۱۶ آذر ۱۴۰۳ |۴ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 6, 2024
আশুরার দিবসে ইমাম হুসাইনের ( আ :) শাহাদাত
আশুরার দিবসে ইমাম হুসাইনের ( আ :) শাহাদাত

হাওজা / আশুরার দিবসে ইমাম হুসাইনের ( আ :) শাহাদাত , গাদ্দার বিশ্বাস ঘাতকদের থেকে প্রকৃত মুসলিম উম্মাহকে শনাক্ত করার মাপকাঠি ।

মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান (মুহররম, ১৪৪৪ হি.)

পর্ব ৬- ((( পাঠক বর্গের অবগতির জন্য এখানে স্মর্তব্য যে কূফার অতি নগণ্য সংখ্যক অধিবাসীই শিয়া ছিল । কূফাবাসীদের মধ্য থেকে যারা ইমাম হুসাইন ( আ:) কে কূফায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়ে ছিল তাদেরকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় : ১. হাবীব ইবনে মুযাহির আল আসাদী এবং মুসলিম ইবনে আওসাজাহর মতো অল্প সংখ্যক পত্রলেখক মুসলিম ইবনে আকীলের ক্বিয়াম ( ইবনে যিয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও অভ্যুত্থান ) দমন করা হলে কূফা থেকে পালিয়ে কারবালায় এসে ইমাম হুসাইনের সাথে মিলিত হন এবং কারবালায় শাহাদাত বরণ করেন , ২. সুলাইমান ইবনে সারদ খুযায়ীর মতো পত্র লেখকদের এক অংশ যাদেরকে , কূফার প্রভাবশালী ৪০০ শিআ নেতা যাদের মধ্যে মুখতার সাকাফীও ছিলেন তাদেরকে এবং আরও ১২০০০ অধিবাসীকে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ গ্রেফতার করে কারাবন্দি করে এবং ৩. শাবাস ইবনে রেবয়ীর মতো পত্রলেখকরা ( যারা সম্ভবতঃ সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে তারা ) ইমাম হুসাইন ( আ:)কে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করে এবং তাদের এক অংশ এমনকি যেমন : শাবাস ইবনে রেবয়ী ও আরো কিছু পত্রলেখক উবাইদুল্লাহ ইবনে রিয়াদের দলে যোগ দেয় এবং ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও অংশ গ্রহণ করে । ইমাম হুসাইনের ( আ:) খাঁটি অনুসারী শিআ - যারা ছিল আদর্শিক শিআ ও সংখ্যায় অতি মুষ্টিমেয় ও নগণ্য তারা - তাঁদের মধ্য থেকে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ( যেমন : হানি ইবনে উরওয়া , মাইসাম তাম্মারের মতো ব্যক্তিবর্গ ) ইমাম হুসাইনের ( আ:) শাহাদাতের আগেই মুসলিম ইবনে আকীলের সাথে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নির্দেশে হত্যা করা হয় । কতিপয় শিআ উবাইদুল্লাহর আরোপিত কূফার কঠোর নিরাপত্তা বলয় ও বেষ্টনী ভেদ করে এবং কার্ফু উপেক্ষা করে কূফা থেকে পালাতে সক্ষম হয় এবং তাদের এক অংশ ইমাম হুসাইনের ( আ:) সাথে কারবালায় মিলিত হয় এবং আরেক অংশ পথ হারিয়ে ফেলায় ইমামের কাছে পৌঁছাতে পারে নি । আর একদল খাঁটি শিআ কূফার কঠোর নিরাপত্তা বলয় ও বেষ্টনী ভেদ করে কূফা থেকে বের হতে পারে নি । আর একদল খাঁটি শিআ কারাবন্দি হওয়ার কারণে ইমামকে সাহায্য করতে অপারগ হয় । তাই এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে খাঁটি মুখলিস শিআরা - কূফায় যারা ছিল অতি নগণ্য সংখ্যক ও মুষ্টিমেয় তারা - ইমাম হুসাইনের (আ:) সাথে কখনোই বিশ্বাস ঘাতকতা করে নি । বরং শিআ নামধারীরা যারা ছিল নিছক রাজনৈতিক শিআ তারা ছিল দোদুল্যমান এবং এরাই ইমাম হুসাইনকে (আ:) সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাহায্য করা থেকে বিরত থেকেছে । আর পত্রলেখক ও প্রেরকদের অধিকাংশই না ছিল খাঁটি শিআ আর না ছিল তারা রাজনৈতিক বা নামসর্বস্ব শিআ । বরং এদের অনেকেই ছিল শাবাস ইবনে রেবয়ীর মতো মুনাফিক ও দোদুল্যমান প্রকৃতির । আর কূফায় আহলুল বাইতের (আ:) খাঁটি মুখলিস শিআরা অত্যন্ত মুষ্টিমেয় ও নগণ্য হলেও তাদের সংখ্যার অনুরূপ সংখ্যক খাঁটি মুখলিস শিআ হিজায বা তদানীন্তন মুসলিম বিশ্বের অন্যত্র কোথাও ছিল না । হয়তো কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক শিয়া হিজায বা অন্যত্র থাকতে পারে যারা কূফার রাজনৈতিক শিআর মতো তেমন কোন কাজে আসে নি । আর কূফায় খাঁটি মুখলিস নিষ্ঠাবান অনুসারী থাকার কারণে এবং আরো নানাবিধ কৌশলগত কারণে ইমাম হুসাইন ( আ:) তাঁর আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে কূফাকে বেছে নিয়েছিলেন । আর আমরা এ কারণেই দেখতে পাই যে , ইমাম হুসাইন ( আ:) যখন পবিত্র মক্কা নগরী থেকে কূফার উদ্দেশ্যে রওনা হন তখন তাঁর সাথে অতি অল্প সংখ্যক লোক ( যাদের অধিকাংশই ছিলেন হাশেমীয় তারা ) ব্যতীত মক্কা মদীনার অধিবাসীরা বের হয় নি ( যদিও শুরুতে সুযোগসন্ধানী বেশ কিছু বেদুইন তাঁর সফরসঙ্গী হয়েছিল যারা পরবর্তীতে প্রকৃত অবস্থা প্রকাশিত হলে ধীরে ধীরে ইমাম হুসাইনকে ( আ:) ত্যাগ করে এবং যেহেতু ইমামও চেয়েছিলেন এসব সুবিধা বাদী মরুচারী বেদুইন যাদের আদর্শ ও নীতি ছিল না তারা যেন তাঁকে ত্যাগ করে সেহেতু তিনি পথিমধ্যে মুসলিম ইবনে আকীলের শাহাদাতের খবর পেলে কূফার প্রকৃত অবস্থা ও তাদের পরিণতি যে শাহাদাত হবে তা তাদেরকে জানিয়ে দেন ) এবং ইমামকে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীমূলক হিতোপদেশ দান ছাড়া তারা আর কোনো সাহায্যই করেনি । অথচ তাদের উচিত ছিল ইমামের ( আ:) সাথে বের হওয়া এবং পাপিষ্ঠ মদ্যপ লম্পট ব্যভিচারী ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়ার দু:শাসন ও স্বৈরাচারী সরকার উৎখাতে ইমামকে সাহায্য করা । কিন্তু তারা তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করে নি । হয় আসলে তারা ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়ার নেতৃত্ব , কর্তৃত্ব , খেলাফত ও শাসন মেনে নিয়েছিল অথবা মেনে না নিলেও তারা মহানবীর ( সা : ) আহলুল বাইতের নেতৃত্ব ও শাসন কর্তৃত্ব বিরোধী ছিল যেমন : আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ও তার সমর্থকগণ , খারিজীগণ ইত্যাদি অথবা এক দল ছিল যারা নিজেদেরকে নিরপেক্ষ বলত না তারা বনী উমাইয়ার পক্ষে আর না তারা ছিল আহলুল বাইত বা আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরের মতো অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে ( বরং এ শ্রেণীটাই সম্ভবতঃ ছিল হিজাযসহ মুসলিম বিশ্বের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ) । তাই এ অবস্থা বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে মহানবীর আহলুল বাইতের ( আ:) খাঁটি মুখলিস অনুসারী সমর্থকরা ছিল সমগ্র মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত সংখ্যালঘু । বরং খারিজী , বনী উমাইয়া পন্থী নাসিবী ও অন্যান্য বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষই ছিল একাই আহলুল বাইতের (আ:) খাঁটি অনুসারীদের চেয়ে ঢেড় বেশি । আর এ কারণেই আমরা দেখতে পাই অতি নগণ্য সংখ্যক ব্যক্তি ( মাত্র ৭২ জন) ইমাম হুসাইনের ( আ:) সাথে কারবালায় দৃঢ়পদ থেকেছেন ( অর্থাৎ ইমামকে তারা ত্যাগ করেন নি ) এবং তাঁর সাথে শাহাদাত বরণ করেছেন যাদের মধ্যে ১৮ জন ছিলেন নবী বংশীয় ও হাশেমীয় এবং অবশিষ্টাংশের অধিকাংশই ছিলেন হয় কূফা থেকে আগত অথবা মহাবীর হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহীর মতো ইয়াযীদী বাহিনী ত্যাগ করে ইমাম হুসাইনের ( আ:) শিবিরে যোগদান কারী ।( এখানে প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে , ইমামের কতিপয় খাঁটি শিআ বা অনুসারী বাহ্যত: ইয়াযীদী সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে কারবালায় এসে সুযোগ বুঝে ইমাম হুসাইনের ( আ:) পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন এবং শাহাদাত বরণও করেছিলেন । আর বেশ কিছু সংখ্যক যোদ্ধা ইমাম হুসাইন ( আ:) এবং তাঁর আসহাবের ( সঙ্গী সাথীদের ) বক্তব্য ও ভাষণে প্রকৃত সত্য বুঝতে পেরে ইয়াযীদী বাহিনী ছেড়ে ইমাম বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইমাম হুসাইনের (আ:) পক্ষে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেছিলেন । তাই সেদিন ৬১ হিজরীর ১০ মুহাররম সত্যিকার অর্থে মুসলিম উম্মাহর মাঝে আহলুল বাইতের - আ: - খাঁটি অনুসারীদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য , স্বল্প সংখ্যক , সংখ্যালঘু ও মুষ্টিমেয় । এ জন্যই কারবালার মরুপ্রান্তরে সেদিন আশুরার দিবসের অপরাহ্নে মুষ্টিমেয় বিশ্বস্ত সংগীসাথীদের সবাই শহীদ হয়ে গেলে আহলুল বাইতের (আ:) গুটিকতক নারী , শিশু এবং অসুস্থ পুত্রসন্তান ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ:) ব্যতীত সম্পূর্ণ একা ও নিঃসঙ্গ হয়ে যান বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইন (আ:) এবং এ অবস্থায় শত্রুদের হাতে অত্যন্ত নির্মম ভাবে শাহাদাত বরণ করেন । আর এ থেকে প্রমাণিত হয় যে মহানবীর ( সা:) পরে তাঁর উম্মত যেমন হযরত আলী (আ:) - এর সাথে গাদ্দারী করেছিল ঠিক তেমনি তারা ইমাম হুসাইনের (আ:) সাথেও গাদ্দারী করেছে এবং এ কারণে মহানবী ( সা :) একাধিক নির্ভরযোগ্য হাদীসে বলেছেন যে তাঁর পরে হুসাইনকে (আ:) তাঁর উম্মতই হত্যা করবে । আর এ জঘন্য অপরাধ , দুষ্কর্ম ও পাপ থেকে কেবল তখন ( ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম ) উম্মতের অতিনগণ্য সংখ্যক ব্যক্তিই মুক্ত থাকতে পেরেছিল । তবে যারা এর পরে কায়মন বাক্যে অর্থাৎ ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে তওবা করে ইমাম হুসাইন ( আ :) ও মহান আহলুল বাইতের ( আ :) পথে ফিরে এসেছিল বা আসবে ও স্থিত হবে তাদের কথা হচ্ছে ভিন্ন । কারণ মহানবী ( সা : ) উম্মতের হিদায়তের উৎস্য হিসেবে দুটো অতি ভারী ও মূল্যবান জিনিস (সাকালাইন) : পবিত্র কুরআন ও তাঁর অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর আহলুল বাইতকে (আ:) রেখে গেছেন যা অকাট্য মুতাওয়াতির হাদীস - ই সাকালাইনে বর্ণিত হয়েছে ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .