۱۰ فروردین ۱۴۰۳ |۱۹ رمضان ۱۴۴۵ | Mar 29, 2024
হযরত আলী (আঃ)
হযরত আলী (আঃ)

হাওজা / ইসলামের ইতিহাসের এই অংশটুকু সবচেয়ে তিক্ত ও বেদনাদায়ক চরম নির্মম একটি সত্য অধ্যায় , যা সৃষ্টিজগতের প্রতিটি জাগ্রত ও সচেতন অন্তরগুলোকে নির্মমভাবে যন্ত্রনাকাতর ও ভয়াবহ শোকাতাপে পুড়িয়ে মারে ।

লেখা: সাকিল আহমেদ

ইসলামের ইতিহাসের এই অংশটুকু সবচেয়ে তিক্ত ও বেদনাদায়ক চরম নির্মম একটি সত্য অধ্যায় , যা সৃষ্টিজগতের প্রতিটি জাগ্রত ও সচেতন অন্তরগুলোকে নির্মমভাবে যন্ত্রনাকাতর ও ভয়াবহ শোকাতাপে পুড়িয়ে মারে ।

সুপ্রিয় পাঠক , সংগত কারনে এখানে শীয়া মনীষীগনের বিস্তারিত বর্ননা বিন্দুমাত্র উল্লেখ করব না।

সম্মানীত পাঠকদের মধ্যে হয়ত এমন কেউ কেউ থাকতে পারেন যারা ওহীর গৃহ অর্থাৎ খাতুনে জান্নাত নবীকন্যার পবিত্র গৃহে আক্রমনের ঘটনাটি আহলে সুন্নাতের হাদিসবেত্তা ও ইতিহাস লেখকদের লিখিত ইতিহাস থেকে শুনতে চান ।

এ কারনে , এ অংশটুকু তাঁদের সূত্রাবলী ও দলীল প্রমানের উপর নির্ভর করেই লিখব যাতে সন্দেহপ্রবন ও বিলম্বে বিশ্বাসকারী ব্যক্তিরাও এ তিক্ত ঘটনাবলীর কথা বিশ্বাস করতে পারেন ।

এ বিষয় সুন্নিদের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে কুতাইবা দীনাওয়ারী তাঁর " আল ইমামাহ ওয়াস সীয়াসাহ " গ্রন্থে যা বর্ননা করেছেন , এখানে তার অনুবাদ সংক্ষেপে তুলে ধরছি ।

এই জঘন্য নির্মম ঘটনা আহলে সুন্নাতের সহীহ সিত্তাহ কিতাবেও বিদ্যমান আছে ।

আহলে সুন্নাতের লেখকগন এ বিষয় একমত যে , নবীজী (সাঃ) এর ওফাতের সাথে সাথে বনু সকীফা নামক স্থানে অল্প কিছু আনসার , মুহাজিরগনের তিনদিন ধরে হট্টগোল , হাতাহাতি , মারামারি ইত্যাদি ঘটনার দ্বারা হযরত আবু বকর সবেমাত্র ইসলামের ১ম খলীফা পদে আসিন হয়েছেন । তখন ১ম খলীফার পক্ষ থেকে সিদ্বান্ত নেয়া হয় যে , হযরত আলী (আঃ) , আব্বাস , যুবাইর , আবু যর গিফারী , সালমান ফারসী , আম্মার বিন ইয়াসীর ও বনী হাশেমের অন্যান্য লোকদের কাছ থেকে হযরত আবু বকরের খেলাফতের অনুকূলে যে করেই হোক বাইঅাত গ্রহন করতে হবে যাতে তাঁর খেলাফত ঐক্য ও সর্বসম্মত রুপ পায় ।

সবচেয়ে বড় বিষয় হল , আহলে বায়েত (আঃ) এর সমর্থন আদায়ের মানেই হল , খেলাফতের পথ থেকে সর্বপ্রকার অন্তরায় , সন্দেহ , ও বিরোধিতা অপসারিত হয় যাবে ।

মহানবী (সাঃ) এর অনুমোদনবিহীন বনু সকীফার ঘটনার পর বনী হাশিম ও মুহাজিরদের একটি দল ও ইমাম আলী (আঃ) এর ভক্ত ও অনুসারীবৃন্দ ঐ ঘটনার প্রতিবাদস্বরুপ খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) এর পবিত্র গৃহে আশ্রয় নেন ।

হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) এর পবিত্র গৃহে আশ্রয় গ্রহনকারীগন সকলেই রাসুল (সাঃ) এর যমানায় বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন ।

তাঁদের অাশ্রয় গ্রহন , খেলাফতের পক্ষ থেকে নবীকন্যার গৃহে আক্রমন চালানো এবং তাঁদেরকে জোরপূর্বক মসজিদে হাজির করে তাঁদের কাছ থেকে বাইআত গ্রহনের পরিকল্পনার পথে বাধা হয় দাড়ায় ।

কিন্ত ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত করার অন্ধ মোহে নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বায়েত (আঃ) এর গৃহের মর্যাদাকে চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত করা হল ।

প্রথম খলীফা বাহাদুর হযরত আবু বকরের নির্দেশে হযরত ওমরের নেতৃত্বে উসাইদ ইবনে হুযাইর , সালমাহ ইবনে সালামাহ , ছাবেত ইবনে কায়েস , মুহাম্মাদ ইবনে মুসলমাসহ একদল লোককে নিয়ে নবীকন্যার গৃহ ঘেরাও করা হল । উদ্দেশ্য একটাই , যে কোন মূল্যে নবীকন্যার গৃহে আশ্রয় গ্রহনকারীদের কাছ থেকে বাইআত আদায় করা ।

খলীফার আজ্ঞাবাহী হযরত ওমর ফাতেমা (সাঃআঃ) এর গৃহের সামনে দাড়িয়ে হুংকার দিয়ে বললেন ,

" গৃহে আশ্রয় গ্রহনকারীগন , বেরিয়ে এস এবং খলীফার হাতে বাইআত গ্রহন কর " ।

গৃহের ভিতর থেকে কোন সাড়া না পেয়ে হযরত ওমরের আদেশে ঐ গৃহে অগ্নি সংযোগ করার জন্য জ্বালানী কাঠ আনা হল । যাতে করে ঘরটি আশ্রয় গ্রহনকারীদের মাথার উপর ভস্মীভূত হয় ।

তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে একজন খলীফার আজ্ঞাবাহীকে এ অপরাধ কর্ম থেকে বিরত রাখার জন্য বললেন , " আপনি কিভাবে এই গৃহে আগুন জ্বালাতে পারেন , যে গৃহের সম্মুখে দাড়িয়ে নবীজী (সাঃ) স্বয়ং সালাম দিতেন এবং বর্তমানে গৃহের অভ্যন্তরে হযরত আলী (আঃ) , ফাতেমা (সাঃআঃ) , তাঁদের দুই শিশুপুত্র স্বয়ং অবস্থান করছেন ? " উত্তরে তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় বললেন , " ঘরের ভিতর ফাতেমার অবস্থান এ কাজে বাঁধা হবে না " ।

এ সময় হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) দরজার পেছনে দাড়িয়ে বললেন , " আমি এমন কোন সমষ্টিকে দেখি নি যারা কখনও তোমাদের মত নিকৃষ্ট অবস্থায় পতিত হয়েছে । তোমরা রাসুল (সাঃ) এর লাশকে আমাদের মাঝে ফেলে গেছো ও জানাজাতেও অংশ নিলে না এবং নিজেরা মিলে খেলাফত সম্পর্কে সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলেছো । কেন তোমরা তোমাদের ফয়সালা আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছো , আর যে খেলাফত আমাদের ন্যায্য অধিকার তা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছো না ? "

ইবনে কুতাইবা বলেন , ১ম খলীফা জানতেন যে , গৃহে অবস্থানকারীরা বনি হাশিম , আনসার , মুহাজিরদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তি আছেন , যাদের বাইআত আদায় না করা গেলে হুকমতের ভিত্তি দৃঢ় ও মজবুত হবেই না । অতএব যে কোন মূল্যে বাইআত আদায় করতেই হবে ।

এক পর্যায় হযরত আলী (আঃ) কে নির্দেশ দেয়া হল এই বলে যে , " আপনাকে রাসুলুল্লাহর খলীফার নির্দেশে এক্ষুনি মসজিদে যেতে হবে " ।

হযরত আলী (আঃ) জবাবে বললেন , " তোমরা এত শীঘ্রই কেন মহানবী (সাঃ) এর নামে মিথ্যা রচনা করলে ? মহানবী (সাঃ) কখন কোথায় তাকে স্বীয় খলীফা নির্ধারন করলেন যে , তিনি মহানবী (সাঃ) এর খলীফা হবেন ? " যাহোক , বাইআত গ্রহনের পুনঃপুন আহবান প্রত্যাখাত হবার পরে সদ্য পিতা হারানো নবী কন্যার গৃহে অগ্নি সংযোগ করা হল ।

আক্রমনকারীদের শব্দ শুনতে পেয়ে ফাতেমা (সাঃআঃ) গৃহের দরজার পিছনে উচ্চস্বরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বললেন , " বাবা ! হে আল্লাহর নবী ! আপনার মৃত্যুর পর ইবনে খাত্তাব আর ইবনে আবি কুহাফার দ্বারা আমরা এ কি বিপদে আক্রান্ত হলাম ! "

এ প্রসংগে শাহরিস্তানী মুতাযিলা নেতা ইবরাহীম ইবনে সাইয়্যার ওরফে গ্বিত্বাম থেকে বর্ননা করেন যে , তিনি বলতেন , " হযরত ওমর বাইআত গ্রহনের দিনগুলিতে হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) এর পাজরের উপর জ্বলন্ত দরজা লাথি মেরে ফেলে দেন । ফলে তাঁর গর্ভস্থিত সন্তানের গর্ভপাত ঘটে । তিনি বাড়ীর ভিতর যারা ছিলেন তাঁদের সমেত ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতেও নির্দেশ দেন , যদিও ঘরের ভিতর আলী , ফাতেমা , হাসান ও হুসাইন (আঃ) ছাড়া আর কেউ ছিল না " । সূত্র - আল মেলাল ওয়ান নেহাল , ২য় খন্ড , পৃ- ৯৫ ।

এক পর্যায় হযরত আলী (আঃ) কে টেনে হিচড়ে খলীফার সম্মুখে হাজির করা হয় ।

হযরত আলী বললেন , " যদি বাইআত না হই তাহলে কি হবে ? " তারা বলল , " তাহলে নিহত হবেন " । হযরত আলী (আঃ) বললেন , " কোন সাহসে তোমরা আল্লাহর বান্দা ও রাসুলের ভাইকে হত্যা করবে ? "

হযরত আলী (আঃ) এর তীব্র প্রতিরোধের মুখে বাইআত আদায় সম্পূর্ন ব্যার্থ হয়ে খলীফাসহ তাঁর লোকজন হযরত আলী (আঃ) কে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল ।

ইমাম আলী (আঃ) এই জুলুম আর অত্যাচারের বিরুদ্বে নবীজী (সাঃ) এর রওজাতে গেলেন ।

সেখানে তিনি হযরত হারুন (আঃ) হযরত মুসা (আঃ) কে যে বাক্যটি বলেছিলেন , কোরআনের সেই আয়াতটি উচ্চারন করলেন , " ---- হে ভাই (আপনার অবর্তমানে ) , এই দলটি আমাকে অসহায় করে ফেলেছে এবং আমাকে প্রায় হত্যা করে ফেলেছিল ---- " । সুরা - আরাফ / ১৫০ ।

এরই ধারাবাহিকতায় বাইআত আদায় ব্যর্থ হয়ে নবীকন্যার বৈধ পৈত্রিক সম্পত্তি বাগে ফাদাক ১ম খলীফা বাহাদুর হযরত আবু বকর অবৈধভাবে বাজেয়াপ্ত করেন ।

পাঠক , পরিশেষে শুধু এটুকু বলছি যে , এই বাইআত আদায় ব্যর্থ হয়ে খলীফাতুন মুসলেমিনদের হাতে মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত ইমাম , ইমাম আলী (আঃ) থেকে শুরু করে এগারতম ইমাম হাসান আসকারি (আঃ) পর্যন্ত , এগার জন পবিত্র ইমাম (আঃ) গনকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা হতে হয়েছে ।

আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) কতৃক সম্পূর্ন অনুমোদনহীন খলীফাগনের সাথে কোন অাপোস নয় ,

রাসুল (সাঃ) এর দ্বীন রক্ষার্থে প্রয়োজনে নিজের জীবন কুরবানী দিয়েছেন , তবুও অন্যায়ের নিকট মাথা নত বা বাইআত হন নি ।

এবং সর্বশেষ বারতম ইমাম -- ইমাম মাহদী (আঃ) কে যদি মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে হেফাজত না করতেন তাহলে ওনাকেও হত্যা করা হত ।

হযরত আলী (আঃ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ বার তম ইমাম , ইমাম মাহদী (আঃ) কোন খলীফাগনের প্রতি বাইআত বা আনুগত্য করেন নি -- আশা করি এ বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন ।

ইচ্ছা থাকা সত্বেও লেখাটি সংক্ষেপ করতে পারলাম না বলে দুঃখিত ।

তথ্যসূত্র -- বেলায়েতের দ্যুতি মূল - আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী

অনুবাদে - আব্দুল কুদ্দুস বাদশা ও মোঃ মাঈনউদ্দিন । পৃষ্ঠা - ১৭৫ থেকে ১৮৩ ছায়া অবলম্বনে ।

এছাড়াও এ বিষয় আরও বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন , মাওলার অভিষেক , মূল - সদর উদ্দিন চিশতী ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .