অনুবাদ : মোহাম্মাদ মুনীর হোসেইন খান
পর্ব ৪- কতিপয় রেওয়ায়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম মাহ্দী (আ.) হিজায বিজয়ের পর দক্ষিণ ইরান অভিমুখে রওয়ানা এবং সেখানে খোরাসানী ও শুআইব ইবনে সালিহের নেতৃত্বাধীন ইরানী সেনাবাহিনী ও সেদেশের জনগণের সাথে মিলিত হবেন। তারা তাঁর হাতে বাইআত করবে। তিনি তাদের সহায়তায় বসরায় শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন যার ফলে তিনি এক সুস্পষ্ট ও বিরাট বিজয় লাভ করবেন।
এরপর তিনি ইরাকে প্রবেশ করবেন এবং সেখানকার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ পরিস্থিতির উন্নতি সাধন করবেন। তিনি সেদেশে সুফিয়ানী বাহিনীর অবশিষ্টাংশ এবং অন্যান্য দলের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে তাদেরকে পরাভূত ও হত্যা করবেন।
এরপর তিনি ইরাককে তাঁর প্রশাসনের কেন্দ্র এবং কুফা নগরীকে রাজধানী হিসাবে মনোনীত করবেন। আর এভাবে ইয়েমেন, হিজায, ইরাক এবং পারস্য উপসাগরীয় দেশসমূহ সর্বতোভাবে তাঁর শাসনাধীনে চলে আসবে।
রেওয়ায়াতসমূহ এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইরাক বিজয়ের পর ইমাম মাহ্দী (আ.) সর্বপ্রথম যে যুদ্ধের উদ্যোগ নেবেন তা হবে তুর্কীদের সাথে তাঁর যুদ্ধ। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :
أول لواء يعقده يبعثه إلى التّرك فيهزمهم
‘প্রথম যে সেনাদল তিনি গঠন করবেন তা তিনি তুর্কীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবেন। অতঃপর তা তাদেরকে পরাজিত করবে।’ বাহ্যত তুর্কী বলতে রুশদেরকেও বোঝানো হতে পারে যারা রোমানদের (পাশ্চাত্যের) সাথে যুদ্ধের পর দুর্বল হয়ে পড়বে।
ইমাম মাহ্দী (আ.) সেনাদল গঠন করার পর তাঁর বিশাল সেনাবাহিনীকে কুদ্সে (জেরুজালেম) প্রেরণ করবেন। এ সময় তাঁর সেনাবাহিনী দামেস্কের কাছে ‘মার্জ আযরা’ এলাকায় আগমন করা পর্যন্ত সুফিয়ানী পশ্চাদপসরণ করতে থাকবে এবং তাঁর ও সুফিয়ানীর মাঝে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতি জনসমর্থন বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাঁর সামনে সুফিয়ানীর অবস্থান এতটা দুর্বল হয়ে পড়বে যে, সুফিয়ানী তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাইবে। কিন্তু এ কাজের জন্য তার ইহুদী-রোমান মিত্র ও পৃষ্ঠপোষক এবং তার সঙ্গী-সাথীরা তাকে তীব্র ভৎর্সনা করবে।
তারা তাদের সেনাবাহিনী মোতায়েন করার পর ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সেনাবাহিনীর সাথে এক বিরাট যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এ যুদ্ধের উপকূলীয় অক্ষরেখাসমূহ ফিলিস্তিনের আক্কা (عكّا) থেকে তুরস্কের আনতাকিয়াহ্ (انطاكية) পর্যন্ত এবং ভিতরের দিকে তাবারীয়াহ্[1] থেকে দামেস্ক ও কুদ্স পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এ সময় সুফিয়ানী, ইহুদী এবং রোমান সেনাবাহিনী মহান আল্লাহ্র (ঐশী) ক্রোধে পতিত হবে এবং তারা মুসলমানদের হাতে এমনভাবে নিহত হতে থাকবে যে, তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি যদি কোন প্রস্তরখন্ডের পিছনেও লুকায় তখন ঐ প্রস্তরখন্ড চিৎকার করে বলে উঠবে : ‘হে মুসলমান! এখানে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। তাকে হত্যা করো।’
এ সময় মহান আল্লাহ্র সাহায্য ইমাম মাহ্দী (আ.) ও মুসলমানদের কাছে আসবে এবং তাঁরা বিজয়ী বেশে আল কুদ্সে প্রবেশ করবেন।
খ্রিস্টান পাশ্চাত্য আকস্মিকভাবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে ইহুদী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক শক্তিসমূহের পরাজয় বরণের কথা জানতে পারবে। তাদের ক্রোধাগ্নি প্রজ্বলিত হবে এবং তারা ইমাম মাহ্দীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। কিন্তু আকস্মিকভাবে হযরত ঈসা (আ.) আকাশ থেকে পবিত্র কুদ্সের ওপর অবতরণ করবেন এবং তিনি সমগ্র বিশ্ববাসী, বিশেষ করে খ্রিস্টানদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।...চলবে…