۱۶ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۶ شوال ۱۴۴۵ | May 5, 2024
মহানবী (সা:) এবং ইমাম জাফার সাদিক (আঃ)-এর শুভ জন্মদিন
মহানবী (সা:) এবং ইমাম জাফার সাদিক (আঃ)-এর শুভ জন্মদিন

হাওজা / ১৭ রবীউল আওওয়াল আহলুল বাইতের (আঃ) প্রসিদ্ধ অভিমত অনুসারে মহানবী (সা:) এবং তাঁর বংশধর পবিত্র আহলুল বাইতের বারো ইমামের ষষ্ঠ মাসূম ইমাম হযরত জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক (আঃ)-এর শুভ জন্মদিন ।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ১-  ১৭ রবীউল আওওয়াল আহলুল বাইতের (আঃ) প্রসিদ্ধ অভিমত অনুসারে মহানবী (সা:) এবং তাঁর বংশধর পবিত্র আহলুল বাইতের বারো ইমামের ষষ্ঠ মাসূম ইমাম হযরত জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক (আঃ)-এর শুভ জন্মদিন । তাই এ শুভ দিন উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন , শুভেচ্ছা ও মুবারক বাদ ।

     হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা ) আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ ( উস্ওয়াতুন্ হাসানাহ্ ) । তাঁর সকল কথা , কাজ - কর্ম ও অনুমোদন ( তাকরীর ও ইমযা ) অর্থাৎ তাঁর গোটা জীবনই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ । তাই আমাদের উচিত

তাঁর ( সা .) চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্য ( আখলাক ও সীরাত ) , অমিয় বাণী , শিক্ষা ও আদর্শ আমাদের নিজেদের জীবনে  বাস্তবায়ন করা যার কোনো বিকল্প নেই। মহান আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন অর্থাৎ মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে হযরত রাসূলুল্লাহকে ( সা.) নি:শর্ত অনুসরণ । পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেন :

قُلْ إِنْ کُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنيْ یُحْبِبْکُمُ اللّٰهُ وَ یَغْفِرْ لَکُمْ ذُنُوْبَکُمْ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ .

আপনি বলে দিন : যদি তোমরা মহান আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার ( মহানবী ) অনুসরণ কর তোমরা , (আর আমার অনুসরণ করলে ) মহান আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিবেন ; আর মহান আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু । ( সূরা - ই আল্ - ই ইমরান : ৩১ ) । মহানবীকে ( সা.) অনুসরণ করার অর্থই হচ্ছে তাঁর সকল আদেশ নিষেধ ( أوامر و نواهي ) পালন । আর তাঁর (মহানবী) আদেশ নিষেধ , কথা - বাণী , কর্মকাণ্ড কোনো কিছুই রিপু ও প্রবৃত্তি প্রসূত ( মনগড়া ) নয় বরং তাঁর প্রতি প্রেরিত ওহি স্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেন : তোমাদের সংগী ( মহানবী ) বিভ্রান্ত নন , বিপথগামীও নন এবং তিনি ( সা:) কোনো কিছু নিজ প্রবৃত্তির তাড়নায় ( অর্থাৎ মনগড়া কথা) বলেন না । আর এটা ( তাঁর কথা ও আদেশ নিষেধ সব কিছুই আসলে ) হচ্ছে ওহি স্বরূপ যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয় ( সূরা - ই নাজম : ২ - ৪ ) ।

مَا ضَلَّ صَاحِبُکُمْ وَ مَا غَوَیٰ وَ مَا یَنْطِقُ عَنِ الْهَوَیٰ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ یُوْحَیٰ .

  মহানবী ( সা.) স্বীয় উম্মৎকে বহুবার ও বিভিন্ন উপলক্ষ্যে পবিত্র কুরআন ও তাঁর আহলুল বাইতকে (আ.) আঁকড়ে ধরে রাখার আদেশ দিয়েছেন যা মুতাওয়াতির হাদীস - হাদীসে সাক্বালাইনে বর্ণিত হয়েছে । যেমন : 

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আল আনসারী বলেন : আমি বিদায় হজ্জে আরাফাতের দিবসে ( ৯ যিল্ হজ্জ ) মহানবীকে ( সা .) তাঁর কাসওয়া উষ্ট্রীর উপর উপবিষ্ট অবস্থায় বক্তৃতায় বলতে শুনেছি : হে জনগণ !  নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে যা রেখে গেলাম তা অর্থাৎ কিতাবুল্লাহ ( পবিত্র কুরআন ) এবং আমার অতিনিকট আত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ( ইতরাত ) : আমার আহলুল বাইতকে যদি তোমরা আঁকড়ে ধরে রাখো তাহলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ হবে না । তিরমিযী বলেছেন : এ অনুচ্ছেদে আবূ যার , আবূ সাঈদ , যাইদ ইবনে আরকাম ও হুযাইফা ইবনে উসাইদ ( রা:) থেকেও  হাদীস বিদ্যমান । ( দ্র : সুনান আত তিরমিযী , হাদীস নং ৩৭৯৪ , পৃ : ৯৯১ )

হযরত যাইদ ইবনে আরকাম ( রা .) বলেন : রাসূলুল্লাহ ( সা.) বলেছেন : আমি তোমাদের মাঝে দুটো অতি মূল্যবান ভারী জিনিস ( সাকালাইন ) : আল্লাহর কিতাব ( পবিত্র কুরআন ) এবং আমার আহলুল বাইতকে রেখে যাচ্ছি এবং এ দুটো ( পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত ) আমার কাছে হাওযে কাওসারে উপনীত হওয়া পর্যন্ত কখনোই পরস্পর পৃথক ও বিচ্ছিন্ন হবে না । হাকিম নিশাপুরী বলেছেন : এ হাদীসটি শাইখাইনের ( বুখারী ও মুসলিম ) শর্তে সহীহুল ইসনাদ হাদীস এবং তাঁরা দুজন ( বুখারী ও মুসলিম ) তা রিওয়ায়ত করেন নি । আর আল্লামা যাহাবী আত্ - তালখীস গ্রন্থে তাঁর ( হাকিম নিশাপুরী ) সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন : উক্ত হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ্ ( সত্য , শুদ্ধ ও সঠিক ) । ( দ্র : আল - মুস্তাদরাক , খ : ৩ , পৃ: ৩৫৯ )

عَنْ زَیْدِ بْنِ أَرْقَم - رض - قَالَ : قَالَ رَسُوْلِ اللّٰهِ ( ص) : « إِنِّيْ تَارِکٌ فِیْکُمُ الثَّقَلَیْنِ کِتَابَ اللّٰهِ وَ أَهْلَ بَیْتِيْ وَ أَنَّهُمَا لَنْ یَتَفَرَّقَا حَتَّیٰ یَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ . » هٰذا حَدِیْثٌ صَحِیْحُ الإِسْنَادِ عَلَیٰ شَرْطِ الشَّیْخَیْنِ وَ لَمْ یُخْرِجَاهُ .

وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِیْصِ : عَلَیٰ شَرْطِ الْبُخَارِيِّ وَ مُسْلِمٍ .

অতএব মুসলিম উম্মাহকে মহানবীর ( সা:) এ নির্দেশ অবশ্যই মানতে ও পালন করতেই হবে । আর এর অর্থ হচ্ছে যে মুসলিম উম্মাহ রাসূলুল্লাহর ( সা .) পরে পবিত্র কুরআন ও মহানবীর আহলুল বাইতকে (আ.) অনুসরণ ( ইত্তিবা ) করবে । তাঁদের হিদয়তের পথে চলতে ও বহাল থাকতে হবে মুসলিম উম্মাহকে । কারণ , পবিত্র কুরআন এবং রাসূলুল্লাহর ( সা .) আহলুল বাইত (আ.)ই আসলে সিরাত - ই মুস্তাকীম ( সরল সঠিক সোজা পথ ) এবং যেহেতু পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের (আঃ) মধ্যকার বন্ধন চির অটুট ও অবিচ্ছেদ্য সেহেতু সাকালাইনকে ( পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত ) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে অর্থাৎ অনুসরণ করলে উম্মত কখনোই পথভ্রষ্ট , বিচ্যুত ও গোমরাহ হবে না । যেহেতু পবিত্র কুরআন সকল মিথ্যা ও বাতিল থেকে পবিত্র পরম সত্য ঐশী গ্রন্থ অর্থাৎ মা'সূম এবং পবিত্র এ গ্রন্থের সাথে আহলুল বাইতের সহবিদ্যমানতা চিরন্তন ও চিরস্থায়ী যা উপরিউক্ত সহীহ , প্রতিষ্ঠিত , সর্বজন স্বীকৃত মুসাল্লাম হাদীসেও বর্ণিত ও উদ্ধৃত হয়েছে , পবিত্র কুরআনের সূরা - ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াত ও এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুতাওয়াতির হাদীস - ই কিসায় ( চাদরের হাদীস ) এবং সূরা - ই আল - ই ইমরানের ৬১ নং আয়াত ( মুবাহালার আয়াত ) এবং এ আয়াতের শানে নুযূলে বর্ণিত সহীহ ( বিশুদ্ধ ) প্রতিষ্ঠিত ( সাবিত ) ও সকল ইসলামী মাযহাব ও ফির্কার কাছে গৃহীত ও স্বীকৃত ( মুসাল্লাম ) হাদীস অনুযায়ী  মহানবীর আহলুল বাইত (আ.) পবিত্র ও মাসূম এবং তাঁরা  মহানবীর (সা.) জীবদ্দশায়  হযরত ফাতিমা , ইমাম আলী , ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ( আলাইহিমুস সালাম ) - এই ৪ জন মাসূম ব্যক্তি এবং তাঁদের পরে আরও ৯ জন নিষ্পাপ ( মাসূম ) ব্যক্তি যারা হচ্ছেন ইমাম হুসাইনের ( আ.) বংশধর নয়জন মাসূম ইমাম ; কারণ সহীহ ( শুদ্ধ ) , প্রতিষ্ঠিত ( সাবিত ) এবং সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত ও স্বীকৃত ( মুসাল্লাম ) হাদীস মুতাবেক মহানবীর (সা.) পরে কিয়ামত পর্যন্ত এ উম্মতের খলীফা , আমীর , নেতা ও ইমাম হবেন মাত্র বারো জন ব্যক্তি যাদের মাধ্যমে ইসলাম শক্তিশালী ও দুর্ভেদ্য ( সুরক্ষিত ) থাকবে এবং যাঁদের সবাই হবেন কুরাইশ বংশীয় ; আর স্বয়ং রাসূল নিজে ও তাঁর আহলুল বাইতের ( আ .) সবাই খাঁটি  কুরাইশ বংশীয় ; আর যেহতু সত্য ( সহীহ ) প্রতিষ্ঠিত ( সাবিত ) ও সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাব তথা মুসলিম উম্মাহর কাছে গৃহীত ও স্বীকৃত (মুসাল্লাম ও মুত্তাফাকুন আলাহি ) হাদীস সমূহের আলোকে কিয়ামত পর্যন্ত

প্রতিটি যুগেই পবিত্র কুরআন ও রাসূলুল্লাহর পবিত্র ও মাসূম আহলুল বাইত ( আ. ) বিদ্যমান থাকবেন যাঁদেরকে  দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা ও নি:শর্ত অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন উম্মৎকে রাসূলুল্লাহ (সা .) স্বয়ং নিজে , কিয়ামত পর্যন্ত কোনো যুগই ইমাম ( সৃষ্টি জগতের উপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত অর্থাৎ প্রামাণিক দলিল ) বিহীন হবে না এবং যুগের ইমামকে না চিনে ও তাঁর আনুগত্য না করে মৃত্যু বরণ হচ্ছে জাহিলিয়াতের মৃত্যু সেহেতু স্পষ্ট  প্রমাণিত হয়ে যায় যে উক্ত বারো ইমাম অবশ্যই রাসূলুল্লাহর আহলুল বাইতের (আ ) অন্তর্ভুক্ত হবেন যাদের প্রথম ইমাম হযরত আলী ইবনে আবী তালিব ( আ.) এবং সর্বশেষ ইমাম অর্থাৎ দ্বাদশ ইমাম হচ্ছেন মাহদী ( আ .) । আর এই হাদীস - ই সাকালাইন থেকে প্রমাণিত হয় যে পবিত্র কুরআনের সঠিক ও প্রকৃত ব্যাখ্যাকারী এবং রাসূলের ( সা .) খাঁটি ও প্রকৃত সুন্নাহর সংরক্ষণকারী তাঁর আহলুল বাইত ( আ.) । সুতরাং আহলুল বাইত ( আ.) সকল ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞান ও মহানবীর সুন্নাহর খাঁটি প্রামাণিক উৎস্য ও কর্তৃপক্ষ এবং সেগুলোর প্রকৃত ব্যাখ্যা ও বর্ণনাকারী । ইসলামী শরিয়তের বিধিবিধান , যাবতীয় শিক্ষা ও নিয়মনীতি আহলুল বাইতের কাছ থেকে গ্রহণ করতে হবে উম্মতকে । তা না হলে পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত যে কিয়ামত পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না এবং এদুভয়কে আঁকড়ে ধরলে যে উম্মত কখনোই পথভ্রষ্ট, গোমরাহ ও বিচ্যুত হবে না তা সম্পূর্ণ নিরর্থক ( অর্থহীন ও অসার ) হয়ে যাবে ।

সুতরাং মহানবীর অতি মূল্যবান এ দুই মীরাস ( উম্মাহর মাঝে রেখে যাওয়া তাঁর ঐতিহ্যবাহী দুই উত্তরাধিকার ) পবিত্র কুরআন ও তাঁর পবিত্র ইতরাত ( অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ) আহলুল বাইতের ( আ.)  - যথাযথ অনুসরণ উম্মাহকে পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী থেকে রক্ষা এবং তাদেরকে প্রকৃত ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করবে । আর এ দুটো কে ছেড়ে দিলে এ উম্মতের অনৈক্য , বিচ্যুতি ও ধ্বংস অনিবার্য ।...চলবে...

( মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .