۱۶ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۶ شوال ۱۴۴۵ | May 5, 2024
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের ( আঃ )

হাওজা / হযরত ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন ( আঃ ) ৩৮ হিজরীর ৫ শাবান মতান্তরে ৩৬ হিজরীর ১৫ জুমাদাল উলা জন্ম গ্রহণ করেন ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৮- উমাইয়া প্রশাসন ও খিলাফত ব্যবস্থার কর্ণধারদের প্রকৃত স্বরূপ উম্মোচিত হলে এ শাসনব্যবস্থার স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে যাবে ।

     হযরত সালমান , সুহাইব ও বিলালের (রা.) দৃষ্টিতে আবূ সুফিয়ানঃ এ ক্ষেত্রে সহীহ মুসলিমের এ হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য । হাদীসটিঃ

    হযরত আয়েয ইবনে আমর ( রা. ) থেকে বর্ণিত আছে যে ১০ জনের কম এক সমাবেশে উপবিষ্ট হযরত সালমান , সুহাইব ও বিলালের কাছে আবূ সুফিয়ান আগমন করলে তারা বললেনঃ খোদার শপথ ! আল্লাহর শত্রুর গর্দান আল্লাহর তরবারিসমূহ কর্তন করে নি ! তিনি ( আয়েয ) বলেনঃ অতঃপর আবূ বকর বললেনঃ আপনারা কি কুরাইশদের শেখ ( গণ্যমান্য বয়োজ্যৈষ্ঠ ব্যক্তি ) এবং তাদের সাইয়িদকে ( নেতা ) বলছেন ? অতঃপর তিনি ( হযরত আবূ বকর – রাঃ ) মহানবীর ( সা. ) কাছে এসে তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করলে তিনি ( সা. ) বললেনঃ হে আবূ বকর ! সম্ভবতঃ তুমি তাদেরকে রাগিয়েছ । আর যদি তুমি তাদেরকে রাগিয়ে থাক তাহলে তুমি অবশ্যই তোমার প্রভুকে রাগিয়েছ ও অসন্তুষ্ট করেছ । অতঃপর আবূ বকর তাদের ( সালমান , সুহাইব ও বিলাল – আ. - ) কাছে এসে তাদেরকে বললেনঃ হে আমার ভাইয়েরা ! আমি কি তোমাদেরকে রাগিয়েছি ?  তাঁরা বললেনঃ না , বরং হে ভাই ! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিন ( সহীহ মুসলিম , বাব মিন ফাযায়েল-ই সালমান , সুহাইব ওয়া বিলাল – রা. - , হাদীস নং ৬৪৪১ , পৃঃ ৯৪৩ ) । এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে হযরত সালমান , সুহাইব ও বিলালের মতো জলীলুল কদর সাহাবাদের কাছে আবূ সুফিয়ান ইবনে হারব ইবনে উমাইয়া আল্লাহর দুশমন বলে গণ্য হত এবং মহানবী ( সা. ) ও তাদের অভিমত সমর্থন করেছেন । কারণ , মহানবীকে এসে আবূ বকর সালমান সুহাইব ও বিলাল যে আবূ সুফিয়ানকে আল্লাহর দুশমন বলে অভিহিত করেছে এবং আল্লাহর দুশমনটার গর্দান আল্লাহর তরবারি সমূহ কর্তন করে নাই – এ কথা তারা আবূ সুফিয়ানকে বলেছে এবং তিনি যে আবূ সুফিয়ানকে কুরাইশদের শেখ ও তাদের সাইয়িদ (নেতা) বলেছেন এবং তাদেরকে যে তিনি প্রতিবাদস্বরূপ বলেছেনঃ “ আপনারা এ কথা কি কুরাইশদের শেখ ও তাদের সাইয়িদকে ( নেতা ) বলছেন ? “ তা বললে মহানবী সা. তার কথা প্রত্যাখ্যান এবং সালমান , সুহাইব ও বিলালের কথা ও নীতিঅবস্থান সমর্থন করেন যার প্রমাণ হচ্ছে রাসূলের এ উক্তিঃ হে আবূ বকর ! সম্ভবতঃ তুমি তাদেরকে রাগিয়েছ । আর যদি তুমি তাদেরকে রাগিয়ে থাক তাহলে তুমি অবশ্যই তোমার প্রভুকে রাগিয়েছ ও অসন্তুষ্ট করেছ ।

    তাই এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে রাসূলুল্লাহ ( সা. ) এবং সালমান , সুহাইব ও বিলালের মতো সাহাবাদের কাছে আবূ সুফিয়ান আল্লাহর শত্রু বলে গণ্য হলেও হযরত আবূ বকরের মতো ব্যক্তিদের কাছে আবূ সুফিয়ান কুরাইশদের শেখ ( গণ্যমান্য বয়োজ্যৈষ্ঠ্য সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ) ও তাদের সাইয়িদ ( নেতা ) বিবেচিত হতেন । আর হযরত আবূ বকর ছিলেন কুরাইশ গোত্রের শ্রেষ্ঠত্ব ও কুরাইশী অভিজাততন্ত্রের প্রবক্তা যা পেশ করেই তিনি সাকীফার দিবসে আনসারদেরকে খিলাফতের দাবি পরিত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন এ কথা বলেঃ কিন্তু এ যে খিলাফতের ব্যাপার , তা কুরাইশ ব্যতীত অন্যের জন্য স্বীকৃতি দেয়া যায় না । কারণ তারা ( কুরাইশ ) হচ্ছে খান্দান ও আবাস ভূমির দিক থেকে সর্বোত্তম আরব ।“ ( দ্রঃ সহীহ বুখারী , খঃ ৬ . কিতাবুল মুহারিবীন , হাদীস নং ৬৩৫৭ , আধুনিক প্রকাশনী , ঢাকা )

কুরাইশ অভিজাততন্ত্র ও গোত্রের শ্রেষ্ঠত্বই ছিল হযরত আবূ বকর ও তাঁর সতীর্থদের দৃ্ষ্টিতে খলীফা হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি ও শর্ত । কারণ তারা রাসূলুল্লাহর জ্ঞাতি ও আত্মীয় । তাকওয়া , পরহেযগারী , জ্ঞান , সততা , ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামিতা , জিহাদ , আত্মত্যাগ ( ঈসার )ইত্যাদি খলীফা হওয়ার জন্য শর্ত ও যোগ্যতার মাপকাঠি বলে আর বিবেচিত হয় নি কুরাইশ গোত্রতন্ত্র , শ্রেষ্ঠত্ব ও অভিজাতবাদের প্রবক্তাদের কাছে । আর ঠিক এ মতবাদই পরবর্তীতে বনী উমাইয়াকে খিলাফত কুক্ষিগত করার সুযোগ করে দেয় । তাই আমরা দেখতে পাই যে হযরত আবূ বকর খলীফা হয়েই আবূ সুফিয়ান ও তার সন্তানদেরকে ক্ষমতায় অংশীদার করেন । কারণ, মহানবী ( সা. ) , সালমান , সুহাইব ও বিলাল যেমন আবূ সুফিয়ানকে আল্লাহর দুশমন মনে করতেন ঠিক তেমনি তিনি তাকে আল্লাহর দুশমন মনে করতেন না বরং তাকে তিনি কুরাইশদের শেখ ও সাইয়িদ বলেই জানতেন । আল্লামা সুয়ূতী তারীখুল খুলাফা গ্রন্থে লিখেছেনঃ আর যখন হযরত আবূ বকর শামদেশে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন তখন মুয়াবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান তার ভাই ইয়াযীদ ইবনে আবূ সুফিয়ানের সাথে ( শামদেশ ) গমন করেন । ইয়াযীদ ইবনে আবূ সুফিয়ান মারা গেলে তিনি ( আবূ বকর ) তাকে ( মুয়াবিয়া ) দামেশকের শাসনকর্তার পদে ( তার ভাইয়ের ) স্থলাভিষিক্ত করেন । অতঃপর হযরত উমর তাকে ( মুয়াবিয়া ) দামেশকের শাসনকর্তার পদে বহাল রাখেন । অতঃপর খলীফা উসমানও তাকে দামেশকের শাসনকর্তার পদে বহাল রাখেন এবং সমগ্র শামদেশ তার শাসনাধীন করে দেন । তাই তিনি ( মুয়াবিয়া ) ২০ বছর আমীর ( প্রাদেশিক শাসনকর্তা ) রূপে ২০ বছর এবং খলীফা হিসেবে ২০ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করেন  ( দ্রঃ তারীখুল খুলাফা , পৃঃ ১৯৫ ) । আর এ ভাবে প্রথম তিন খলীফা –ই রাশিদ ( হযরত আবূ বকর , হযরত উমর ও হযরত উসমান – রাঃ - ) বনী উমাইয়া বিশেষ করে আবূ সুফিয়ান ও তার সন্তানগণের ক্ষমতায়ন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার রঙ্গমঞ্চে তাদেরকে পুনর্বাসিত ও প্রতিষ্ঠিত করেন যার ফলে পরবর্তীতে দামেশকের শাসনকর্তা মুয়াবিয়া খিলাফত দখলের লক্ষ্যে ৪র্থ খলীফা হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ , অস্ত্রধারণ ও যুদ্ধ করেন । অথচ প্রথম তিন খলীফা-ই রাশিদের আমলে বনী হাশিম ও রাসূলুল্লাহর আহলুল বাইত বিশেষ করে হযরত আলীকে সকল ধরণের প্রশাসনিক , অর্থনৈতিক , সামাজিক ও সামরিক দায়িত্ব , পদ ও সুযোগ-সুবিধা থেকে দূরে রাখা হয়েছিল যারফলে তারা বনী উমাইয়ার তুলনায় অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন । এ সময় এবং পরবর্তীতে খিলাফত প্রশাসন কর্তৃক সব সময় মহানবীর ( সাঃ ) আহলুল বাইত ও তাঁর বংশধরদেরকে দুর্বল করে রাখার এক চিরাচরিত নীতি কার্যকর রাখতে দেখা গেছে ।...চলবে...

লেখা: মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান 

تبصرہ ارسال

You are replying to: .