۶ آذر ۱۴۰۳ |۲۴ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 26, 2024
রাসূলুল্লাহর(সাঃ)
রাসূলুল্লাহর(সাঃ)

হাওজা / হাদীছের চিন্তা গবেষণাবিহীন অন্ধ ভক্ত গতানুগতিক ধারার তথাকথিত আলেমদের দ্বারা প্রচারিত একটি ধারণা এই যে, হযরত রাসূলে আকরাম (ছাঃ)-এর পিতা-মাতা মুশরিক্ ছিলেন (না‘ঊযূ বিল্লাহি মিন্ যালিক্)।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, হাদীছের চিন্তা গবেষণাবিহীন অন্ধ ভক্ত গতানুগতিক ধারার তথাকথিত আলেমদের দ্বারা প্রচারিত একটি ধারণা এই যে, হযরত রাসূলে আকরাম (ছাঃ)-এর পিতা-মাতা মুশরিক্ ছিলেন (না‘ঊযূ বিল্লাহি মিন্ যালিক্)। ইদানীং কোনো কোনো আলেম নামধারী জাহেল্ ইন্টারনেটের মাধ্যমও এ ধারণা প্রচার করছে।

আল্লাহ্ তা‘আলা কোরআন মজীদে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, নবী-রাসূলগণ (‘আঃ) পরস্পরের বংশধর (সূরাহ্ আালে ‘ইমরান্ : ৩৪)।

সমস্ত মানুষই তো হযরত আদম (‘আঃ)-এর বংশধর, তাহলে বিশেষভাবে এ কথা বলার উদ্দেশ্য কী? নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলা উদ্দেশ্যহীন কথা বলা হতে পরম প্রমুক্ত। এ কথার একটাই উদ্দেশ্য হতে পারে, তা হচ্ছে, নবী-রাসূলগণ (‘আঃ) বানী আদমের মধ্যকার কোনো নাফরমানের বংশধর নন। অর্থাৎ তাঁরা নবী-রাসূলগণের (‘আঃ) ও তাঁদের ধারাবাহিকতার নিষ্পাপ লোকদের বংশধর।

বস্তুতঃ এটাই স্বাভাবিক। কারণ, মানুষের শারীরিক ও মনস্তাত্তি¡ক গঠনে তার পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষদের জেনেটিক প্রভাব একটি অনস্বীকার্য বিষয়। যদিও যে কোনো মানুষের পক্ষেই বালেগ¦ হওয়ার পর সর্বজনীন সুস্থ বিচারবুদ্ধির আলোকে সহজাত বা ওয়াহীজাত হেদায়াতের অনুসরণ করা সম্ভব, কিন্তু ওয়াহী ধারণ এবং নবুওয়াত ও রিসালাতের গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য অবশ্যই বিশেষ শারীরিক ও নৈতিক-মানসিক উপযুক্ততার প্রয়োজন রয়েছে।

এর একটি সহজ উপমা হচ্ছে এই যে, মানসিক প্রতিবন্ধী নয় এমন যে কোনো শিশুর পক্ষেই সর্বোত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রী অর্জন করা সম্ভব, কিন্তু কেবল বিশেষ প্রতিভার অধিকারীদের পক্ষেই, এমনকি সর্বোত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন না করেও, আবিষ্কারক-উদ্ভাবক ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী হওয়া সম্ভব।

এর আরেকটি সহজবোধ্য উপমা হচ্ছে এই যে, একজন বুদ্ধিমান কৃষক সব সময়ই সম্ভব সর্বোত্তম ফসল ফলাতে চায় এবং এ লক্ষ্যে সে সর্বোত্তম যমীনে সর্বোত্তম বীজ বপন করে। এমনকি সে যদি বিভিন্ন মানের যমীনে বীজ বপন করে সে ক্ষেত্রেও অপেক্ষাকৃত উত্তম বীজগুলো বপন করার চেষ্টা করে এবং তাতে যে ফসল ফলে তার মধ্য থেকে সর্বোত্তম যমীনে উদ্গত সর্বোত্তম গাছটির সর্বোত্তম ফলটি থেকে পরবর্তী মওসূমে বপনের জন্য বীজ আহরণ করে। এমনকি সে ক্ষেত্রেও কোনো কারণে (যেমন : পোকার আক্রমণে) সর্বোত্তম ফলটির কতক বীজ ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়লে কৃষক পরবর্তী মওসূমে বীজ বপন করতে গিয়ে ত্রুটিপূর্ণ বীজগুলো পরিহার করার চেষ্টা করে। তবে তা পরিহার করা সম্ভব না হলেও তারও পরবর্তী মওসূমের জন্য বীজ আহরণ করতে গিয়ে সর্বোত্তম গাছটির সর্বোত্তম ফলটি থেকে সম্ভবমতো সর্বোত্তম বীজগুলো আহরণ করে। আল্লাহ্ তা‘আলার গুণাবলীর অধিকারী কৃষক তার এ বৈশিষ্ট্য স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলার কাছ থেকেই পেয়েছে; বিভিন্ন কারণে বানী আদমের মধ্যে ভালো-মন্দ বিভিন্ন ধরনের লোক জন্ম নিলেও আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বোত্তম (নিষ্পাপ) পিতা-মাতার সর্বোত্তম সন্তানদেরকে স্বীয় বিশেষ দায়িত্ব অর্পণের জন্য বেছে নেবেন এটাই স্বাভাবিক।

সুতরাং অনস্বীকার্য যে, ওয়াহী ধারণ এবং নবুওয়াত ও রিসালাতের গুরুদায়িত্ব পালনকারীর জন্য অবশ্যই শিরক্ সহ যে কোনো গুনাহের জেনেটিক প্রভাব হতে মুক্ত থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত ইবরাহীম্ (‘আঃ)কে যে তাঁর বংশধরদের মধ্য থেকে ইমাম নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন সে ব্যাপারেও এটা প্রযোজ্য এবং এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, তাঁর এ অঙ্গীকার গুনাহগারদের জন্য প্রযোজ্য নয় (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : ১২৪)। সুতরাং নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ হতে ইমামতও কেবল এমন ব্যক্তিদেরকেই দেয়া হতে পারে যাদের রক্তধারায় শিরক্ ও গুনাহের জেনেটিক প্রভাব নেই।

এ থেকে সুস্পষ্ট যে, যে সব হাদীছে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) পিতা-মাতা ও তাঁর চাচা হযরত আবূ ত্বালিব (‘আঃ) মুশরিক ছিলেন সেগুলো রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের (‘আঃ) ঘোরতর দুশমন বানী উমাইয়াহর শাসনামলে ত্বাগূতী সরকারের পদলেহী আলেম নামধারী রাভীদের দ্বারা তৈরী - যাদের অনেকেই মিম্বার থেকে হযরত ‘আলী (‘আঃ)-এর প্রতি লা‘নত্ বর্ষণ করতো।

এখানে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করতে হয় যে, অনেকের মধ্যেই এ ভ্রান্ত ধারণা বিরাজমান যে, হযরত রাসূলে আকরাম (ছাঃ) যখন নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য আদিষ্ট হন তখন মক্কাহর সমস্ত মানুষই মূর্তিপূজারী মুশরিক্ ছিলো; সেখানে কোনো মু’মিনের অস্তিত্ব ছিলো না। তাদের এ ধারণা কোরআন মজীদে “মু’মিন্”-এর যে সুপ্রশস্ত সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে উৎসারিত।

আল্লাহ্ তা‘আলা সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহর শুরুতে মুত্তাক্বী লোকদের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তাতে তিন ধরনের লোককে শামিল করেছেন : (১) যারা ইন্দ্রিয়াতীত স্রষ্টাসত্তায় (আল্-গায়ব্-এ) ঈমান পোষণ করে (কিন্তু নবুওয়াত্ ও রিসালাতের বিষয়টি যাদের কাছে ইতমামে হুজ্জাত্ আকারে পৌঁছে নি), (২) যারা রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) নবুওয়াতের প্রতি ঈমান পোষণ করে এবং (৩) যারা পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের (‘আঃ) সকলের বা কারো কারো প্রতি ঈমান পোষণ করে [কিন্তু রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) নবুওয়াতের বিষয়টি ইতমামে হুজ্জাত্ আকারে না পাওয়ায় তাঁর প্রতি ঈমান পোষণ করে না]। [এ বিষয়ে ইতিপূর্বে “কোরআনের দৃষ্টিতে : আহলে নাজাত্ কা’রা?” শীর্ষক নোটে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ]

এছাড়া হযরত ইবরাহীম্ (‘আঃ) তাঁর অনুসারীদেরকে মুসলিম হিসেবে নামকরণ করেন। সুতরাং কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে মু’মিন্ ও মুসলিম্-এর সংজ্ঞা বর্তমানে বহুলপ্রচলিত সংজ্ঞার মধ্যে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) নবুওয়াতে ঈমান পোষণকারীদের মধ্যে সীমিত নয়। এ ব্যাপকতর সংজ্ঞার ভিত্তিতে যে মু’মিন্ ও মুসলিম ইতিহাসের সকল অধ্যায়ে সর্বত্রই এ অর্থে মু’মিন্ ও মুসলিমের কম-বেশী উপস্থিতি ছিলো।

আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন :

لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُبِينٍ

“আল্লাহ্ মু’মিনদের ওপর অনুগ্রহ করলেন যখন তিনি তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল উত্থিত করলেন যিনি তাদের নিকট তাঁর (আল্লাহর) আয়াত পাঠ করেন ও তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব্ ও অকাট্য জ্ঞান শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ এর আগে তারা সুস্পষ্টতঃই পথবিহীন অবস্থায় ছিলো। ” (সূরাহ্ আালে ‘ইমরান্ : ১৬৪)

এখানে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন নি যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (ছাঃ) নবুওয়াতে অভিষিক্ত করে মুশরিক্দেরকে ঈমানের নে‘আমত্ লাভের সুযোগ দিয়ে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, বরং এখানে তিনি যাদেরকে অনুগৃহীত করার কথা বলেছেন তাঁরা পূর্ব থেকেই মু’মিন্ ছিলেন এবং তিনি তাঁদের মাঝে বাইরে থেকে কোনো রাসূল পাঠান নি - যেমন পাঠিয়েছিলেন ক্বাওমে লূত্বের কাছে, বরং তাঁদের নিজেদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল উত্থিত করেছেন।

সুতরাং সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই যে, রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য আদিষ্ট হওয়ার সময় পূর্ব থেকেই মক্কায় একদল মু’মিন্ ব্যক্তি ছিলেন - তিনি ছিলেন যাদের অন্যতম। তাই এটাই স্বাভাবিক যে, রাসূলুল্লাহর (ছাঃ) দাদা হযরত ‘আবদুল্ মুত্তালিব, পিতা হযরত ‘আবদুল্লাহ্, মাতা হযরত আমেনাহ্ ও লালনকারী চাচা হযরত আবূ ত্বালিব্ (‘আলাইহিমুস্ সালাম্) মু’মিন্ ছিলেন। আর খুবই সম্ভাবনা যে, তাঁরা কেবল তাওহীদবাদীই ছিলেন না, বরং হযরত ইবরাহীম্ (‘আঃ)-এর শিক্ষার অনুসরণ করতেন - যাকে অনেকে দ্বীনে হানীফ্ নামে অভিহিত করে থাকেন।

পুনশ্চ : হযরত ইবরাহীম (‘আঃ)-এর পিতা মুশরিক ছিলেন বলে যে মনে করা হয় তা-ও ভ্রান্ত ধারণা। আাযার হযরত ইবরাহীম (‘আঃ)-এর জন্মদাতা পিতা (والد) ছিলো না, সম্ভবতঃ পালক পিতা বা চাচার ন্যায় পিতৃস্থানীয় (ابو) কেউ ছিলো। কোরআন মজীদে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, তার আল্লাহর দুশমন হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর (ইরাক থেকে ফিলিস্তিনে হিজরত করার সময়) তিনি তার জন্য দো‘আ করা বন্ধ করে দেন। কিন্তু এর সুদীর্ঘ কাল পরে কা‘বাহ্ গৃহ পুনঃনির্মাণকালেও তিনি স্বীয় জন্মদাতা পিতা-মাতার (والدين) জন্য দো‘আ করেন। [এ বিষয়ে “নবী-রাসূলগণের পাপমুক্ততা” গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

মোহাম্মদ হোসাইন, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা, বাংলাদেশ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .