মোহাম্মাদ শামীম হুসাইন মীর্জা
হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন সূরা আরাফের আয়াতগুলো নবীর প্রতি অবতীর্ণ হয়, যেগুলো হযরত মুসার পরে হারুনের খিলাফতকে নির্দেশ করে, তখন নবী একটি বিখ্যাত বক্তব্যে তাঁর খিলাফতের একজন উত্তরসূরির পরিচয় দেন, যা সকল ইসলামী মাযহাবের হাদিস সূত্রে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্মীয় শাসকের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরবর্তী শাসক নির্ধারণ করা। হযরত সুলাইমান (আ.) ধর্মীয় শাসক ছিলেন এবং তিনি সরকার গঠন করেছেন এবং হুকুমত করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল: আল্লাহর নবীর ওফাতের পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন?
এই স্থানটি, যাকে তথাকথিত খেলাফত বলা হয়, মহানবী (সা.)-এর ক্ষেত্রে যখন তিনি মদীনায় একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই সময়টি বোঝানো হয়েছে। কিন্তু একটি বিখ্যাত হাদিস অনুসারে, নবী করিম (সা.) নিজের জন্য একজন উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা সমস্ত মাযহাবের হাদিস সূত্রে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এই হাদিসটি হযরত মূসা (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বিখ্যাত আয়াতগুলির একটির সাথে সম্পর্কিত, যেটি " খিলাফতের আয়াত" নামে পরিচিত:
وَوَاعَدْنَا مُوسَى ثَلَاثِينَ لَيْلَةً وَأَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيقَاتُ رَبِّهِ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً وَقَالَ مُوسَى لِأَخِيهِ هَارُونَ اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ
এবং আমরা মূসাকে ত্রিশ রাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং ঐগুলোকে আমরা (আরও) দশ রাত দ্বারা পূর্ণ করেছিলাম; এভাবে তার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতকাল চল্লিশ রাতে পূর্ণ হল। এবং মূসা তার সহোদর হারুনকে বলল, ‘তুমি আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব কর এবং তাদের সংস্কার করতে থাক, আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ কর না।
সূরা আ’রাফ, আয়াত: ১৪২।
খিলাফতের আয়াতের উল্লেখ করে নবী মুহাম্মদ (সা.) ইমাম আলী ইবনে আবি তালিবকে (আ.) সম্বোধন করে বলেছেন:
أنتَ مِنِّی بِمَنزِلَةِ هَارُونَ مِن مُوسَی إلا أنَّه لانَبیَّ بَعدِی
হে আলী! আমার সাথে তোমার সম্পর্ক মূসার সাথে হারুনের সম্পর্কের মতো। শুধুমাত্র আমার পরে আর কোন নবী নেই।
এই হাদিসটি নবী করিম (সা.) বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছেন, তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে নবম হিজরির (৬৩১ খ্রিস্টাব্দে) তাবুক যুদ্ধের সময়, যখন নবী (সা.) ইমাম আলীকে (আ.) মদীনায় নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে রেখে যান, তখন তিনি এই হাদীসটি ব্যক্ত করার মাধ্যমে মদীনার ব্যবস্থাপনাকে তাঁর হাতে অর্পণ করেন। তাবুক অঞ্চলের দুর্গমতা এবং নবী করিম (সা.)-এর অনুপস্থিতিতে মুনাফিকদের বিশ্বাসঘাতক আন্দোলনের সম্ভাবনা বিবেচনা করে ইমাম আলী (সা.)-এর উত্তরাধিকারের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর এই পছন্দ (যা তিনি আল্লাহর নির্দেশে করেছেন) নির্বিশেষে ইমাম আলী (আ.)-এর এমন গুণের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যা অন্য কোন সাহাবীদের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি হয়নি।
এই হাদীসটি বেলায়েতের নির্দেশ করে যা পবিত্র গাদিরে খুমে ঘটেছিল। হাদিসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সর্বপ্রথম এটি বিভিন্ন স্থানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে শোনা গিয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাবুকের যুদ্ধ। দ্বিতীয়ত, এই হাদীসের বাণী স্পষ্টভাবে আলী ইবনে আবি তালিবের (আ.) নবী হওয়া ব্যতীত নবী করিম (সা.)এর সমস্ত দায়িত্ব অর্পণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এবং তাঁর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি তাঁকে কখনও পদচ্যুত করেননি এবং এই অবস্থান সর্বদা ইমাম আলী (আ.)-এর জন্য অব্যাহত ছিল।
মরহুম ইবনে আসাকার তার দামেস্কের মদিনা ইতিহাস গ্রন্থে এই হাদীসটি ১৪৪ পন্থায় বর্ণনা করেছেন এবং নাসায়ী নামে অন্য একজন আলেম ৩৩ পন্থায় বর্ণনা করেছেন।
দ্রষ্টব্য: হাওজা নিউজে প্রকাশিত সমস্ত নিবন্ধ লেখকদের ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে। হাওজা নিউজের নীতি লেখকের মতামতের সাথে একমত হওয়া জরুরী নয়।