মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান
পর্ব ৮- হযরত আয়েশা ( রা.) বলেন : যখনই তাঁর কাছে হযরত ফাতিমার ( আ .) বিনতে নবীর ( সা.) কথা স্মরণ করা হত তখন তিনি বলতেন : " কেবল তাঁর জন্মদাতা পিতা ( রাসূলুল্লাহ - সা. - ) ব্যতীত তাঁর ( ফাতিমা ) চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কাউকে আমি দেখি নাই ।"
مَا رَأَيْتُ أَحَدَاً كَانَ أَصْدَقَ لَهْجَةً مِنْهَا إِلَّا أَنْ يَكُوْنَ الَّذِيْ وَلَدَهَا .
হাকিম নীশাপুরী বলেন : এ হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্তে সহীহ এবং শাইখাইন তা রিওয়ায়ত করেন নি । আর তাঁর ( হাকিম নীশাপুরী ) সাথে আল্লামা যাহাবী ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেন : ( মুসলিমের শর্তে হাদীসটি ) সহীহ ।
[ দ্র : আল-মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩৭১ , প্রকাশক : দারুল ফিকর , বৈরুত লেবানন , প্রকাশ কাল : ২০০২ ( ১৪২২ হি.) ]
তাই হযরত ফাতিমা (আ.) কখনোই মিথ্যা বলতে ও বাতিল মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন না । আর এ থেকে প্রমাণিত হয় যে তাঁর নীতি অবস্থান ও গৃহীত পদক্ষেপ ছিল ন্যায্য ও সত্য ( হক ) ।
হযরত আয়েশা ( রা.) বলেন : " চাল চলন , চলাফেরা - উঠাবসা , কথাবার্তা , সভাব-চরিত্র ( সীরাত ) ও আচার - আচরণে হযরত ফাতিমার ( আ.) চেয়ে রাসূলুল্লাহর (সা.) সাথে অধিক সদৃশ আমি কাউকে দেখি নাই । " তিনি ( আয়েশা ) বলেন : যখন তিনি ( ফাতিমা ) মহানবীর ( সা.) কাছে প্রবেশ করতেন তখন তিনি ( সা. ) উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে ( আ.) চুম্বন করতেন এবং তাঁকে ( আ.) তাঁর ( সা.) নিজের বসার স্থানে বসাতেন ; আর মহানবীও ( সা .) যখন তাঁর ( স.) কাছে প্রবেশ করতেন তখন তিনি ( ফাতিমা ) নিজের বসার স্থান থেকে উঠে দাঁড়াতেন , তাঁকে ( সা.) চুম্বন করতেন এবং তাঁকে ( সা.) নিজের বসার স্থানে বসাতেন । অত:পর মহানবী ( সা.) অসুস্থ হলে ফাতিমা ( আ.) (তাঁকে - সা.- ) দেখতে আসলেন এবং তিনি মহানবীর ( সা.) উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে চুম্বন করেন এরপর তিনি ( আ.) মাথা উঠিয়ে কাঁদলেন ; এরপর আবার তাঁর ওপর ঝাপিয়ে পড়েলেন ; অত:পর আবার মাথা উঠিয়ে হাসলেন । আমি মনে মনে বললাম : আমি তো ভাবতাম যে এ ( ফাতিমা ) তো আমাদের নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমতী । কারণ তিনি ছিলেন আমাদের প্রাপ্ত বয়স্কা
নারীদের অন্তর্ভুক্ত । অত:পর মহানবী ( সা.) ইন্তেকাল করলে আমি তাঁকে (ফাতিমা) জিজ্ঞেস করলাম : যখন তুমি মহানবীর ( সা.) ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মাথা উঠিয়ে কাঁদলে এরপর আবার তাঁর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে ফের মাথা উঠিয়ে হাসলে তখন তোমার দৃষ্টিতে কোন্ বিষয় তোমাকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছিল ? ফাতিমা বললেন : " তিনি ( সা. ) আমাকে জানালেন যে তিনি (সা.) তাঁর এ রোগে মৃত্যু বরণ করবেন আর তখন আমি কাঁদলাম । এরপর যখন তিনি ( সা.) আমাকে জানালেন যে আমি তাঁর আহলুল বাইতের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হব তখন আমি হাসলাম ।
আবূ ঈসা বলেন : এ হাদীসটি এই সনদ সূত্রে হাসান গরীব হাদীস । তবে হযরত আয়েশা ( রা.) থেকে আরো একাধিক সনদ সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ।
দ্র : সহীহ তিরমিযী , ৫০ কিতাবুল মানাক্বিব , বাব ৬১ : হযরত ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ - সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়া সাল্লাম - এর ফযীলত , হাদীস নং ৩৮৮১ , পৃ : ১০০৭ )।
এ হাদীস থেকেও স্পষ্ট হয়ে যায় যে , যেহেতু মহানবীর জীবনাদর্শ , স্বভাব - চরিত্র ও সীরাতই ছিল হযরত ফাতিমা যাহরার (আ) জীবনাদর্শ , স্বভাব - চরিত্র ও সীরাত সেহেতু হযরত ফাতিমার ( আ.) হযরত আবূ বকরকে বাইআত না করা ও তাঁকে খলীফা বলে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং মহানবীর উত্তরাধিকার ও মীরাস থেকে তাঁর ন্যায্য হক ও অধিকার বঞ্চিত করার জন্য তিনি ( আ.) আবূ বকরের ওপর তীব্র রাগান্বিত ও অসন্তুষ্ট হওয়া , আমৃত্যু তাঁর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া এবং তাঁর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা
ইত্যাদি সংক্রান্ত তাঁর বিপ্লবী পদক্ষেপ ও নীতি অবস্থান ছিল সঠিক ও সময়োচিত যা হযরত আবু বকর এবং তার পরবর্তী সকল খলীফার খিলাফতকে বাতিল প্রতিপন্ন করেছে । আর এ কারণেই হযরত ফাতিমাকে (আ) নিজের জীবন দিয়ে চরম মূল্যও দিতে হয়েছে । অর্থাৎ তাঁর এ বৈপ্লবিক পদক্ষেপ ও নীতি অবস্থান তাঁর শাহাদাতের কারণ হয়েছিল যে ব্যাপারে আমরা পরবর্তী পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করব । (সমাপ্ত)