হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ২- হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা .) গোটা বিশ্ব জগতের রহমত , রহমতের ইমাম ( ইমামুর রহমাহ্ ) সকল নবী রাসূলের নেতা ( ইমামুল মুরসালীন ওয়া সাইয়েদুল আম্বিয়া ) , সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল ( খাতামুন নাবীয়ীন ও খাতামুল আম্বিয়া ওয়ার রুসুল ) ।
তিনি ( সা.) , নবী ও জনগণের ইমাম ( নেতা ) হযরত ইব্রাহীমের ( আ. ) চেয়েও বড় ইমাম । মহান আল্লাহ তাঁর জলীলুল কদর নবী হযরত ইব্রাহীমকে ( আ .) বেশ কিছু কঠিন ঐশী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মানবজাতির ইমাম ( নেতা ) নিযুক্ত করলে তিনি ( আ. ) মহান আল্লাহর কাছে তাঁর বংশধারায় ( যুর্রিয়াহ্ ) কিয়ামত পর্যন্ত ইমামত জারী রাখার দরখাস্ত ( আবেদন ) করেন । মহান আল্লাহ তাঁর দরখাস্ত ও দুআ কবুল করে বলেছিলেন : আমার এ ঐশী প্রতিজ্ঞা অর্থাৎ ইমামত ( জনগণকে নেতৃত্ব দান ) ( তোমার বংশধরদের মধ্যে ) যালিমদের কাছে পৌঁছাবে না ( অর্থাৎ নবী ও ইমাম ইব্রাহীমের যে সব বংশধরের জীবনে পাপ ও যুলুমের বিন্দুমাত্র লেশ থাকবে তারা কখনই ইমামত লাভ করবে না । হযরত ইব্রাহীমের ( আ ) মতো কেবল তাঁর নিষ্পাপ ( মাসূম ) বংশধররাই জনগণের ইমাম হবেন কিয়ামত পর্যন্ত । হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা. ) জন্মগ্রহণ করলে নুবুওয়াত ও ইমামতের ধারা ইসহাকের বংশধারা বনী ইসরাইল থেকে বনী ইসমাঈলে অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সা ) ও তাঁর পবিত্র ইতরাত ( অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ) আহলুল বাইতে ( আ .) স্থানান্তরিত হয় । তবে মহানবীর ( সা ) মাধ্যমে নুবুওয়াত ও রিসালতের পূর্ণ পরিসমাপ্তি ( খতম ) ঘটে কিন্তু ইমামতের ধারা মহানবী ( সা .) থেকে তাঁর পবিত্র ইতরাত আহলুল বাইতের ( আ.) কাছে হস্তান্তর হয় যারা হলেন তারপরে কিয়ামত পর্যন্ত বারোজন মাসূম (নিষ্পাপ) ইমাম : যাদের প্রথম ইমাম হযরত আলী ইবনে আবী তালিব ( আ ) যিনি রাসূলুল্লাহর ( সা. ) অতি নিকটাত্মীয় অর্থাৎ আপন পিতৃব্যপুত্র ও জামাতা , দ্বিতীয় ইমাম হাসান ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব , তৃতীয় ইমাম হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব , ৪র্থ ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবেদীন , ৫ম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল - বাক্বির , ৬ষ্ঠ ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস - সাদিক , ৭ম ইমাম মূসা ইবনে জাফর আল - কাযিম , ৮ম ইমাম আলী ইবনে মূসা আর - রিযা , ৯ম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আত - তাকী আল - জাওয়াদ , ১০ম ইমাম আলী ইবনে মুহাম্মাদ আল - হাদী আন - নাকী আল - আস্কারী , ১১শ ইমাম হাসান ইবনে আলী আল - আস্কারী এবং ১২. দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আল - ক্বায়েম আল - হুজ্জাহ আল - মাহদী ( আ. ) । হযরত ইব্রাহীমের ( আ .) পবিত্র বংশধারা ও যুর্রিয়ায় ( আল - ই ইব্রাহীম ও যুর্রিয়া - ই ইব্রাহীম ) কিয়ামত পর্যন্ত ইমামতের পবিত্র ধারা বিদ্যমান ( থাকবে ) । পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
( মহান আল্লাহ ) আদমকে , নূহ্কে ও ইব্রাহীমের বংশধর ( আল - ই ইব্রাহীম : হযরত মুহাম্মাদ ( সা ) ও আল -ই মুহাম্মাদ ) এবং ইমরানের বংশধরকে ( আল - ই ইমরান ) জগৎ সমূহের উপর মনোনীত করেছেন ।
এরা একে অপরের বংশধর । মহান আল্লাহ সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞ ( সূরা - ই আল - ই ইমরান : ৩৩ - ৩৪ ) ।
এ দুই আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে যে যে সব বংশধারাকে জগৎ সমূহের উপর মনোনীত করা হয়েছে তাদের মধ্যকার আল - ই ইব্রাহীম ( ইব্রাহীমের বংশধরগণ ) হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ ( সা.) ও আল - ই মুহাম্মদ ( আ )। কারণ আল - ই ইমরান ও আল - ই মুহাম্মাদ আসলে আল -ই ইব্রাহীম । কিন্তু সূরা -ই আল -ই ইমরানের ৩৩ নং আয়াতে আল - ই ইব্রাহীম থেকে আল - ই ইমরানকে বের করে আনা হয়েছে । তাহলে আল - ই ইব্রাহীমে কেবল হযরত মুহাম্মাদ ( সা. ) ও আল - ই মুহাম্মাদ ( আ .) বিদ্যমান রয়েছেন । আল - ই ইমরানকে ৩৩ নং আয়াতে আল - ই ইব্রাহীম থেকে বের করে এনে স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করার মানেই হয় না যে আল - ই ইব্রাহীম হচ্ছে আল - ই ইমরান ও আল - ই মুহাম্মাদ ( আ .) । অতএব স্পষ্ট হয়ে যায় যে আল - ই ইব্রাহীম হযরত মুহাম্মাদ ( সা .) ও আল - ই মুহাম্মাদ ( আ .) । যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে শুধু আল - ই ইব্রাহীম হযরত মুহাম্মাদ ( সা .) ও আল - ই মুহাম্মাদ ( আ .) নয় বরং হযরত ইসমাইল ও আল - ই
ইসমাঈল ( কারণ আয়াতে স্বতন্ত্রভাবে আল - ই ইমরান উল্লেখিত হওয়ার পর পুনরায় আল - ই ইমরানকে আল - ই মুহাম্মাদের পাশাপাশি আল - ই ইব্রাহীমের অন্তর্ভুক্ত করার কোনো অর্থই হয় না ) তহলেও পরিণতিতে আল - ই ইসমাঈল চূড়ান্ত পর্যায়ে হযরত মুহাম্মাদ ( সা .) ও আল -ই মুহাম্মাদ ; কারণ নি:সন্দেহে আল -ই ইসমাঈলে হযরত মুহাম্মাদ ( সা.) ও আল - ই মুহাম্মাদ (( হযরত ফাতিমা আ - যিনি জগৎ সমূহের নারীদের নেত্রী ও মাসূম এবং ১২ মাসূম ইমাম যারা হলেন হযরত আলী এবং তাঁর ও হযরত ফাতিমার ( আ ) ১১ জন সন্তান ও বংশধর : ইমাম হাসান ( আ .) , ইমাম হুসাইন ( আ ) ও ইমাম হুসাইনের ( আ ) নয় জন বংশধর ))ই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তারা ব্যতীত আর কেউ হতে পারে না । আর এটা অত্যন্ত স্পষ্ট ও বোধগম্য বিষয় । কারণ নবী হযরত ইসমাইলের বংশধারায় কেবল সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ হচ্ছেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ও আল - ই মুহাম্মাদ ; কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সা ) সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব , সৃষ্টির সেরা , সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল এবং সর্বশেষ নবী ( খাতামুন নাবীয়ীন ) ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম এবং তাঁর (সা) ইমামত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইমামত ; আর এ কারণেই তাঁর নুবুওয়াত সর্বশ্রেষ্ঠ নুবুওয়াত ও রিসালত যা নুবুওয়াত - ই খাস্সাহ্ নামেও পরিচিত ও প্রসিদ্ধ , ইসলাম ধর্ম ও শরিয়ত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ ধর্ম ও শরিয়ত , পবিত্র কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানী কিতাব , তাঁর উম্মত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ উম্মত ; আর তাঁর আলই ( বংশধরগণ ) হবেন হযরত ইব্রাহীমের সমগ্র বংশধারায় ( যুর্রিয়া ) সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ ইমামতের ধারা ও সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ ইমামদের পরম্পরা ; কারণ তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী - রাসূল ও সর্বশ্রষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদের ( সা ) অস্তিত্বের টুকরা ও অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং মুহাম্মাদী আহমাদী নূর ( النورالمحمدي الأحمدي ) থেকে উৎসারিত । হযরত মুহাম্মাদের পরে আল - ই মুহাম্মাদ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ ধর্ম ও শরিয়ত ইসলাম , সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল - কুরআন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ সুন্নাহর ( সুন্নাত - ই মুহাম্মাদী ) ধারক ও বাহক হওয়ার জন্য নি:সন্দেহে তাঁরা মহানবীর ( সা .) পরে স্রষ্টা ও সৃষ্টি তত্ত্ব এবং শরয়ী জ্ঞান ও মারেফাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অধিকারী হওয়ার কারণে তাঁরা আধ্যাত্মিক পূর্ণতার শীর্ষে বিদ্যমান বলেই সৃষ্টির সেরা অর্থাৎ মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি । আর এ কারণেই তাঁরা উম্মত - ই ওয়াসাত ( মধ্যম বা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি ) , পূর্ববর্তী সকল উম্মতের উপর ঐশ্বরিক সাক্ষী ( শুহাদা ) , খাইরু উম্মাহ্ ( শ্রেষ্ঠ উম্মত ) ঠিক হযরত ইব্রাহীমের (আ.) মত যিনি আগে নুবুওয়াত লাভ করেও বহু কঠিন ঐশী পরীক্ষার সম্মুখীন হন এবং সেগুলোয় উত্তীর্ণ হয়ে কামাল বা পূর্ণতার শীর্ষে পৌঁছান ( খলীলুর রহমান হন ) , জনগণের ইমাম (নেতা ) মনোনীত হন এবং মহান আল্লাহ তাঁকে একাই এক উম্মত , অনুগত ( উম্মত , কানেত্ , হানীফ) এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে আখ্যায়িত করেছেন ( সূরা -ই নাহল : ১২০ )। তাই আল - ই মুহাম্মদ অর্থাৎ আহলুল বাইতের বারো ইমাম ( আ ) যে উম্মত - ই ওয়াসাত ( সর্বোত্তম সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত ) , খাইরু উম্মাহ ( সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত ) ও পূর্ববর্তী সকল উম্মতের উপর খোদায়ী ( ঐশ্বরিক ) সাক্ষী হওয়ায় মোটেও আশ্চর্য্যের কিছু নেই । বরং মহান আল্লাহর ঐশ্বরিক পরিকল্পনায় এটা একান্ত বাস্তব সত্য বিষয় । এখানে প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে মহানবী ( সা) পূর্ববর্তী সকল উম্মতের উপর সাক্ষীগণের উপর মহাসাক্ষী । আর এ ভাবে স্পষ্ট হয়ে যায় রাসূলুল্লাহর ( সা ) দেহের টুকরা ও অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ ( বিদআতুর রাসূল ِبِضْعَةُ الرَّسُوْل ) হযরত ফাতিমা বাতূল ( আ ) আহলুল বাইতের মাসূম ইমামদের উপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত ( প্রামাণিক দলিল ও উত্তম আদর্শ ) এবং তাঁরা ( ইমামগণ ) সমগ্র সৃষ্টি কুলের উপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত ।
মহানবী ( সা ) বলেছেন : ফাতিমা আমার অংশ , যে তাঁকে ক্রুদ্ধ করে সে আমাকেই ক্রুদ্ধ করে ( দ্র : সহীহ আল - বুখারী , হাদীস নং ৩৭১৪ , পৃ : ৯১০ , প্রথম সংস্করণ , ২০০৮ খ্রি , প্রকাশক : দার সাদির , বৈরুত , লেবানন ) ।...চলবে...
( মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান)