হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃএকদা হযরত ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ আল সাদিক (আঃ) এর সাথে দেখা করতে তিনার বাড়িতে গেলাম।কিন্তু তিনি আমাকে তিনার সাথে দেখা করার অনুমতি দিলেন না। এমন সময় কুফা থেকে কিছু লোক আসল তিনি তাদেরকে প্রবেশ করার অনুমতি দিলেন আর আমিও তাদের সাথে ঢুকে পড়লাম।ইমাম জাফর আল সাদিক (আঃ) এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর সন্তান ! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাদের প্রতি গালি দেওয়া বন্ধ করতে কাউকে কুফাতে পাঠান।আমি দশ হাজারেরও বেসি লোককে চিনি যারা নবী (সাঃ) এর সাহাবাদেরকে গালাগাল করে।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ লোকজন আমার কথা শুনবে না।
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ কে আছে যে আপনার কথা শুনবে না।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ যারা আমার কথা শুনবে না তুমি তাদের মধ্যে এক জন। কেননা তুমি আমার বিনা অনুমতিতে আমার ঘরে প্রবেশ করেছ, বিনা অনুমতিতে বসেছ এবং বিনা অনুমতিতে কথা বলা শুরু করেছ।
অতঃ পর ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ শুনেছি তুমি কিয়াসের ভিওিতে ফতোয়া দাও?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ জ্বী সঠিক শুনেছেন !
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ হে হতভাগা ! আল্লাহর নিরদেশ বিপরীতে প্রথমে যে কিয়াস করেছিল সে হচ্ছে ইবলিস।
যখন আল্লাহ তাকে আদমকে সিজদা করার নির্দেশ দিলেন শয়তান বলল,আমি সিজদা করব না। কেননা আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন আর আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে এবং মাটির অপেক্ষা শ্রেষ্ট।সুতরাং কিয়াসের মাধ্যমে সত্যের সন্ধান পাওয়া কঠিন। যাতে তুমি বিষয়টি ভালো ভাবে বুজতে পার তোমাকে প্রশ্ন করব।
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর সন্তান ! অবশ্যই করবেন।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ হে আবু হানিফা ! তোমার দৃষ্টিতে কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা বড় অপরাধ নাকি যেনা করা?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা বড় অপরাধ।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ তাহলে কেন হত্যা প্রমানের জন্য দুই জন সাক্ষীর প্রয়োজন হয় অথচ যেনা প্রমানের জন্য চার জন সাক্ষীর প্রয়োজন? এ দু'য়ের মধ্যে কিয়াস সম্ভব কি?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ না।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ প্রস্রাব বেশি অপবিত্র নাকি বীর্য?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ প্রস্রাব।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ তাহলে কেন প্রস্রাব করলে অজুর প্রয়োজন হয় অথচ বীযপাত ঘটলে গোসলের প্রয়োজন? এ দু'য়ের মধ্যে কিয়াস সম্ভব কি?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ না।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ নামাজের গুরুত্ব বেশি নাকি রোজার গুরুত্ব বেশি?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ নামাজের গুরুত্ব বেশি।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ তাহলে কেন যে মহিলার হায়েজ (মাসিক) হয়েছে তার উপর রোজা কাযা করা ওয়াজেব অথচ নামাজ কাযা করা ওয়াজেব নয়? এ দু'য়ের মধ্যে কিয়াস সম্ভব কি?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর সন্তান ! সম্ভব নয়।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ পুরুষ বেশি শক্তিশালী না মহিলা?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ পুরুষ বেশি শক্তিশালী।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ তাহলে কেন আল্লাহতালা উওরাধিকার সম্পতির ক্ষেএে নারীর অংশ পুরুষের অর্ধেক নিধারণ করেছেন। এ দু'য়ের মধ্যে কিয়াস সম্ভব কি?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর সন্তান ! সম্ভব নয়।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ যদি কেহ দশ দেরহাম চুরি করে আল্লাহ তার হাত কেটে ফেলার নিরদেশ দিয়েছেন।কিন্তু যদি কেও কারো হাত কেটে ফেলে তাহলে তার রক্তমূল্য হবে পাঁচশত দেরহাম? এ দু'য়ের মধ্যে কিয়াস সম্ভব কি?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ সম্ভব নয় আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) সন্তান।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) আবু হানিফার দিকে ফিরে বললেনঃ
শুনলাম তুমি তাফসির করতে গিয়ে এই আয়াতটিকে [ ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ ] অর্থাৎ তারপর অবশ্যই সেদিন তোমাদেরকে নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। (সূরাঃ ১০২/ আত-তাকাসুর, আয়াতঃ ৮) তুমি এই ভাবে তাফসির করছো যেঃ নেয়ামত বলতে আল্লাহ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে পৃথিবীতে যেসব তৃপ্তিদায়ক সুস্বাদু খাদ্য ও গ্রীষ্মের সময়ে ঠান্ডা পানীয় পান করেছে সে ব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করবেন।
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর সন্তান ! হ্যা সঠিক শুনেছেন,আয়াতটিকে আমি ওভাবেই তাফসির করেছি।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ যদি কোন ব্যক্তি তোমাকে তার নিজের গৃহে আমন্ত্রণ করেন এবং অনেক তৃপ্তিদায়ক সুস্বাদু খাবার খেতে দেন । অতঃপর তিনি যদি তোমার আপ্যায়ন সম্পর্কে বড়াই করে তাহলে তোমার দৃষ্টিতে সে কেমন লোক?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ নিঃসন্দেহে সে অহংকারী ও অতি কৃপন ব্যক্তি।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ তুমি কি মনে কর আল্লাহ পাক অহংকারী বা কৃপন,যে আমাদেরকে কিয়ামতের দিন হালাল খাদ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন?
হযরত আবু হানিফা(রহঃ) বলেনঃ নিঃসন্দেহে না।তাহলে আল্লাহ পাক কেয়ামতের দিন কোন নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন?
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেনঃ কোরআনে উল্লেখিত নেয়ামত বলতে আল্লাহ রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ও আমাদের ওপর অর্পিত পবিত্র বেলায়েত কে বোঝানো হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ বিহারুল আনওয়ার খন্ডঃ- ১০ পৃষ্ঠাঃ- ২২০/মুস্তাদরাকুল ওয়াসাইল খন্ডঃ ১৬,পৃষ্ঠাঃ ২৪৭ ।
নিবেদনে
-মোহাম্মদ হোসাইন, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা, বাংলাদেশ।