হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬১ হিজরী ১০ ই মহরম পাপিষ্ঠ নরাধম কুলাঙ্গার ঈয়াযীদ বাহিনীর মর্মান্তিক হামলার কারণে কারবালাতে ইমাম হুসাইন (আঃ) , তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণ শাহাদতবরণ করেন এবং তাঁদের ছিন্নভিন্ন পবিত্র দেহ মোবারক কারবালার মরুপ্রান্তরে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকে ।
সবথেকে দুঃখজনক বিষয় যে , হত্যার সময় অসংখ্য তীর এবং বর্শার এলোপাথারি ব্যবহারের ফলে প্রতিটি দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় । হত্যাযজ্ঞের পরে শহীদগনের দেহ থেকে মস্তকগুলো সম্পূর্নরুপে বিছিন্ন করে ফেলা হয় ।
এরপরে মস্তকবিহীন ছিন্নভিন্ন প্রতিটি দেহের উপর দিয়ে শক্তিশালী ঘোড়া দাবড়ানো হয় । এরফলে প্রতিটি দেহ এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যায় যে , কে কোন ব্যক্তির লাশ বা দেহ সেটা সনাক্তকরন অসম্ভব হয়ে পড়ে । এমতাবস্থায় প্রতিজন শহীদের প্রকৃত পরিচয় সনাক্ত করে দাফন করা দুরুহ এবং অসম্ভব হয়ে পড়ে ।
সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন চলে আসে যে , মারাত্মকভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া শহীদগনের পবিত্র দেহ মোবারকগুলোর প্রকৃত পরিচয় চিন্হিত করে কে বা কারা দাফন করেন ?
তাবারীর বর্ণনামতে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার একদিন পরে অর্থাৎ ১১ই মহরম মহানবীর (সাঃ) প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র এবং তাঁর পরিবার পরিজনকে ওমর ইবনে সাদ বন্দী করে শামের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় । তখন শহীদদের পবিত্র লাশ সমূহকে বনী আসাদের লোকজন দাফন করে ।
সূত্র - তারিখে তাবারী , খন্ড ৩ , পৃষ্ঠা ৩৩৫ ।
তবে উল্লেখিত বর্ণনাটি ঠিক না হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী । কেননা যখন বণী আসাদের লোকজন কারবালার ময়দানে আসে তখন কারবালায় শহীদদের পবিত্র দেহগুলো সম্পূর্ন ছিন্নভিন্ন অবস্থায় এখানে ওখানে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়েছিল । এছাড়া হত্যাকান্ডের সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না । যেহেতু তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না তাহলে কিভাবে তারা শহীদদের ছিন্নভিন্ন লাশগুলোর সঠিক পরিচয় সনাক্ত করেছিলেন ?
বালাজুরি তার ইনসাবুল আশরাফ নামক গ্রন্থে , মাসউদি তার মুরুজুয যাহাব গ্রন্থে , শেইখ মুফিদ তার আল ইরশাদ গ্রন্থে , সৈয়দ ইবনে তাউস তার লাহুফ গ্রন্থে , ইবনে শাহর আশুব তার মানাকেবে আলে আবি তালিব গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে , চতুর্থ ইমাম সাজ্জাদের (আঃ) মাধ্যেমে কারবালার শহীদদেরকে দাফন করা হয় ।
সূত্র - ইনসাবুল আশরাফ , খন্ড ৩ , পৃষ্ঠা ৪১১ / মুরুজুয যাহাব , খন্ড ৩ , পৃষ্ঠা - ৭২ / আল ইরশাদ , খন্ড ২ , পৃষ্ঠা - ১১৪ / লাহুফ আলা কাতালিল তাফুফ , পৃষ্ঠা - ১২৫ / মানাকেবে আলে আবি তালিব , খন্ড ৪ , পৃষ্ঠা - ১১২ ।
বরং আহলে বাইতগন (আঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরা স্বচোখে বাহাত্তরজনকে শাহাদতবরণ করতে দেখেছেন এবং তাদের উপস্থিতিতেই দাফনের কার্যাদি সম্পাদিত হয়েছিল । আর এই কারনে বার ইমামীয়া শীয়াদের মতে কারবালার শহীদদের লাশ মোবারককে চতুর্থ ইমাম জয়নুল আবেদীনের (আঃ) উপস্থিতিতেই দাফন করা হয় ।
সূত্র - কাফি , খন্ড ১ , পৃষ্ঠা - ৩৮৪- ৩৮৫ / এলালুশ শারায়েহ , খন্ড ১ , অধ্যায় ১৪৮ , পৃষ্ঠা - ১৮৪ ।
ইমাম জয়নুল আবেদীনের (আঃ) নেতৃত্বে এবং বনী আসাদের লোকজনের মাধ্যেমে কারবালার শহীদদের লাশ মোবারককে দাফন করা হয়েছিল ।
সূত্র - মাকতালুল হুসাইন , পৃষ্ঠা - ৪১৪ / আল ওয়াকায়ে ওয়াল হাওয়াদেস , খন্ড ৪ , পৃষ্ঠা ৫৯- ৬১ / মুরুজুয যাহাব , খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৩ / আল-এরশাদ , খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১১৪ / তাযকিরাতুশ শুহাদা , (অনুবাদকৃত) পৃষ্ঠা-৪৪৫-৪৪৭ / আলি আকবর আলাইহিস সালাম , পৃষ্ঠা-৪৪৫ ।
কেননা ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) সহ নবী পরিবারকে ১১ই মহরম বন্দী করে কুফার দিকে প্রেরন করা হয় এবং তাঁরা ১২ই মহরম ইবনে যিয়াদের দরবারে উপস্থিত হন । পরে ইবনে যিয়াদ তাঁদেরকে বন্দীশালায় আটক করার নির্দেশ দেয় ।
তখন অর্থাৎ তৃতীয় দিন ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) ইমামতের অলৌকিক ক্ষমতায় কারবালার ময়দানে আসেন এবং বনী আসাদের সহায়তায় শহীদদের লাশ মোবারককে দাফন করেন । আর এভাবেই কারবালার মাটিতে মজলুম ইমাম হুসাইন (আঃ) , তাঁর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর সাহাবীগণ শাহাদতবরণ করে ভুমিটিকে ইসলামের একটি ঐতিহাসিক এবং পবিত্র স্থানে রূপান্তরিত করেন ।
লেখা: সাকিল আহমেদ