۲۹ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱۰ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 18, 2024
ফাতেমা জাহরা (সা:)
ফাতেমা জাহরা (সা:)

হাওজা / হজরত আবুবকর (রাঃ) ও উমর(রাঃ) কেন রাসুলের (সাঃ) কন্যাকে 'ফদকের' জমি থেকে বঞ্চিত করেছেন?

পর্ব ২- ১ম খলিফা হযরত আবুবকর (রাঃ) যখন ক্ষমতা দখল করেছিলেন তখন ফাতিমাকে বঞ্ছিত ও দখলচ্যুত করে ফদক রাষ্টায়ত্ব করেছিলেন।ঐতিহাসিকগন লিখেছেনঃ

“নিশ্চয়ই, আবুবকর ফাতিমার কাছ থেকে ফদক কেড়ে নিয়েছেন” (হাদীদ, ১৬ খন্ড,পৃঃ২১৯;সামহুদী,৩য় খন্ড,পৃঃ১০০০; হায়তামী,পৃঃ৩২)।

আবুবকরের এহেন কাজে ফাতিমা সোচ্চার হয়ে উঠলেন এবং তিনি প্রতিবাদ করে বললেন, “রাসুল (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় আমাকে ফদক দান করে গিয়েছিলেন অথচ আপনি তা দখল করে নিয়ে নিয়েছেন।“ এতে আবুবকর সাক্ষী উপস্থাপন করার জন্য বললেন। ফলে, আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আঃ) ও উম্মে আয়মন ফাতিমার পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন । এখানে উল্লেখ্য যে, উম্মে আয়মন রাসুলের (সাঃ) একজন মুক্তিপ্রাপ্ত দাসী ছিলেন। তিনি উসামা ইবনে জায়েদ ইবনে আল-হারিছাহর মাতা ছিলেন। রাসুল (সাঃ) প্রায়ই বলতেন, “আমার মাতার ইন্তেকালের পর আয়মন আমার মাতা”। রাসুল (সাঃ) তাঁকে বেহেস্তবাসীর একজন বলে আখ্যায়িত করে ছিলেন (নায়সাবুরী, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ৬৩; তাবারী, ৩য় খন্ড, পৃঃ৩৪৬০; বার,৪র্থ খন্ড, পৃঃ১৭৯৩; আছির, ৫ম খন্ড, পৃঃ৫৬৭; সাদ, ৮ম খন্ড,পৃঃ১৯২; হাজর, ৪র্থ খন্ড,পৃঃ৪৩২)।

ফাতিমা আবুবকরকে বলেছিলেন, আল্লাহর রাসুল ফদক আলাদা করে আমাকে দিয়েছিলেন। সুতরাং আপনি আমাকে তা ফেরত দিন। এতে আবুবকর তাঁকে বললেন তিনি যেন উম্মে আয়মন ছাড়া আরো ১জন সাক্ষী হাজির করেন। আবুবকর আরো বললেন, হে রাসুলের কন্যা, আপনি জানেন যে, ২জন পুরুষ বা ১জন পুরুষ ও ২জন মহিলা ছাড়া সাক্ষ্য গ্রহনীয় হয় না।

এসব ঘটনার পর একথা অস্বীকার করার উপায় থাকে না যে, ফদক রাসুলের (সাঃ) ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি এর দখল ফাতিমার হাতে তুলে দিয়ে তাঁকে তা দান করেছিলেন। কিন্তু আবুবকর তা বেদখল করে ফদক নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি আলী ও উম্মে আয়মনের সাক্ষী বাতিল করেছিলেন। এ বাতিলের ক্ষেত্র হিসাবে তিনি উল্লেখ করলেন যে, ১জন পুরুষ ও ১জন মহিলার সাক্ষ্য পরিপুর্ন হয় না। এছাড়াও ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ফাতিমার বক্তব্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু পিতামাতার পক্ষে সন্তানের সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করে আবুবকর তা বাতিল করে দিয়েছিলেন। তারপর রাসুলের (সাঃ) গোলাম রাবাহকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু তাকেও প্রত্যাখ্যান করা হলো ( বালাজুরী,১ম খন্ড,পৃঃ৩৫;ইয়াকুবী,৩য় খন্ড,পৃঃ১৯৫;মাসুদী, ৩য় খন্ড, পৃঃ২৩৭;আশকারী, পৃঃ২০৯; সামহুদী, ৩য় খন্ড,পৃঃ৯৯৯-১০০১;হামাবি, ৪র্থ খন্ড,পৃঃ২৩৯; হাদীদ, ১৬শ খন্ড,পৃঃ২১৬-২২০;হাজম,৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ৫০৭; শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৩৬১; রাজী,২৯তম খন্ড,পৃঃ২৮৪)।

এ পর্যায়ে একটা বিষয় বিবেচনার দাবী রাখে-তা হলো এটা ষ্পষ্ট হয়েছে যে, ফদক ফাতিমার দখলে ছিল এবং আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী তাঁর এক পত্রে উল্লেখ করেছেন, “ফদক আমাদের দখলে ছিল”। এ ক্ষেত্রে সাক্ষী উপস্থাপন করতে বলাটা কোন অর্থবহ নয়; এটা জুলুম করে অন্যের জমি দখল করার তাল্বাহানা মাত্র।কারন যার দখলে আছে তার সাক্ষী উপস্থাপন করার প্রয়োজন নেই-বরং যে দখলকারীকে উচ্ছেদ করতে চায় তার দাবীর জন্যই সাক্ষীর প্রয়োজন। কাজেই ফাতিমার সম্পত্তি দখল করার জন্য আবুবকরের সাক্ষী উপস্থাপন করা আইনসিদ্ব ছিল। যেহেতু আবুবকর এমন কোন প্রমান উপস্থিত করতে পারেন নাই সেহেতু ফদকে ফাতিমার মালিকানাই আইনের চোখে সঠিক।কাজেই আরো সাক্ষী বা প্রমান হাজির করার জন্য তাকে বলাটা অন্যায় ছাড়া কিছু নয়।

এটা একটা অবাক করা বিষয় যে, আবুবকরের কাছে অনেকেই এরকম দাবী পেশ করেছিলেন। তিনি কোন সাক্ষী প্রমানের প্রশ্ন না তুলেই দাবিদারকে তাদের দাবীকৃত সম্পত্তি দিয়েছিলেন। অথচ ফাতিমার বেলায় তিনি এসব তালবাহানা করে তাঁদেরকে দুঃখ-কষ্ট ফেলেছিলেন।এবিষয়ে হাদিসবেত্তাগন লিখেছেনঃ

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে বর্নিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল বলেছেন যে, যখন বাহরাইন থেকে যুদ্বলব্ধ্ব মাল পৌঁছবে তখন জাবির অমুক অমুক জিনিসগুলো পাবে।কিন্তু রাসুলের ওফাতের আগে সেই মালগুলি এসে পৌঁছায় নি। আবুবকরের খেলাফতকালে তা মদীনায় পৌঁছালে জাবির আবুবকরের কাছে গিয়েছিল। তখন আবুবকর ঘোষনা করলেন যে, রাসুলের বিরুদ্বে যাদের কোন দাবি-দাওয়া আছে অথবা রাসুল যদি কাউকে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন সে যেন তার দাবী নিয়ে আসে। এতে জাবির বললো, রাসুল (সাঃ) আমাকে অমুক অমুক মালগুলো দেয়ার কথা বলেছিলেন।আবুবকর বাহরাইনের যুদ্বলব্ধ্ব মাল হতে জাবিরকে তা দিয়েছিলেন (বুখারী, ৩য় খন্ড,পৃঃ১১৯,২০৯,২৩৬;৪র্থ খন্ড,পৃঃ১১০;৫ম খন্ড,পৃঃ২১৮;নায়সাবুরী,৩য় খন্ড,পৃঃ৭৫-৭৬;তিরমিজী,৫ম খন্ড,পৃঃ১২৯;হাম্বল,৩য় খন্ড,পৃঃ ৩০৭-৩০৮; সাদ, ২য় খন্ড,পৃঃ৮৮-৮৯)।

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আসকালানী (হিঃ৭৭৩/১৩৭২-৮৫২/১৪৪৯) এবং হানাফী(৭৬২/১৩৬১-৮৮৫/১৪৫১) লিখেছেনঃ

এ হাদিস থেকে ষ্পষ্ট বুঝা যায় যে, শুধুমাত্র একজন সাহাবীর পুর্ন সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহন করা জায়েজ-এমনকি যদি সে সাক্ষ্য তার নিজের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যও হয়। কারন আবুবকর জাবিরকে তার দাবীর স্বপক্ষে কোন সাক্ষী হাজির করতে বলেননি(আসকালানী,৫ম খন্ড,পৃঃ৩৮০;হানাফী,১২শ খন্ড,পৃঃ১২১)।...চলবে...

নিবেদক- মোহাম্মদ হোসাইন, সদস্য সচিব বাংলাদেশ ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .