী-পরিবারকে হত্যা করায় ইয়াজিদ তাকে তিরস্কার করেছিল।

এটা যে আষাঢ়ে গল্প বা সত্য হয়ে থাকলেও  তা যে ইয়াজিদের প্রতারণামূলক একটি ‘অভিনয়’ বা সংক্ষিপ্ত নাটক ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা-না হলে ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (আ.) ও নবী-পরিবারের হত্যাকারীদের বিচার করে তাদের শাস্তি দিত। এ ছাড়াও  ইয়াজিদ এতটা বিবেকবান ও ভাল মানুষ হলে তার বাহিনী মক্কা ও মদীনায়ও হামলা চালিয়ে এ দুই পবিত্র শহরে হাজার হাজার সাহাবিদেরকে হত্যা করত না এবং মদীনার নারীদের ওপর গণ-ধর্ষণ চালাতে তার সেনাদের নির্দেশ দিত না। (ধর্ষিত হয়েছিল এক হাজার কুমারী মেয়ে)।মক্কা ও মদিনায় রক্ত-গঙ্গা বইয়ে দেয়ার পাশাপাশি ইয়াজিদের বাহিনী বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র রওজা সংলগ্ন মসজিদকে ঘোড়ার আস্তাবল বানিয়ে এমন পবিত্র স্থানকে ঘোড়ার মল-মূত্র দিয়ে অপবিত্র করেছে এবং তারা পবিত্র কাবা ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছিল। আর এইসব বর্ণনা নির্ভরযোগ্য সুন্নি ঐতিহাসিক সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন  মাওলানা শাহ আবদুল হক দেহলাভীর লিখিত ‘কারবালার পর পবিত্র মক্কা ও মদীনায় ইয়াজিদি তাণ্ডবলীলা’ শীর্ষক ঐতিহাসিক প্রবন্ধ)...চলবে...

লেখা: রাসেল আমেদ রিজভী

تبصرہ ارسال

You are replying to: .