۱۷ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۲۷ شوال ۱۴۴۵ | May 6, 2024
ইসলামী বিপ্লব বার্ষিকী-২০২২ উপলক্ষে ওয়েবিনার
ইসলামী বিপ্লব বার্ষিকী-২০২২ উপলক্ষে ওয়েবিনার

হাওজা / ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের “ইসলামী বিপ্লব বার্ষিকী-২০২২” উপলক্ষে ওয়েবিনারে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা করা হয়।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১২-০২-২০২২ ইং আহলে বাইত ফাউন্ডেশন, খুলনা, বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের “ইসলামী বিপ্লব বার্ষিকী-২০২২” উপলক্ষে ওয়েবিনারে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার ব্যবস্থা করে। আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন মাজীদ থেকে তেলাওয়াত করেন ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের হাওজা বিভাগের ছাত্র জনাব ক্বারী মোঃ আমিরুল ইসলাম।

স্বাগত বক্তব্যে রাখেন আহলে বায়েত (আ.) ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক ও পাক্ষিক ফজর পত্রিকার প্রকাশক জনাব মোহাম্মদ ইকবাল। তিনি ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইসলামী বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে কারবালার চেতনা ও আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস। তিনি এ মহান দিবসে সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা, শিক্ষা বিভাগের প্রধান, ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র, খুলনা, বাংলাদেশ। তার বক্তৃতায় তিনি বলেন, ইমাম খোমেনী (রহ.) পবিত্র কোরআনের আদেশ অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জালিম শাহের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ইসলামী বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামী দেশগুলোর দুর্নীতিগ্রস্ত শাসক যেমন মোস্তফা কামাল পাশা এবং রেজা খান তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ধর্ম ও ধর্মপরায়নতাকে পরাজিত করে রাষ্ট্রকে ধর্ম বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। কামাল পাশা ১৯২৫ সালে রাজনীতি থেকে ধর্মকে পৃথক করার মতবাদ ঘোষণা করেন এবং ১৯২৮ সালে এই ভিত্তিতে ইসলামকে রাষ্টীয় ধর্ম থেকে বাদ দেয়। রেজা খানও ইরানের রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার নীতি অনুসরণ করেছিলেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে চারদিকে মজলুম মুসলমানদের জয়যাত্রা শুরু হলো। ২০০০ সালে লেবাননে হিজবুল্লাহ তাদের দেশ থেকে ইসরাইলের সৈন্যদের বের করে দিতে সক্ষম হয় এবং ২০০৬ সালে ইসরাইল লেবাননে হামলা করলে হিজবুল্লাহ তাদের ৩৩ দিনের যুদ্ধে পরাজিত করে। এরপরে ২০০৮ সালে ইসরাইল গাজার হামালা করলে ইসলামিক জিহাদ ও হামাস যৌথভাবে ২২দিনে এবং ২০১২ সালে ৮দিনে ইসরাইল পরাজয় বরণ করে এবং পিছু হঠতে বাধ্য হয়।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. মোহাম্মদ আলী ময়ীনিয়ান, মহাপরিচালক, মুবাল্লিগ বিভাগ, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আহলুল বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। তার বক্তৃতায় তিনি বলেন, মানবতার সৃষ্টির সূচনা থেকেই আল্লাহর জমিনে হক ও বাতিল বিদ্যমান ছিল এবং আল্লাহ বাতিল থেকে হককে বেছে বের করার দায়িত্ব মানুষের কাঁধেই ন্যাস্ত করেছেন। বর্তমানে আমরা হযরত মাহদী (আ.) গায়বতে কুবরা তথা দীর্ঘ অনুপস্থিতির যুগে বসবাস করছি এবং তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করা সহজতর নয়। রাসুল (সা.) বলেন, প্রাচ্যের একদল লোক বিপ্লব করবেন এবং তাঁর (আ.) আবির্ভাবের ক্ষেত্র তৈরী করবেন। ইসলামের শক্তিকে উচিয়ে ধরতে চেষ্টা করতে হবে এবং এর শিক্ষাগুলো যেন পৃথিবী ব্যাপী বাস্তবায়িত হয় সে চেষ্টাও চালাতে হবে। আর এর মাধ্যমে যেন যুগের ইমামের (আ.) আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। জিহাদ, আত্মত্যাগ ও প্রতিরোধক্ষমতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. মোহাম্মাদ জাওয়াদ যারিয়ান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-প্রধান, আহলুল বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। ভূমিকার পর সকলকে স্বাগত ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, ইরানের এ বিপ্লবের ফলে বিশ্বে “জিহাদ ও তার সংজ্ঞা” নিয়ে কথোপথন শুরু হয়েছে। ইমাম খোমেনী (রহ.) শাহের বিরুদ্ধে উত্থান করলে বিশ্ববাসী তাঁর বিরোধীতা শুরু করে এবং শাহের পক্ষ নেয়। পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে মোনাফিক গোষ্ঠী, ইরাকের সাদ্দাম সরকার প্রভৃতিকে লেলিয়ে দেয়। এ বিপ্লবের ফলে ইরানের অর্থনীতি উন্নতি লাভ করেছে। বিশ্ব মুসলিম এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এবং অনেক স্থানেই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। শেষে তিনি দোয়া জানিয়ে স্বীয় বক্তব্যের সমাপ্তি টানেন।

জনাব সাইয়্যেদ হাসান সেহাত, মাননীয় কালচারাল কাউন্সিলর, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস, ঢাকা, বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ইরানে ইসলামী বিপ্লব প্রমাণ করেছে যে, বিশ্বে একনায়কতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। এই বিপ্লব রুশ ও চীনের বিপ্লব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং এই বিপ্লব ধর্মের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অন্যন্য বিপ্লব থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। এই বিপ্লব বিশ্ব মুসলমানদেরকে বার্তা দিয়েছিল তা হলো ঐক্য ও সংহতির বার্তা, সুখ ও শান্তির নিরাপত্তার বার্তা এবং এই বিপ্লবের জন্য মানুষ যেমন জীবন দিয়েছিল তেমনি বিপ্লব রক্ষার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত।

জনাব মোঃ রেযা নাফার, মাননীয় রাষ্ট্রদূত, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস, ঢাকা, বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এই বিপ্লব বিশ্বে যেসব বিপ্লব ঘটেছে তার সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের একটি বিপ্লব। এটা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়। এই বিপ্লবের কারণে আজকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মধ্যে বিপ্লব ও জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব আজকে ফিলিস্তিনে হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতিদের মধ্যে বিপ্লবের চেতনা গড়ে উঠেছে। এই বিপ্লবের কারণে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে ইরানের সাথে ধর্মীয় সুসম্পর্ক থাকার কারণে এই বিপ্লবকে তারা সাদরে গ্রহণ করেছে এবং ৪৩তম বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকীতে সম্পর্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।

ড. কামাল উদ্দিন প্রধান, অধ্যাপক, ফার্সী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বক্তব্যের শুরুতে তিনি সভায় উপস্থিত শ্রোতাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানান। ইরানী জাতিকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এ বিজয়কে আমরা শুধু ইরানীদের বিজয় মনে করি না বরং মুসলমানদের বিজয় মনে করি। সুচনালগ্নে এই বিপ্লব মাত্র একটি ছোট পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু আজ এটি বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং এজন্যই শত্রæরা ইরানের উপর বয়কট আরোপ করেই চলেছে। ইরানের জনগণ ইমাম খোমেনীর (রহ.) সঙ্গ দেয়ায় এ বিপ্লব বিজয় অর্জন করে এবং বিশ্ববাসী এর প্রতি আশার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। রুশ বিপ্লব, চীনের বিপ্লব ইত্যাদিকে এ বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করা সমীচীন নয়। ইরানের জনগণ আল্লাহ হুকুমের আনুগত্য করায় এটি বিজয় লাভ করেছে। ইরান-বাংলাদেশের ফার্সি ভাষার সম্পর্ক অতি প্রাচীন। শেষে তিনি সবাইকে স্বাগত ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস, উপাধ্যক্ষ, ইরানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা, বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এই বিপ্লব নিপীড়িত জনগণের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। বিশ্বের সব বিপ্লব নিপীড়িত জনগণের সাথে ছিল তবে পার্থক্য হলো কোরআনের দৃষ্টিতে নিপীড়িত মানুষ তাদেরকে বলা হয় যারা ঈমান ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে দূর্বল।

জনাব এ.কে.এম বদরুদ্দোজা, সিনিয়র আইনজীবি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সহ-সভাপতি আল-কুদস কমিটি, বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ইসলামী বিপ্লব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লব ছিল না। এই বিপ্লব একটি ধর্মীয় বিপ্লব ছিল। যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও আমেরিকাকে ভাবিয়ে তুলে। তারা কয়েকবার হামাস ও হিজবুল্লাহর কাছে পরাজিত হয়। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানরা হামাস ও হিজবুল্লাহর মত দল সৃষ্টি হয় এবং বিপ্লব থেকে উজ্জীবিত হয়। এই বিপ্লব ইরানে সর্বস্তরে প্রতিফলিত হয়েছে এবং আমরা আশা করি এই বিপ্লবেরই ফলে আল-কুদস মুক্ত হবে।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সৈয়দ ইব্রাহীম খলীল রাজাভী, সভাপতি, আাহলে বাইত (আ.) ফাউন্ডেশন এবং অধ্যক্ষ, ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র, খুলনা। তিনি বলেন, এই বিপ্লব আমাদের কাছে একটি আমানত। এই আমানতকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দিতে হবে। এই বিপ্লব যদি সফল না হতো তাহলে আল-কুদস মুক্তির ব্যাপারে আন্দোলন হতো না। এই বিপ্লব সফল না হতো তাহলে মজলুমরা আরো মজলুম হয়ে যেত। এই বিপ্লবের সফলতার কারণে গ্রেট ইসরাইলের যে স্বপ্ন ছিল তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .