۱۶ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۶ شوال ۱۴۴۵ | May 5, 2024
আপেল গরীব মানুষের টমেটো
আপেল গরীব মানুষের টমেটো

হাওজা / আপেল গরীব মানুষের টমেটো !! খুব অবাক হচ্ছেন তাই না । কারণ আমরা ছোট বেলায় স্কুলের পাঠ্য বিজ্ঞান বইতে পড়তাম : Tomato is poor man's apple .

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ( গরীবের আপেল হচ্ছে টমেটো ।) তাহলে ভুল হয়ে গেল নাকি ?! মনে হচ্ছে কোথাও কোনো গোলমাল হয়ে গেছে নিশ্চয় । টমেটোর জায়গায় আপেল আর আপেলের জায়গায় টমেটো হয় নি তো ?! কি জানি ? কিন্তু আজ ( ৯-১২-২০১৯) ফল ও তরি তরকারির দোকানে দেখলাম টমেটো কে. জি ১১০০০ তূমান ( ৭০ - ৮০ টাকা ) এবং সোনালী ( হলুদ) আপেল কে . জি ৩৮০০ তূমান ( ২৩ - ২৭ টাকা ) ।

তাই আমরা যে স্কুলের বিজ্ঞান ব ইতে পড়েছিলাম : গরীব মানুষের আপেল হচ্ছে টমেটো (Tomato is poor man's apple)তা কি হবে ?! এখন থেকে কি বলব : গরীব মানুষের টমেটো হচ্ছে আপেল ( Apple is poor man's tomato) !! না না বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ কথাটা প্রযোজ্য তবে তা ইরানের প্রেক্ষাপটে নয় ।

কারণ বাংলাদেশে আপেল একদম হয় না কিন্তু টমেটো প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় । আর সবসময়  আপেল এ দেশে আমদানি করা হয় বলে  আপেলের দাম এ দেশে সবসময় ছিল অত্যন্ত চড়া এবং এ কারণে তা বাংলাদেশে গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরেই ছিল । আর বর্তমানেও তথৈবচ । তবে  Tomato is poor man's apple  - এ কথাটা ব্রিটেনের প্রেক্ষাপটে কেমন ? আর ব্রিটেন ও ইরানের মধ্যে পারস্পরিক তূলনার  ভিত্তিতেই বা Tomato is poor man's apple - এ কথাটার গুরুত্বই বা কতটুকু ? ( ( গুরুত্ব বলতে টমেটো বা আপেলের খাদ্য মান বা গুণ বুঝাই নি ; তবে সেটার বাহাস ( আলোচনা) স্বতন্ত্র ভাবেই করতে হবে যা এখানে এখন সম্ভব নয় । আর  এ আলোচনায় 'গুরুত্ব' শব্দটি ক্রেতার আর্থিক সামর্থ্য ও ক্রয় ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট যা গরীবের বা গরীব মানুষের ( poor man's) - এ বাক্যাংশ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় । ))

যে সময় Tomato is poor man's apple - এই প্রবাদ বাক্যটির উৎপত্তি হয়েছিল সে সময়টায়  ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল বিশ্ব ব্যাপী তার বিস্তার , ধন-দৌলত (ঐশ্বর্য) , দাপট ও ক্ষমতার তুঙ্গে । বলা হত তখন : ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্যাস্ত হত না । আপেল ইরান ও ব্রিটেনের নেটিভ বা দেশীয় ফল যা  হাজার হাজার বছর ধরে এ দেশগুলোয় জন্মাচ্ছে ( উৎপন্ন হচ্ছে ও  ফলছে  )। তবে টমেটো দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ইউরোপে আনা হয় কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের পর অর্থাৎ মাত্র কয়েক শো বছর আগে । আর ইরানে এ ফল বা তরকারির চাষ শুরু হয় গত শতাব্দীর প্রথম দিকে  অর্থাৎ ইউরোপেরও অনেক পরে । কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যবাদী ধনী দেশ ব্রিটেনের সাধারণ জনগণ ও অধিবাসীদের কাছে তখন আপেল ছিল বিলাসিতার প্রতীক একটি  দামী ফল বা খাবার যা ছিল তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে বরং টমেটো ছিল  তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে । আর এ থেকে বোঝা যায় যে  তখনকার( ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বাদের বিশ্বব্যাপী শাসন , শোষণ, আধিপত্য , প্রতাপ ,দাপট ও লুটপাট চালানোর স্বর্ণযুগে ) ব্রিটেনের সাধারণ জনসাধারণের অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রকট চিত্র খুব ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে  গরীব মানুষের আপেল হচ্ছে টমেটো ( Tomato is poor man's apple) - এ প্রবাদ বাক্য থেকে । আর ইরানে বিভিন্ন শীত ঋতুর ফলসহ আপেলের প্রাচুর্য সেই সুদূর অতীত কাল থেকেই । ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই প্রচুর পরিমাণে আপেল খেয়ে থাকে এ ফলটির মৌসুমে । আপেলের ঘাটতি ইরানে যেমন অতীতেও ছিল না তেমনি বর্তমানেও নেই । সব যুগেই  আপেল ইরানের সাধারণ জনগণ এমনকি গরীব জন গোষ্ঠীরও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই ছিল যার ঠিক উল্টো টি আমরা দেখতে পাই  ব্রিটেনে ঐ সময় অর্থাৎ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বব্যাপী বিস্তার ও আধিপত্যের স্বর্ণযুগে । কারণ উক্ত প্রবাদ বাক্যটির উৎপত্তি হয়েছিল ঠিক তখনই অর্থাৎ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ক্ষমতা ও দাপট যখন তুঙ্গে ছিল ঠিক তখন ।

আপেল ইরান কেন সমগ্র বিশ্ব ব্যাপী জনপ্রিয় ও সমাদৃত ফল এবং সকল ফলের সেরা বলে গণ্য ও প্রসিদ্ধ । তাছাড়া এ ফলটি বনেদী ও অভিজাত্যেরও প্রতীক । যে সব দেশে এ ফলটি উৎপাদিত হয় সে সব দেশে এ ফল  অতিথি আপ্যায়ন করতে  পরিবেশন  করা হয়  । ঐ সব দেশে অতিথি এলে তাকে এ ফলটির মৌসুমে আপেল দিয়ে আপ্যায়ন না করলে যেন অতিথির প্রতি অসম্মান করা হয়েছে বলে গণ্য হয় । অথচ টমেটোর এ ধরণের সামাজিক স্ট্যাটাস ও আভিজাত্য নেই । তাই আপেলের মতো টমেটো পরিবেশন করে কোনো দেশেই কোনো কালেও অতিথি আপ্যায়ন করা হয় নি । আর বর্তমানেও এটা করা হয় না । কিন্তু যে দেশে টমেটো হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আপেল সে দেশে সাধারণ জনগণ কোন্ ফল দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করত আপেল দিয়ে না টমেটো দিয়ে ?!!! তা হলে এ দেশটির দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিশ্চয় অতিথি  আপ্যায়ন করতে গেলে বিশেষ আর্থিক সংকট ও অনটনে পড়তে হত তাও আবার দেশটির বিশ্বব্যাপী আধিপত্য ও প্রভুত্ব বিস্তার এবং পদানত জাতি সমূহের ধনসম্পদ লুন্ঠনের স্বর্ণযুগে  ( বাংলাদেশের জন্য এটা প্রযোজ্য নয় । কারণ, বাংলাদেশে আপেল উৎপন্ন হয় না । বরং টমেটো প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় এ দেশে । আর ঐ সময় বাংলাদেশও ছিল ব্রিটিশ শাসনাধীন ) । বিশ্বব্যাপী সম্পদের হরি লুট করে ব্রিটেনে সেই লুট করা সম্পদের পাহাড় বানিয়েও  সে দেশের  সাধারণ মানুষের দারিদ্র কেন ঘুচে নি বরং দারিদ্রের কারণে আপেল তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ছিল বলেই তো ব্রিটিশ রাজ ব্রিটিশ প্রজাদেরকে আপেলের বদলে টমেটো নিয়ে তুষ্ট রাখার জন্য Tomato is poor man's apple ( টমেটো গরীব মানুষের আপেল !!!) - এ প্রবাদ টি বেশ সুকৌশলে প্রচার করেছে । একেই বলে ব্রিটিশ পলিটিক্স বা ব্রিটিশদের চিকন বুদ্ধি । আর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ব্রিটেন বা ইউরোপে টমেটো না এলে তাহলে কোন্ ফল বা জিনিসকে গরীবের আপেল আখ্যা দেয়া হত ? কারণ শিল্প বিপ্লব, প্রযুক্তি ও ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নতি ও প্রসারের পরেও ব্রিটিশ গরীব কাঙ্গালদের আপেল খাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য ছিল না । তাদেরকে টমেটো খেয়ে আপেল খাওয়ার তৃপ্তি পেতে হত!! সত্যি এটা পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের পর ৮ম আশ্চর্য বলে অভিহিত করা যায় কি ? !!

আর এর চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাণ্ডজ্ঞান ( অর্থাৎ এটা ৯ ম আশ্চর্যের বিষয় )। মনে হয় যেন  লন্ডনে বৃষ্টি হলে তারা ঢাকায় বা কলকাতায় ছাতা ধরেন । কারণ , ব্রিটিশ শাসিত বাংলার স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটেনের এ প্রবাদটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল যা পাকিস্তান আমল পেরিয়ে বাংলাদেশ আমলেও আমরা স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বিশেষকরে বিজ্ঞানের বইয়ে পড়েছি । আর আমাদের শিক্ষাবিদরা সেটার আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট বিচার ও যাচাই বাছাই না করেই ব্রিটিশদের শেখানো অদ্ভূত এই স্ত্রোতটি অবলীলায় যপেছেন । আর এ রকম অনেক বিষয় ও জিনিস আছে যা ব্রিটিশরা আমাদেরকে শিখিয়েছে । আর সেগুলো ঐতিহাসিক , আদর্শিক, সামাজিক , নৈতিক, সাংস্কৃতিক এমনকি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও বাস্তবতার নিরিখে পরখ না করেই আমরা যত্রতত্র বলে বেড়াচ্ছি ।

ইরানে যখন আপেল ও টমেটোর মূল্যমানে এত ব্যবধান ( এক কে.জি টমেটোর দাম = ৩ কে .জি আপেলের দাম) তখন ইরানীরা কি আপেলের বদলে টমেটো পরিবেশন করে অতিথি আপ্যায়ন করবে এবং বলবে  : Apple is poor man's tomato ?!!

বাংলাদেশ ও ভারতে পিঁয়াজের দাম অতি চড়া ( ঐ সময় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে )। বিশেষ করে ভারতীয়রা কি বলবে : Apple is poor man's onion ?!!! কারণ নিশ্চয়ই ভারতে বর্তমানে আপেল পিঁয়াজের চেয়ে সস্তা !

উল্লেখ্য যে , ইরানে শীত মৌসুমে প্রায়ই টমেটোর চেয়ে আপেলের দাম কম থাকে ।

এই প্রোভার্বের আক্ষরিক অর্থ নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে । শুধু ১টা আপেল দৈনিক খেলে ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে না চললে স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে ?!!! সার্বিক জীবন যাত্রা ( লাইফ স্টাইল ) ঠিক রেখে একটা আপেল দৈনিক খেলে তখন এর স্বাস্থ্যকর সুফল পাওয়া যাবে । এরা ( আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমর্থকরা ) এ প্রোভার্বটার আক্ষরিক অর্থের দিকেই শুধু দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ।

 এই গত দু'দিন আগে ভালো মিষ্টি সুস্বাদু আপেল কিনেছি কে . জি. ৯০০০ তূমান রেটে ; অথচ ঐ দিন গাজরের দাম ছিল প্রতি কে.জি ২২০০০ তূমান অর্থাৎ এক কে.জি গাজরের মূল্য প্রায় আড়াই কেজি আপেলের সমান !! তাই এখন কি ইরানীরা বলবে : "  অ্যাপেল ইয্ পুওর মেন'স ক্যারোট " ? !!  । আর বাসায় অতিথি আসলে ইরানীরা আপেলের বদলে গাজর দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করবে ?!! কারণ আপেলের চেয়ে গাজরের দাম বেশি এবং সবচেয়ে দামী খাবার ও ফল দিয়েই সাধারণত : অতিথি আপ্যায়ন করে থাকে সবাই এবং এটাই রেওয়াজ ।

 

( মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান)

 

تبصرہ ارسال

You are replying to: .