۱۶ آذر ۱۴۰۳ |۴ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 6, 2024
মাওলানা মুহাম্মাদ ওয়ালীউল্লাহ কাদেরী
মাওলানা মুহাম্মাদ ওয়ালীউল্লাহ কাদেরী

হাওজা / তথাকথিত এই আলিম সাহেব ১২ ইমাম , খলীফা, আমীরের হাদীস যা সহীহ মুসলিমেও বিদ্যমান তা পড়ে দেখেন নি বা শুনেন নি।

মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান (বাংলাদেশ)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

তথাকথিত এই আলিম সাহেব ১২ ইমাম , খলীফা, আমীরের হাদীস যা সহীহ মুসলিমেও বিদ্যমান তা পড়ে দেখেন নি বা শুনেন নি ! এ হাদীসটি সম্পর্কে এই তার অভিমত কী ?! অত:পর তিনি কি জানেন না যে শিয়ারা বিশ্বাস করে এবং বাস্তব সত্যও হচ্ছে ঠিক এটাই যে ইমাম হাসান আল আস্কারীর ( আ) পরে তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তান ও উত্তরাধিকারী হযরত মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আল - হুজ্জাত আল - মাহদী সাহিবুয যামান (আ) বারোতম ( দ্বাদশ ) ইমাম যিনি দীর্ঘ কালীন গাইবতে আছেন এবং মহান আল্লাহর ইচ্ছায় শেষ যামানায় আবির্ভূত হবেন ।

বেশ কিছু সুন্নী গ্রন্থ যেমন: মোল্লা আব্দুর রহমান জামী তার শাওয়াহেদুন নবুয়ত গ্রন্থে একাদশ ইমাম হাসান আল আস্কারীর একমাত্র পুত্র সন্তান দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসানকে (আ) আল ইমাম বিল হুজ্জাহ্ , আল কায়েম , আল মাহদী , সাহেব - ই যামান ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত বলে উল্লেখ করেছেন এবং লিখেছেন : " তিনি বার ইমামের সর্বশেষ ইমাম । সাধারণ মানুষের ধারণা এই যে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান সামারার একটি গুহায় প্রবেশ করেছেন। তার অনুসারীগণ এখন পর্যন্ত তার আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় আছে । এটা ২৬৫ হিজরীর ঘটনা । কারও মতে ২৭০-এর ঘটনা । এটাই সঠিক। " ( দ্র : শাওয়াহেদুন - নবুয়ত , পৃ: ২৭৯ )।

তবে ইমামীয়া শিয়াদের বিশ্বাস : ইমাম মাহদী (আ) ২৬০ হিজরীতে পিতা ইমাম হাসান আল আস্কারী শাহাদাত বরণ করলে অন্তর্ধানে ( গায়বত ) যান । তাঁর দুটো গায়বাত আছে । সংক্ষিপ্ত গায়বাত ( غیبت صغریٰ ) যা ৬৯ বছর স্থায়ী হয়েছিল এবং এর পরপরই দীর্ঘ ( غیبت کبریٰ ) গায়বাত শুরু হয় যা আজও অব্যাহত আছে ।

এ ছাড়া নসবনামাবিদ ( نسبنامہ ) বা বংশপরিচিতি বিশেষজ্ঞগণ ( নাসসাবাহ্ نَسَّابَۃ) উল্লেখ করেছেন যে ইমাম হাসান আল আস্কারী ( আ) নি:সন্তান ও নির্বংশ ছিলেন না । তার একমাত্র পুত্র সন্তানের নাম মুহাম্মদ ইবনুল হাসান যিনি গায়েব হয়ে গেছেন যে কোথায় তিনি আছেন এবং তাঁর কী অবস্থা সে সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না । অর্থাৎ এ সব নসবনামাবিদ তাঁর জন্মগ্রহণের বিষয়টি নিজেদের গ্রন্থ সমূহে লিখেছেন ও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই প্রমাণ করতে পারেন নি যে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

উল্লেখ্য যে এ সব নসবনামা বা বংশপরিচিতি মূলক গ্রন্থ ওয়াহহাবী সৌদি আরব থেকেও মুদ্রিত হয়েছে ।

কেবল তারা এতটুকু লিখেছেন যে " তাঁর খবর কেউ জানে না। " এ কথার মানে কী ? এর অর্থ হল যে তিনি ( আ.) গায়েব হয়ে গেছেন এবং গায়বতে ( অন্তর্ধান ) আছেন । গায়েব হওয়া ও গায়বতে থাকা দিয়ে কখনো প্রমাণিত হয় না যে গায়েব ব্যক্তিটি মৃত্যু বরণ করেছে । তাহলে প্রমাণিত হয় যে গায়েব হলেও তিনি বিদ্যমান আছেন এ পৃথিবীতেই এবং আহলুল বাইতের (আ) রিওয়ায়ত ও হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণিত যে তাঁর দীর্ঘ কালীন গায়বত হবে এবং মহান আল্লাহ তাঁকে উপযুক্ত সময় আবির্ভূত করবেন । আর যেহেতু তিনি ( আ) এ পৃথিবীতেই বিদ্যমান আছেন সেহেতু পবিত্র কুরআনও তাঁর সাথেই আছে এবং পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত ( আ ) কখনোই ও কোনো যুগে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় নি এবং হবেও না।

তাই এই দুনিয়া কোনো কালে ও কোনো যুগেও কিয়ামত পর্যন্ত পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত (আ) বিহীন হবে না । অতএব নিষ্পাপ মাসূম ইমাম বিহীন কোনো যুগই থাকতে পারে না । কারণ নিষ্পাপ মাসূম হুজ্জাত বিহীন সৃষ্টিজগত টিকে থাকতে পারবে না এবং ধ্বংস হয়ে যাবে যা শিয়া সুন্নীদের বিশুদ্ধ সহীহ মুত্তাফাকুন আলাইহ প্রতিষ্ঠিত সুনিশ্চিত ( মুসাল্লাম ) হাদীসেও উল্লেখিত হয়েছে ।

বারো ইমামের সর্বশেষ ইমাম হযরত মাহদী (আ) জন্মগ্রহণ করে গায়বতে আছেন এবং এ কারণেই কিয়ামত পর্যন্ত মহান আল্লাহর হুজ্জাত সৃষ্টি জগতে বিদ্যমান আছে চাই সেই হুজ্জাত যাহির ও হাযির ( প্রকাশ্যে বিদ্যমান ) বা গায়েব ও মখফী ( অপ্রকাশিত ও লুক্কায়িত ) হোক না কেন ? গায়েবের অর্থ অবিদ্যমান নয় বরং তিনি আমাদের মাঝেই ও আমাদের সাথেই বিদ্যমান আছেন এবং আমাদেরকে হিদায়ত ও সাহায্যও করছেন এবং সৃষ্টি জগতের ওপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত হওয়ার কারণেই মহান আল্লাহর রহমত ও ফয়য তাঁর মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টি জগতের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং এ কারণে তা টিকে আছে। কিন্তু আমরা তাকে শাখসান ( ব্যক্তিগত ভাবে ) চিনি না ।

সুতরাং পবিত্র কুরআন ও মাসূম আহলুল বাইতের (আ) মধ্যে কোনো জুদাঈ ( বিচ্ছিন্নতা ) হয় নি । আর দীর্ঘ জীবন লাভ করা তো কোনো গাঁজাখুরি ও অবাস্তব বিষয় নয় । পবিত্র কুরআনেই মহান আল্লাহর কোনো কোনো বান্দার ( যেমন : নূহ্ আ ও আসহাব- ই কাহ্ফ ) দীর্ঘ জীবনের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর ১২ ইমামের হাদীস থেকেও পরোক্ষ ভাবে প্রমাণিত হয় যে সর্বশেষ অর্থাৎ দ্বাদশ ইমাম দীর্ঘজীবন লাভ করবেন । কারণ তারপর আর কোনো নতুন ইমাম নেই যিনি হবেন ত্রয়োদশ ইমাম ।

সুতরাং বারো ইমামের হাদীসে বর্ণিত কেবল বারো জন ইমামেই তা'আব্বুদান্ ( تَعَبُّداً) বিশ্বাস করতে হবে । কারণ এ সংখ্যাটা মহান আল্লাহই নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা বিরোধিতা করে অধিক সংখ্যক ইমামে বিশ্বাস আসলে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতা ও বিদ'আত ছাড়া আর কিছু নয় ।

এই আলিমের মতে আহলুল বাইতের সংখ্যা ১৪ মাসূম না হয়ে অগণিত হতে হবে তাহলে তিনি কি বিশ্বাস করেন যে মাসূমদের সংখ্যা অগণিত ? তিনি বা তার গুরু সূফীরা কি দাবি করেন যে আহলুল বাইত মানে যে কোনো সাইয়েদ এবং সে অবশ্যই মাসূম ? কারণ পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের এই মাঈয়াত ( معیّت) ও তালাযুম ( تلازم ) অর্থাৎ পরষ্পর সহবিদ্যমানতা প্রমাণ করে যে নির্ভুল , পবিত্র ও মাসূম ঐশী গ্রন্থ আল - কুরআনের মত আহলুল বাইত (আ) নির্ভুল , পবিত্র, মাসূম , তাহির , সকল ভূল ভ্রান্তির উর্ধ্বে এবং সকল দোষত্রুটি থেকে মুক্ত এবং পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত ইদল ( عِدْلٌ ) অর্থাৎ পরস্পর সমকক্ষ ও সমান। আর তা না হলে ( অর্থাৎ আহলুল বাইত মাসূম না হলে ) তাঁরা পবিত্র কুরআনের সমকক্ষ ও ইদলই হতে পারবেন না । অতএব তাকে প্রশ্ন করতে হয় যে আপনি কি তাহলে প্রত্যেক সাইয়েদকে মাসূম এবং তাকে পবিত্র কুরআনের সমকক্ষ বলে বিশ্বাস করেন ?

মুতাওয়াতির হাদীস - ই কিসা ও মুবাহালার হাদীসে হযরত ফাতিমা যাহরা ( আ ) , হযরত আলী (আ) , হযরত হাসান ( আ) এবং হযরত হুসাইন ( আ )কেই শুধু মহানবী (সা) তাঁর আহলুল বাইত বলেছেন এমনকি তাঁর দৌহিত্রী হযরত যাইনাবকেও ( আ) আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত ও শামিল করেন নি । মহানবী (সা) তাঁর জীবদ্দশায় বিদ্যমান মাসূম ব্যক্তিগণ যারা হলেন হাযারাতে ফাতিমা , আলী , হাসান ও হুসাইন ( আ) কেবল তাদেরকেই তাঁর পবিত্র মাসূম আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন ।

তবে বাকি নয় মাসূম যারা হলেন ইমাম হুসাইনের (আ) নয় জন আওলাদ ইমাম : হযরত ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ) থেকে হযরত ইমাম মাহদী ( আ ) তাদেরকেও মহানবী (সা) মাসূম আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন বিশুদ্ধ হাদীস মুতাবেক । আর সকল মাসূম ইমামই ( আ ) তাঁর পরবর্তী মাসূম ইমামকে (আ) পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন । আর ইমাম হাসান আল আস্কারী ( আ) ইমাম মাহদী (আ )কে তাঁর খাঁটি নিষ্ঠাবান অনুসারীদের ( শিয়াদের) কাছেই মুআর্রাফী ( পরিচিত) করিয়ে দিয়েছেন । একমাত্র ইমামীয়া শিআরাই বারো ইমামের হাদীসে উল্লেখিত বারো ইমামের পরিচয় দিতে পারে ।

অন্য কোনো ইসলামী মাযহাব এবং কোনো সূফী তরীকা ও গ্রুপ এই বারো ইমামের হাদীস তাদের লিডার , পীর - মুর্শিদ , নেতা ও ইমামদের ওপর তত্ববীক ( apply / প্রয়োগ ) করতে পারবে না । কারণ হয় তাদের ইমামদের সংখ্যা ১২ জনের চেয়ে কম না হয় বেশি । সুতরাং বারো ইমামের হাদীস কোনো গাঁজাখুরি গল্প কাহিনী বা প্রলাপ বাক্য নয় বরং এ হাদীসটি সত্য , প্রতিষ্ঠিত , সুনিশ্চিত , সন্দেহাতীত ( মুসাল্লাম ْمُسَلَّم ) , মুত্তাফাকুন আলাইহি ( সকল ইসলামী মাযহাব ও ফির্কার কাছে গৃহীত সঠিক সত্য ) মুতাওয়াতির হাদীস। এ হাদীসটির অন্তর্নিহিত অর্থ ( মাযমূন) সত্য ও দ্ব্যর্থহীন । তাই বাকি সবাই এই বারো মাসূম ইমামে বিশ্বাস ও তাদের ইত্তেবা' না করে ভুল - ভ্রান্তির মধ্যেই আকণ্ঠ নিমজ্জিত রয়েছে । কিয়ামত পর্যন্ত উম্মতের নেতা ( ইমাম ) , হাদী ( পথপ্রদর্শক ) , খলীফা আমীর কেবল বারো জন না এর বেশি না এর কম ।

অতএব এ উম্মতের কেবল ১৪ জন মাসূম ও ১২ জন ইমামই আছে । তাই ১৪ মাসূম ও ১২ ইমামের আকীদা বিশ্বাসই একমাত্র সহীহ ও সঠিক আকীদা বিশ্বাস । বাকি সব কিছু ভ্রান্ত জারি জুরি , প্রলাপ ও আজে বাজে উক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .