অনুবাদ: মোহাম্মাদ শামীম হুসাইন মীর্জা
মহান আল্লাহ এই মহাবিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা এবং তিনিই মখলুকাতকে সঠিকভাবে পরিচালনা করেন; কিন্তু কিছু লোক এই নির্দেশনা গ্রহণ করে না এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে প্রভু বা অভিভাবক হিসেবে বেছে নেয়। আর তাদের এই পছন্দ অবশ্য অন্ধত্বকে বেছে নেওয়া এবং অন্ধকারে হাঁটার মতো।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
«قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ قُلِ اللَّهُ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُمْ مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لَا يَمْلِكُونَ لِأَنْفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ».
(হে রাসূল!) তুমি বল, ‘আকাশসমূহ ও পৃথিবীর প্রতিপালক কে?’ তুমি বল, (তিনি) ‘আল্লাহ।’ (আরও) বল, ‘তোমরা কি তাঁকে ছেড়ে এমন কিছুকে তোমাদের অভিভাবক করেছ যারা না নিজেদেরই উপকার করতে সক্ষম, আর না ক্ষতি করতে?’ তুমি বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে?’ অথবা ‘অন্ধকার ও আলো কি সমান?’ তারা কি আল্লাহর এমন অংশীসমূহ সাব্যস্ত করেছে যারা তাঁর সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু সৃজন করেছে যার কারণে সৃষ্টি তাদের কাছে সদৃশ মনে হয়েছে? তুমি বলে দাও, ‘আল্লাহ-ই সকল বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনি অদ্বিতীয়, মহাপ্রতাপশালী।
সূরা রা’দ, আয়াত: ১৬।
এই আয়াতটি পবিত্র কুরআনের অন্যতম একেশ্বরবাদী আয়াত। এই আয়াতে মহান আল্লাহ এবং সৃষ্ট জগতে মানুষের পথপ্রদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে। আয়াতের শুরুতে বলা হয়েছে: ‘আকাশসমূহ ও পৃথিবীর প্রতিপালক কে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “মহান আল্লাহ”। আরও বলা হয়েছে: “তাহলে কেন এমন কিছুকে অভিভাবক বা প্রতিপালক হিসেব গ্রহণ করেছ যারা না নিজেদেরই উপকার করতে সক্ষম, আর না ক্ষতি করতে?’
আয়াতের এই অংশের বিষয়বস্তু মহান আল্লাহকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করা নয়; বরং “প্রভুত্ব”-এর বিষয়ে আলোচনা করা, যার অর্থ মহান আল্লাহ কর্তৃক বিশ্ব পরিচালনা করা। ফেরাউন এটা বলতো না যে, “আমি আল্লাহ”। বরং ফেরাউন বলত:
«انا ربکم الاعلی»
‘আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক।’
সূরা নাযি’আত, আয়াত: ২৪।
অর্থাৎ ফেরাউন দুনিয়ার স্রষ্টা হিসেবে নিজেকে দাবী করত না, বরং সে দুনিয়ার পরিচালক অথবা কর্তা হিসেবে দাবী করেছে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
«وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَی»
যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।
সূরা যুমার, আয়াত: ৩।
অর্থাৎ মূর্তি পূজারীগণ মূর্তি পূজা করলে, তা আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর জন্য করে। এই কারণেই আমরা এই লোকদেরকে সর্বদা মুশরিক বলি, কারণ তারা আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে অংশীদার করে।
কিন্তু যারা স্বীকার করেছে যে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক এবং তিনি ব্যতীত অন্য কোন অভিভাবক নেই। শুধু কথায় নয়, কাজেও তাদের আচরণ খোদায়ী হওয়া উচিত এবং তাদের চলাফেরা ও কথাবার্তার মান ও ভিত্তি আল্লাহর পথে ও আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত।
এই কারণেই এই আয়াতে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা একটি প্রশ্ন আকারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, যাতে মানুষ তার নিজের পথ বেছে নেয়; মানুষ সঠিক পথ বেছে নেবে, নাকি ভুল পথ বেছে নেবে? এটা সম্পূর্ণ তার উপর নির্ভর করছে।
ইরানী গবেষক ও ভাষ্যকার সৈয়দ মোজতবা হোসেইনির বাণী থেকে সংগৃহীত