মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, কথিত শিক্ষিতদের মধ্যেই সবচেয়ে বড় বড় চোর বাটপার রয়েছে যারা পুকুর চুরি করে । আর পুকুর চুরি বললেও ভুল হবে বরং বলা উচিত তারা সাগর - মহাসাগর চুরি করে । বরং এরা সব বিশ্বচোর । অশিক্ষিত অদক্ষ শ্রমিকরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠায় । আর শিক্ষিত শ্রেণীর এক বিরাট অংশ দেশের হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা ও সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে ও অবৈধ উপায়ে ( white collar corruptions ) অর্জন করে বিদেশে ( বিশেষ করে পশ্চিমা ও প্রাচ্যের দেশগুলোয়) পাচার করছে বহু কাল যাবৎ এবং তা কোনো ভাবেও ঠেকানো যাচ্ছে না। দেশের শিক্ষিত সমাজ , ব্যবসায়ী , আমলা ও রাজনৈতিক নেতারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ ও অর্থ দেশের বাইরে পাচার করছে । এ চিত্র শুধু বাংলাদেশের একার নয় । সমগ্র বিশ্বের সকল দেশ ও অঞ্চলের চিত্র ঠিক এটাই। সকল দেশের সম্পদ ও টাকা পয়সার সিংহভাগ দুর্নীতি পরায়ণ তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ ও এলিট শ্রেণীর মাধ্যমে বিদেশে বিশেষ করে পাশ্চাত্যে ( যেমন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন , সুইজারল্যান্ড , পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহ , কানাডা , অস্ট্রেলিয়া ) এবং উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক অংশ প্রাচ্যে ( যেমন: সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড , মালয়শিয়া, হংকং, তাইওয়ান , জাপান ও কোরিয়ায় ) চলে যাচ্ছে। দেশের অশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী কেবল উৎপাদন করছে এবং এই তথাকথিত ভদ্র সভ্য শিক্ষিত শ্রেণী দেশের সম্পদ ও ধনভাণ্ডার পুকুর চুরি ( সাগর মহাসাগর চুরি ) , জুয়াচ্চোরি , বাটপারী , ঘুষ - উৎকোচ ( رشوه bribe ) , আত্মসাৎ , তছরূপ, ধনাপহরণ , সরকারী বা গচ্ছিত অর্থের অপব্যবহার ( سوء استفادہ از اموال و دارایی ھای دولتی ) , তহবিল তছরুপ, জাল সনদ বানিয়ে বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতি, আমানত খিয়ানত, বিরাট অংকের ব্যাংক ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ না করে ঋণ খেলাপি হয়ে সে টাকা পয়সা বিদেশে পাচার বা দেশে ভিন্ন খাতে নামে বেনামে বিনিয়োগ , ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থনৈতিক দুর্নীতি ইত্যাদি করছে যা অশিক্ষিত গরীব চাষী , কৃষক ও শ্রমিকরা কখনোই করতে পারবে না । এ সব দুর্নীতি ও অপরাধ করতে হলে কথিত শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন । আর পাশ্চাত্য প্রবর্তিত ও প্রচলিত তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আসলে বস্তুবাদী , স্বার্থপর , দুর্নীতি পরায়ণ, ভোগ বাদী ( ভোগবিলাসী ) , সম্পদ লিপ্সু , বেয়াদব , উচ্ছৃঙ্খল, ইন্দ্রিয় প্রবন , উদ্ধত, অহংকারী , নানা ধরনের বিকার গ্রস্থ ও মানসিক ভাবে অস্থির , খিয়ানত কারী গাদ্দার (বিশ্বাসঘাতক) শ্রেণী গড়ে তুলছে সমগ্র বিশ্বব্যাপী যারা বিভিন্ন দেশের সম্পদ ও অর্থ হরি লুট করে পশ্চিমা দেশ গুলোয় পাচার করছে এবং সে সব দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ , ব্যাংক সমূহে জমা রাখছে এবং সম্পত্তি ক্রয় করছে ঐ সব পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তা ও প্রশাসন সমূহের সহযোগিতায় ও যোগসাজশে । তাহলে পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার , প্রশাসন ও কর্মকর্তারা দুর্নীতি পরায়ণ না হলে এ ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দুর্নীতি বাজদের পক্ষে কালো টাকা ও সম্পদ পাচার সম্ভব হবে ? লন্ডনকে বলা হয় বিশ্বের মানি লন্ডারিং বা অর্থপাচারের রাজধানী । তাহলে ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশগুলোই হবে সবচেয়ে বড় চোর , বাটপার , জুয়াচ্চোর , দুর্নীতিপরায়ণ ও দুর্নীতি গ্রস্ত । আর এরাই ( পশ্চিমারা ) কিনা নিজেদেরকে সৎ , নীতিবান , ভদ্র , সুশীল , শিক্ষিত , সভ্য ও উন্নত বলে জাহির করে এবং অপশ্চিমা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর বেশির ভাগকেই অসৎ , দুর্নীতি গ্রস্ত , অপরাধী, চোর - বাটপার , অসভ্য , অশিক্ষিত, আন্কাল্চার্ড , অনুন্নত ও অনগ্রসর এবং হাতে গোনা অল্প কিছু সংখ্যক দেশকে বড় জোর উন্নয়নশীল দেশ বলে আখ্যায়িত করে। আসলে দুর্নীতি পরায়ণ (কৃষক শ্রমিক)
হওয়ার পাশাপাশি এ সব পশ্চিমা দেশ ভয়ঙ্কর জঘন্য অপরাধীও বটে বিশ্বব্যাপী গত কয়েক শতাব্দীর সাম্রাজ্যবাদী কুশাসন , শোষণ , গণহত্যা , অন্যায় - অত্যাচার ও লুটপাট করার জন্য যা আজও অব্যাহত আছে বিভিন্ন ভাবে ও পন্থায় । ভিয়েতনাম , আফগানিস্তান , ইরাক জবর দখল , ফিলিস্তীন জবর দখল করে ইহুদীবাদী যায়নবাদী বর্ণবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা , ক্যুদেতার মাধ্যমে দেশে দেশে জনপ্রিয় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সরকার সমূহের পতন ঘটানো , বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় , জাতিগত গোষ্ঠী গত রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা - বিরোধ , গৃহযুদ্ধ ও যুদ্ধ লাগান ( সর্বশেষ ইউক্রেন সংকট ) , বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মুসলিম দেশ সমূহে আল- কায়দা , দায়েশ ( আইসিস ) , জাবহাতুন নুসরাহর মতো সন্ত্রাসী তাকফীরী দল ও সংগঠন সমূহের প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কি পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশগুলোর অপরাধী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় ? স্মর্তব্য যে , স্বয়ং হিলারি ক্লিনটন নিজেই স্বীকার করেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রয়োজনেই আল - কায়দা তৈরি করেছিল । আর ট্রাম্প তো ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনকে কুখ্যাত আইসিসের ( দায়েশ ) প্রতিষ্ঠাতা
বলে অভিহিত করেছিল !!! গত কয়েক শতাব্দী ধরে আমেরিকা মহাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সমূলে হত্যা ও নির্মূল করার পরেও অদ্যাবধি অবশিষ্ট রেড ইন্ডিয়ান ও আদিবাসী হত্যা এখনও অব্যাহত আছে। তাই পাশ্চাত্য হচ্ছে বিশ্ব ব্যাপী অন্যায় - অত্যাচার, পাপ , অপরাধ ও দুর্নীতির মূল হোতা ও আখড়া যদিও তারা অন্যদের ঘাড়েই এ সব দোষ চাপায় জোর গলায় । কথায় আছে না যে চোরের মার বড় গলা । তাই অন্যায় , অপরাধ ও দুর্নীতির জননী পাশ্চাত্যের বড় গলা তো হবেই !!!
পাশ্চাত্যে অর্থ ও সম্পদ পাচারের পাশাপাশি নারী , শিশু ও মেধাও পাচার হচ্ছে । অপশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের খরচে ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার , প্রযুক্তিবিদ , বিজ্ঞানী ও দক্ষ শ্রম শক্তি গড়ে তুললেও পশ্চিমারা বিভিন্ন পন্থায় উন্নত ও স্বচ্ছল জীবন ও ভবিষ্যতের প্রলোভন ও মোহ দেখিয়ে এ সব শিক্ষিত দক্ষ জন শক্তিকে পাশ্চাত্যে নিয়ে যাচ্ছে অথচ এদের শিক্ষা - প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক পাই - পয়সা পর্যন্ত খরচ করতে হয় না পশ্চিমাদের !! আবার অপশ্চিমা দেশের বহু শিক্ষিত ছাত্র , বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ নিজ দেশের সরকারী বৃত্তিতে পশ্চিমা ও উন্নত দেশগুলোতে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য যাচ্ছে এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সমাপনের পর তাদের অনেকেই নিজ নিজ দেশে ফিরছে না বরং ঐ সব পশ্চিমা ও উন্নত দেশে থেকে যাচ্ছে । আর এটা হচ্ছে আমাদের দেশের মতো দেশগুলোর কথিত শিক্ষিত শ্রেণীর এক বিরাট অংশের নিজ দেশ ও জাতির প্রতি আরেক ধরনের খিয়ানত ও গাদ্দারী ( বিশ্বাস ঘাতকতা) যা অশিক্ষিত চাষী ও শ্রমিকদের দ্বারা হয় না । যা হোক , ' কৃষক শ্রমিকরাই দেশের প্রকৃত বন্ধু কথিত শিক্ষিতরাই দেশকে বিপদে ফেলছে । ' - এ শিরোনামে রেডিও তেহরানের সাথে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে ড: মোহাম্মদ আবদুল মজিদের বক্তব্যের সাথে এই কিছু কথা প্রসঙ্গ ক্রমে শেয়ার করলাম।
অশিক্ষিত দারিদ্র প্রপীড়িত জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে কিছু ছিঁচকে চোর এবং বড় জোর কিছু ডাকাত বের হয় যাদের দুর্নীতি ও অপরাধ কথিত শিক্ষিত শ্রেণীর দুর্নীতি ও অপরাধের তুলনায় কিছুই না । আর এ সব কথিত শিক্ষিত শ্রেণী যদি দুর্নীতি ও অপরাধ না করত তাহলে এ সব দারিদ্র্য প্রপীড়িত জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে অতি সামান্য মুষ্ঠিমেয় ব্যক্তি ছাড়া এত ছিঁচকে চোর ও অপরাধীর উদ্ভব হতে না । যেহেতু দেশে ও সমাজে সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন এবং আদালত ( ইনসাফ ও ন্যায় ) প্রতিষ্ঠিত হয় নি মূলত কথিত শিক্ষিত শ্রেণীর দুর্নীতি ও অপরাধের কারণে সেহেতু আমরা সমাজের দারিদ্র্য প্রপীড়িত অংশে এ ধরনের অপরাধ , দুর্নীতি , স্খলন ও ব্যত্যয় প্রত্যক্ষ করছি । তাই অপরাধ ও দুর্নীতির মূলে রয়েছে কথিত শিক্ষিত শ্রেণীর দায়িত্ব পালন ও কর্তব্যে অবহেলা , নৈতিক - চারিত্রিক বিচ্যুতি , দুর্নীতি ও অপরাধ । আসলে পশ্চিমা প্রবর্তিত এ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে বস্তুবাদ , স্বার্থপরতা এবং ধর্ম , নীতি , চরিত্র ও আদর্শের বিরুদ্ধাচরণ । তাই এ শিক্ষা পদ্ধতিতে যারা শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত হবে অল্প কিছু সংখ্যক ব্যতীত তাদের অধিকাংশই হবে ধর্ম বিমুখ বা ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন , বস্তুবাদী , স্বার্থপর ( স্বার্থবাদী ) , ভোগবাদী এবং নীতি নৈতিকতা বর্জিত দুর্নীতি পরায়ণ ও অপরাধী । যদি কঠিন বাস্তবতার নিরিখে এবং তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে অশিক্ষিত দারিদ্র গ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই দুর্নীতি গ্রস্ত ও অপরাধী তাহলেও তাদের সম্মিলিত দুর্নীতি ও অপরাধ কথিত শিক্ষিত শ্রেণীর দুর্নীতি ও অপরাধের সমান ও সমকক্ষ হবে না । তবে কথিত শিক্ষিত শ্রেণী ও অশিক্ষিত শ্রেণীর দুর্নীতি ও অপরাধ কখনোই কাম্য হতে পারে না । এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন একান্ত কাম্য ও বাঞ্ছনীয় এবং অবশ্য কর্তব্য ( ফরয ) । আর বিবেক , দ্বীন , ধর্ম ও নীতি - নৈতিকতাও এ অবস্থার সার্বিক আমূল পরিবর্তনেরই সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয় ।