۸ آذر ۱۴۰۳ |۲۶ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 28, 2024
iran
ইরান

হাওজা / মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে ইসরায়েলের ওপর ইরানের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের শক্তিশালী সামরিক এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সত্ত্বেও আক্রমণে বিলম্বিত করার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যা শুধুমাত্র এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামরিক ভারসাম্যকে চিত্রিত করে না, ইরানের কৌশলগত এবং দূরদর্শিতার প্রতিফলনও করে।

ইরান ভালো করেই জানে যে একবার তারা ইসরায়েলে হামলা চালালে তার সম্ভাব্য জবাবের মুখোমুখি হতে হবে। এই কারণেই এটি তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন এবং নির্দিষ্ট অস্ত্র মেরামত ও প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত রয়েছে।

বিলম্বকরণ আসলে ইরানের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, তারা প্রতিটি দিক বিবেচনায় নিচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সফল পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ইঙ্গিত দেয় যে ইরান একটি বড় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যা ইসরায়েলকে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করবে।

ইরানের কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে শত্রুদের চমকে দেওয়া। বিস্ময়ের নীতিটি যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ ইসরায়েলের কাছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে লক্ষ্যবস্তু পরিবর্তন করার উপায় রয়েছে। এই সংস্থানগুলিতে মার্কিন উপগ্রহগুলির একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে যা তাৎক্ষণিক তথ্য সরবরাহ করে। ইরান এই চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সচেতন এবং সেগুলি কাটিয়ে উঠতে তার পরিকল্পনার উন্নতি করছে৷

উপরন্তু ইরান তার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং সম্ভাব্য যুদ্ধের আর্থিক প্রভাব মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান যেকোনো বড় সংকটের সময় অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছে।

ইরানের প্রস্তুতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল “গেম চেঞ্জার” অনুসন্ধান। সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নতুন আক্রমণ ব্যবস্থার পরীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে ইরান একটি বিশেষ সুযোগের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। এই “গেম চেঞ্জার” শুধুমাত্র ইসরায়েলের জন্য নয়, তার সমর্থকদের জন্যও পরিস্থিতি আমূল পরিবর্তন করতে পারে।

ইরান সম্প্রতি নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে, যা ইসরায়েল এবং এর প্রধান সামরিক ও বেসামরিক কেন্দ্রগুলি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। এই স্যাটেলাইটগুলির উদ্দেশ্য হল লক্ষ্যগুলি চিহ্নিত করা এবং আক্রমণের সাফল্যের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি করা।

ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে পারে সে ব্যাপারেও ইরান গাফিলতি করছে না। তাই আমেরিকান লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে ইরান তার কৌশলে এমন সব অবস্থান অন্তর্ভুক্ত করেছে যেগুলো যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।

উপরন্তু, ইরান তার সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানগুলিকে রক্ষা করতে বড় আকারের ভৌগোলিক পরিবর্তনও করছে যাতে শত্রুর প্রথম আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইরান বড় ধরনের হামলার জন্য সময় এবং ভালো পরিকল্পনা চায়। এটি কেবল যুদ্ধের অস্ত্র এবং সংস্থান সম্পর্কে নয়, এর সাথে নতুন গোয়েন্দা তথ্যের ক্রমাগত অধিগ্রহণ, শত্রুদের সম্ভাব্য লক্ষ্যগুলির একটি সুস্পষ্ট তালিকা এবং অঞ্চলের সার্বক্ষণিক ও সার্বিক পরিস্থিতির একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যোলোচনাও এই বিলম্বের অন্তর্ভুক্ত।

প্রতিটি দিন অতিবাহিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইরান তার পরিকল্পনাকে পরিমার্জিত ও নিখুঁত করছে যাতে একবার আক্রমণ শুরু হলে শত্রুর আর কোনো সুযোগ না থাকে।

উপরোল্লেখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা করে বলা যায় ইরানের বিলম্ব কোনো দুর্বলতার কারণে নয় বরং গভীর কৌশল ও দূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ।

ইরান যেকোনো ধরনের তাড়াহুড়ো এড়িয়ে চলছে এবং অত্যন্ত সতর্কতা ও দূরদর্শিতার সাথে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই হামলা শুধু ইসরায়েলের জন্য একটি নির্ধারক পদক্ষেপই হবে না, মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের ওপরও এর গভীর প্রভাব পড়বে।

ইরানের কৌশল বোঝার জন্য, তার সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কৌশলগুলিকে সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ, যা এটিকে একটি শক্তিশালী এবং অজেয় শক্তিতে পরিণত করেছে।

ইরানের যুদ্ধ কৌশলে বিলম্বের পিছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সমন্বিত কৌশল এবং অঞ্চলে তার মিত্রদের সাথে সহযোগিতা জোরদার করা। হিজবুল্লাহ, হামাস এবং অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সাথে সহযোগিতা জোরদার করা হচ্ছে যাতে যেকোনো সম্ভাব্য আক্রমণের ক্ষেত্রে একটি যৌথ এবং ব্যাপক প্রতিরক্ষা এবং প্রতিক্রিয়া কৌশল গ্রহণ করা যায়। শত্রুদের অনেক ফ্রন্টে ব্যস্ত রাখতে ইরান এসব সংস্থাকে আর্থিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।

উপরন্তু ইরানের বিলম্বিকরণ ও দীর্ঘ প্রস্তুতির মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের একটি দিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে লাগাতার হুমকিমূলক বিবৃতি, ক্ষেপণাস্ত্র ও নতুন নতুন অস্ত্র পরীক্ষা এবং যুদ্ধ মহড়ার রিপোর্ট শুধু শত্রুদের মধ্যেই উদ্বেগ সৃষ্টি করে না, এই অঞ্চলে ইরানের সমর্থকদেরও উৎসাহ জোগায়। এই মনস্তাত্ত্বিক চাপের উদ্দেশ্য শত্রুর সামর্থ্য ব্যাহত করা এবং তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরা।

ইরানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো শত্রুদের আক্রমণের ধরন ও সময় সম্পর্কে অনিশ্চিত রাখা। এই অনিশ্চয়তা ইসরায়েলকে ক্রমাগত সতর্ক থাকতে বাধ্য করে, যার ফলে তার সম্পদ নষ্ট হয় এবং অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া ইরান এটাও জানে যে বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শুধু সামরিক ফ্রন্টে নয়, কূটনৈতিক ফ্রন্টেও তাকে সফল হতে হবে।

জাতিসংঘ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি) এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ফোরামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নৃশংসতা তুলে ধরা, আন্তর্জাতিক জনমতকে একত্রিত করা এবং ইসরায়েলকে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত করা ইরানের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।

ইরানের এই পরিকল্পনা প্রমাণ করে যে তারা একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ কৌশল অনুসরণ করছে, যা শুধু ইসরায়েলকে শুধু দুর্বলই করবে না, পাশাপাশি এই অঞ্চলে ইরানের অবস্থানকেও শক্তিশালী করবে।শত্রুর দুর্বলতাকে কাজে লাগানো, নিজ মিত্রদের শক্তিশালী করা এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক সমর্থন অর্জন ইরানের সফল কৌশলের ভিত্তি, যা আগামী দিনে এই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে।

রিপোর্ট: হাসান রেজা

تبصرہ ارسال

You are replying to: .