পর্ব ১- আম্মার আস-সাবাতী থেকে বর্নিতঃআমি ইমাম আস-সাদিক্ক(আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃএকজন ইমাম কি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন?তিনি উত্তর দিলেনঃনা,কিন্তু যখনই তিনি কিছু জানতে চান,আল্লাহ তাঁকে সেটি জানিয়ে দেন।(আল-কাফীঃ১/২৫৭/৪;বাসায়ির আল-দারাজাতঃ৩১৫/৪;আল-ইখতিসাসঃ২৮৬)।
আহলে বাইতে (আঃ) শিক্ষাঙ্গন
ধর্মীয় বিষয়ে আহলে বায়েতের(আঃ) ব্যাখ্যা
‘আমর ইবনে হুরাইশ থেকে বর্নিতঃআমি ইমাম আস-সাদিক্ক(আঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলাম যখন তিনি তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদের বাড়িতে ছিলেন।আমি তাঁকে বললামঃআমি আপনার জন্য উতসর্গিত হই, কোন কারন আপনাকে এ বাড়িতে এনেছে?ইমাম(আঃ) উত্তর দিলেনঃ বিশ্রাম করার জন্য।আমি বললামঃ আমি আপনার জন্য উতসর্গিত হই,আমি কি আমার দ্বীনকে(ধর্মীয় বিশ্বাসকে) আপনার কাছে বলবো?তিনি বললেনঃ হ্যা।আমি বললামঃআমি আল্লাহর অনুগত হই এ সাক্ষ্য দিয়ে যে,আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই,তিনি এক-তার কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ(সাঃ) তাঁর দাস ও তাঁর রাসুল,পুনরুথথানের দিনটি আসার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং আল্লাহ সেদিন কবরে থাকা সবাইকে উঠাবেন এবং নামাজ বজায় রেখে,রমজান মাসে রোজা রেখে,আল্লাহর ঘরে হজ্ব করে,রাসুলুল্লাহর(সাঃ) বেলায়াতের(অভিভাবকত্ব) পর আমিরুল মু’মিনিন আলী(আঃ)-এর বেলায়াত মেনে,এরপর হাসান(আঃ) ও আল-হুসাইন(আঃ)-এর বেলায়াত এবং তারপরে আপনার( অর্থাৎ ইমাম আস-সাদিক্ব(আঃ)-এর বেলায়াত মেনে)-তাদের সবার উপর কল্যান বর্ষিত হোক-আপনারাই হলেন আমার ইমামগন এবং আমার জীবন ও মৃত্যু এ বিশ্বাসের উপর,যার মাধ্যমে আমি আল্লাহর দ্বীন পালন করে থাকি।এরপর ইমাম(আঃ) বললেনঃ হে ‘আমর,আল্লাহর শপথ! এটিই আল্লাহর দ্বীন এবং আমার পুর্বপুরুষদের দ্বীন-এর মাধ্যমেই আমি গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহর দ্বীন পালন করি।(আল-কাফী-২/২৩/১৪)।
আহলে বাইতের (আঃ) পরোপকারীতা
“তার(আল্লাহর) ভালবাসার কারনে তাঁরা খাবার দান করে-অভাবীকে, ইয়াতিমকে ও বন্দীকে,(এ কথা বলে,) ‘আমরা তোমাদের খাওয়াই না শুধু আল্লাহর কারনে।আমরা তোমাদের কাছে কোন পুরস্কার চাই না,আর না কোন ধন্যবাদ।“(সুরা ইনসান(দাহার)-৮-৯)।
“বরং তারা(তারা) অন্যদের অগ্রাধিকার দেয় নিজেদের চাইতে,যদিও তাঁরা নিজেরাই দরিদ্র।আর যারা তাদের নিজেদের লোভ থেকে রক্ষা পেয়েছে-তারাই হল যারা সফলকাম।(সুরা হাশর-৯)।“
ইবনে আব্বাস থেকে বর্নিতঃহাসান(আঃ) ও হুসাইন(আঃ) অসুস্থ হলে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) অনেক লোকজন সাথে নিয়ে তাদেরকে দেখতে যান।আলী(আঃ)-কে লক্ষ্য করে তাঁরা বললেনঃহে আবুল হাসান,আপনি বরং সন্তানদের জন্য মানত করুন।
আলী(আঃ),ফাতিমা(সাআ) ও তাদের তাদের দাসী ফিদ্দাহ মানত করলেন যে,যদি হাসান(আঃ) ও হুসাইন(আঃ) সুস্থ হয়ে যান তাহলে ৩ দিন রোজা রাখবেন।তারা সুস্থ হলেন,কিন্তু তাদের পরিবারে খাবার ছিল না।আলী(আঃ) শাম’উন খায়বারী নামে একজন ইহুদীর কাছ থেকে ৩ ‘সা’( ১ ‘সা’ প্রায় ৩ কেজি) পরিমান যব ঋণ করলেন।ফাতিমা(সাআ) এর একতৃতীয়াংশ গুড়া করলেন এবং ৫টি রুটি তৈরি করলেন যা ছিল তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যার সমান।তাঁরা রুটিগুলি তাদের সামনে রাখলেন ইফতার করার জন্য। এমন সময় একজন ভিক্ষুক তাদের দরজায় এসে বললঃ’আপনাদের সালাম, হে মুহাম্মাদের আহলে বায়েত,আমি একজন অভাবী লোক,আমাকে কিছু খাবার দিন যেন আল্লাহ আপনাদের বেহেস্তে খাবার দেন’।তারা ঐ ব্যক্তিকে তাদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দিলেন,(তাদের খাবারগুলো তাঁকে দিলেন) এবং রাতটুকু শুধু পানি খেয়ে কাটিয়ে দিলেন ও পরের দিন রোজা রাখলেন। ইফতারের জন্য সন্দ্ব্যায় যখন তাঁরা রুটিগুলো তাদের সামনে রাখলেন তখন একজন ইয়াতিম তাদের দরজায় আসলে তাঁরা তাদের নিজেদের উপর তাকেও প্রাধান্য দিলেন;৩য় দিনেও একজন বন্দি তাদের কাছে এসে একই দাবী জানালে তাঁরা তাঁর সাথে আগের মতই করলেন( অর্থাৎ তাদের রুটিগুলো তাঁকে দিলেন)।
পরদিন সকালে আলী(আঃ)-হাসান(আঃ) ও হুসাইন(আঃ)-কে হাতে ধরে রাসুলুল্লাহের(সাঃ) কাছে গেলেন।তিনি(সাঃ) তাদেরকে ক্ষুধায় ছোট্ট পাখির মত কাঁপতে দেখে বললেনঃতোমাদেরকে আমি যে কঠিন অবস্থায় দেখছি তা আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক!তিনি(সাঃ) তাদেরকে সাথে নিয়ে ফাতিমা (সাআ)-এর কাছে ফিরে গেলেন এবং দেখলেন যে ফাতিমা(সাআ) ক্ষুধায় পিঠ পেটের সাথে লাগা ও বসে যাওয়া চোখ নিয়ে নামাজের মেহরাবে আছেন।এটি তাকে(সা) কষ্ট দিল।এসময় জিব্রাইল(আঃ) অবতীর্ন হয়ে বললেনঃ ‘হে মুহাম্মাদ,এ সুরাটি নিন(সুরা দাহর বা ইনসান) আল্লাহ এতে আপনার আহলে বায়েতের(আঃ) প্রশংসা করেছেন’-এরপর সুরাটি তাঁর কাছে পড়লেন।(আল-কাশশাফ-৪/১৬৯;কাশফুল গুম্মাহ-১/৩০২)।...চলবে...
নিবেদক- মোহাম্মদ হোসাইন, বাংলাদেশ।