পর্ব ১- হজরত আবুবকর (রাঃ) ও উমর(রাঃ) কেন রাসুলের (সাঃ) কন্যাকে 'ফদকের' জমি থেকে বঞ্চিত করেছেন?
সুরা বনি ইস্রাইল, আয়াত- ২৭
“এবং পরামাত্নীয়,(১), অভাবগ্রস্থ এবং নিঃস্ব পথচারীদের তাঁদের প্রাপ্য প্রদান কর এবং কোন প্রকারেই অপচয় করো না”।
সঠিক তাফসীরঃ(১)
ইবনে জারীর হযরত আলী ইবনুল হুসাইন যায়নুল আবেদীন (আঃ) হতে বর্ননা করেছেন। তিনি এক শামদেশীয় লোককে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কো্রান পাঠ করেছ’ ? সে বলল,’হ্যা’। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি সুরা বনী ইস্রাইলের ‘পরমাত্নীয়কে তাঁর প্রাপ্য দিয়ে দাও’ আয়াতটি পড়নি’?সে বলল, ‘অবশ্যই পড়েছি’। তিনি বললেন, “আমরা হলাম সেই পরমাত্নীয় যার প্রাপ্য প্রদানের আদেশ আল্লাহ দিয়েছেন”। বাজ্জার, আবু ইয়ালা বিন আবী হাতিম এবং ইবনে মারদুইয়া আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ননা করেছেন, এই আয়াত নাযিল হলে রাসুল (সাঃ) হযরত ফাতিমাকে (সা আ)কে ডাকলেন এবং ফাদাকের ভুমি প্রদান করলেন। একই হাদিসে মারদুইয়া, ইবনে আব্বাস হতে বর্ননা করেছেন (তাফসীরে দুররে মানসুর, ৪র্থ খন্ড, পাতা-১৭৬ দ্রষ্টব্য)। একই হাদিস মিরাজুন নবুওত গ্রন্থেও বর্নিত হয়েছে।
ফদক, ১ম খলিফা আবুবকরের (রাঃ) জাল হাদিস, ২য় খলিফা হযরত উমরের (রাঃ) নিষ্ঠুর অবিচার।
ফদক মদিনার নিকটবর্তী হিজাজের (রাসুলের সাঃ দেয়া নাম) (বর্তমান সউদি আরব) একটা সবুজ গ্রাম এবং এটা শমরুখ নামক দুর্গ দ্বারা সঙ্গরক্ষিত স্থান ছিল (হামাবী, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ২৩৮; ৩য় খন্ড, পৃঃ ১০১৫; সামহুদী, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১২৮০)। ফদক ইহুদীদের দখলে ছিল। ৭ম হিজরীতে এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ফদকের মালিকানা রাসুলের (সাঃ) কাছে চলে যায়। এ চুক্তির মুল কারন হলো খায়বার দুর্গের পতনের পর ইহুদীরা মুসলিম শক্তি অনুধাবন করতে পেরেছিল এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাছাড়া কিছু সংখ্যক ইহুদী রাসুলের (সাঃ) আশ্রয় প্রার্থনা করায় রাসুল (সাঃ) তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তারা একটা শান্তি প্রস্তাব করেছিল যে, ফদক নিয়ে তাদের অবশিষ্ট এলাকায় কোন যুদ্ব না করার জন্য। ফলে রাসুল (সাঃ) তাদের প্রস্তাব গ্রহন করলেন এবং তাদের জন্য সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেছিলেন। এ ফদক তাঁর ব্যাক্তিগত সম্পদে পরিনত হলো এবং এতে কারো কোন স্বার্থ ছিল না। এতে কারো কোন স্বার্থ থাক্তেও পারেন। কারন জিহাদে অর্জিত গনিমতের মালে মুসলমানদের অংশ ছিল। যেহেতু এই সম্পত্তি বিনা জিহাদে পাওয়া গেছে তাই এটাকে ‘ফায়’ বলা হতো এবং রাসুল (সাঃ) একাই এর মালিক ছিলেন।এতে অন্য কারো অংশ ছিল না। তাই আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ ইহুদীদের কাছ থেকে তাঁর যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমরা অশ্ব বা উটে আরোহন করে যুদ্ব করনি।আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা তাঁর রাসুলের কর্তৃ্ত্ব দান করেন” (কোরানঃ ৫৯ঃ৬)।
কোন প্রকার যুদ্ব ছাড়াই ফদক অর্জিত হয়েছে এবিষয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই। সুতরাং এটা রাসুলের (সাঃ) ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল এবং এতে কারো কোন অধিকার ছিল না। ঐতিহাসিকগন লিখেছেনঃ
“যেহেতু মুসলিমগন তাদের ঘোড়া ও উট ব্যবহার করেননি সেহেতু ফদক রাসুলের (সাঃ) ব্যক্তিগর সম্পদ ছিল। (তাবারী,১ম খন্ড, পৃঃ১৫৮২-১৫৮৩, আছীর, ২য় খন্ড,পৃঃ২২৪-২২৫; হিশাম, ৩য় খন্ড, পৃঃ৩৬৮; খালদুন, ২য় খন্ড, পৃঃ৪০; বাকরী,২য় খন্ড, পৃঃ৫৮; শাফী, ৩য় খন্ড, পৃঃ৫০; বালাজুরী, ১ম খন্ড, পৃঃ)।
২য় খলিফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাবও মনে করতেন যে ফদক রাসুলের (সাঃ) অংশীদারবিহীন সম্পদ। তিনি ঘোষনা করেছিলেন যে, আল্লাহ তাঁর রাসুলকে যা দিয়েছিলেন বনি নজীরের সম্পত্তিও তার অন্তর্ভুক্ত । এতে কারো ঘোড়া বা উট ব্যবহার করা হয় নি। তাই এটা আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) ব্যক্তিগত সম্পদ (বুখারী, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ৪৬; ৭ম খন্ড, পৃঃ৮২; ৯ম খন্ড, পৃঃ১২১-১২২; নায়সাবুরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ১৫১; আশাছ, ৩য় খন্ড, পৃঃ১৩৯-১৪১; নাসাঈ, ৭ম খন্ড, পৃঃ১৩২; হাম্বল, ১ম খন্ড, পৃঃ২৫,৪৮,৬০,২০৮; শাফী, ৬ষ্ট খন্ড, পৃঃ২৯৬-২৯৯।
বিশ্বস্ত সুত্রে এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে, রাসুল (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশাতেই উক্ত ফদক তাঁর প্রানপ্রিয় কন্যা ফাতিমাকে দান করেছিলেন।আল-বাজ্জার, আবু ইয়ালা, ইবনে আবি হাতিম, ইবনে মারদুয়াই ও অন্যান্য অনেকে আবু সায়েদ খুদরী ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের বরাত দিয়ে বর্ননা করেছেন যে, যখন কোরানের আয়াত-“নিকটবর্তী আত্নীয় পরিজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও”-(১৭ঃ২৬)-নাজিল হয়েছিল তখন রাসুল (সাঃ) ফাতিমাকে ডেকে এনে তাঁকে ফদক দান করেছিলেন (শাফী, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ১৭৭; শাফী, ৭ম খন্ড, পৃঃ৪৬; হিন্দি, ৩য় খন্ড, পৃঃ৪৯৩; শাফী, ১৫শ খন্ড, পৃঃ৬২)।...চলবে...
নিবেদক- মোহাম্মদ হোসাইন, সদস্য সচিব বাংলাদেশ ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা।