মাওলানা আলী রেজা (রানা)
১/ হযরত মূসা ইবনে জাফর সাদিক্ব (আঃ)হতে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি পবিত্র রজব মাসে একদিন রোযা রাখে, সে ব্যক্তি এক বছর জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পায় এবং যে ব্যক্তি তিনদিন রোযা রাখে তার উপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেছেন : “রজব” বেহেশতের একটি ঝর্ণাধারার নাম, যার (পানি) দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি।
যে ব্যক্তি এ মাসে একদিন রোযা রাখে সে অবশ্যই এ ঝর্ণাধারা হতে পানি পান করবে।
২/ ১লা রজবের রোযার ফযিলতঃ
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত নুহ (আঃ) এই দিন নৌকায় আরোহন করেছিলেন এবং তিনি তাঁর সকল সঙ্গীদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যে ব্যক্তি এ দিনে রোযা রাখবে এক বছর তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ দান করা হবে।
৩/ কেউ যদি রজব মাসে তিনদিন রোযা রাখে তাহলে আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের মাঝে পরিখা স্বরূপ প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে দিবেন আর সেই পরিখারআয়তন হবে ৮০ বছর এবং ইফতারির সময় আল্লাহ তাকে উদ্দেশ্যে করে বলবেনঃ তোমার প্রাপ্য অধিকার আমি তোমাকে দান করব এবং তোমাকে ভালবাসা হচ্ছে আমার দ্বায়িত্ব, হে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষি থাক আমি তার সকল গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দিলাম। (ইক্ববালুলআমাল, খন্ড২, পৃষ্ঠা৭৭৯, ৭৮০)
৪/ এ মাসে তিনদিন; বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার রোযা রাখা।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি হারাম মাসসমূহের যে কোন একটিতে এই তিন দিন রোযা রাখে, মহান আল্লাহ তাকে ৯০০ বছরের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব দান করেন।
৫/ রসূল (সঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি রজব মাসের ৫দিন রোযা রাখে আল্লাহ তাকে কেয়ামতে সন্তুষ্ট রাখবেন, তাকে এমন পদমর্যাদা দান করবেন যে, তার চেহারা পূর্ণিমার চাদের ন্যায় উজ্জল হবে, সে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাকে বলা হবে যে, তোমার যা ইচ্ছা তুমি আল্লাহর কাছে চাইতে পার। (ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮২)
৬/ রসূল (সঃ) বলেছেনঃ কেউ যদি রজব মাসে ৬ দিন রোযা রাখে তাহলে যখন তাকে কবর থেকে পুণরুত্থিত করা হবে তখন তার চেহারা সূর্যের কিরণের চেয়ে অনেক বেশী উজ্জলিত হবে। কেয়ামতে তার ঐ নূরের কারণে সকলে তার প্রতি আকৃষ্ট হবে, আল্লাহ তাকে ঈমানদারদের সারিতে রাখবেন এবং সে বিনা হিসাবে পুল সীরাত অতিক্রম করবে। (ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮২, ৭৮৩)
৭/ ২৭ রজবে রোযা রাখলে ৭০ বছরের রোযার সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়।
৮/ জনাব সালেম হতে ইবনে বাবওয়াইহ্ (রহ.) বর্ণনা করেছেনঃ রজব মাস শেষ হতে কয়েকদিন অবশিষ্ট ছিল, আমি ইমাম সাদিক্ব (আঃ) এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য যায়। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি এ মাসে রোযা রেখেছ? আমি বললামঃ না হে রসূলের সন্তান! তিনি বললেনঃ তোমার এত সওয়াব হাত ছাড়া হয়েছে যে, যার পরিমাণ মহান আল্লাহ তায়া'লা ছাড়া আর কেউই জানে না। নিশ্চয়ই এটা মহান আল্লাহ তায়া'লার মাস। মহান আল্লাহ একে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন, এ মাসের মর্যাদাকে অত্যাধিক বৃদ্ধি করেছেন এবং এ মাসে রোযাদারদের সম্মানিত করাকে নিজের জন্য আবশ্যক করেছেন।
অতঃপর আমি বললামঃ হে রসূল (সঃ) এর সন্তান! আমি যদি এই মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে রোযা রাখি তবে কি ঐ সওয়াবের অধিকারী হতে পারবো? তিনি বললেনঃ হে সালেম! যে ব্যক্তি এ মাসের শেষ দিনগুলিতে একদিন রোযা রাখে মহান আল্লাহ্ তাকে মৃত্যুপূর্ব যন্ত্রণা, মৃত্যুর পর ভয় এবং কবরের আযাব হতে নিরাপত্তা প্রদান করেন।
আর যে ব্যক্তি এ মাসের শেষের দিনগুলির দুদিন রোযা রাখে সে পুলসিরাত সহজেই অতিক্রম করবে।
যে ব্যক্তি এ মাসের শেষ দিনগুলির তিনদিন রোযা রাখবে সে কেয়ামত দিবসের বৃহৎ ভয়, সেদিনের তীব্র আতংক হতে নিরাপদ থাকবে।
৯/ ১৫ই রজবের দিনে কেউ যদি “আমলে উম্মে দাউদ” সম্পাদন করতে চাই তাহলে তাকে ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে রোযা রাখতে হবে, এর অধিক সওয়াব আছে যা রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়েছে।
১০/ রজব মাসের রোযার জন্য প্রচুর ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।
এমনও বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি এই মাসে রোযা রাখতে সক্ষম না হয় তবে নিন্মোক্ত তসবিহ যেন পাঠ করে, এর মাধ্যমে সে রোযার সওয়াব লাভ করবে।
سُبحاَنَ الاِلهِ الجَلِیلِ سُبحاَنَ مَن لاَ یَنبَغیِ التَسبِیحُ اِلّا لَهُ سُبحاَنَ الاَعَزِّ الاَکرَمِ سُبحاَنَ مَن لَبِسَ العِزَّ وَ هُوَ لَهُ اَهلٌ.
ছুবহা-নাল ইলাহিল জালীলি ছুবহা-না মান লা ইয়ামবাগ্বীত তাছবীহু ইল্লা লাহু ছুবহা-নাল আ আ'যযিল আকরামি ছুবহা-না মান লাবিছাল ই'যযা ওয়া হুওয়া লাহু আহলুন।
সূত্রঃ মুফাতিহুল জিনান।