۲۲ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۳ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 11, 2024
ইমাম হোসায়েন (আঃ)
ইমাম হোসায়েন (আঃ)

হাওজা / ইমাম হোসায়েন (আঃ) শুধুমাত্র ইসলামের স্বার্থেই এই আত্ম বলিদান দিয়েছেন।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ১) ফরাসি গবেষক গ্যাব্রিয়েল এনক্রি "আলি ও হোসায়েন কাহেরমান এ ইসলাম" নামক গ্রন্থে : কারবালার ঘটনায় ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর অতুলনীয় উৎসর্গ ও বীরত্বের পর তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ভীতি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। উক্ত ঘটনার পরে ভয় তো দূর অস্ত তাঁর অনুসারীরা আগের চেয়েও বেশি সাহসী হয়ে উঠেছেন। (১)

২) ইরভিং আমেরিকান ঐতিহাসিক : ইরাকের কারবালা নামক ভূখণ্ডে তপ্ত সূর্যতলে ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর আত্মা ওই শুষ্ক ও নির্জন মরুভূমিতে অমর হয়ে আছে। হে আমার হিরো, হে বীরত্বের উদাহরণ আমার হোসায়েন। (২)

৩) সুপরিচিত জার্মান গবেষক, বিশ্লেষক ও অধ্যাপক কার্ল ব্রুকলম্যান : ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর শাহাদাত শিয়া ধর্মকে আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত করে তুলেছে। (৩)

৪) ইংরেজ ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড ব্রাউন : কারবালার ঘটনার পর যেখানে নবীর সন্তানকে হত্যা করা হয়েছিল, তাঁকে ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত রাখা হয়েছিল এবং তাঁর দেহকে পদদলিত করা হয়েছিল। উক্ত ঘটনা ধীরতম ধর্মাবলম্বীদেরও দুঃখিত করে তোলে এবং তাঁর সমর্থক ও অনুসারীদের মধ্যে এত দুঃখ ভরে দিয়েছে যে, তারা মৃত্যুকেও পাত্তা দেয় না। (৪)

৫) রাশিয়ান ঐতিহাসিক ইলিয়া পাভলভ পিটারশেভস্কি : ইমাম হোসায়েন (আঃ)-কে এক অসম যুদ্ধে শহীদ করা হয়। তাঁর পবিত্র শরীরে ৩৩ টি বর্শার ক্ষত এবং ৩৪ টি তলোয়ারের আঘাত লাগে এবং তাঁর সহযোদ্ধাদেরকেও উক্ত যুদ্ধে শহীদ করা হয়। (৫)

৬) বোরশো তমদাস টন্ডল : ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর শাহাদাত, বাল্যকাল থেকেই আমাকে অস্থির করে তুলেছিল। আমি ওই ঐতিহাসিক ঘটনার মাহাত্ম্য সম্পর্কে ভালভাবে জানি। ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর শাহাদাত বিশ্বব্যাপী মানবতার বিকাশ ঘটিয়েছে। সুতরাং উক্ত ঘটনার স্মৃতি স্মরণ সর্বদা বেঁচে থাকা উচিত। (৬)

৭) আর্নল্ড টোয়েন বি ইংরেজ দার্শনিক এবং ঐতিহাসিক : মুয়াবিয়া ছিল কুরাইশ পরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ, এমনকি ইমাম আলীও তার চালাকি ও ভণ্ডামি প্রতিরোধ করতে পারেননি। তাই তিনি এবং তাঁর সন্তান অসহায় অবস্থায় শহীদ হন। (৭)

৮) জেমস ফ্রেডরিক : ইমাম হোসায়েন (আঃ) এবং তাঁর সহযোগীদের শাহাদাত আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে, কিছু নীতি অপরিবর্তনীয়, যেমন ন্যায়বিচার, সহানুভূতি এবং ভালবাসা। যে কেউ এই চিরন্তন মানবিক বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধে লড়াই করবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। আর এই নীতিগুলি সর্বদা পৃথিবীতে বিদ্যমান থাকবে। (৮)

৯) ফরাসি প্রাচ্যবিদ এবং ইসলাম ও মুসলেমীন গ্রন্থের লেখক রেনো জোসেফ : শিয়ারা তাদের পাঠশালা তরবারি দ্বারা বিস্তার করেননি। শিয়া পাঠশালা তবলীগ, আযাদারী এবং ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর প্রচার ও শোকের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। আর এখন এক তৃতীয়াংশ মুসলমান নয় বরং অন্যান্য ধর্ম যেমন হিন্দু ধর্ম এবং মাজূসীও (যরোয়েস্টীর ধর্মাবলম্বী) ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর আযাদারীতে অংশ গ্রহণ করেন। (৯)

১০) চার্লস ডিকেন্স : ইমাম হোসায়েন (আঃ) যদি সত্যিই দুনিয়াবী মর্যাদা ও পদের জন্য রওনা হন, তাহলে তিনি কেন তাঁর সন্তান এবং মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে গেলেন তা বোধগম্য নয়। সুতরাং বিবেক বুদ্ধি একথা স্বীকার করে যে, তিনি শুধুমাত্র ইসলামের স্বার্থেই এই আত্ম বলিদান দিয়েছেন।

(১০)

১১) ফরাসি পণ্ডিত মরিস ডকবারি : শিয়াগণ ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর কাছ থেকে এইসব শিক্ষা অর্জন করেছে যে, কখনই কোন উপনিবেশিক এবং শোষণমূলক নিম্নমানের সরকার মেনে নেওয়া উচিত নয়। তাদের নেতা ও ইমামের মূলমন্ত্র এটাই ছিল যে, নিপীড়নের সামনে শরীর দেও কিন্তু মাথা নত কর না। (১১)

১২) লেবাননের খ্রিস্টান লেখক জর্জ জিদান : নবীর মৃত্যুর পর মানুষের মধ্যে সম্পদ ও উচ্চপদের লালসা তৈরি হয়ে পড়ে। নৈতিক মূল্যবোধ, চিন্তা এবং আ'ল-এ-আলীর চিন্তাধারা মানুষের মধ্যে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এ কারণেই কুফার লোকেরা ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর প্রতি আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করে এবং সম্পদের স্বার্থে তাঁকে শহীদ করে। (১২)

১৩) ম্যান থমাস, একজন শীর্ষস্থানীয় জার্মান পণ্ডিত : যদি কেউ যীশু খ্রীষ্ট এবং ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর আত্মত্যাগের তুলনা করে, তাহলে হোসায়েন এর আত্মত্যাগ অবশ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হবে। কারণ যেদিন খ্রীষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল অন্ততপক্ষে তাঁর পর তাঁর সন্তান ও সম্ভ্রম পরিবারের কি হবে এই চিন্তায় ছিলেন না। কিন্তু ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর সাথে ছিলেন নারী ও শিশু, যাদের মধ্যে কেউ কেউ সত্যিই খুব ছোট ছিল এবং তাদের পিতার খুবই প্রয়োজন ছিল। (১৩)

১৪) কোর্ট ফ্রেশকার জার্মান ঐতিহাসিক : ইমাম হোসায়েন (আঃ) শুধু নিজের জীবনই নয়, তাঁর সন্তানদেরও উৎসর্গ করেছিলেন। এই উৎসর্গকে আপনি জেদ বা ক্ষমতার লোভ বলতে পারবেন না। ইমাম বিবেকের অনুসারী ছিলেন এবং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এই কুরবানী দিয়েছিলেন যাতে তাঁকে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার ইচ্ছা ও বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনযাপন না করতে হয়। হোসায়েন নিজেকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক ছিলেন, তাই জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত তিনি ঘোড়া দৌড়াতে থাকেন। (১৪)

১৫) টমাস কার্লাইল, একজন ইংরেজ পণ্ডিত : ইমাম হোসায়েন (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীদের শাহাদাত থেকে বোঝা যায় যে, মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি তাঁদের পূর্ণ আস্থা ছিল। তিনি এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, সত্য এবং মিথ্যার ক্ষেত্রে কম লোক থাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই সংখ্যালঘুদের ওই সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ইমাম হোসায়েন এর ওই বিজয় অর্জন করা বোধগম্যতার বাইরে। (১৫)

১৬) মহাত্মা গান্ধী : আমি ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর জীবনী এবং কারবালার ঘটনা খুব ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছি। তা থেকে আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, যদি কোনো দেশকে বিজয় লাভের প্রয়োজন হয়, তবে তাদের উচিত ইমাম হোসায়েন কে তাদের পরামর্শদাতা বানানো। (১৬)

১৭) মিসো গিবান : কারবালার ভিতরে সংঘটিত ট্র্যাজেডি এবং ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর উপর সংঘটিত লোমহর্ষক মুসিবত, এমনকি শতাব্দী পরেও যদি কোন কঠোর হৃদয় ব্যক্তি এই ঘটনাটি পড়ে, তাহলে তার হৃদয় বদলে যাবে। (১৭)

১৮) মাদাম, দায়েরাতুল মুআরিফ ১৯ শতাব্দীর লেখক : ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর অসহায়তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল তাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশুকে উৎসর্গ করা, যা ইতিহাসে অতুলনীয়।  একটি শিশুকে পানির জন্য আনা হয় কিন্তু সেখান শত্রুরা শিশুটিকে হত্যা করে। এই কাজটি ইমাম হোসায়েন এর নিপীড়ন প্রমাণ করে এবং সারা পৃথিবীতে বনী উমাইয়া পরিবারকে অসম্মানিত করে। আর এর ফলস্বরূপ, মুহাম্মদের ধর্মকে দেওয়া হয় অনন্ত জীবন। (১৮)

১৯) ইউরোপীয় পণ্ডিত ও বিখ্যাত পুরোহিত টমাস মাসারিক : যিশু খ্রিস্টের উপরেও অনেক দুঃখ-কষ্ট দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর উপর পতিত অত্যাচারের পাহাড়ের তুলনায় তা খুবই নগন্য। (১৯)

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আ'লে মুহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ওয়াহ শুরনা মাআহুম ওয়াল আন আদুওয়াহুম।

সূত্র :

১) আলী এবং হোসায়েন দো কাহেরমান এ ইসলাম : গ্যাব্রিয়েল এনক্রি, ফারসি অনুবাদ ফোরোগ শেহাব, পৃষ্ঠা ২৮২..

২) দরসী কেহ হোসায়েন বেহ ইনসানহা আ'মোখ্ত, সৈয়েদ আব্দুল করিম হাশেমী নেজাদ, পৃষ্ঠা ৪৫১..

৩) তারিখ এ মেলাল ওয়া দৌয়োল এ ইসলামী, কার্ল ব্রোকলম্যান, হাদী জাজাইরি কর্তৃক ফার্সি অনুবাদ, পৃষ্ঠা ১০৮..

৪) আযমাত এ হোসায়েন বিন আলী (আঃ), আবু আব্দুল্লাহ যানজানি সংকলিত, পৃষ্ঠা ৪৪..

৫) ইসলাম দার ইরান, ইলিয়া পাভলোভিচ পেট্রোভস্কি, করিম কেশভার্জের ফার্সি অনুবাদ, পৃষ্ঠা ৫৪..

৬) দরসী কেহ হোসায়েন বেহ ইনসানহা আ'মোখ্ত, পৃষ্ঠা ৪৪৮..

৭) তারিখ এ তামাদ্দুন, আর্নল্ড টোয়েন বি, ইয়াকুব আযান্দ দ্বারা অনুবাদ, পৃষ্ঠা ৪৫..

৮) দরসী কেহ হোসায়েন বেহ ইনসানহা আ'মোখ্ত, পৃষ্ঠা ৪৪৯..

৯) পার তুয়ে আযমাত এ হোসায়েন, লুৎফুল্লাহ সাফি, পৃষ্ঠা ৪৪০..

১০) দরসী কেহ হোসায়েন বেহ ইনসানহা আ'মোখ্ত, পৃষ্ঠা ৪৪৮..

১১) দরসী কেহ হোসায়েন বেহ ইনসানহা আ'মোখ্ত, পৃষ্ঠা ৪৪৮..

১২) তারিখ এ তামাদ্দুন এ ইসলামী,

জর্জেস জিদান,, আলী জওহর কালামের ফার্সি অনুবাদ, পৃষ্ঠা ৬৫..

১৩) তাহরীফ শেনাসী আশুরা দার পার তু ইমাম শেনাসী, দাউদ এলহামি, মক্তব ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৩০..

১৪) ইমাম হোসায়েন (আঃ) এবং ইরান, কোর্ট ফ্রিসলার ফারসি অনুবাদ যবিহুল্লাহ মনসুরি, পৃষ্ঠা ৪৪৪..

১৫) দরসী কেহ হোসায়েন বেহ ইনসানহা আ'মোখ্ত, পৃষ্ঠা ৪৪৮..

১৬) দরসী কেহ হোসায়েন বেহ ইনসানহা আ'মোখ্ত, পৃষ্ঠা ৪৪৮..

১৭) তারিখ এ ইসলাম ওয়া আরব, আমির আলী, পৃষ্ঠা ৯৩..

১৮) চাহরা দারাখ্শা হোসায়েন বিন আলী (আঃ), আলী রব্বানী খলখালী, পৃষ্ঠা ১৩৪..

১৯) দরসী কেহ হোসায়েন বেহ ইনসানহা আ'মোখ্ত, পৃষ্ঠা ৪৫১..

লেখা: মাওলানা মাসুম আলী গাজী (নাজাফ ইরাক)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .