হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ১- হযরত ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন ( আঃ ) ৩৮ হিজরীর ৫ শাবান মতান্তরে ৩৬ হিজরীর ১৫ জুমাদাল উলা জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম সাইয়িদুশ শুহাদা ( শহীদদের নেতা ) ইমাম হুসাইন ইবনে আলী ( আঃ ) যিনি বেহেশতের যুবকদের নেতৃদ্বয়ের একজন এবং মায়ের নাম শাহরবানু ( শাহরাবানুয়াহ্ ) যিনি ছিলেন পারস্যের শেষ সাসানী সম্রাট ইয়াযদজির্দ্ ইবনে শাহরিয়ার ইবনে কিসরার ( খোসরু ) কন্যা ( দ্রঃ শেখ আব্বাস কোমী প্রণীত নেগহী বে যেন্দেগনীয়ে চাহরদাহ্ মাসূম আ. , পৃঃ ১৫৪ ) । তাঁর জন্ম সাল সম্পর্কে মতভেদ আছে যেমনঃ ৩৩ , ৩৬ ও ৩৮ হিজরী ।
তাঁর ডাকনাম ( কুনিয়াহ্ ) আবুল হাসান এবং লকব ( উপাধি ) যাইনুল আবিদীন ( ইবাদৎকারীদের শোভা ও সৌন্দর্য্য ) , যাইনুল ইবাদ ( বান্দাদের শোভা ও সৌন্দর্য্য ) , আস-সাজ্জাদ ( অত্যধিক সিজদাকারী ) এবং সাইয়িদুস সাজিদীন ( সিজদাহকারীদের নেতা ) ইত্যাদি । তাঁর শাহাদত ও ওফাৎ দিবস ৯৫ হিজরীর ১২ অথবা ১৮ মুহাররম অথবা শেখ মুফীদ ও শেখ তূসীর মতে ৯৪ হিজরীর ২৫ মুহাররম ( দ্রঃ শেখ আব্বাস কোমী প্রণীত নেগহী বে যেন্দেগনীয়ে চাহরদাহ্ মাসূম আ. , পৃঃ ১৯৬ ) । তবে মশহুর অভিমত হচ্ছে যে তিনি ১২ বা ২৫ মুহররম উমাইয়া খলীফা ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের নির্দেশে হিশাম ইবনে আব্দুল মালেক কর্তৃক গোপণে প্রদত্ত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মদীনা নগরীতে শাহাদত বরণ করেন । তাঁকে জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে যে স্হানে ( বুকআহ ) মহানবীর ( সা. ) চাচা হযরত আব্বাস ( রাঃ ) এবং তাঁর নিজ চাচা ইমাম হাসান মুজতাবার কবর রয়েছে সেখানে দাফন করা হয় ( দ্রঃ শেখ আব্বাস কোমী প্রণীত নেগহী বে যেন্দেগনীয়ে চাহরদাহ্ মাসূম আ. , পৃঃ ১৯৬ – ১৯৭ ) ।
শেখ কুলাইনী ( রহ ) ইমাম বাকির ( আ. ) থেকে রিওয়ায়ত করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ ইমাম যাইনুল আবিদীনের ( আ. ) অন্তিম মূহুর্ত্য উপস্থিত হলে আমাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললেনঃ যে বিষয়টা আমার পিতা তাঁর মৃত্যুকালে আমাকে ওয়াসিয়ত করেছিলেন ঠিক সে ওয়াসিয়তটাই আমি তোমাকে করব । আর এটা সেই ওয়াসিয়ত যা তাঁর পিতা ( ইমাম হুসাইন ) তাঁকে করেছিলেন । আর তা হচ্ছেঃ
يَا بُنَيَّ إِيَّاکَ وَ ظُلمَ مَن لَا يَجِدُ عَلَيکَ نَاصِرَاً إِلَّا اللهُ
হে বৎস্য ! ঐ ব্যক্তির প্রতি জুলুম করা থেকে বিরত থাক মহান আল্লাহ ব্যতীত তোমার বরাবরে যার কোনো সাহায্যকারী নেই ।
হযরত আবুল হাসান ( আঃ ) বলেছেনঃ ইমাম সাজ্জাদের ( আঃ ) মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান । অতঃপর তিনি চোখ খুললেন এবং সূরা-ই ওয়াকিয়াহ ( ইযা ওয়াকাআতিল ওয়াকিয়াহ ) ও সূরা-ই ফাত্হ্ ( ইন্না ফাতাহনা লাকা ) তিলাওয়াত করলেন । এরপর তিনি বললেনঃ মহান আল্লাহর সকল প্রশংসা যিনি আমাদের ( মহানবীর আহলুল বাইত ) ব্যাপারে তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন , এ পৃথিবীকে আমাদের উত্তরাধিকারে পরিণত করেছেন এবং বেহেশতের যে স্থানে ইচ্ছা আমরা সেখানে বসবাস করতে পারব । অতএব পুণ্যকারীদের পুরস্কার কতই না উত্তম ! এ কথা বলার পর পরই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । ( দ্রঃ শেখ আব্বাস কোমী প্রণীত নেগহী বে যেন্দেগনীয়ে চাহরদাহ্ মাসূম ( আ. ) , পৃঃ ১৯৭ )
৬১ হিজরী সালের ১০ মুহাররম কারবালায় পিতা ইমাম হুসাইন ইবনে আলী ( আঃ ) শাহাদত বরণ করলে ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীন ( আঃ ) ইমাম হন এবং তাঁর ইমামত কাল ৩৩ বা ৩৪ বছর স্থায়ী হয়েছিল । আর এ দীর্ঘ ইমামত কালে নিম্নোক্ত খলিফাগণ রাজত্ব করেছিলঃ
১. ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান ( ৬০ – ৬৪ হি. )
২. আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ( ৬১ – ৭৩ হি. )
৩. মুয়াবিয়া ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান ( ৬৪ হিজরীর কয়েক মাস )
৪. মারওয়ান ইবনে হাকাম ( ৬৫ হি. সালে ৯ মাস রাজত্ব করেছিল )
৫. আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান ( ৬৫ হি. – ৮৬ হি. )
৬. ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক ( ৮৬ হি – ৯৬ হি. )
কারবালায় ইমাম হুসাইনের শাহাদত কালে ইমাম যাইনুল আবিদীন ( আঃ ) তীব্র অসুস্থ ছিলেন বলে তিনি যুদ্ধের ময়দানে যান নি । আসলে মহান আল্লাহ তাঁকে অসুস্থ করে রেখে নিহত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা এবং পৃথিবীর বুকে মহানবীর ( সা. ) আহলুল বাইতের ইমামদের বংশধারা ও পরম্পরার সংরক্ষণ করেছিলেন । এ ঘটনার পর তিনি তাঁর দীর্ঘ ৩৪ বছর ইমামত কালে অন্য সকল ইমামের মতো শারীরিক ভাবে সুস্থ ছিলেন ।...চলবে...
লেখা: মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান