۱۶ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۶ شوال ۱۴۴۵ | May 5, 2024
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )

হাওজা / হযরত ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন ( আঃ ) ৩৮ হিজরীর ৫ শাবান মতান্তরে ৩৬ হিজরীর ১৫ জুমাদাল উলা জন্ম গ্রহণ করেন ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী,  পর্ব ৩- কারবালার ঘটনার পরে বনী উমাইয়া খিলাফত কর্তৃক গোটা মুসলিম বিশ্বে এক অতি ভয়ঙ্কর বিভীষিকাময় শ্বাসরুদ্ধকর কঠিন দমনমূলক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় । কারবালায় ইমাম হুসাইন এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদের হত্যা এবং নবী পরিবারের নারী ও শিশুদের বন্দী করে আসলে বনী উমাইয়া মহানবীর ( সা. ) আহলুল বাইত ( আঃ ) এবং তাঁদের অনুসারীদের সকল আন্দোলনের উপর চরম মারণাঘাত হানে ।

ইমাম হুসাইনের ( আঃ ) শাহাদতের এ খবর গোটা মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে ইরাক ও হিজাযে আহলুল বাইতের অনুসারীদের মাঝে চরম ভয়ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করেছিল । আর হিজরী ৬৩ সালের যিলহজ্জ মাসে পবিত্র মদীনা নগরীর অদূরে ( দুই কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত ) হাররায় ইয়াযীদী সেনাবাহিনীর হাতে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হলে এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও বিভীষিকা আরো তীব্রতর হয় । (( হাররার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ হিজরী ৬৩ সালে ইয়াযীদের কাছে সংবাদ পৌঁছায় যে মদীনাবাসীরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং তাকে খিলাফত থেকে অপসারণ করেছে । তাই সে এক বিশাল সেনাদল মদীনাভিমুখে প্রেরণ করে তাদেরকে মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং তাদেরকে দমন করার পর ইবনে যুবাইরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মক্বাভিমুখে রওয়ানা হবার আদেশ দেয় । অতঃপর উক্ত সেনাদল এসে পৌঁছলে তাইবার ফটকের কাছে হাররার ঘটনা সংঘটিত হয় আর হাররার ঘটনাটা যে কী তা কি আপনাদের জানা আছে .. হাসান তা উল্লেখ করে বলেছেনঃ মহান আল্লাহর শপথ ! তাদের ( ইয়ায়ীদী সেনাদল ) হাত থেকে কেউ রেহাই পায় নি ।

সাহাবা ( রাঃ ) ও অন্য সকল শ্রেণীর মধ্য থেকে এক বিরাট সংখ্যক জনতা এ ঘটনায় নিহত হয়েছিল । মদীনা নগরী লুন্ঠিত হয় এবং এক হাজার কুমারী মেয়ে ধর্ষিত হয় । ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন । মহানবী ( সা. ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদীনাবাসীদেরকে ভয় দেখাবে মহান আল্লাহ তাকে ভয় দেখাবেন ( সহীহ মুসলিম ) ইয়াযীদ পাপাচারে সীমাতিক্রম করেছিল বিধায় মদীনাবাসীরা তাকে ( ইয়ায়ীদ )  খিলাফতোর পদ থেকে পদচ্যুত করেছিল ।

   ওয়াকিদী বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা আল-ঘাসীল বলেছেনঃ মহান আল্লাহর শপথ ! আসমান থেকে আমাদের উপর প্রস্তর বর্ষিত হওয়ার ভয় পাওয়া ও আশংকা হওয়া পর্যন্ত আমরা ইয়াযীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি নাই । কারণ , সে এমন এক ব্যক্তি যে নিজ পিতার সন্তানজন্মদাত্রী দাসীদের সাথে , নিজ কন্যা সন্তানদের সাথে , নিজ ভগ্নিদের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় , ( প্রকাশ্যে ) মদ্য পান করে এবং নামায তরক ( ত্যাগ ) করে ।

   যাহাবী বলেছেনঃ মদ্যপান ও জঘন্য গর্হিত কাজ করার পাশাপাশি  ইয়াযীদ মদীনাবাসীদের সাথে যখন অত্যন্ত অন্যায় আচরণ ও কার্যকলাপ করল তখন মদীনার জনগণ তার উপর ক্ষেপে ও কঠোর হয়ে গেল এবং অনেকেই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল । আর মহান আল্লাহ তার আয়ুষ্কালে কোনো বরকত দেন নি ( ইয়াযীদ খুব অল্প বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হয় ) এবং হাররার হত্যাযজ্ঞ সৃষ্টিকারী ইয়ায়ীদী সেনাবাহিনী ইবনে যুবাইরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মক্কাভিমুখে রওয়ানা হয়ে যায় । অতঃপর পথিমধ্যে ইয়াযীদী সেনাবাহিনীর আমীরের ( সেনাপতি ) মৃত্যু হলে ঐ সেনাদলের জন্য আরেকজন নতুন আমীর তার স্থলাভিষিক্ত হয় ।উক্ত সেনাদলটি মক্কায় পৌঁছে ইবনে যুবাইরকে ঘিরে ফেলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং মিনজানীক দিয়ে অগ্নিগোলা নিক্ষেপ করতে থাকে । আর এ ঘটনাটা ৬৪ হিজরীর সফর মাসে সংঘটিত হয় । আর ইয়াযীদী সেনাবাহিনীর অগ্নিগোলা নিক্ষেপের কারণে পবিত্র কাবার পর্দা , ছাদ এবং যে মেষ ( کَبش ) ইসমাঈলের পরিবর্তে মহান আল্লাহ কোরবানী করিয়েছিলেন সেটার দুই শিং যা কাবার ছাদে সংরক্ষিত ছিল তা পুড়ে যায় । আর মহান আল্লাহ ঐ বছরের ( ৬৪ হিজরী ) ১৫ রবীউল আওওয়ালে ইয়াযীদের মৃত্যু ঘটান ।  ...... )) ( দ্রঃ আল্লামা সুয়ূতী প্রণীত তারীখুল খুলাফা , পৃঃ ২০৯ )

   ইয়াযীদ ছিল স্ফূর্তিবাজ এবং শিকারী পাখী , কুকুর , বানর এবং নেকড়ে বাঘ নিয়ে খেলাধূলা ও ক্রীড়ায় আসক্ত ও মত্ত ব্যক্তি । সে ছিল তীব্র মদাসক্ত ( মদ্যপ ) । একদিন সে তার মদ্যপানের আসরে উপবিষ্ট ছিল এবং তখন তার ডান পাশে ছিল ইবনে যিয়াদ । আর এটা ছিল ইমাম হুসাইনের হত্যা ও শাহাদত বরণের পরে ( দ্রঃ মাসঊদী প্রণীত , মুরূজুয যাহাব , খঃ ৩ , পৃঃ ৭৭ , দারুল মারিফাহ , বৈরূত , লেবানন )

   ইয়াযীদের সহচর ও কর্মকর্তাদের উপর ইয়াযীদের লাম্পট্য ও পাপাচার প্রাধান্য বিস্তার করে । ইয়াযীদের শাসনামলে পবিত্র মক্কা ও মদীনায় গান – বাজনার আবির্ভাব ও প্রচলন হয় এবং খেলার স্থান ও রঙ্গশালার প্রসার লাভ করে । লোকেরা প্রকাশ্যে মদ্য পান করতে থাকে । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত )

    ইয়াযীদ এবং তার প্রশাসনিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের অন্যায় ও অত্যাচার জনগণকে ছেয়ে ফেললে ও আচ্ছন্ন ( জর্জরিত ) করলে , রাসূলুল্লাহর ( সা. ) দৌহিত্র হুসাইন ( আ. ) ও তাঁর সংগী-সাথীদেরকে হত্যা ও শাহাদতের কারণে ইয়াযীদের পাপাচারী ও ফাসিক হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেলে , ইয়াযীদ প্রকাশ্যে মদপান করলে এবং ফিরআওনের জীবন যাপন পদ্ধতি তার ( ইয়াযীদ ) জীবন যাপন পদ্ধতি হলে – বরং নিজ প্রজাকুলের ক্ষেত্রে  ফিরআওন ছিল তার ( ইয়াযীদ ) চেয়ে অধিক ন্যায়পরায়ন এবং তার নিজের ঘনিষ্ঠ ও সর্বসাধারণ জনতার ব্যাপারে সে ( ফিরআওন ) ছিল ইয়াযীদের চেয়েও অধিক ইনসাফকারী – মদীনার অধিবাসীরা তাদের উপর ইয়াযীদের নিযুক্ত শাসনকর্তা উসমান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবী সুফিয়ান , মারওয়ান ইবনে হাকাম এবং সকল বনী উমাইয়াকে মদীনা থেকে বের করে দেয় । আর এটা ছিল ইবনে যুবাইরের  ধার্মিক হওয়া এবং নিজের জন্য খিলাফত দাবী করার ( অর্থাৎ নিজেকে খলীফা বলে ঘোষণা করা ) কারণে । আর এটা ঘটেছিল ৬৩ হিজরী সালে । স্মর্তব্য যে , ইবনে যুবাইরের অনুমতি ক্রমে মদীনাবাসীরা বনী উমাইয়া এবং ইয়াযীদের নিযুক্ত শাসনকর্তাকে পবিত্র মদীনা থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছিল । বনী উমাইয়ার মধ্য থেকে মারওয়ান ইবনে হাকাম উদ্ভূত এ অবস্থার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে । কারণ , তাদেরকে ( বনী উমাইয়া ) ধরে ইবনে যুবাইরের কাছে ( মক্কায় ) প্রেরণ করা হয় নি । তাই তারা ( বনী উমাইয়া ) দামেশকের দিকে দ্রুত গতিতে তাদের যাত্রা অব্যাহত রাখে । মারওয়ান মদীনাবাসীদের এ কর্মকে বনী উমাইয়ার সাথে এবং ইয়াযীদের নিযুক্ত শাসনকর্তাকে ইয়াযীদের সাথে জুড়ে দিয়ে তাদেরকে উস্কাতে থাকলে ইয়াযীদ মদীনাবাসীদের দিকে শামদেশীয় সেনা বাহিনীকে মুসলিম ইবনে উকবার নেতৃত্বে প্রেরণ করে যে মদীনাবাসীদেরকে ভয় দেখিয়েছিল , মদীনা নগরী লুন্ঠন , মদীনাবাসীদেরকে হত্যা এবং মদীনাবাসীদের কাছ থেকে এই শর্তে বলপূর্বক  বাইআত আদায় করেছিল যে তারা সবাই ইয়াযীদের ক্রীত দাস । আর সে মদীনার নামকরণ করেছিল নাতিনাহ ( পচা দুর্গন্ধময় নগরী ) অথচ রাসূলুল্লাহ ( সা. ) এ নগরীর নামকরণ করেছিলেন তাইবাহ ( পুতঃপবিত্র নগরী ) এবং বলেছিলেনঃ যে ব্যক্তি মদীনা নগরীকে ভীত সন্ত্রস্ত করবে ও ভয় দেখাবে মহান আল্লাহ তাকে ভয় দেখাবেন ও ভীতসন্ত্রস্ত করবেন । অতঃপর তিনি ( সা. ) এই মাল্ঊন ( অভিশপ্ত ) মুসলিম ইবনে উকবাকে তার কৃত কর্মের জন্য মুজরিম ( অপরাধী ) ও মুসরিফ ( চরম অপব্যায়কারী , সীমালংঘনকারী ও বাড়াবাড়ীকারী ) বলে আখ্যায়িত করেছিলেন ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ৭৮ ) । ...চলবে…

লেখা: মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান

تبصرہ ارسال

You are replying to: .